ডয়চে ভেলের বার্ষিক আয়োজন গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের আলোচনায় উঠে আসছে সাংবাদিকতায় ঝুঁকি, ভুয়া তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর নানা দিক৷
বিজ্ঞাপন
‘শেয়ারিং সলিউশনস' বা সমাধান ভাগাভাগি করে নেওয়াই এবারের গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের মূলমন্ত্র৷ ১৭-১৮ জুন বন শহরে এই আয়োজনে সামিল হয়েছেন বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা দেড় হাজারেরও বেশি গণমাধ্যম কর্মী৷ সাংবাদিকতার বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান ও তার গণতান্ত্রিকীকরণ এই সম্মেলনের লক্ষ্য৷
ডয়চে ভেলের ইভেন্টস ম্যানেজার বেনিয়ামিন পারগান সম্মেলনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেন যে ২০২৪ সালটি নির্বাচনের বছর হওয়ায় ভারত, ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতাকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ যেমন গুজব, ভুয়া খবর ও এআই-এৱ ব্যবহার৷
সবদিকথেকেচাপেগণমাধ্যম
পারগানের মতে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা এখন নানা রকমের চাপের মধ্যে৷ তিনি বলেন, ‘‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর জনগণের আস্থা কমাতে চায় রাষ্ট্র যন্ত্রের নানা অঙ্গ৷ একই সাথে চরমপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও গণমাধ্যমকে শত্রু হিসাবে দেখে৷ তাই তাদের প্রতি আস্থা কমাতে সচেষ্ট৷''
পাশাপাশি, তিনি তুলে ধরেন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক চাপ ও সাংবাদিকদের ঝুঁকির প্রসঙ্গও, যা সম্মেলনের অতিথিরা আলোচনা করবেন৷
জার্মানিও এই সমস্যাগুলি থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়, বলেন নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যের প্রধান হেনড্রিক ভ্যুস্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানেও, চরমপন্থি শক্তিরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে৷ যারা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করে, তারা সত্যকে মানতে চায় না৷ তারা গুজব, মিথ্যের ওপর নির্ভর করে ঘৃণা ও উসকানি দিয়ে আমাদের আবেগকে চালিত করে৷ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি দিয়ে আমাদের এসবের বিরুদ্ধে লড়তে হবে ৷''
ডয়চে ভেলের সম্মেলনে খ্যাতিমানদের কয়েকজন
আগামী ২০-২১ জুন ডয়চে ভেলের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ ২০০৮ সালে প্রথম এই বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল৷ বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/GMF
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০২১ সালের সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেছিলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক সমাজে আমরা যেখানে নতুন কিছু গ্রহণ করতে রাজি থাকি, আমাদের সতর্কভাবে চিন্তা করতে হবে আমাদের কাছে স্বাধীনতার মানে আসলে কী৷’’
ছবি: Bundesregierung/Steffen Kugler
মারিয়া রেসা, ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী
২০২০ সালের গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে যোগ দিয়েছিলেন ফিলিপাইনের নিউজ ওয়েবসাইট ব়্যাপলারের প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা৷ সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে যাব কারণ আমি বিশ্বাস করি আমরা পার্থক্য গড়ে দিতে পারি৷ এটাই আমাদের সংগ্রামে প্রতিক্রিয়া জানানোর কৌশল: আরও সাংবাদিকতা৷’’
ছবি: ProjectSpeaker
আরমিন লাশেট, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর প্রার্থী
২০২১ সালের জার্মান নির্বাচনে তিনি সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল থেকে চ্যান্সেলর প্রার্থী হয়েছিলেন৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷ ২০২১ সালে সম্মেলনে অংশ নিয়ে লাশেট বলেছিলেন, ‘‘স্বাধীন সত্য তথ্যের ভিত্তিতে করা সাংবাদিকতা এখন যতটা গুরুত্বপূর্ণ আগে ততটা ছিল না৷’’
ছবি: Philipp Böll/DW
লিমা বোয়ি, শান্তিতে নোবেলজয়ী
২০১১ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী লাইবেরিয়ার অ্যাক্টিভিস্ট বোয়ি ২০২১ সালে সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা একটা মাইক্রোওয়েভ প্রজন্মে বাস করি৷ সবাই সবকিছু খুব দ্রুত চায়, কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে৷’’
ছবি: Gbowee Peace Foundation Africa
স্ভেতলানা টিখানভস্কিয়া, বেলারুশে বিরোধী নেতা
‘‘এটা দুঃখজনক যে যখন সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে রাস্তায় আমাদের বিক্ষোভ থেমে যায় তখন সাংবাদিকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷’’
ছবি: Martial Trezzini/KEYSTONE/picture alliance
মাসি আলিনেজাদ, ইরানের নারী অধিকার কর্মী (২০২০)
‘‘তারা আমাকে ইরান থেকে বের করে দিয়েছে, কিন্তু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আমি সবসময় সেখানে থাকি৷’’
ছবি: DW
জ্যারন লেনিয়ার, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও লেখক (২০১৯)
‘‘অ্যালগরিদম ভয়ের মতো নেতিবাচক অনুভূতিগুলিকে গ্রহণ করে এবং সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়৷ সে কারণে সারা বিশ্বে ভয়-ভিত্তিক রাজনীতির সৃষ্টি হয়েছে৷’’
ছবি: DW/F. Görner
জান ডুনডার, তুরস্কের ‘জুমহুরিয়েট’ পত্রিকার সাবেক প্রধান সম্পাদক (২০১৯)
‘‘স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করা একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা কঠিন৷ সেই ব্যক্তি যখন আপনাকে জেলে পাঠাতে পারে তখন আপনি তাকে কী প্রশ্ন করতে পারেন?’’
‘‘আমি আশা করি পশ্চিমা বিশ্বের লোকেরা ক্রেমলিন ও রাশিয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে; পুটিন ও রাশিয়া৷’’
ছবি: DW/K. Danetzki
ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার, জার্মান প্রেসিডেন্ট (২০১৪)
‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ সারা বিশ্বে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে৷ আমি সাংবাদিকদের উত্সাহ দিয়ে বলতে চাই: গণতন্ত্রের জন্য আপনাদের সবাইকে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন৷’’
ছবি: DW/M. Müller
শিরিন এবাদি, ইরানের মানবাধিকারকর্মী (২০০৮)
‘‘সাংবাদিকদের নিজেদের অবশ্যই একটি বড় পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখতে হবে এবং একসাথে থাকতে হবে৷’’
ছবি: DW/GMF
12 ছবি1 | 12
ইতিবাচকউদাহরণওরয়েছে
জনগণের জন্যে সব সময় সহজ হয় না গুজব, ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবরের মধ্যে সত্যকে বোঝা৷ সেই কাজ সহজ করতে চেষ্টা করছেন রাপলার সংস্থার প্রধান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া রেসা৷ নাইজেরিয়ার সাংবাদিক মকি মাকুরা তার ‘আফ্রিকা নো ফিল্টার' সংস্থার সাহায্যে আফ্রিকার সাফল্যের উদাহরণ তুলে ধরেন৷
এমনই আরেক উদাহরণ সিএনএনের সাংবাদিক নাদা বাশির, যিনি ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকা থেকে তার নজরকাড়া প্রতিবেদন দিয়ে সাড়া ফেলেছেন৷
যেমনপ্রভাবরাখছেএআই
বর্তমান বিশ্বে সকল খাতেই কমবেশি আলোচিত হচ্ছে এআই, বাদ নেই সাংবাদিকতাও৷ বেনিয়ামিন পারগান এবিষয়ে বলেন, ‘‘এই বদলকে ঠেকানো যাবে না৷ গণমাধ্যম সংস্থাদের এই পরিবর্তনকে চালিত করতে সাহায্য করা উচিত৷ একই সময়ে, তাদের দায়িত্ব এআই-র ঝুঁকি নির্ণয় করা৷ আমরা চাই আমাদের এই আলোচনাগুলি গোটা বিশ্বের সহকর্মীদের মাঝে তুলে ধরতে৷ খোলাখুলিভাবে সমাধান নিয়ে ভাবতে, যাতে একসাথেই সুযোগ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করা যায়৷''
কিন্তু এআই ব্যবহারের বাস্তবায়নকে ঘিরে বিভক্ত বিশ্ব৷ গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের অনুষ্ঠান মালায় বলা হয়, ‘‘এআই গণমাধ্যম ব্যবস্থাকে পুরোপুরি উল্টে দিতে পারে৷ ব্যবসায়িক কাঠামোর ক্ষতি করার সাথে সাথে সমাজে গুজব ছড়িয়ে দিতে পারে৷ ''
ভবিষ্যত কেমন হবে, সেবিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম৷ সেখানে বলা হয়, এমন একটি বিশ্বের কথা ভাবুন, যেখানে গণমাধ্যম ও কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে৷ আসুন কাজে নামি, আর স্বপ্ন দেখা নয়৷''