ফ্রি-ডাইভিং মানে অক্সিজেন ছাড়া সাগরে নামা আর ডুবসাঁতার দেওয়া৷ এরা দম রাখতে পারেন পাক্কা পাঁচ মিনিট৷ নামেন প্রায় একশো মিটার! স্বাধীন ডুবুরিরা সাগরের জীবজন্তুর খুব কাছে আসতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
ডাইভিং, অর্থাৎ ডুবুরি হওয়াটা একটা স্পোর্ট বা খেলা বটে, কিন্তু ফ্রেডেরিক বুইল-এর মতো ফ্রি-ডাইভার হতে গেলে বিশেষ ক্ষমতা লাগে৷ ফ্রি ডাইভার বা স্বাধীন ডুবুরিরা কোনো যন্ত্রপাতি সাথে নেন না৷
ফ্রেড যেভাবে সাগরকে দেখেন, তা সব মানুষ পারে না৷ সাগরের পানির নীচে যেন ফ্রেড-এর ঘরবাড়ি৷ সাগরবক্ষে অন্যান্য মানুষের যখন মনে হয়, তারা কোনো অন্য জগতে এসে পড়েছেন, ফ্রেড তখন শান্ত, তৃপ্ত৷ ফ্রেড-এর মনে হয় তিনি যেন জলের তলায় এই স্বপ্নজগতের বাসিন্দা৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার দরুন তিনি এমন সব জায়গায় ডুব দেওয়ার অনুমতি পান, যা সাধারণ ডুবুরিদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ৷
যেহেতু ফ্রেড অক্সিজেনের বোতল আর অক্সিজেনের মুখোশ থেকে প্রশ্বাসের বুদবুদ ছাড়াই ডুব দেন, সেহেতু জলের তলায় জীবজন্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি হলেন আদর্শ ডুবুরি৷ মাঝেমধ্যেই তিনি মেরিন বায়োলজিস্টদের হয়ে কাজ করেন, কারণ সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা জন্তজনোয়ারদের ততোটা কাছে আসতে পারেন না, ফ্রেড যতটা পারেন৷ লাজুক প্রাণীদের টোপ দিয়ে কাছে আনা হয়, কিন্তু যেহেতু ফ্রেডকে পানিতে অনেকটা মাছের মতোই দেখায়, মাছ বা জীবজন্তুরা তাঁকে দেখে ভয় পায় না৷
এক আশ্চর্য জগৎ
জলের তলায় পানিতে ভরা গুহায় ডুব দেওয়া একটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার৷ বিশেষ করে সাথে যখন কোনো অক্সিজেন থাকে না, তখন প্রাণসংশয় ঘটাও আশ্চর্য নয়৷ ফ্রেড যে জলমগ্ন গুহায় ঢুকেছেন, সেখানে অনন্য কিছু স্পঞ্জ আর অতি ক্ষুদ্র জীব পাওয়া যায়, যারা বাইরের গোলমাল সম্পর্কে অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ তারা এতোই ঠুনকো যে, সাধারণ ডুবুরিদের অক্সিজেন নেওয়ার সরঞ্জাম থেকে যে বুদবুদ বেরোয়, তার আঘাতেই এই সব জীব ও তাদের পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে৷ কাজেই বিশেষভাবে অভিজ্ঞ ডুবুরিদের ডাইভ বা ডুবসাঁতার হল একমাত্র বিকল্প – এবং বিপদ দেখলেই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব জলের ওপরে ফিরে আসা৷
সাতটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা
পরিবেশবাদীদের উদ্যোগের কারণেই হোক কিংবা বিভিন্ন দেশের সরকারের সচেতনতা বাড়ার কারণেই হোক, বিশ্বের কয়েকটি স্থানে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে উঠেছে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন সাতটি অঞ্চলের কথা৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্ক
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব উপকূল জুড়ে থাকা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে৷ সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ৷ আর সামুদ্রিক জাহাজগুলোর জন্যও নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: imago/blickwinkel
প্যাসিফিক রিমোট আইল্যান্ডস মেরিন ন্যাশনাল মনুমেন্ট
আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা৷ প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংরক্ষিত এলাকায় সবুজ কচ্ছপ, বিভিন্ন রকমের ঝিনুক, হাঙর, কাঁকড়া, ডলফিন, তিমি ইত্যাদি বাস করে৷
