তেল অপসারণ
৭ সেপ্টেম্বর ২০১২এই ধরণের দুর্ঘটনার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য৷ এছাড়া সমুদ্রের পানিতে ভাসতে ভাসতে সেই তেল চলে আসে উপকূল এলাকাতে৷ সমুদ্র থেকে দ্রুত তেল সরিয়ে নিতে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো বিশেষ প্রশিক্ষণ চালু করেছে৷ জার্মানির পাশেই বাল্টিক সাগরে চলে এই প্রশিক্ষণ৷
হেলসিঙ্কির পাশের বাল্টিক সাগর এলাকা৷ সেখানে ভাসছে একটি জাহাজ৷ তবে জাহাজটি দেখতে কিন্তু কিম্ভূতকিমাকার৷ কারণ জাহাজের দুই পাশে দুটি বিশাল আকারের যান্ত্রিক শুঁড় বের হয়ে আছে৷ জার্মানির তৈরি এই জাহাজটির নাম আর্কোনা৷ সেটি তার বিশাল শুঁড় দিয়ে পানিতে ভেসে থাকা তেল পরিষ্কার করছে, জানালেন ফিনল্যান্ড কোস্টগার্ডের বিশেষজ্ঞ টম লুনডেল৷ ‘‘এটির কাজ হলো পানি থেকে তেল তোলা, এজন্য সেটি জাহাজের দুইপাশের হাত ব্যবহার করছে৷ এভাবে তেল ভেসে জাহাজের কাছে চলে আসার পর পানি থেকে তেল তুলে ফেলছে৷''
আর্কোনার মত ৫০টি জাহাজ এখন তেল তোলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ কয়েকদিন আগেই হেলসিঙ্কি আর টালিন এর মাঝখানের সমুদ্র এলাকায় একটি তেলের ট্যাংকারের সঙ্গে আরেকটি জাহাজের সংঘর্ষ হয়৷ ফলে প্রায় ১৫ হাজার টন তেল ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রে৷ মাইলের পর মাইল পানিতে শুধু তেল ভাসতে থাকে৷ সেই তেল ভাসতে ভাসতে ফিনল্যান্ডের উপকূল এলাকা পর্যন্ত চলে আসে৷ সমুদ্রে তেল দুর্ঘটনার ব্যাপারে সুইডেনের কোস্টগার্ড এর কর্মকর্তা বের্ন্ট স্টেড্ট বলেন, ‘‘এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটা বাল্টিক সাগরের সরু একটি চ্যানেলের পানিকে দূষিত করছে৷ আর এই এলাকায় এরকম সরু আরও অনেক পানিপথ রয়েছে৷ বর্তমানে তেলবাহী ট্যাংকারের সংখ্যাও বেড়েছে এবং এগুলো আকারেও অনেক বড়৷''
এই কারণে আগে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনায় পড়লেও সেগুলো ছিলো ছোটখাটো দুর্ঘটনা৷ তবে যত সময় গিয়েছে ততই বড় বড় ট্যাংকার দুর্ঘটনায় পড়েছে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে৷ প্রশিক্ষণ চলাকালে উদ্ধারকারী জাহাজগুলো সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে সেটা তুলে আনার চেষ্টা করে৷ তবে খুব বেশি তেল যেন সমুদ্রে না ছড়ানো হয় সেটির দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়৷ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু তেল ছড়িয়ে দেওয়া হয় তারপর সেটি পরিষ্কার করে আর্কোনার মত জাহাজ৷ সমুদ্রে ঢেউ এবং বাতাসের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাসতে থাকে জাহাজটি৷ এরপর পানিতে ভাসতে থাকা তেলগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ঠেলে দিয়ে সেখান থেকে অপসারণ করা হয় জাহাজের যান্ত্রিক শুঁড়ের মাধ্যমে৷
তাদের এই কাজে সহায়তা করছে হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস গবেষণা বিভাগ৷ তাদের একটি দল একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সমুদ্রে ভেসে থাকা তেল আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কোনদিকে যাবে৷ হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাকারি কুইকা বললেন, ‘‘যদি সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরা আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে আগে থেকেই বলে দিতে পারি যে তেলটি ভাসতে ভাসতে কোথায় চলে যাবে৷ ফলে আমরা বুঝতে পারি কোন এলাকার বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ যেমন যদি আমরা দেখি যে ভাসমান তেল ওই এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাহলে আমরা আগে থেকেই সেখান থেকে তেল তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি৷''
এতগুলো জাহাজের একসঙ্গে মহড়া চালানোটাও কম ঝক্কির কাজ নয়৷ তাই একটি জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ৷ সেখান থেকেই সবগুলো জাহাজের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে ৩০ টি জাহাজ, দুটি হেলিকপ্টার৷ এছাড়া প্রায় ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অংশ নেয় এই প্রশিক্ষণে৷ তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাকমতই চলেছে এই প্রশিক্ষণ, কারণ আবহাওয়াও ওই সময় ভালো ছিলো৷ আবহাওয়া ভালো না থাকলে এই ধরণের তেল অপসারণের কাজ চালানোটা কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিরূপ আবহাওয়ার সময় এই ধরণের কাজ বন্ধও রাখতে হয়৷ তখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না৷
প্রতিবেদন: ফ্রাঙ্ক গ্রোটেল্যুশেন / আরআই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক