1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমালোচনা ও আন্দোলনের মুখে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ আগস্ট ২০২৪

স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে নটরডেম কলেজসহ আরো কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা (ফাইল ছবি)
পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি (ফাইল ছবি)ছবি: Mortuza Rashed /DW

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৪-এর স্থগিত পরীক্ষাসমূহ বাতিল করা হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধও জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।

তবে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপত ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন পরীক্ষাগুলো বাতিলের আগে বিষয়টি নিয়ে আরো চিন্তার অবকাশ ছিল। বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আরো অনেক চিন্তা-ভাবনার অবকাশ ছিল এবং সেটা হলে আরও ভালো হতো।''

পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যুক্তি ছিল তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর পরীক্ষার হলে বসা একটা মানসিক চাপ। এটা তারা বলেছে। কিন্তু এই চাপে যারা আছেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী সারাদেশে ১২-১৩ লাখ, তাদের সবার মতামত তো যাচাই করার সুযোগ হয়নি। পরে বিবেচনা করেছি, এমন পরিস্থিতি যে আমরা এখনো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। গতকাল তারা যেভাবে সচিবালয়ে আন্দোলন করেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক।'' অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর যে অবস্থা, অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। সেসব জায়গায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করবে কিনা, দুই পক্ষ থাকলে বিশৃঙ্খলা হবে। আরো বড় কথা হলো, প্রশ্নপত্রগুলোর গোপনীয়তা, কে যে কখন কী করে ফেলে, পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলতে পারে।''

তার মতে, ‘‘এসব (পরীক্ষা) নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। আমি নিজে চেয়েছিলাম সময় নিতে, আরো বিচার-বিবেচনা করতে।''

পরীক্ষাগুলো বাতিল করার পর মূল্যায়ন কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, " এগুলো আমার মাথায়  আসছে না , আমি এখনো ভাবতে পারিনি। শিক্ষা বোর্ডগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।”

অটো পাস দেয়া হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো, মেধার মূল্যায়ন হবে না: সময় সায়েম

This browser does not support the audio element.

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুর হয় ৩০ জুন। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই

এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই রাতে সারা দেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে ১ অগাস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ অগাস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়।

বার বার স্থগিতের পর ১১ অগাস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে যাওয়ার কারণে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ। সিলেট ছাড়া অন্য বোর্ডগুলোতে ছয়টি এবং সিলেট বোর্ডে সাতটি পরীক্ষা এখনো বাকি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী এবার ১৪ লাখ ৫০ হাজার।

কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। মঙ্গলবার তারা  তাদের দাবি নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষা উপদেষ্টার অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর তারা শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। তারপরই পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা আসে।

যারা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তারা বললছেন, "আমরা পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। আমাদের অনেক বন্ধু আন্দোলনের সময় আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। কেউ কেউ কারাগারে  আছেন। আমাদের বাকি পরীক্ষা বাতিল করে ম্যাপিং পদ্ধতিতে রেজাল্ট দিতে হবে।” এই ক্ষেত্রে তারা করোনার সময়ের উদাহরণ দেন। আন্দোলনকারীদের একজন উত্তরা কমার্স কলেজের জুবায়ের আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পরস্থিতির কারণে বারবার আমাদের পরীক্ষা পিছিয়েছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি। রাজপথে থেকেছি। আমাদের অনেক বন্ধু আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে আছে। তাদের বাদ দিয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারি না। আর পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক অবস্থায়ও আমরা নাই। আমরা পরীক্ষা দেবো না।”

এভাবে পরীক্ষা না দিলে তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সেটা জানি না। সেটা আমরা ভেবে দেখিনি। আমাদের সবার সিদ্ধান্ত আমরা আর পরীক্ষা দেবো না।”

