কখনও ভেবে দেখেছেন, যৌনরোগ বা তথাকথিত গুপ্ত রোগের চিকিৎসা করার যাবতীয় বিজ্ঞাপন কেন রাস্তার ধারের পাবলিক টয়লেটের দেওয়ালে, ল্যাম্পপোস্টে আর লোকাল ট্রেনের কামরায় দেখা যায়? উত্তরটা কিন্তু প্রশ্নের মধ্যেই আছে৷ রোগটা গুপ্ত৷
বিজ্ঞাপন
তাই তা গোপন রাখার জন্য৷ আসলে চলতি সামাজিক রীতি-নীতি সেটাই বলে যে যৌনরোগ হলে লুকিয়ে রাখতে হয়৷ কিন্তু তারপরেও কেন এত যৌনরোগের চিকিৎসার বিজ্ঞাপন? কারণ, চেপে রাখা হয় বলেই অনেক সময় এই ধরনের রোগের ঠিকঠাক চিকিৎসা হয় না৷ রোগ ছড়িয়ে পড়ে৷
খেয়াল করে দেখবেন, যৌনরোগ শব্দটাতেই বহু লোকের আপত্তি৷ যেহেতু সেটা যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে শরীরে আসে৷ সাধারণত নিয়মিত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অসাবধানী যৌনতার কারণেই এ ধরণের রোগের সংক্রমণ হয়৷ যে কারণে রোগটা গোপন করলে নিজের অনিয়ন্ত্রিত যৌনজীবনও গোপন থাকে৷ অথচ রোগের নিরাময় তাতে হয় না৷ বরং গুপ্ত রোগ অনেক সময়ই প্রায় মহামারীর ব্যাপকতায় ছড়িয়ে পড়ে৷ ভারতে ঠিক যা হয়েছিল এইডস রোগের ক্ষেত্রে৷
বাংলাদেশের এইডস পরিস্থিতি
একটা সময় ছিল যখন এইডস রোগের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পেত৷ এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে৷
ছবি: AP
প্রথম রোগী
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়৷ এইচআইভি-র কারণে সৃষ্ট এই রোগটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে-কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন – যা শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটাতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাজার পেরিয়ে গেছে
বর্তমানে বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ পরিসংখ্যানটা অবশ্য ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিজেই চলতি বছরের জুনে সংসদকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ কিন্তু এইচআইভি বা ‘হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস’-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৩,২৪১৷ ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসের এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহতের সংখ্যা
ঐ একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব জানান এইডসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৪৭২ জন মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা সেবা
আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ কনফিডেনশিয়াল অ্যাপ্রোচ টু এইডস প্রিভেনশন (ক্যাপ) নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান এইডস আক্রান্তদের ‘অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল’ বা এআরভি ওষুধ সহ অন্যান্য সেবা দিচ্ছে৷ সরকার ও ‘দ্য গ্লোবাল ফান্ড’-এর কাছ থেকে ওষুধ কেনার অর্থ পায় এই তিন সংস্থা৷
ছবি: AP
সরকারি সেবা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুন মাসে জানান আটটি সরকারি হাসপাতালে ‘সিডি-৪’ সেন্টারের মাধ্যমে এইডস রোগীদের শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করাসহ এ সব প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ‘কাউন্সেলিং’ সেবা দেয়া হচ্ছে৷ অবশ্য সেটা ঠিক নয় বলে ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’-এর নির্বাহী পরিচালক এম এস মুক্তি৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
