সমুদ্রতীরের কাছে এক দ্বীপের উপর মঠ৷ শুধু ভাটার সময়েই সেখানে পৌঁছানো যায়৷ ফ্রান্সের এই সৌধের টানে অনেক পর্যটক ভিড় করেন৷ প্রায় হাজার বছর পুরানো সেই অ্যাবির অনেক রহস্য আজো অজানা থেকে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের মঁ স্যাঁ মিশেল মধ্যযুগের সবচেয়ে জটিল নির্মাণের অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত৷ আজও সেখানে পৌঁছানোর পথ অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে৷ তবে অক্ষত শরীরে একবার সেখানে পৌঁছতে পারলে অনেক রহস্য সমাধানের সুযোগ রয়েছে৷ আন ল্য পাজ নয় বছর ধরে মঁ স্যাঁ মিশেল অ্যাবির গাইডের কাজ করছেন৷
এই অ্যাবি চার্চের অর্ধেক রোমানেস্ক, বাকি অর্ধেক গথিক শৈলি অনুযায়ী তৈরি৷ আনাচেকানাচে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ সবচেয়ে গভীর রহস্যগুলি আন্ পরে জানাবেন৷ সবার আগে তিনি একটি দরজার মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীদের নিয়ে গেলেন৷
এই ‘ফ্লাইং বাট্রেস' গথিক নির্মাণশৈলির বৈশিষ্ট্য৷ সেগুলি বাইরের কাঠামো ধরে রাখে৷ একটি অংশ বিশেষ সুন্দরভাবে গড়ে তোলা হয়েছে৷ সেটির আরো একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ আন ল্য পাজ বলেন, ‘‘এটি এক ফ্লাইয়িং বাট্রেসের উপর গড়ে তোলা হয়েছে, যা আসলে ঘোরানো সিঁড়ি৷ অনেকটা গ্র্যানাইটের মধ্যে লেসের কাজের মতো৷ মনে রাখতে হবে, সেই মধ্যযুগেই এটা তৈরি হয়েছে৷ আমরা প্রায় শীর্ষে পৌঁছে গেছি৷ এবার বামদিকে শুধু বেল টাওয়ার এবং শেষে একেবারে উপরে আর্চ্যাঙ্গেল স্যাঁ মিশেলে যাওয়া যায়৷ সেটিকে আবার সম্ভাব্য ঝড়ঝঞ্ঝা বা বজ্রপাত প্রতিরোধের লাইটনিং রড হিসেবেও কাজে লাগানো হয়৷ কারণ অতীতে এমন বিপর্যয়ের ফলেই বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷''
আজ যেখানে পর্যটকরা ছবি তুলতে ভিড় করেন, হাজার বছর আগে সেখানে বেনিডিক্টাইন সন্ন্যাসীরা বাস করতেন৷ মধ্যযুগেই হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এই অ্যাব দর্শন করতে আসতেন৷ পর্যটকদের ভিড়ের মাঝে কি বোঝা যায়, যে আজো সন্নাসীরা সেখানে বাস করছেন? আন জানালেন, ‘‘আসলে পাঁচ জন সন্নাসী ও সাত জন সন্নাসিনী, অর্থাৎ ১২ জন দিনে তিন বার প্রার্থনা করেন৷ ফরাসি সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ার আওতায় এই সৌধে সার্ভিসের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এর বদলে তাঁরা সেখানে থাকার সুযোগ পান৷ অবশ্যই ব্যক্তিগত স্তরে সেই ব্যবস্থা রয়েছে৷''
ভ্রমণের শেষে মঁ স্যাঁ মিশেলের সবচেয়ে কালো অধ্যায়ের দিকে নজর দেবার পালা৷ অত্যন্ত জঘন্য অপরাধীদের জন্য দুটি আইসোলেশন সেল এখনো সেখানে দেখা যায়৷ ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত সময়ে গোটা অ্যাবিটা কারাগার হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে৷ আন ল্য পাজ বলেন, ‘‘সম্ভবত অনেক ঘণ্টা বা অনেক দিন ধরে থাকা বন্দিরাই খোদাই করে কিছু লিখেছে৷ কয়েকজন বন্দি তাদের কয়েক বছরের কষ্টের কথা বিভিন্ন জায়গায় লিখেছে৷ ভাবুন, এখানে থাকা কত ভয়ংকর ছিল৷''
অনেক শতাব্দী ধরে এই মঠ দ্বীপে যা ঘটেছে, তার অনেকটাই এখনো অজানা৷ গবেষণা চালিয়েও হয়তো অনেক তথ্য কখনোই জানা যাবে না৷ তাই মঁ স্যাঁ মিশেলকে ঘিরে আজও অনেক অনুমান ও কল্পনা দানা বাঁধছে৷
ইয়ানা ওর্টেলইয়ুডিট শালার/এসবি
গ্রীষ্মে অপূর্ব নীল ফ্রেঞ্চ রিভেরা
২০২২ সালের গ্রীষ্মে ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফ্রান্সের দক্ষিণপূর্বের প্রভেন্স অঞ্চল৷ মূলত কোৎ দ্য আজুর বা রিভেরা অঞ্চলের সৌন্দর্যই এর মূল কারণ৷ কেমন দেখতে এই অঞ্চল? কী আছে এখানে?
