1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নারীর সম্মান ছাড়া যৌন হয়রানি রোধ অসম্ভব’

৮ মার্চ ২০১৮

ঢাকায় ৭ মার্চের জনসভা উপলক্ষ্যে নামা জনস্রোতের মধ্যে অন্তত ছয়টি জায়গায় যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন৷ তারপরও সংশয় বা শঙ্কা কাটছে না৷

ছবি: picture-alliance/dpa

অভিযোগগুলো পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে৷ তবে কয়েকজন নারী আবার অভিযোগ সরিয়ে নিয়েছেন৷ তাঁরা কারণও ব্যাখ্যা করেছেন৷বলেছেন, ভালো থাকার জন্যই অভিযোগ সরিয়ে নিয়েছেন৷

ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ৷ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি ছিলেন৷ জনসভায় ব্যাপক জনসমাগম হয়৷ সকাল থেকে জনসভা অভিমুখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঢল নামে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে৷ তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে ছিল ব্যাপক যানজট৷ আর এই পরিস্থিতিতে তৎপর হয়ে ওঠে দুর্বৃত্তরা৷

অন্তত ছ’জন নারী ওই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন৷ সেসব পোস্ট অনুযায়ী, ঘটনাগুলো ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এলাকা, শাহবাগ, কাকরাইল, বাংলা মোটর, ফার্মগেটের খামারবাড়ি ও কলাবাগান এলাকায়৷

এক নারী শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘হল থেকে বের হয়ে কোনো রিকশা পাইনি৷ কেউ শাহবাগ যাবে না৷ হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে৷ আর পুরোটা রাস্তাজুড়ে ৭ মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছামতো টিজ করছে৷ নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছে টিজ করছে৷ বহু হয়রানির পর শহীদ মিনার থেকে রিকশা নিয়ে শাহবাগ যাচ্ছি৷ এতেও রক্ষা নাই৷ চারুকলার সামনে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে গায়ে পানি ছিটাচ্ছে ইচ্ছামতো৷ আধাভেজা করে দিচ্ছে৷ আরেকজন রিক্সার পিছন থেকে চুল টেনে দৌড় দিয়েছে৷ তাদের জুতাবো বলে রিকশা থেকে নামবো ভাবছিলাম৷ পাশের রিকশার লোক ভদ্রভাবে নিষেধ করায় নামলাম না৷’’

আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘‘খুব মজা সমাবেশ করতে যেতে-আসতে রাস্তায় মেয়েদের হ্যারাস করা!! এক মুরুব্বি বলেছেন, ঠিকই আছে, বের হইসো কেনো বাসা থেকে, জানো না আজকে রাস্তায় বেশি ছেলে থাকবে! আল্লাহ কেন মেয়েদের দু'টি হাত দিলো৷ দু'টো হাত দিয়ে এতগুলো হাত থেকে বুক, পেট বাঁচাবো নাকি কোমর, পিঠ বাঁচাবো, ওড়না ধরে রাখবো, না তাদের হাতগুলো সরাবো!’’

তবে ফেসবুকে নারীদের দেয়া পোস্ট নিয়ে জলঘোলা করার রাজনৈতিক চেষ্টাও যে শুরু হয়েছে সে ব্যাপারটি বেরিয়ে এসেছে আরেক নারী শিক্ষার্থীর পোস্ট থেকে৷ সেই নারী শিক্ষার্থী একই ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা সরিয়ে ফেলেন৷ পরে সরিয়ে ফেলার কারণ জানিয়েছেন তিনি৷ আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভালো আছি, সুস্থ আছি৷ পোস্টটা ‘অনলি মি’ করেছি, কারণ, পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল৷ আমি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দিইনি৷ প্লাস আমার কলেজকে জড়ানো হচ্ছিল এ ব্যাপারে৷ ব্যাপারটার সাথে আমার কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই৷’’

আমরা ওইসব এলাকার তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি: মাসুদুর রহমান

This browser does not support the audio element.

