পানির নীচ দিয়ে সাঁতরে যাচ্ছেন এক ডাইভার আর তাঁর চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে অনেককিছু৷ এমন দৃশ্য সাধারণত মুগ্ধ হওয়ার মতোই৷ কিন্তু একটু ভালো করে তাকালের দেখা যায় আরেক রুঢ় বাস্তবতা৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ ডাইভার রিচ হর্নার বালির সমুদ্র উপকূলে ডাইভের সময় একটি ভিডিও করেছেন৷ কিন্তু ভিডিওতে নীল পানির তলায় তিনি যা প্রত্যাশা করেছিলেন, তা অবশ্য দেখেননি, যা দেখেছেন, তা আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের৷
ভিডিওতে রিচ হার্নারের চারপাশে অসংখ্য প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগসহ নানা ধরনের আবর্জনা ভাসতে দেখা গেছে৷ যেখানে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছ থাকার কথা ছিল, সেখানে প্লাস্টিকের এই ভেসে বেড়ানো পর্যটকরা পরিবেশের যে কতটা ক্ষতি করছে তা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে৷
রিচ হার্নার বালির সমুদ্রতট থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থানকালে ভিডিওটি করেছেন৷ অথচ এত দূরত্বেও প্লাস্টিকের কোনো কমতি ছিল না৷ তাঁর ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ হওয়ার পর রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে৷
এআই/এসিবি
সাগরের মায়াপুরী
ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্রের পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷ অবশ্য সাগরের অতলে এই স্থানগুলিতে দর্শক সমাগম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
সাগরের গভীরে, জলের তলায় এক আশ্চর্য জগৎ
সাগরের পানির নীচে পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেবার সুপারিশ করেছেন ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা৷ এই সব স্থানের বাসিন্দাদের সৌন্দর্য অকল্পনীয়; সেই সঙ্গে রয়েছে অপরিসীম জীববৈচিত্র্য; এছাড়া পরিবেশ বিপন্ন হলে, তার চিহ্নও ধরা পড়ে এখানে৷
ছবি: Kevin Raskoff/NOAA/Wikipedia
‘‘হারানো শহর’’
অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ৮০০ মিটার জলের তলায় ভূপৃষ্টের ফাটল থেকে আগুন, গরম লাভা ও গ্যাস বেরিয়ে আসছে৷ ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্য কোথাও এ ধরনের একটি আশ্চর্য পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট নামে পরিচিত প্রাকৃতিক চিমনিগুলি থেকে সম্ভবত ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস নির্গত হচ্ছে৷ সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় চিমনিটির নাম রাখা হয়েছে পোসাইডন৷ উচ্চতা ৬০ মিটারের বেশি৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institute and Charles Fisher, Pennsylvania State University
কোস্টা রিকার থার্মাল ডোম
প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘের এই এলাকাটিকে ‘‘সাগরের মরুদ্যান’’ আখ্যা দিয়েছেন ইউনেস্কোর বিজ্ঞানীরা৷ এখানে যেমন টুনা মাছ কিংবা শুশুক, তেমনই হাঙর বা তিমি মাছ পাওয়া যায়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এলাকার সবচেয়ে বড় বাসিন্দা নীল তিমিকে৷ বিশেষভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ লেদারব্যাক টার্টলরাও এখান দিয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
হোয়াইট শার্ক কাফে
সাদা হাঙরের কফিহাউস? হ্যাঁ, মেরিন বায়োলজিস্টরা সত্যিই এই নাম দিয়েছেন৷ জায়গাটা কিন্তু খোলা সমুদ্রে, উত্তর অ্যামেরিকা আর হাওয়াই দ্বীপের মাঝামাঝি৷ হোয়াইট শার্ক নামধারী হাঙরদের ভিড় লেগে থাকে এখানে, হয়তো জলের বিভিন্ন স্রোত তাদের ভালো লাগে বলে৷
ছবি: Pterantula (Terry Goss) via Wikimedia Commons
সারগাসো সি
স্বয়ং কলম্বাস নাকি ১৮৯২ সালে তাঁর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সময় এই দৃশ্য দেখেছিলেন৷ বার্মুডার দ্বীপগুলোকে ঘিরে রয়েছে এই সারগাসো সাগর৷ সারগাসো নামটি এসেছে সার্গাসুম নামধারী ভাসন্ত সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে৷ সার্গাসুম-কে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ভাসন্ত সোনালি ক্রান্তীয় অরণ্য’৷ এই ‘অরণ্যে’ বহু জীব ও প্রাণীর বাস৷ ইউরোপীয় ও অ্যামেরিকান বানমাছেরা শুধু এখানেই ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
অ্যাটলান্টিসের পাড়
ভারত মহাসাগরের এই জলমজ্জিত দ্বীপটি নাকি লক্ষ লক্ষ বছর আগে সাগরে ডুবে গিয়েছিল – এই কি তাহলে কিংবদন্তীর অ্যাটলান্টিস মহাদেশ? সাগরের ৭০০ থেকে ৪,০০০ মিটার নীচে চড়াই-উৎরাই, সৈকৎ কিংবা উপহ্রদ, সবই পাওয়া যায় – সেই সঙ্গে বড় বড় অ্যানেমনি, সুবিশাল স্পঞ্জ ও প্রবাল৷
ছবি: The Natural Environment Research Council and IUCN/GEF Seamounts Project C/O Alex D Rogers
সারা পৃথিবীর, গোটা মানবজাতির সম্পদ
পাঁচটি স্থানই সাগরের জলভূমির আন্তর্জাতিক অংশে, কোনো বিশেষ দেশের তাঁবে নয়৷ তার খারাপ দিকটা হল এই যে, এই ধরনের এলাকা সুরক্ষিত বা সংরক্ষিত করা কঠিন৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আখ্যা দেওয়াটা তার একটা পন্থা হতে পারে৷