ছবি: Global Travel Images/picture alliance
পথটাই সুন্দর
উপকূল ধরে সড়ক৷ সেই সড়ক চলে গেছে ক্যাসিস ও মেন্টন এলাকা দিয়ে৷ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার মনোমুগ্ধকর রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে যান৷ বারকয়েক গাড়ি থামিয়ে বালুময় আর পাথুরে সৈকত একটিবার ডুব দেবার আমন্ত্রণ ফেরাতে পারবেন না নিশ্চিত৷
ছবি: Boutria Luc/maxppp/picture alliance
ক্যাসিস ও ক্যালঙ্কেস
প্রকৃতির স্বাদ খুব কাছ থেকে পেতে চাইলে ক্যাসিসের ছোট্ট বন্দর শহরে ক্যালঙ্কেস জাতীয় উদ্যানে যেতে পারেন দর্শনার্থীরা ৷ এটি এবড়ো থেবড়ো উঁচু শিলার পার্ক৷ ক্যাসিস থেকে এই উদ্যানে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Kreder Katja/prisma/picture alliance
সেন্ট-ট্রোপেজ
১৯৫৫ সালে সেন্ট ট্রোপেজ সৈকতে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছিল৷ ব্রিজিত বারদতের ‘‘অ্যান্ড ফরেভার লিউরস উওম্যান’’৷ এর মধ্য দিয়ে বারদতের ক্যারিয়ারও যেমন ওপরে উঠতে শুরু করে তেমনি দর্শনার্থীদের কাছেও পরিচিতি পেতে শুরু করে সেন্ট ট্রোপেজ দ্বীপটি৷ গ্রীষ্মে, শহরটিতে উপচে পড়েন সেলিব্রিটি ও তাদের ভক্তরা, সঙ্গে সূর্যপ্রেমী পর্যটকরাতো আছেনই৷
ছবি: Christian Liewig/ABACAPRESS/picture alliance
সেন্ট-রাফায়েল
এর মনোমুগ্ধকর উপসাগরসহ বৈচিত্র্যময় উপকূল জল ক্রীড়ামোদীদের উত্সাহীদের জন্য একটি জনপ্রিয় এলাকা৷ শুধু সমুদ্র থেকেই পুরো রিভেরা অঞ্চলটি দেখা যায়৷ আপনি যদি এটি সত্যি অনুভব করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই উপকূলীয় শহরগুলোর একটিতে একদিন বেড়ানো উচিত৷ এই নীল উপকূল আপনার চোখকে আরাম দেবে৷
ছবি: Valletta Vittorio-AGF/Bildagentur-online/AGF/picture alliance
কর্নিশ দ্য’র
কর্নিশ মানে ক্লিফ রোড৷ ফ্রেজুস ও মদেলিউর মধ্যে কর্নিশ দ্য’র সোনালি খাড়া পর্বত সংলগ্ন সড়কটিকে ফ্রেঞ্চ রিভেরার সবচেয়ে সুন্দর রুটগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ একে এমনটি বলার কারণ সূর্যের আলোয় পাথরগুলো লাল ও সোনালি রং ধারণ করে৷
কান শুনলেই কেবল বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবের কথা মনে হয়৷ এখানেই রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল৷ কান আগে ছিল মাছ ধরা গ্রাম৷ ১৮৬৮ সালে ভূমধ্যসাগরতীরবর্তী ক্রোয়েসেট প্রমনেড সড়কটি নির্মাণের ফলে বদলে যায় কান৷
ছবি: Mandoga Media/picture alliance
অঁতিবে ও পিকাসো
১৯৪৬ সালে বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো অঁতিবের একটি দুর্গে তিন মাস কাটান৷ সেখানে তৈরি তার পেইন্টিং, ড্রয়িং, ট্যাপেস্ট্রি ও সিরামিকের অসংখ্য কাজ পরে শহর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেন৷ ১৯৬৬ সালে তিনি প্রাসাদটিকে পিকাসো জাদুঘরে পরিণত করেন৷
ছবি: Fraser Hall/robertharding/picture alliance
নিস
নিসের পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে ‘প্রোমেনেড দেস অ্যাংলাইস’ নিসের ল্যান্ডমার্ক৷ এটি ১৯ শতকে গ্রেট ব্রিটেন থেকে শীতকালীন ছুটির কাটাতে আসা পর্যটকদের জন্য নির্মিত হয়েছিল৷
ফ্রান্সের মাঝখানে থেকেও সম্পূর্ণ স্বাধীন৷ নাম তার মোনাকো৷ নিস ও মেন্টনের মাঝে জমকালো এই নগররাষ্ট্রটি বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ৷ ১৯৫৫ সাল থেকে প্রতি বছর এখানে ফর্মুলা ওয়ান রেস হয়ে থাকে৷
ছবি: HOCH ZWEI/picture alliance
মেন্টন
মেন্টনে ছুটি কাটাতে আসেন মূলত ফরাসি ও ইতালীয়রা৷ কান বা নিসের কোলাহল এটি অনেক দূরে৷ শীতকালে, মনোরম শহরটি কোৎ দ্য আজুরের উষ্ণতম স্থান৷ ফেব্রুয়ারিতে এখানে হয় রঙিন লেবু উৎসব৷