রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি ও সরকারের সমালোচনা করেছে মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি দেশ৷ আরেক নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই সু চির প্রতি ঘটনার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ বলছে, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ এখন পর্যন্ত সু চি এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি৷
টুইটারে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, ‘‘যখনই আমি খবর দেখি তখনই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্ভোগ দেখে হৃদয় ভেঙে যায়৷'' তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমি এই মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির নিন্দা জানিয়েছি৷ নোবেলজয়ী অং সান সু চি-ও একই কাজ করবেন, সেই অপেক্ষায় আছি৷''
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান সু চি'র নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘স্পষ্ট করে বললে আমি সু চি-কে নিয়ে হতাশ৷ (এর আগে) তিনি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন৷ এখন মনে হচ্ছে তিনি কিছুই করছেন না৷''
এদিকে, মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা বন্ধে সরকার কোনো উদ্যোগ না নেয়া পর্যন্ত' মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরণের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে৷
বিদ্রোহ দমনের কৌশল – হত্যা, ধর্ষণ, আগুন
01:01
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি সোমবার মিয়ানমারে সু চি ও সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ আজ মঙ্গলবার তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করবেন৷
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই মানবাধিকার বিষয়ক সংকট অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷'' তাঁর এই মন্তব্যের আগে জাকার্তায় মিয়ানমার দূতাবাসে একটি পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়৷ সোমবারও জাকার্তার মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে৷
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা বাড়ায় গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছে৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার খবর তদন্ত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি৷
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সম্প্রতি এক টুইটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
অং সান সু চির কিছু তথ্য
ছবিঘরে তাই তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শৈশবেই বাবার মৃত্যু
১৯৪৫ সালের ১৯ জুন তখনকার ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ বার্মার রেঙ্গুনে জন্ম অং সান সু চি-র৷ বাবা জেনারেল অং সান-কে যখন হত্যা করা হয় সু চি-র বয়স তখন মাত্র ৩ বছর৷ ওপরের ছবিটি তোলা হয়েছিল জেনারেল অং সান-এর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে৷
ছবি: gemeinfrei
রাজনীতিতে পদার্পণ
সু চি-র শৈশব কেটেছে ভারতে৷ উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানে মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ পরবর্তীতে অ্যারিসকেই বিয়ে করেছিলেন সু চি৷ দুটি ছেলে আছে এই দম্পতির৷ ১৯৮৮ সালে নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরেন সু চি৷ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন প্রথম জনসভাতেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
নির্বাচিত হয়েও বঞ্চিত
১৯৯০ সালে নির্বাচন হয়৷ নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পায় সু চি-র দল এনএলডি৷ কিন্তু তখনকার সামরিক শাসক নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতায় পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক দাবিকে পাত্তাই দেয়নি৷
ছবি: picture alliance/AP Images/M. Sato
গৃহবন্দি
নির্বাচনের কিছুদিন আগেই সু চি-কে গৃহবন্দি করা হয়৷ ২০১০ সালে পুরোপুরি মুক্তি প্রাপ্তির আগে বার কয়েক বাইরে আসার সুযোপ পেয়েছিলেন ‘মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/epa/N. Chan Naing
নোবেল পেলেন সু চি
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংস আন্দোলন করায় ১৯৯১ সালে সু চি-কে শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর স্বীকৃতি দেয় নোবেল কমিটি৷ গৃহবন্দি ছিলেন বলে সু চি নিজে যেতে পারেননি৷ তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন তাঁর ব্রিটেনে নির্বাসিত পুত্র কিম৷
ছবি: AP
মুক্তির দাবি
সু চি-কে মুক্তি দেয়ার দাবি উঠছিল বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ কিন্তু তখনকার সামরিক বাহিনী তাতে কর্ণপাত করেনি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
অবশেষে মুক্তি
অবশেষে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মুক্তি পান অং সান সু চি৷
ছবি: picture alliance/epa/N. C. Naing
সংসদ সদস্য সু চি
২০১২ সালে আবার নির্বাচন হয় মিয়ানমারে৷ ১৯৯০ সালে সু চি-কে গৃহবন্দি করার পর থেকে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি সু চি-র দল এনএলডি৷ ২২ বছর পর আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঠিকই নির্বাচিত হন সু চি৷ সেই সুবাদে এখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী৷
ছবি: AP
২০ বছর পর
২০১২ সালে মুক্ত সু চি-র হাতেই তাঁর পুরস্কারটা তুলে দেয় নোবেল কমিটি৷ সু চি জানান, এই পুরস্কার তাঁকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছে৷
ছবি: Reuters
জার্মানিতে সু চি
২০১৪ সালে সু চি জার্মানির রাজধানী বার্লিনেও এসেছিলেন৷ তখন মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন লড়াই করার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর হাতে ভিলি ব্রান্ড পুরস্কার তুলে দেন জার্মান প্রেসিডেন্ট গাউক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সমালোচিত
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন সত্ত্বেও এর প্রতিবাদ করেননি অং সান সু চি৷ অনেক রোহিঙ্গা দেশছাড়া হয়ে সাগরে ডুবে মরলেও সু চি নীরব ভূমিকাই পালন করছেন৷ শান্তিতে নোবেল জয়ী হয়েও একটি সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়ে তাঁর নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