নতুন এক গবেষণা বলছে, প্যারিস চুক্তি সই করা ১৯৭ দেশ যদি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেও, তারপরও সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে৷ এতে করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যাবার ঝুঁকিও বহাল থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির পটস্ডাম ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের একদল গবেষক নতুন এক মডেলে গবেষণা করেন৷ বুধবার প্রকাশিত সেই গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৩০০ সালের মধ্যে ০ দশমিক ৭ থেকে ১ দশমিক ২ মিটার বেড়ে যাবে৷
পরিবেশ বিষয়ক বিখ্যাত জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরো বলা হচ্ছে, ‘‘এমনকি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকিয়েও রাখা যায়, সিস্টেমের জড়তার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আটকে রাখা যাবে না৷''
শুধু তাই নয়, কার্বন ডাইঅক্সাইডের উদগীরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে যদি দেরি হয়, তাহলে ২০২০ সালের পর থেকে প্রতি পাঁচ বছরের জন্য ২০ সেন্টিমিটার করে পানির উচ্চতা বাড়বে৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের স্বরূপ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ ও হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখার কথা বলা হয়েছে৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
11 ছবি1 | 11
এছাড়া, জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিরসনও সার্বিকভাবে শূন্যে নামিয়ে আনার শর্ত রাখা হয়েছে৷
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন৷ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের হার তো কমছেই না, বরং বাড়ছে, এবং তা আরো অন্তত এক দশক এই হার অব্যাহত থাকবে৷
‘‘গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ যদি এখনই বন্ধ করে দেয়া হয়, তারপরও এরই মধ্যে আমরা পরিবেশের এতটাই ক্ষতি করে ফেলেছি যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আগামী কয়েক শতকে বেড়েই যাবে৷'' গবেষণাটিতে বলা হয়েছে৷
তবে গবেষকরা বলছেন, যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেবার কথা বলা হয়েছে, তা নিলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির উপর তা কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিরূপন করা হয়নি এখনো৷
উপকূল ও বাংলাদেশ
গবেষণায় বলা হচ্ছে, ১ দশমিক ২ মিটার পানির উচ্চতা বৃদ্ধি মানে হলো, বাংলাদেশসহ ভিয়েতনাম ও ভারতের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসা৷ নিউ সাউথ ওয়েলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন চার্চের মতে, এ এলাকাগুলোতে এক মিটার উচ্চতার ঝুঁকিতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ বাস করেন৷ তাদের বিপদ সবচেয়ে বেশি৷
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের সামনে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ আগের অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছিল যে, ২০২০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যার ফলে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ এলাকা অধিক হারে বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে৷ বাংলাদেশের ওপর সম্পাদিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমানের তুলনায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা যথাক্রমে ১ ও ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২১০০ সাল নাগাদ ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে৷
ছোটদের চোখে আজ থেকে ৫০ বছর পরের পৃথিবী
জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, আরো ৫০ বছরে কী হবে কে জানে৷ আজকের কচিকাঁচাদের অনেকেই তখন এই পৃথিবীতেই থাকবে৷ কেমন হবে সে পৃথিবী? তারা নিজেরাই এঁকে দেখানোর চেষ্টা করেছে৷
ছবি: DW/I. Banos
জলমগ্ন পৃথিবী
দশ বছর বয়সের সামুয়েল ইতিমধ্যেই জানে, আমাদের সুপরিচিত গ্রহের কী দশা হতে চলেছে: সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে উপকূলের মানুষদের জীবিকা ও জীবন বিপন্ন করবে৷ কিন্তু কেন তা ঘটবে? ‘‘চরম পরিবেশ দূষণের কারণে’’, বলে সামুয়েল৷
ছবি: DW/I. Banos
শেষ সূর্যাস্ত?
সাত বছর বয়সের ডানিয়েল সূর্যকে খুব পছন্দ করে – কিন্তু ৫০ বছর পরে সূর্য বলে কি কিছু থাকবে? সূর্য খুব বেশি বদলাবে না বলেই ডানিয়েলের আশা, নয়ত এমন অপরূপ সব সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত আসবে কোথা থেকে? তবে ডানিয়েল ইতিমধ্যেই তার বাবা-মাকে বাড়িতে সব কিছু রিসাইকেল করতে বলেছে৷ সাবধানের মার নেই!