ছবি: imago/blickwinkel
গালাপাগোস মেরিন রিজার্ভ
এখানে এমন সব প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় যেগুলো বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ গালাপাগোস মেরিন রিজার্ভের দেখভাল করে ইকুয়েডর৷ উন্নয়নশীল বিশ্বের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা এটি৷
ছবি: imago/Westend61
বোয়ি সিমাউন্ট মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া
ক্যানাডার উপকূল থেকে ১৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের পানির নীচে একটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে৷ নাম ‘বোয়ি সিমাউন্ট’৷ সেখানকার প্রাণিজগৎ বেশ সমৃদ্ধ৷
ছবি: BR
চাগোস দ্বীপপুঞ্জ
মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে এই দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত৷ ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চলকে ২০১০ সালে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: NASA Johnson Space Center/Image Science & Analysis Laboratory
দ্য শ্লেসভিশ-হলশ্টাইন ভাডেন সি ন্যাশনাল পার্ক
জার্মানির সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক৷ আয়তন ৪,৪১০ বর্গকিলোমিটার৷ ২০০৯ সালে এর নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্য পেলাগোস স্যাঙ্কচুয়ারি ফর মেডিটেরেনিয়ান মেরিন ম্যামলস
ফ্রান্স ও ইটালি ঘেঁষে ভূমধ্যসাগরের যে অংশ রয়েছে সেখানে বসবাস করা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বাঁচাতে এই অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে৷ এটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা যেটি দুটো দেশ জুড়ে অবস্থিত৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
7 ছবি1 | 7
নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে ফ্রেড-এর মোলাকাত হয়েছে৷ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে দেখা হয় এক হাম্পব্যাক হোয়েল বা তিমিমাছ ও তার বাচ্চার সঙ্গে৷ দু'পক্ষই একে অপরকে দেখে মুগ্ধ ও চমৎকৃত! বাচ্চা তিমিটি আদৌ লাজুক নয়, বরং খেলার সাথী পেয়ে ভারী খুশি৷ কিন্তু ফ্রেড-এর ভুললে চলবে না যে, এই খোকা তিমির সাইজ প্রায় একটা ছোটখাটো ট্রাকের সমান৷
মেক্সিকোর উপকূলে সিল মাছগুলোও ফ্রেড-কে খুব কাছে আসতে দেয়৷ অবশ্য শুধু ফ্রি-ডাইভিং-এর কারণেই যে ফ্রেড এই সব প্রাণীদের এতো কাছে আসতে পারেন, এমন নয়৷ সেজন্য লাগে সাহস আর এই সব প্রাণীদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা৷ আবার সব জীবজন্তুই এই লোমওয়ালা সিলদের মতো নিরীহ নয়৷ সাধারণ একটি নিয়ম হল, জন্তুটি আসবে ডুবুরির কাছে, ডুবুরি জন্তুটির কাছে যাবে না৷ তাহলেই জন্তুটি নিরাপদ বোধ করবে এবং ডুবুরির কাছে আসার আস্থা পাবে৷
প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব নিয়ম আছে, আবার একক জীবজন্তুর আছে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ৷ কিছু জীব সাধারণভাবেই কৌতূহলী, কারো কারো আত্মবিশ্বাস খুব বেশি, আবার কেউ কেউ খুব লাজুক৷ কিন্তু তাদের সকলেই একটা নিজস্ব, নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলে৷ ডুবুরিদের সেটা মেনে চলা উচিত৷
