1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমানে চলছে মহিলাদের ওপর অ্যাসিড হামলা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৭ জুলাই ২০১৭

উত্তর প্রদেশের লক্ষৌ শহরে চার-চারবার গণধর্ষিতা এক দলিত মহিলার উপর আবারো অ্যাসিড হামলা চালায় দুষ্কৃতিরা৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র মনে করায় পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিতর্ক৷

Bildergalerie Ausstellung Frauen überleben Säure
প্রতীকী ছবিছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency

কড়া আইন এবং অ্যাসিড বিক্রির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মহিলাদের ওপর অ্যাসিড হামলা সমানে চলেছে৷ মহিলারা যত রকম সহিংস অত্যাচারের বলি হয়, তার মধ্যে অ্যাসিড হামলা বোধকরি সবথেকে নৃশংস ও বর্বরোচিত৷ এর অভিঘাত মহিলাদের শুধু দেহ নয়, মনকেও পুড়িয়ে খাক করে দেয়৷ বিকৃত মুখ নিয়ে লোকলজ্জায় বাইরে যেতে পারে না৷ পাড়া-পড়শিদের কটুক্তিতে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ৷ এই নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কোনো কোনো আক্রান্ত মহিলা স্বেচ্ছামৃত্যু বা ‘ইউথেনেশিয়া' কামনা করেন৷ এই নিষ্ঠুরতা মূলত লিঙ্গ বিচারে হয়৷ এর শিকার ৯০ শতাংশ মহিলা৷ গত শনিবার রাত্রে লক্ষৌ শহরের আলিগঞ্জ এলাকায় দুই সন্তানের মা ৩৫ বছরের এক দলিত মহিলা অ্যাসিড আক্রান্ত হন৷ যদিও তিনি থাকতেন মহিলা হস্টেলে পুলিশি পাহারায়৷ কারণ এর আগে তাঁর উপর আরও চারবার দুষ্কৃতিরা তাঁর উপর হামলা চালায়৷ এমনকি একবার কুপিয়ে খুন করার চেষ্টাও করে৷ কিন্তু তিনি প্রাণে বেঁচে যান৷ গত মার্চ মাসে ট্রেনে যাচ্ছিলেন মেয়েকে নিয়ে৷ দুষ্কৃতিরা ঐ ট্রেনেই তাঁর গলায় জোর করে অ্যাসিড ঢেলে দেয়৷ এই ঘটনার সূত্রপাত বছর আটেক আগে৷ উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলির এক গ্রামে জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে ঐ মহিলা গণধর্ষণের শিকার হন৷ বিচার চেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে পুলিশ দু'জনকে ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে৷ অভিযুক্তরা কিছুদিন পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়৷ সেটাই তাঁর পক্ষে কাল হয়ে দাঁড়ায়৷ আক্রান্তের পরিবারের দাবি, আক্রোশ মেটাতে অভিযুক্তরা বার বার হামলা চালিয়েছে৷

বারংবার এই অ্যাসিড হামলা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতেও জল ঘোলা কম হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্য নাথ আক্রান্ত মহিলাকে দেখতে হাসপাতালে যান৷ কিছু অর্থ সাহায্যও দেন৷ কিন্তু ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন৷ বলেন, এটা তাঁর সরকারকে বদনাম করার ষড়য়ন্ত্র৷ ২৪ ঘণ্টা পুলিশ প্রহরাধীনে  মহিলা হস্টেলে রাখা সত্ত্বেও কি করে দুষ্কৃতিরা হস্টেলে ঢুকতে পারে? ঘটনার বিবরণ বলছে ঐ মহিলা রাতের বেলায় টিউবওয়েল থেকে জল আনতে গিয়েছিলেন৷ পুলিশ তা অস্বীকার করে৷ তাই এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে৷ রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ১০০ দিন পার করেছে৷ কিন্তু য়েভাবে মহিলা নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে, তাতে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই বলে বিরোধী দলগুলি আঙুল তুলেছে যোগী সরকারের দিকে৷

অ্যাসিড আক্রান্ত হবার পরও যাঁরা বেঁচে যান, তাঁদের সাহায্য করতে কিছু এনজিও ভারতে কাজ করছে৷ এরই একটি পশ্চিমবঙ্গের অ্যাসিড সার্ভাইভাল ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া (এএসএফআই)৷ কীভাবে সাহায্য করা হয় জানতে চাইলে সংস্থার অধিকর্তা দিব্যালোক রায় চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘অ্যাসিড হামলার ঘটনাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করি৷ চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং বিচারবিভাগীয়৷ নিয়মিত যোগাযোগ রাখি সরকারের সঙ্গে৷ সবথেকে বড় কথা, অ্যাসিড বিক্রির ওপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা ঠিকমত মানা হচ্ছে না৷ এই যেমন, অ্যাসিড বিক্রেতাদের একটা রেজিস্ট্রি রাখতে হয়৷ ১৮ বছরের নীচে কাউকে অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না৷ ক্রেতাকে ফটোসহ ভোটার পরিচয়পত্র দেখাতে হবে৷ কিন্তু এই নিয়ম ঠিকমত পালন করা হয় না৷ এএসএফআই সংস্থার ভলেন্টিয়ারদের অ্যাসিড বিক্রেতাদের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে৷ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়৷ পাশাপাশি সামাজিক তথা মানসিক সচেতনতা জাগ্রত করতে ব্যাপক কাউন্সিলিং করা হয়, বিশেষ করে স্কুল কলেজের পড়ুয়া এবং যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে৷''

এএসএফআই-এর অধিকর্তা দিব্যালোক রায় চৌধুরি

This browser does not support the audio element.

অ্যাসিড আক্রান্তদের সরকারি ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এএসএফআই-এর অধিকর্তা দিব্যালোক রায় চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানান যে, এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেবার কথা তিন লাখ টাকা৷ আর তার মধ্যে এক লাখ টাকা হামলার ১৫ দিনের মধ্যে৷ কিন্তু গড়িমসির কারণে টাকাটা সময়মত পাওয়া যায় না৷ এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সব রাজ্যেই একই অবস্থা৷

মনোবিজ্ঞানিরা অ্যাসিড হামলার একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন৷ তাঁরা বলেন, মানুষের মধ্যে যে পশুসত্তা লুকিয়ে থাকে এই ধরনের পাশবিক আচরণে তা বেরিয়ে আসে, যেটাকে বলা হয় স্যাডিজম বা ধর্ষকাম৷ পুরুষ-কেন্দ্রিক সমাজে এটাই সচরাচর দেখা যায়৷ এই অপরাধে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সংস্থান আছে আইনে৷ কিন্তু তাতে অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনায় বিশেষ হেরফের হয়নি৷ আসামিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ অ্যাসিড হামলা বেশিরভাগই হয় প্রতিহিংসাবশত৷ যেহেতু পুরুষটির প্রেম নিবেদনে বা বিয়েতে বা ভোগবাসনা মেটাতে মেয়েটি রাজি হয়নি, তাই ঐ দেহের উপর অন্য কোনো পুরুষেরও অধিকার থাকবে না৷ অন্য কাউকে ভোগ করতে দেবো না – এই বিকৃত মানসিকতাজাত আক্রোশে থেকে অ্যাসিড দিয়ে মেয়েটির দেহ বিকৃত করে পুরুষটি আনন্দ পায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