আশির দশকের শেষের দিকে ভারতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছিল এইডস৷ মারাত্মক এই রোগের এখনও সে অর্থে কোনো চিকিৎসা হয় না, কিন্তু তখন এইডস-এর মারণক্ষমতা সম্পর্কেই অধিকাংশ মানুষের কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না৷ ফলে সচেতনতাও ছিল না৷ যে কারণে কেউ এইচআইভি আক্রান্ত হলে হয় প্রথমটায় রোগলক্ষণগুলো বুঝতেই পারত না৷ স্বাস্থ্যকর্মীরা সেসময় অনেক দিনের নিয়মিত সমীক্ষায়, লাগাতার চেষ্টায় এই রোগের সংক্রমণের একটা নির্দিষ্ট ধরন খুঁজে পেয়েছিলেন৷ যেটা এক কথায় বলতে গেলে, এইডস ছড়ায় যৌনকর্মীদের থেকে এবং যৌনপল্লীর বাইরে সেটা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেন ট্রাক ড্রাইভাররা৷ পণ্য পরিবহনের জন্য তাঁরা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়ান এবং সহজ ও সুলভ, শস্তা বিনোদন হিসেবে বেছে নেন মদ্যপান আর যৌনতাকে৷ এইডস আক্রান্ত যৌনকর্মীদের থেকে তাঁরা এইডস রোগের জীবাণু বয়ে নিয়ে যান নিজের ঘরে, নিজের স্ত্রীর শরীরে৷ অবধারিতভাবে সেই ভাইরাস সংক্রামিত হয় তাঁদের পরবর্তী সন্তানদের দেহে৷
একইভাবে কিন্তু একজন সংক্রামিত ট্রাকচালকের থেকে জীবাণু যায় এক বা একাধিক নীরোগ যৌনকর্মীর দেহে৷ এবং এখানে তৈরি হয় বাড়তি বিপদের সম্ভাবনা৷ একজন যৌনকর্মী যখন বুঝতে পারেন যে তিনি রোগাক্রান্ত, তিনি সেকথা গোপন করে যান৷ এক, সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে, দুই, তিনি অসুস্থ জানলে কেউ তাঁর কাছে আসবে না, রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে, সেই ভয়ে৷
সমাজকর্মীরা আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে আশ্বস্ত গলায় জানাতে পারছেন, একদিকে রোগ সংক্রমণের বিপদ, অন্যদিকে সামাজিক অপবাদের ভয়, এই দুইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিন্তু আসল হাতিয়ার হয়েছিলেন ওই সামাজিকভাবে অপাংক্তেয় যৌনকর্মীরাই৷ কন্ডোম ব্যবহারে খদ্দেরদের বাধ্য করার মতো একাধিক নিরাপদ যৌন অভ্যাস তাঁরা গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিতে পেরেছে এইডস রোগকে৷
দুর্ভাগ্য, যে একই কথা বলা যায় না যৌনপল্লীর বাইরে যে বৃহত্তর সমাজ, তার ব্যাপারে৷ এখনও সেখানে অনেক মানসিক প্রতিবন্ধকতা, অনেক নৈতিক প্রতিরোধ যৌনরোগের প্রতি৷ ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে৷
সম্প্রতি যেমন এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে৷ তার একটা কারণ যেমন চলতি সময়ের বেপরোয়া, উদ্দাম জীবনদর্শন, তেমন আরেকটা বড় কারণ সমাজের মধ্যে, অনেক সময়ই নিজের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিকৃতকাম এক শ্রেণির মানুষের যৌন লালসার শিকার হচ্ছে ছোট ছেলে-মেয়েরা৷ এবং এক্ষেত্রেও মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামাজিক বিধি-নিষেধ, যা যৌনরোগকে গোপন রাখতে শেখায়৷ এমনকি নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গেও খোলা মনে নিজের সমস্যার কথা আলোচনা করতে বাধা দেয়৷
সুতরাং রোগ যত না আমাদের শরীরে, তার থেকে অনেক বেশি আমাদের মনে৷ অনেক গভীরে তার শেকড় চলে গিয়েছে৷ এই সংস্কার থেকে মুক্তি পেলেই বোধহয় সমাজের প্রকৃত রোগমুক্তি ঘটবে৷
বন্ধু, আপনি কি শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমত? জানান আপনার কথা, নীচের ঘরে৷
যৌনমিলনের দশ সুফল
মানসিক চাপ কমানো থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্র ভালো রাখা – নিয়মিত যৌনমিলন এমন নানা সুফল বয়ে আনে৷ স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েবএমডি এবং ম্যান’সে হেলথ জানিয়েছে এই তথ্য৷ চলুন জেনে নেই সঙ্গমের দশটি সুফলের কথা৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