বুধবারের এই ফেসবুক পোস্টগুলো প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস-সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের নজরেও আসে৷ তিনি এর প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা কিংবা গল্পের কথা শোনা যাচ্ছে৷ সত্য-মিথ্যা কতটুকু জানি না৷ হয়তো শিগগিরই তা উদঘাটিত হবে৷ উল্লেখিত ঘটনার আশেপাশে সবখানেই সিসি-ক্যামেরা আছে৷ ঘটনা ঘটলে কারা কারা দায়ী এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী তা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু হবে না৷ না ঘটলেও হয়তো রটনার রহস্য উদঘাটিত হবে৷ উত্তেজিত হয়ে এখনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে অপেক্ষা করাই ভালো৷’’

তবে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘৭ মার্চের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারীদের হয়রানির ভিডিও ফুটেজ হাতে এসেছে৷ ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ অপরাধী যে দলেরই হোক ছাড় দেওয়া হবে না৷’’ কোন ফুটেজ পাওয়া গেছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলামোটরে ভিকারুননিসা নুন স্কুলের শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে৷ দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে৷’’

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারাও তদন্ত সাপেক্ষে ওই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন৷

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ওইসব এলাকার তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি৷ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের সিসি ক্যামেরা আছে৷ সেখান থেকে কোনো ফুটেজ পাওয়া যায় কিনা তা-ও দেখছি৷ আর এর বাইরে কোনো অভিযোগ পেলে তা-ও আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো৷’’

নারীদের হয়রানির আরেকটি বিষয় হলো পথে-ঘাটে নারীদের ছবি তুলে তা তাকে হয়রানিতে ব্যবহার করা: জাকিয়া আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তিনি দাবি করেন, ‘‘যে কেনো সমাবেশ বা জনসমাগমের সময় আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা থাকে৷ ৭ মার্চেও বাড়তি নিরাপত্তা ছিল৷ আমাদের সাদাপোশাকেও নিরাপত্তা থাকে৷’’

বাংলাদেশে জনসমাগম স্থল বা ভিড়ের মধ্যে যৌন হয়রানির ঘটনা নতুন কিছু না৷ এর আগেও পহেলা বৈশাখে বা ইংরেজি নববর্ষে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে৷ দুর্বৃত্তরা জনসমাগম বা নির্জনতাকে যৌন হয়রানির জন্য বেছে নেয়৷ সুপারমার্কেট, মার্কেট বা বাসসহ নানা ধরনের পরিবহণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয় সামান্যই৷ প্রতিকারও হয় না বললেই চলে৷ এ প্রসঙ্গে নারী সাংবাদিক জাকিয়া আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বড় সমস্যা হলো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে, তারা তো আর পূর্ব পরিচিত নয়৷ তারা ঘটনা ঘটিয়েই সটকে পড়ে৷ আবার প্রতিবাদ করে অন্যের সহায়তা নিয়ে তাদের আটক করে যে পুলিশে সোপর্দ করা হবে তা-ও সম্ভব হয় না প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে৷ কারণ, প্রায় সময়ই উপস্থিত পুরুষরা ঘটনার শিকার নারীর বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়৷’’

এ প্রসঙ্গে নিজের অতীত অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন,‘‘কয়েক বছর আগে আমি বাসের মধ্যে উত্যক্তের শিকার হই৷ এর প্রতিবাদ করলে উত্যক্তকারী আমাকে উল্টো গালাগাল করে৷ আর পাশের পুরুষরাও তার পক্ষ নেয়৷ এটা হলো সবচেয়ে ভয়ংকর যে বাকি পুরুষরাও দুর্বৃত্তের পক্ষ নেয়৷ তাদের সাপোর্ট প্রায় সময়ই পায় না হয়রানির শিকার নারী৷’’

জনসমাগমে যৌন হয়রানি করার জন্য এক শ্রেণির পুরুষ ওৎ পেতে থাকে: এলিনা খান

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘আজকাল এই মোবাইল ফোনের যুগে নারীদের হয়রানির আরেকটি বিষয় হলো পথে-ঘাটে নারীদের ছবি তুলে তা তাকে হয়রানিতে ব্যবহার করা৷ অনেক সময় নারী জানতেই পারেন না যে তার ছবি তুলে নিয়েছে কেউ৷’’

মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জনসমাবেশ বা জনসমাগমে যৌন হয়রানি করার জন্য এক শ্রেণির পুরুষ ওৎ পেতে থাকে৷ তাই এই ধরনের আয়োজন যখন করা হয়, তখন নারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন৷ এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ তাই আগেই বিশেষ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তা এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত রাখা প্রয়োজন৷’’

এলিনা খান আরো বলেন, ‘‘তবে কোনটা যৌন হয়রানি আর কোনটা নয়, তা পার্থক্য করার মতো জ্ঞান আমাদের থাকতে হবে৷ আইন আছে, আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত  করতে হবে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার যে সংস্কৃতি, সেটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে৷ এটা পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হয়৷ যে সমাজে নারীর প্রতি সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, সেখানে শুধু আইন করে এটা প্রতিরোধ সম্ভব নয়৷’’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবহারকারীদের শতকরা ৭৩ ভাগ নারী অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হন৷ আর ৮৪ ভাগ নারী কোনো-না-কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