প্রাক নির্বাচনী একটি সমীক্ষা বলছে, দিল্লির প্রায় ৬৮ শতাংশ লোক কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান৷ ৫৫ শতাংশ চান, সরকার গঠন করুক আপ৷ প্রবল আত্মবিশ্বাসী কেজরিওয়ালও সবার আগে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
এতদিন দাবিটা করছিলেন আপ নেতারা৷ তাঁদের স্লোগানই হল, 'আচ্ছে বিতে পাঁচ সাল, লাগে রহো কেজরিওয়াল', অর্থাৎ, গত পাঁচ বছর ভালোভাবে কেটেছে, কেজরিওয়াল এভাবেই চালিয়ে যান৷ ভাবখানা এমন, কেজরিওয়াল তো জিতেই বসে আছেন৷ আপ যে দাবিটা করছে, এ বার তার সমর্থন মিলল৷ আইএএনএস-সিভোটার সমীক্ষা বলছে, দিল্লির অধিকাংশ লোকের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল৷ ৫৭ শতাংশ লোক কেন্দ্রে মোদী সরকারের পক্ষে, তা সত্ত্বেও ৫৫ শতাংশ লোক দিল্লিতে আপ সরকার চায়৷ মাত্র ২৭ শতাংশ লোক বিজেপিকে চাইছেন৷
সমীক্ষার এই ফলকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ কারণ, দিল্লির আম আদমির মনোভাব কেজরিওয়ালের দিকেই কিছুটা ঝুঁকে আছে৷ দিল্লিতে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করছেন গুলশন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''তিনটি কারণে কেজরিওয়াল বিজেপির থেকে এগিয়ে৷ বিদ্যুতের বিল কম করে দেওয়া৷ এবং বিল যদি ২০০ ইউনিট হয় তো এক পয়সাও দিতে হয় না৷ বস্তুত শীতে অধিকাংশ লোকেরই বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে না৷ একইরকমভাবে জলের বিলও কার্যত শূন্য৷ মহিলাদের সরকারি বাসে চড়তে কোনও পয়সা লাগে না৷ সরকারি স্কুল এখন পাবলিক স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে৷ তাই মনে হচ্ছে, কেজরিওয়ালের দিকে পাল্লা এখনও ভারি রয়েছে৷ লোকের মনে হচ্ছে, বিজেপি এলে এই সব বন্ধ হয়ে যাবে৷''
কেজরিওয়াল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিয়েছেন৷ পনেরো জন বর্তমান বিধায়কের টিকিট কাটা হয়েছে৷ বিজেপি ও কংগ্রেস ছেড়ে আসা নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে৷ বিশেষ করে মুসলিম ও পূর্বাঞ্চলের ভোট পাওয়ার জন্য মরিয়া প্রয়াস আছে৷ পূর্ব উত্তর প্রদেশ ও বিহারের লোকেদের দিল্লিতে বলা হয় পূর্বাঞ্চলি। মোট ভোটদাতার এক তৃতীয়াংশ তাঁরাই৷ সে জন্যই অন্য দল ছেড়ে আসা নেতা শোয়েব ইকবাল ও বিনয় মিশ্রকে প্রার্থী করা হয়েছে৷ বাদ পড়েছেন লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি ও বহুজাতিক সংস্থা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা আদর্শ শাস্ত্রী৷
চিত্তরঞ্জন পার্কের বিজেপি নেতা সলিল নন্দি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আগে তালিকা বের করাটা নিঃসন্দেহে কেজরিওয়ালের আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক৷ তবে বিজেপিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে লড়বে৷ আমরাও লড়াইয়ে ভালোভাবেই আছি৷ বিজেপির তালিকা এক-দুদিনের মধ্যে বেরিয়ে যাবে৷''
এই আবহে এবার জনতার দরবারে যাবে দলগুলি৷ এর মধ্যে তৃতীয় দল কংগ্রসের লক্ষ্য অবশ্য কিছুটা আলাদা৷ লাগাতার পনেরো বছর ধরে দিল্লি শাসন করা দল বিধানসভায় গুটিকয়, নিদেনপক্ষে একটা আসনে জিততে চায়৷ গতবার তাদের একজনও বিধায়ক ছিল না৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!