শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন৷ বিশ্বব্যবস্থা, সমাজ এবং অর্থনীতি নিয়ে এই নোবেলজয়ীর রয়েছে বিশেষ ভাবনা৷
বিজ্ঞাপন
ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশ্বায়ন, সমাজ উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন নানান খাতেই ড. মুহম্মদের ইউনূসের যুগান্তকারী ভাবনা বিশ্বমহলে সমাদৃত৷
সামাজিক ব্যবসা
সামাজিক ব্যবসা- ধারণার জনক ড. মুহম্মদ ইউনূস৷ সামাজিক ব্যবসা বলতে তিনি এমন একটি ধারণাকে বুঝিয়েছেন যেখানে ব্যবসা করে অর্থসম্পদ উপার্জনের চেয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়৷ প্রাপ্ত মুনাফা ব্যবসার প্রসারণে পুনর্বিনিয়োগ করা হয়৷ তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এই ধারণার উপরই প্রতিষ্ঠিত যার মধ্যে দিয়ে দেশে হাজার হাজার মানুষ দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন৷ ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা বিকাশে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান মুহম্মদ ইউনূস৷ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ে তার এই ধারণা অনুন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে আর ড. মুহম্মদ ইউনূস হয়ে উঠেন গরীবের ব্যাংকার৷
দারিদ্র্য
ড. ইউনূসের মতে, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যার মূলে রয়েছে দারিদ্র৷ দারিদ্রতার কারণে সমাজে সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে মানবপাচার নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়৷ ‘‘আপনি মানুষকে গরিব রেখে তাকে সুখি করতে পারবেন না … তারা একটি অসহনীয় অবস্থায় থাকবে৷ আপনি যখন বেপোরোয়া, তখন আপনি শান্তির বিনষ্ট ঘটাবেন,'' ২০০৬ সালে নোবেলডটওআরজিকে এই কথা বলেন ড, ইউনূস৷
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ‘গরিবের ব্যাংকার’ থেকে সরকারপ্রধান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত ড. ইউনূসের জীবনের নানা কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
জন্ম
১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জন্মগ্রহণ করেন৷
ছবি: Abdul Saboor/REUTERS
সবচেয়ে বড় প্রভাব মায়ের
সহায়তার জন্য বাড়ির দরজায় কড়া নাড়া সবাইকে তার মায়ের সাহায্য করার বিষয়টি তার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব রেখেছে বলে জানান ড. ইউনূস৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
পড়ালেখা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখা শেষে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন ড. ইউনূস৷
ছবি: Raphael Lafargue/abaca/picture alliance
মানুষকে সাহায্য করার অনুপ্রেরণা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হলে ড. ইউনূস কিছু করতে উদ্যোগী হন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার চারদিকে দারিদ্র্য ছিল৷ আমি এ থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখতে পারিনি৷ এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অর্থনীতির তত্ত্ব পড়ানো আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছিল... আমার চারপাশের মানুষদের আমি সহায়তা করতে চেয়েছিলাম৷’’
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষকে ঋণ দেওয়ার কয়েক বছরের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান করেন ড. ইউনূস৷ ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ লাখের বেশি৷ এর মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি নারী৷
ছবি: AP
নোবেল জয়
ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান৷
ছবি: AP
রাজনীতির চেষ্টা ও সরে আসা
২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ড. ইউনূস৷ তবে এর কয়েকদিন পর দল গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন৷ সেইসময় জাতির উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘যাদেরকে সঙ্গে পেলে দল গঠন করে জনগণের সামনে সবল ও উজ্জ্বল বিকল্প রাখা সম্ভব হতো তাদের আমি পাচ্ছি না৷ আর যারা রাজনৈতিক দলে আছেন তারা দল ছেড়ে আসবেন না৷’’
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনার আক্রোশের শিকার হতে হয় নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদকে৷ গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এছাড়া তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও করা হয়৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
সামাজিক ব্যবসা ও উদ্যোক্তা তৈরির আন্দোলন
মাইক্রোসফটের বিল গেটস এবং মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসার উপায়গুলোকে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ড. ইউনূসকে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: AP
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
11 ছবি1 | 11
বিশ্বায়ন
বিশ্বয়নের এই যুগে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে অর্থনীতিবিদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসা নিয়ে আরেকটি নতুন ধারণা দেন৷ এ বিষয়ে তার পরামর্শ হলো ‘বহুজাতিক সামাজিক ব্যবসা'৷ এই ব্যবসার মূল ধারণাটি হলো, এটি এমন এক ধরণের ব্যবসা, যা গরিবদের হাতে ব্যবসার মালিকানা তুলে দেবে অথবা ব্যবসার মুনাফা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেই থাকবে৷
যেমন, ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে কন্টিনেন্টাল সমুদ্রবন্দর করে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ অবশ্য সমালোচকেরা বলেছিলেন, এর ফলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং কর্মসংস্থান বিপন্ন হবে৷
এদিকে সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদমাধমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরেকটি ধারণার কথা বলেন ড. মুহম্মদ ইউনূস৷ এর নাম দেন তিনি ‘গ্লোবাল সিভিলাইজেশন'৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ভারতে ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে মন্তব্য করায় ভারতের সমালোচনা করেন৷ এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের এই অস্থিরতা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
নারী
ভবিষ্যৎ নির্মাণে নারীদের ভূমিকা নিয়ে ড. ইউনূসের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে৷ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত নারীর সংখ্যাও পুরুষের তুলনায় বেশি৷
২০১২ সালে হার্ভার্ড রিভিউ বিজনেসকে তিনি বলেন, নারীরা নিজের টাকা দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু করতে চায়৷ আর পুরুষেরা নিজের টাকা খরচ করে নিজেরা উপভোগ করতে চায়৷''