সমান বেতনের অধিকার পেতে ইউরোপের নারীদের আরো ৬০ বছর
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হতে এখনো যে অনেক বাকি তা স্পষ্ট হলো ২০২২ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মজুরিতে নারী এখনো পুরুষের চেয়ে এত পিছিয়ে যে সমান হতে ১৩২ বছর লাগবে৷
বিজ্ঞাপন
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)-এর বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, মজুরিতে ইউরোপের নারীরাও পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে৷ এখনো তারা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ১৩ শতাংশ বেতন কম পান৷
বেতন বা মজুরি এখনো কম পাওয়ার প্রধান কারণ দুটি৷ এক, নারীদের ঘরে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যার জন্য তারা কোনো পারিশ্রমিক পান না৷ এ কারণে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে হয় তাদের৷ এমন চাকরি করতে হয় যাতে পুরো আট ঘণ্টা কাজ না করলেও চলে৷
এছাড়া নির্মাণকাজ এবং মাইনিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মেয়েদের সুযোগ কম দেয়াও তাদের মজুরি কম হওয়ার অন্যতম কারণ৷ বিমা এবং আর্থিক খাতেও মেয়েদের চেয়ে পুরুষদেরই অনেক বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ ফলে অপেক্ষাকৃত কম বেতনের চাকরিতে যোগ দিতে হয় নারীদের৷ এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারী অনেক বেশি সময় কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু বেতন পান কম৷
নির্বাহী পদেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের সুযোগ অনেক কম৷ এমন পদে শতকরা ৯২ ভাগই এখনো পুরুষ, বাকি মাত্র আট ভাগ নারী৷
২০১৮ সালের গ্যালারিটি দেখুন
লিঙ্গবৈষম্য দূর করায় এশিয়ার সেরা ১০ দেশ
লিঙ্গবৈষম্য দূর করায় কোন দেশ কতটা এগিয়ে আর কারা কত পিছিয়ে তা প্রতিবছরই জানিয়ে আসছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ সংস্থাটির সর্বশেষ ইনডেক্সে এশিয়ার সেরা দশটি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে৷ সেখানে একেবারে ওপরের দিকে আছে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১০. কম্বোডিয়া
২০০৬ সাল থেকে ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স’ প্রকাশ করে আসছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ ইনডেক্সে এশিয়ার সেরা দশটি দেশের মধ্যে দশম স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া৷ নারীর ক্ষমতায়নে দেশটির সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ বলা হয়েছে, চাকুরিতে উচ্চপদে, ব্যাবস্থাপনা এবং শিক্ষকতায় নারীর অংশ গ্রহণ যথেষ্ট বেড়েছে৷
ছবি: DW/R. Duerr
৯. ইন্দোনেশিয়া
মূলত অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষণ করেই ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স’ প্রকাশ করে আসছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ এসব বিবেচনায় এশিয়ার সেরা দশ দেশের মধ্যে নবম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া৷ লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে সাম্প্রতিক উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দেশটি বেতনবৈষম্য কমানো, রাজনীতিতে সুযোগ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rante
৮. মিয়ানমার
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইনডেক্সে নতুন সংযোজন মিয়ানমার৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য বেশি আলোচিত-সমালোচিত দেশটি মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে এনেছে৷ তবে সংসদে এবং চাকরিক্ষেত্রে উচ্চপদে নারীর সুযোগ এখনো কম বলে মিয়ানমারের সমালোচনাও করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
৭. থাইল্যান্ড
মন্ত্রীত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও নারীরা এখন বেশি পাচ্ছে বলে দেশটির প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ এছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর কাজে এবং অন্য অনেক পেশায় নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য দূর করেছে থাইল্যান্ড৷ এ কারণেই তাদের সপ্তম স্থানে রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৬. ভিয়েতনাম
সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রীত্বের মতো দায়িত্বে নারীর সুযোগ না বাড়িয়ে বরং কমিয়ে দিয়েছে ভিয়েতনাম৷ তারপরও অনেক চাকরিতে বেতনবৈষম্য কমিয়ে এবং শিক্ষায় নারীর অংশ গ্রহণ বাড়ানোর সুবাদে এশিয়ার সেরা দশ দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে তারা৷
ছবি: DW/Aya Bach
৫. সিঙ্গাপুর
অর্থনীতিতে নারীর অংশ গ্রহণ আরো বেড়েছে৷ কায়িক শ্রমনির্ভর কাজেও নারীরা এগিয়ে আসছেন আগের চেয়ে বেশি হারে৷ স্বাস্থ্য খাতেও বৈষম্য দূর করে প্রশংসা কুড়িয়েছে সিঙ্গাপুর৷
ছবি: picture-alliance/PYMCA/Photoshot/J. Manning
৪. লাওস
আফ্রিকার বাইরে একমাত্র দেশ লাওস, যারা টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কায়িক শ্রমনির্ভর কাজে বেতনবৈষম্য দূর করেছে, নারীর অংশগ্রহণও বাড়িয়েছে৷ তবে নিরক্ষরতা দূরীকরণে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা অবনতির ফলে অনেক ক্ষেত্রে একই কাজে নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য কিছুটা বেড়েছে৷
ছবি: Reuters/J.Silva
৩. মঙ্গোলিয়া
লিঙ্গ বৈষম্য দূর করায় উন্নতি দেখিয়ে সারা বিশ্বের মধ্যে ৫৩ তম স্থান পেয়েছে এশিয়ার এই দেশ৷ তবে এশিয়ার সেরা দশে তারা রয়েছে তৃতীয় স্থানে৷ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মঙ্গোলিয়ার উন্নতিও প্রশংসনীয়, তবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, বাংলাদেশের উন্নতি সেই তুলনায় অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Fischer
২. বাংলাদেশ
গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি উন্নতি করে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে এবার ৪৭তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ৷ এক বছরে লিঙ্গবৈষম্য শতকরা ৭২ ভাগ কমিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে দেশটি৷কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নতি না হলেও আইনসভায়, চাকরিক্ষেত্রের উচ্চপদ এবং ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে এই এক বছরে বাংলাদেশ চোখে পড়ার মতো উন্নতি সাধন করেছে বলে মনে করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan H
১. ফিলিপাইন্স
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ফিলিপাইন্সই বিশ্বের সব দেশের তালিকায় সেরা দশে স্থান পেয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এশিয়ার সেরা দশের সর্বোচ্চ স্থানটিও তাদের৷ সার্বিকভাবে বাংলাদেশ যেখানে শতকরা ৭২ ভাগ লিঙ্গবৈষম্য দূর করেছে, সেখানে ফিলিপাইন্স করেছে শতকরা ৭৯ ভাগ৷শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে ব্যবধান শূন্যে নামিয়ে এনেছে তারা৷