নানা রকম প্রতিকূলতার কারণে সমুদ্রের নীচের জগতের নাগাল পাওয়া আজও সহজ নয়৷ ইউরোপের বিজ্ঞানীরা এবার এমন সাবমেরিন ড্রোন তৈরি করেছেন, যারা দলবদ্ধভাবে অনেক দুরূহ কাজ সেরে ফেলতে পারবে৷
বিজ্ঞাপন
এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ইঞ্জিনিয়াররা এমন ড্রোন সাবমেরিন তৈরি করেছেন,যেগুলি শব্দসংকেতের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে সংলাপ চালাতে পারে৷ রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়ারা পেট্রিওলি এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই রোবটরা পানির নীচে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে সক্ষম৷ একে ‘ইন্টারনেট অফ আন্ডারওয়াটার থিংস' বলা চলে৷ এ এক অভিনব আইডিয়া, যার আওতায় সেন্সর ও রোবটের মতো বিভিন্ন ডিভাইস তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারে৷ এর ফলে মহাসাগর, হ্রদ ও নদীগুলির উপর নজর রাখার নতুন পথ খুলে যাচ্ছে৷''
নির্দিষ্ট কিছু সেন্সর নিয়ে একদল রোবট সমুদ্রের তলদেশ ঘুরে হারিয়ে যাওয়া কোনো বস্তু বা রাসায়নিক পদার্থের লিক শনাক্ত করবে৷ একসঙ্গে কাজ করে কম সময়ের মধ্যে তারা অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ পোর্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকার্ডো মার্টিন্স বলেন, ‘‘তাদের সংলাপও অনেকটা মানুষের মতো৷ পানির নীচে যন্ত্ররা বিশাল পরিসরে ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে৷ মানুষের কণ্ঠ ছাড়াও কানে শোনা যায় না – স্পেকট্রামের এমন ফ্রিকুয়েন্সিও কাজে লাগায় তারা৷''
সাবমেরিনগুলি সব তথ্য মাটির উপর এক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠায়৷ তাদের নির্দিষ্ট অবস্থান এবং তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির রাসায়নিক মিশ্রণের মতো পরিবেশগত তথ্য পর্দায় ফুটে ওঠে৷ রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোব্যার্তো পেত্রোকিয়া বলেন, ‘‘একই সময়ে একাধিক যান একটি এলাকা চষে বেড়ায় এবং সেন্টার থেকে আমরা সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করি৷ তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার নির্দেশ দেই৷ প্রায় সব সময়ে তাদের উপর নজর রাখি৷ পানির নীচে থাকলে এক অ্যাকুস্টিক চ্যানেল, উপরে এলে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ রাখি৷''
বিশেষ পানি-নিরোধক আবরণের কল্যাণে সাবমেরিন সমুদ্রের কয়েকশ' মিটার গভীরে নামতে পারে৷ অভিযান অনুযায়ী, তাদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ, রেকর্ড ও প্রেরণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ পোর্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকার্ডো মার্টিন্স বলেন, ‘‘অ্যাকুস্টিক মোডেম পানির নীচে যোগাযোগ সম্ভব করে৷ সেইসঙ্গে রয়েছে পরিবেশ সেন্সর এবং পানির নীচে চলাফেরা সম্ভব করতে এক কম্পিউটার সিস্টেম৷ প্রায় ৮ ঘন্টা চলাফেরা করার জন্য উপযুক্ত ব্যাটারিও রয়েছে৷ রেডিও ও স্যাটেলাইট যোগাযোগের মডিউল তো আছেই৷''
যানজট থেকে বাঁচতে উড়ন্ত গাড়ি
ফিলিপাইন্সের একজন উদ্ভাবক উড়তে পারে এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছেন, যাকে ফ্লাইং স্পোর্টস কার বলছেন তিনি৷ সড়কে সময় নষ্ট থেকে বাঁচতে ভবিষ্যতে পরিবহণ ব্যবস্থা কেমন হবে, এই গাড়িতে তারই প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
ড্রোনের প্রযুক্তি
মানুষহীন ছোট ড্রোনে ব্যবহৃত ‘মাল্টিকপ্টার’ প্রযুক্তিতে পরিচালিত হয় এই গাড়ি৷ এর উদ্ভাবক কিজ মেনদিওলা ক্যামেরা চালাতেন, এক সময় নাচতেন তিনি৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
উড়বে ২০ ফুট উঁচুতে
‘কনসেপ্টো মিলেনিয়া’ নামের এই গাড়ি ঘণ্টায় ৩৭ মাইল বেগে ২০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারে৷ তবে এর প্রথম ফ্লাইট হয় ১০ মিনিটের মতো৷ অভিনব এই গাড়িতে উড়ছেন একজন সাংবাদিক৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
বাঁচিয়ে দেবে কয়েক ঘণ্টা
২২০ পাউন্ড (প্রায় ১০০ কেজি) বহণে সক্ষম এই উড়ন্ত গাড়িয় ফিলিপাইন্সের রাজধানী ম্যানিলার মতো যানজটের শহরগুলোতে চলাচলের জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে দেবে বলে জানান মেনদিওলা৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
এসেছে অস্ট্রিলয়ান কোম্পানি
ছয়টি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে চলে এই গাড়ি৷ এর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এ প্রকল্প এগিয়ে নেয় স্টার৮ নামের একটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি৷ অভিনব এই গাড়িতে উড়ছেন একজন সাংবাদিক৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
উড়িয়ে রাখে মটর
ক্রাফট্স ১৬ রোটারি মটর এই গাড়িকে উড়িয়ে রাখে৷ উড়তে উড়তে যাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে মনেদিওলা বলেন, ‘‘সড়কে কোনো দূরত্বে যেতে যেখানে এক ঘণ্টা লাগবে, সেখানে এতে আপনি মাত্র পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবেন৷’’
ছবি: Reuters/E. Lopez
উদযাপন
ফিলিপাইন্সের বাতানগাস প্রদেশে রোববার নিজের উদ্ভাবিত উড়ন্ত গাড়ির পরীক্ষা চালানোর পর আনন্দ উদযাপনে কিজ মেনদিওলা৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
6 ছবি1 | 6
সাবমেরিনের মধ্যে এক সোনার ডিভাইসও রয়েছে, যার শব্দতরঙ্গের সাহায্যে ডুবে যাওয়া বস্তু শনাক্ত করা যায়৷ পোর্টো শহরের বন্দর এলাকায় হারানো একটি কন্টেনার শনাক্ত করেছে এই ব্যবস্থা৷ পোর্টো বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি লিনো আন্টুনেস বলেন, ‘‘তিন রকমের প্রয়োগের জন্য এমন ডিভাইস উপযুক্ত৷ প্রথমত নিরাপত্তা, দ্বিতীয়ত পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, যা আমাদের জন্য জরুরি এবং তৃতীয়ত বন্দরের জাহাজগুলির নিরীক্ষণ৷''
সমুদ্র থেকে নদী – যেখানেই ডুবুরির জন্য ঝুঁকি ও ব্যয়ের মাত্রা বেশি, সেখানেই এই মিনি সাবমেরিন কাজে লাগানো যেতে পারে৷ নতুন এই প্রযুক্তি পানির নীচের নীরব জগত বুঝতে আমাদের আরও সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়ারা পেট্রিওলি বলেন, ‘‘পানির নীচে আগ্নেয়গিরি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আবিষ্কার থেকে শুরু করে আমাদের উপকূল, অবকাঠামো ও বন্দরের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি আমাদের জগত সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবে৷ মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি৷''
ইনস্টাগ্রাম নয়, ড্রোনস্টাগ্রামের জগৎ