যারা যৌনজীবনে সক্রিয়, তারা নাকি অসুস্থতাজনিত ছুটি কম নেন৷ হ্যাঁ, এমনটাই মনে করেন যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইভোন কে. ফুলব্রাইট৷ তাঁর কথায়, নিয়মিত যৌনসঙ্গম করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে৷ পেনসেলভেনিয়ার উইল্কস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও দেখান যে, যেসব শিক্ষার্থী সপ্তাহে এক বা দু’দিন যৌনমিলনে লিপ্ত হন তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা যারা এর চেয়ে কম ‘সেক্স’ করেন তাদের তুলনায় বেশি৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
যৌনকামনা বাড়ায়
নিয়মিত যৌনজীবন যৌনতার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে৷ বিশেষ করে নারীদের যোনিপথ পিচ্ছিল রাখতে, সেখানে রক্তচলাচল বাড়াতে এবং নমনীয়তা ঠিক রাখতে নিয়মিত যৌন জীবনের বিকল্প নেই, মনে করেন শিকাগোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লওরেন স্ট্রাইচার৷
নারীর মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ‘পেলভিক ফ্লোর’ শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন৷ আর ভালো যৌনজীবন নারীর মূত্রাশয়ের মাংসপেশীকে সক্রিয় রাখে৷ বিশেষ করে ‘অরগ্যাসমের’ সময় ‘পেলভিক ফ্লোরের’ মাংসপেশী সংকুচিত হয়, যা একটি ভালো ব্যায়ামও বটে৷ জেনে রাখা ভালো, প্রায় ৩০ শতাংশ নারীর কোনো না কোনো সময় মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Colourbox
রক্তচাপ কমায়
নিয়মিত যৌনজীবনের সঙ্গে রক্তচাপ কম থাকার একটি সম্পর্ক রয়েছে, মনে করেন গবেষক জোসেফ জে. পিনসন৷ তিনি জানান, গবেষণা বলছে যৌনমিলন (হস্তমৈথুন নয়) ‘সিস্টোলিক’ রক্তচাপ কমায়৷
ছবি: Colourbox
এটাও ব্যায়াম
যৌনমিলন একটা ভালো ব্যায়াম, বলেন পিনসন৷ কেননা এতে প্রতি মিনিটে পাঁচটি ক্যালোরি খরচ হয়, যা টিভি দেখার চেয়ে চার ক্যালোরি বেশি৷ তিনি জানান, যৌনমিলনে দু’ধরনের সুবিধা মেলে৷ এটি আপনার হৃদ কম্পনে গতি আনে এবং একইসঙ্গে অনেকগুলো মাংসপেশীকে সক্রিয় করে৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
সুস্থ যৌনজীবন আপনার হৃদপিণ্ডের জন্যও ভালো৷ হার্ট রেট ভালো রাখার পাশাপাশি এটি আপনার ‘এস্ট্রোজেন’ এবং ‘টেস্টোস্টেরনের’ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ গবেষণা বলছে, যারা সপ্তাহে অন্তত দু’দিন যৌনমিলনে লিপ্ত হন তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর শঙ্কা, যারা খুব কম ‘সেক্স’ করেন তাদের চেয়ে অর্ধেক কম৷
ছবি: nebari/Fotolia
ব্যথা কমায়
ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিনের চেয়ে ‘অরগ্যাসম’ বেশি কার্যকর হতে পারে৷ নিউ জার্সি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেরি আর. কমিসারুক বলেন, ‘‘অরগ্যাসম ব্যথা বন্ধ করতে পারে৷ কেননা এতে যে হরমোন নিঃসৃত হয়, তা শরীরের ব্যথা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷’’
ছবি: Colourbox
প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
যেসব পুরুষের মাসে অন্তত ২১ বার ‘ইজেকুলেট’ হয় তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কম, বলছে এক গবেষণা৷ তবে এই হিসেবে শুধু যৌনমিলন নয়, হস্তমৈথুনও অন্তর্ভুক্ত৷ তবে শুধু ‘সেক্স’ করলেই ক্যানসার মুক্ত থাকা যাবে কিনা, তা অবশ্য পুরোপুরি নিশ্চিত নয়৷ প্রোস্টেট ক্যানসারের পেছনে আরো অনেক কারণ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঘুমে সহায়ক
যৌনমিলনের পর আপনি দ্রুত ঘুমাতে পারেন৷ কেননা ‘অরগ্যাসমের’ সময় যে হরমোন নিঃসৃত হয় তা দেহকে শিথিল করে এবং ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আসে৷
ছবি: Colourbox
মানসিক চাপ কমায়
আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে থাকলে আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমতে পারে৷ গবেষকরা মনে করেন, সুস্থ জীবনের জন্য ‘সেক্স’ এবং ঘনিষ্ঠতা অত্যন্ত জরুরি৷