ফ্রি-ডাইভিং-এর জন্য লাগে অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতা, সেই সঙ্গে প্রচুর পরিশ্রম এবং আত্মসংযম৷ কেননা ফ্রি-ডাইভিং শুধু স্পোর্ট নয়, একটা জীবনদর্শনও বটে৷
সমুদ্র সৈকতে বালুর দুর্গ
বিশ্বের সব সমুদ্র সৈকতেই প্রতিদিন কেউ না কেউ মাতেন অদ্ভুত এক খেলায়৷ বিশ্বের অনেক দেশে সেই খেলা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে৷ বালু দিয়ে দুর্গ গড়া! দেখুন তারই অসাধারণ কিছু নমুনা৷
ছবি: Getty Images/M. Renders
ঘর বাঁধা বাঁধা খেলা
শৈশবে সুযোগ পেলে বালু দিয়ে ঘর বাঁধা বাঁধা খেলেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে৷ শৈশবের এই নেশা অনেকে আবার চিরকাল ধরে রাখেন – সমুদ্রের কাছে গিয়ে বালু দিয়ে গড়ে তোলেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম৷
ছবি: Colourbox/O. Dimier
অনন্য বেলজিয়াম
বালু দিয়ে শিল্প সৃষ্টিতে বেলজিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার৷ এই শিল্পকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ করে ধরেও রেখেছে দেশটি৷ দারুণ একটা উৎসব হয় সেখানে৷ সে উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত লোক শুধু বালু দিয়ে দুর্গ, মূর্তি ইত্যাদি গড়ে৷ বন্দর নগর অস্টেন্ডেতে ক’দিন আগেও হয়ে গেল এমন এক উৎসব৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
বরফ-রানি
অস্টেন্ডের উৎসবে এখন বরফ রানি ‘এলসা’-র রাজত্ব৷ ১২টি দেশের ৩০ জন শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল ‘এলসা’৷ শিল্পীরা কাজটি করেছেন ডিজনি গ্রুপের হয়ে৷ ঝড়-বৃষ্টি সামলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অবস্তাতেই থাকবে অপূর্ব সুন্দর এই বালুর মূর্তি৷ এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখেই ‘এলসা’-কে গড়েছেন শিল্পীরা৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
সমুদ্রের দেবতা
বালু দিয়ে দুর্গ বা মূর্তি গড়া অস্ট্রেলিয়াতেও বেশ জনপ্রিয়৷ মেলবোর্নে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় এমন শিল্পের প্রদর্শনী৷ ওপরের ছবিটি ২০১৩ সালের প্রদর্শনীর৷ সেবার প্রদর্শনীর ‘থিম’ ছিল ‘আন্ডার দ্য সি’, অর্থাৎ সমুদ্রের নীচের জগত৷ তাই গ্রীক পুরান থেকে উঠে এসেছিলেন সমুদ্রের দেবতা পসিডন৷
ছবি: Getty Images/G. Denholm
রহস্য
‘বালুর বাঁধ’ মানেই নাকি ভঙুর কিছু৷ কিন্তু বালি দিয়ে গড়া মূর্তি, দুর্গ বা অট্টালিকা কেন এত উঁচু, এত বড় হলেও ভাঙে না? রহস্যটা কী? আসলে নাজুক বালুর স্বভাব বদলাতে অনেক রকমের কৌশলের আশ্রয় নিতে হয় শিল্পীদের৷ কখনো কখনো খুব ভারি কিছু দিয়ে চেপে বালুকে পাথরের মতো শক্ত করা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের রহশাস-এর এক উৎসবে প্রদর্শিত এই মূর্তিটিকে ওভাবেই শক্ত করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv
সবচেয়ে বড় জাদুঘর
জাপানেও সমুদ্র আছে, বালু নিয়ে শিল্পের খেলাও আছে সেখানে৷ ২০০৬ সালে বালু-শিল্প নিদর্শনের সবচেয়ে বড় জাদুঘরটির উদ্বোধন হয়েছে টোট্টরি শহরে৷ এছাড়া আশিয়া সমুদ্র সৈকতে বালু দিয়ে মূর্তি তৈরির উৎসবও হয় প্রতি বছর৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
শিশুগন দেয় মন.....
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের অজপাড়াগাঁয়ের শিশু-কিশোরদের মতো ইউরোপ-অ্যামেরিকার শিশু-কিশোররাও বালু পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ নিমেষেই তারাও মেতে ওঠে স্বপ্নের সৌধ গড়ার খেলায়৷