ছবি: DW/I. Banos
উড়ন্ত গাড়ি
দশ বছর বয়সের পালোমার কল্পনায় ভবিষ্যতের গাড়ি রাস্তায় না চলে, আকাশে চলবে – তবে গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ুদূষণ একই থাকবে, পালোমার ছবি দেখলে যা বোঝা যায়৷ অপরদিকে গাছপালার চিহ্নমাত্র বাকি নেই৷ ছবির ডান কোণায় একটা জাহাজ – সেটা কি খরায় আটকে পড়েছে, নাকি সাগরের পানি বেড়ে শহরে ঢুকে পড়েছে?
ছবি: DW/I. Banos
বড্ড গরম!
সাত বছরের এমা সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘুরে এসেছে: সেখানে আর সবই ভালো, শুধু গরমটা একটু বেশি৷ এমা তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে৷ কাজেই এমার কল্পনায় ভবিষ্যতে সূর্য জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আর পৃথিবীর মানুষরা রকেটে চড়ে অন্য গ্রহে পালাতে বাধ্য হবে৷
ছবি: DW/I. Banos
চলো মঙ্গলগ্রহে যাই
বারো বছর বয়সের লিনুস-এর মতে ৫০ বছর বাদে পৃথিবী আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না, কাজেই লিনুস মঙ্গলগ্রহে বাস করার স্বপ্ন দেখছে – সেটাও স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন, বলা মুশকিল, কেননা মানুষ দৃশ্যত মঙ্গলগ্রহেও একই রকম পরিবেশ দূষণ চালাবে৷ তাহলে কি কোনো আশাই নেই? ‘‘আমরা এখনও তা বন্ধ করতে পারি’’, বলছে লিনুস৷
ছবি: DW/I. Banos
প্রকৃতির বদলে প্রযুক্তি
বারো বছরের ইয়ান-এর মতে ২০৬৭ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্রকৃতির স্থান দখল করবে প্রযুক্তি৷ তাই ইয়ান-এর কল্পনায় ভবিষ্যতে আকাশছোঁয়া বাড়ির চারপাশে নানা আজগুবি যান ঘুরে বেড়াবে আর হলিউডের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে স্যামসাং গ্যালাক্সির প্লেন৷
ছবি: DW/I. Banos
কার্বন ফুটপ্রিন্ট নয়, হ্যান্ডপ্রিন্ট
‘কার্বন পায়ের ছাপ’ – ছয় বছরের আস্ট্রিড কথাটা স্কুলে শুনেছে ও ঠিকই শুনেছে৷ তবে আস্ট্রিডের কল্পনায় সেই কার্বন পায়ের ছাপ আমাদের কার্বন হাতের ছাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাজেই আস্ট্রিডের ছবিতে ভবিষ্যতের পৃথিবী আমাদের পরিবেশ দূষণের প্রায় অদৃশ্য হাতের ছাপ বহণ করছে৷
ছবি: DW/I. Banos
যন্ত্রদানব
দশ বছরের মিগেল-এর ছবিতে একটি যান্ত্রিক রোবটের মুখ থেকে রশ্মি বেরিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করছে৷ এই রোবট যেমন একদিকে আমাদের যন্ত্রসভ্যতার প্রতীক, অপরদিকে সে হয়ত হাল আমলের ফ্যাংকেনস্টাইনের মতো মানুষের সৃষ্ট আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স, যা শেষমেষ মানুষকেই আক্রমণ করছে৷
ছবি: DW/I. Banos
ট্র্যাজেডি
সাত বছরের ইউডিথ-এর কল্পনায় একদিন না একদিন অন্য গ্রহের জীবরা মহাকাশযানে চড়ে এসে পৃথিবীর সব মানুষকে, এমনকি পশুপাখিদেরও মেরে ফেলবে৷ তা বলে ইউডিথ যে পরিবেশ সচেতন নয়, এমন কথা কেউ বলতে পারবে না৷ ইতিমধ্যেই সে প্রতি পাতার দু’পাশেই ছবি আঁকে...৷
ছবি: DW/I. Banos
9 ছবি1 | 9
একই সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমানের তুলনায় যথাক্রমে ১৪ ও ৩২ সেন্টিমিটার এবং ২১০০ সাল নাগাদ ৮৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে৷ এর ফলে বাংলাদেশের কমপক্ষে ১০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে গোটা সুন্দরবনই পানিতে তলিয়ে যাবে৷ ইতিমধ্যে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে অবস্থিত 'লোহাচরা'ও 'সুপারিভাঙ্গা' নামের দুটি দ্বীপ হারিয়ে গেছে৷ লোহাচরা দ্বীপের মাত্র ১ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত প্রায় দেড় লাখ জনসংখ্যার 'সাগরদ্বীপের ৩৩ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকা গত ৩০ বছরে সমুদ্রে তলিয়ে গেছে৷
উদ্যোগ যা নেয়া হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন জন চার্চ৷ তিনি বলেন, ‘‘২৩০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি রোধ করতে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরো অনেক বাড়াতে হবে, এবং তা এখনই৷''
প্রাকৃতিক কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষদের উচ্ছেদ ও জলবায়ু শরণার্থী হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়াসহ এসব দেশের জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করবে বলে মত তাঁর৷
জেডএ/এসিবি (ডিপিএ)
জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে যা যা করতে পারেন
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, বিশেষ করে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা কমানোর উপায় নিয়ে বছর জুড়েই চলে আলোচনা৷ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের উদ্যোগেরও শেষ নেই৷ ব্যক্তি পর্যায়ের ছোট ছোট কিছু উদ্যোগও কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভালো ফল বয়ে আনতে পারে৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
লাইটের বাল্ব বদলে ফেলুন
ঘরে খুব সুন্দর সুন্দর লাইট লাগিয়েছেন? সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি এসব লাইটের বাল্ব অনেক সময় খরচও বাড়ায়৷ বিদ্যুতের খরচ কমাতে চাইলে শিগগির এলইডি বাল্ব লাগিয়ে নিন৷ অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷
ছবি: DW/Gero Rueter
সব কাপড় রোদে-হাওয়ায় শুকান
কাপড় শুকানোর জন্য ড্রায়ার ব্যবহার করেন? যখনই সম্ভব ধোঁয়া কাপড় ড্রায়ারে না দিয়ে বাইরে টানিয়ে দিন৷ একটু সময় লাগলেও এক সময় কাপড়গুলো ঠিকই শুকিয়ে যাবে৷ বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি যত কম ব্যবহার করবেন, ততই উপকার৷ জানেন তো, বিশ্বের উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর? ড্রায়ার আপনার কাপড় শুকায় ঠিকই, পাশাপাশি উষ্ণতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে৷
ছবি: picture-alliance/AP/Hussein Malla
রিসাইক্লিং
বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে অনেক জিনিসই রিসাইক্লিং, অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার করার চল শুরু হয়েছে সারা বিশ্বে৷ তবে রিসাইক্লিংয়ের চর্চা থেকে অনেক মানুষই এখনো দূরে৷ একজন একজন করে শুরু করলেও সংখ্যাটা বাড়বে৷ জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তন রোধের জন্য সেটাও কাম্য৷
ছবি: Fotolia/TrudiDesign
ঠান্ডা পানিতে কাপড় ধোয়া ভালো
আপনি কি গরম পানিতে কাপড় ধুয়ে অভ্যস্ত? তাহলে কিন্তু গ্রিন হা্উ গ্যাস নির্গমন বাড়িয়ে আপনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছেন৷ ঠান্ডা পানিতে কাপড় ধোয়া মোটেই কঠিন কাজ নয়৷ সহজ এই কাজটি করেও পরিবেশের উপকার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
হাইব্রিড গাড়ি চালান
গাড়ির ধোঁয়া পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে৷ তাই গাড়ি যদি চালাতেই হয়, তাহলে হাইব্রিড ইলেকট্রিক গাড়ি কিনুন৷ তাতে ক্ষতি কিছুটা কম৷
ছবি: picture-alliance/Photoagency Interpress
গরু, খাশির মাংস কম খান
গরু, খাশি এবং অন্যান্য পশুর মাংস খাওয়া কমিয়ে বা পুরোপুরি বাদ দিয়ে নিরামিষভোজী হলেও পরিবেশের উপকার৷
ছবি: FOX BROADCASTING/The Simpsons
স্বল্প দূরত্বে বিমানযাত্রা কমান
বিমান চলাচলেও পরিবেশের অনেক ক্ষতি৷ ফলে আপনি যদি দেশের ভেতরে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার সময় অন্তত বিমানে না ওঠেন, তা পরিবেশ রক্ষায় কিছুটা ভূমিকা অবশ্যই রাখবে৷
ছবি: picture-alliance/P. Mayall
গাড়ি ছেড়ে বাইসাইকেল
যে কোনো ধরনের গাড়ি বর্জন করে যদি বাইসাইকেলে যাতায়াত করেন তাতে শরীর এবং পরিবেশ দুয়েরই উপকার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
বেশি সন্তান নয়
জনসংখ্যা বাড়লে পরিবেশের ওপর চাপও বাড়ে৷ ফলে বেশি সন্তান না নেয়াই ভালো৷