ড্রোন দিয়ে আকাশ থেকে তোলা ছবিকে বলে – ইনস্টাগ্রামের নকলে – ড্রোনস্টাগ্রাম৷ ‘ড্রোনস্টাগ্রাম’ নামের ফরাসি অনলাইন পরিষেবা আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকা মিলে বছরের সেরা ড্রোনস্টাগ্রাম ছবিগুলো বাছাই করেছে৷
ছবি: dronestagram/jcourtial
ল্যাভেন্ডার ফুলের বন্যা
ফ্রান্সের প্রোভোঁস অঞ্চলে ল্যাভেন্ডার ফুলের চাষ হয় সুগন্ধী তৈরির জন্য৷ ট্র্যাক্টর দিয়ে যখন সবে ‘ফুল তোলার’ কাজ শুরু হচ্ছে, ঠিক তখন ড্রোনের ক্যামেরার শাটার টিপেছেন জেরোম কুর্তিয়া – এবং ড্রোনস্টাগ্রাম প্রতিযোগিতার ‘‘প্রকৃতি’’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন৷
ছবি: dronestagram/jcourtial
সর্পিল রাস্তা
রক্তচোষা কাউন্ট ড্র্যাকুলার দেশ ট্রান্সিলভানিয়ার এই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথটির ছবি তোলেন রোমানিয়ান ফটোগ্রাফার কালিন স্টান – এবং ‘‘প্রকৃতি’’ পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন৷
ছবি: dronestagram/Calin-Andrei Stan
তুষারসূর্য
ফরাসি নাগরিক ফ্লোরিওঁ লেদুর সুমেরু অঞ্চল এতোই পছন্দ যে, তিনি সম্প্রতি বাস উঠিয়ে আইসল্যান্ডে দেশান্তরী হয়েছেন৷ ছবিটি তোলেন গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে৷ মাইনাস বিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বরফের আস্তরণের তিন কিলোমিটার উপরে ড্রোনটা আদৌ কাজ করবে কিনা, তাই নিয়েই ছিল চিন্তা৷ পরিবর্তে সেই ছবির জন্য জন্য পেলেন ‘‘প্রকৃতি’’ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার৷
ছবি: dronestagram/Florian Ledoux
ব্যাঙের ছাতা
দুবাইয়ের স্কাইক্রেপারগুলোকে ড্রোন থেকে সেরকমই দেখায় বটে – ইস্পাত আর কংক্রিটের তৈরি আখাম্বা সব ব্যাঙের ছাতা, দশ বছর আগেও যেখানে মরুভূমি ধু ধু করত, সেখানে কোন জাদুবলে হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে৷ লেবাননের মুকার্জেল তাঁর এই ছবিটির জন্য ‘‘নগরজীবন’’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন৷
ছবি: dronestagram/Bachirm
আসল স্পাইডারম্যান
মস্কোর মার্কারি টাওয়ার-এর কাচ যারা পরিষ্কার করেন, তাদের ছবি তোলার জন্য আলেক্সেই গঞ্চারভকে ড্রোন ব্যবহার করতে হয়েছে৷ দেখলে মনে হবে, তারা কাচ পরিষ্কার করছেন না – গোটা শহরটাকেই পরিষ্কার করছেন৷ ‘‘নগরজীবন’’ বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি৷
ছবি: dronestagram/Alexeygo
গেম, সেট অ্যান্ড ম্যাচ
তিনটিই জিতেছেন মার্টিন সাঞ্চেজ – এই ছবিটির জন্য ‘‘মানুষ’’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার জয় করে৷ নিউ জার্সির একটি ফাঁকা টেনিস কোর্টের এককোণে মার্টিনকে পড়ে থাকতে দেখে অন্য প্লেয়াররা ভেবেছিলেন মার্টিন বোধহয় পড়ে গেছেন বা চোট পেয়েছেন!
ছবি: Martin Sanchez
সৃজনশীলতা
ফরাসি নাগরিক টিবো বেগু ও তাঁর বান্ধবী মানোঁ আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের মানোঁর সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবরটা দিতে চাইছিলেন – একটু অন্যভাবে৷ তাই নর্মান্ডির সমুদ্রসৈকতে তোলা এই ড্রোনস্টাগ্রাম: টিবো আর মানোঁ মাটিতে শুয়ে ভিডিও গেমের কায়দায় পরস্পরের দিকে একটি পুরনো প্যারাম্বুলেটার ঠেলে দিচ্ছেন৷ ছবিটি ‘‘সৃজনশীলতা’’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পায়৷