এইচএসসির বাকি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আরেক গ্রুপ শিক্ষার্থী বুধবার আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের তিন দফা দাবি জানিয়েছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন নটরডেম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সময় সায়েম বলেন, "আমরা অটোপাস চাই না। আমরা মেধার মূল্যায়ন চাই। আমাদের পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পরীক্ষা নিতে হবে।” তাদের তিন দফা দাবি হলো: ১.আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুততম সময়ে উন্নতি করে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হবে। ২. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। ৩. এইচএসসি পরীক্ষার্থী যারা আহত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যারা পরীক্ষা দিতে চান, না অটো পাস চান তাদের জন্য আলাদাভাবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "অটো পাস দেয়া হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। মেধার মূল্যায়ন হবে না।  আর আমরা দেশে বা বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরবর্তীতে অসুবিধায় পড়বো। আর বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে নাম্বার বেঁধে দেয়া হয়। যে ছেলেটা এসএসসিতে ভালো করেনি, কিন্তু এইচএসসিতে ভালো করার জন্য পড়াশুনা করেছে, অটো পাস হলে তার স্বপ্ন ভেঙে যাবে। কারণ, তাকে নাম্বার দেয়া হবে এসএসসির ভিত্তিতে। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল মেধা ও যোগ্যতার জন্য। অটো পাস হলে সেটা তো আর হলো না।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলাবার দুপুরের আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বাকি বিষয়গুলোর জন্য অর্ধেক নাম্বারে ( ৫০) পরীক্ষা হবে। তার ভিত্তিতেই গড় করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। কিন্তু পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেটাও মানেনি। তারা পরীক্ষা বাতিলে সরকারকে বাধ্য করেছে।

ছাত্ররা একটা কিছু দাবি করলেই মেনে নিতে হবে কেন, যুক্তি তো থাকতে হবে: অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান

This browser does not support the audio element.

নটরডেম কলেজের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আলাউদ্দিন  আহমেদ বলেন, "শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত হয়নি চাপের মুখে পরীক্ষা বাতিল করা।  আমি মনে করি,  পরীক্ষা নেয়া উচিত এবং  সেটা পূর্ণ নাম্বারের (১০০)। ৫০ নাম্বারে পরীক্ষা নেয়াও আমি সমর্থন করি না। এতে মেধার মূল্যায়ন হবে না। যারা আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, তাদের জন্য বিকল্প চিন্তা করা যেতে পারে। আর সেই আহত কতজন এখনো হাসপাতালে আছেন, কার কী অবস্থা সেটাও জানা জরুরি। আর এমনিতেই তাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই আমি দ্রুত এই পরীক্ষা নেয়ার দাবি করছি।”

আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম বলেন," গতকালই (মঙ্গলবার) আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করি না। আর সচিবালয়ে ঢুকে এভাবে চাপের মুখে দাবি আদায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন করে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, "ছাত্ররা একটা কিছু দাবি করলেই তা মেনে নিতে হবে কেন? যুক্তি থাকতে হবে তো! পরীক্ষা বাতিল করে অটো পাসের কোনো যুক্তি আমি দেখি না৷”

তার কথা, "এটা ঠিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক মানসিক চাপে আছেন। কেউ কেউ আহত হয়েছেন। সেগুলো বিবেচনায় রেখেও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। তার নানা পদ্ধতি আছে। কিন্তু অটো পাস তো হতে পারে না।”

"করোনার সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি মিলালে চলবে না। করোনা ছিল একটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সরাবিশ্বেই তখন পরীক্ষা ও শিক্ষা নিয়ে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে  তখন বাংলাদেশে যেটা করা হয়েছে, সেটা নিয়ে ছাত্ররা কোনো সমস্যায় পড়বে না। কিন্তু এবার বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ। তাই অটো পাস দিলে দেশের বাইরে সেটা গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এই সার্টিফিকেট নিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন,” বলেন তিনি।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, "এই মেধাবী প্রজন্ম বৈষম্যের বিরুদ্ধে আদোলন করেছে। তাদের হাত ধরেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পাবো। সেইজন্য আমাদের মেধা এবং দক্ষতার প্রয়োজন। সেটার জন্যই আসলে পরীক্ষা প্রয়োজন। যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য নানা ধরনের বিকল্প চিন্তা করা যায়।”

এদিকে শেষ পর্যন্ত যদি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বুধবার বৈঠক হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এইচএসসি পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাতিল করেছে মঙ্গলবার । সেই সিদ্ধান্তই এখনো বহাল আছে। আমরা মূল্যায়ন কীভাবে করবো সেটা নিয়ে এখনো কাজ করছি।  সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দুই-তিন দিন লাগবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