সমুদ্রের মাঝে এক টিলার উপর মনাস্ট্রি৷ জোয়ার-ভাঁটার খেলার মাঝে গোটা এলাকার রূপ বদলে যায়৷ এমন অসাধারণ স্থাপনাকে প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহার করে চোখ ধাঁধানো শোয়ের আয়োজন করেছেন এক ফরাসি ডিজে৷
বিজ্ঞাপন
মঁ স্যাঁ মিশেল এমন রূপে এর আগে কখনো দেখা যায় নি৷ ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমের বিখ্যাত মঠ-টিলা ১৯৭৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে৷
এমন জায়গায় পারফর্ম করা প্যারিসের ডিজে মিকায়েল কানিত্রোর জন্য অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা৷ সেই সুযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘মঁ স্যাঁ মিশেল এক ঐতিহাসিক ও প্রতীকী স্থান৷ অসাধারণ দৃশ্যের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পরিবেশও রয়েছে৷ এই জায়গা আমাকে অনেক প্রেরণা দেয়৷ শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে দর্শনীয় স্থান হিসেবে সবার আগে এখানেই এসেছিলাম৷ এমনকি আমার প্রপিতামহীও সঙ্গে ছিলেন৷''
প্যারিসের এই ডিজে ও তাঁর টিম প্রায় ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি চালিয়েছিলেন৷ এমন দুরূহ কাজ সম্পর্কে কানিত্রো বলেন, ‘‘এই জায়গাটি অত্যন্ত জটিল৷ সমুদ্রের মাঝে তৈরি এই কেল্লা অবশ্যই প্রযুক্তিগত ও শৈল্পিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে৷ এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সত্যি কঠিন৷’’
১৫৭ মিটার উঁচু এই মনাস্ট্রি এক হাজার বছরেরও আগে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের এক টিলার উপর নির্মিত হয়েছিল৷ স্থাপত্য জগতের এক মাস্টারপিস হিসেবে সেটি পরিচিত৷
ভিন্ন রূপে মঁ স্যাঁ মিশেল
04:33
সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা হিসেবে ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম এই মঠের প্রতিটি কোণ চেনেন৷ ১৮৭৪ সালে এই স্থাপনাকে জাতীয় সৌধের মর্যাদা দেওয়া হয়৷ জায়গাটি ঘিরে মানুষের মুগ্ধতা কখনোই কাটে না৷ ফ্রঁসোয়া বলেন, ‘‘আমার মতে, এখানে প্রবেশ করলেই আমরা যেন আবার শিশু হয়ে উঠি বলেই এত আবেগ জেগে ওঠে৷ ছোট ছেলেদের জন্য এটা যেন তাদের কাঙ্খিত খেলনার দুর্গ৷ ছোট মেয়েদের জন্য সিন্ডারেলার রূপকথার দুর্গ৷’’
আইফেল টাওয়ার ও ভার্সাই প্রাসাদের পর মঁ স্যাঁ মিশেল দর্শনীয় স্থান হিসেবে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আকর্ষণ করে৷ সেই মধ্যযুগেও শিল্পীদের জন্য জায়গাটির জাদুময় আকর্ষণ ছিল৷ তীর্থস্থান হিসেবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম মনে করিয়ে দেন, ‘‘গোটা ইউরোপ থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী সে সময়ে এখানে আসতেন৷ মোট জনসংখ্যার বিচারে সেই সংখ্যা সত্যি বিস্ময়কর৷ আজ গোটা বিশ্ব থেকে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ আসেন৷ মধ্যযুগের তীর্থযাত্রীদের পদচিহ্ন বরাবর তাঁরা এগিয়ে চলেন৷’’
চোখ ধাঁধানো লাইট শো ইভেন্টের আওতায় ডিজে মিকায়েল কানিত্রো এমনকি মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবিও দেখাচ্ছেন৷ বিভিন্ন ঐতিহাসিক শোধের উপর তিনি এমন ছবি নিক্ষেপ করেন৷ এভাবে তিনি বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চান৷ মিকায়েল বলেন, ‘‘আমার মনুমেন্টাল ট্যুরের মাধ্যমে এমন অনন্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলিকে আমি ভিন্ন স্বাদে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিয়ে আসতে চাইছি৷ তারা ইলেকট্রনিক মিউজিক শোনে৷ অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষ ক্লাবে না গিয়েও আমার সংগীতের স্বাদ পাচ্ছেন৷’’
ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষ্যে প্যারিসের এই ডিজে মনাস্ট্রি টিলায় পার্টির আবহ সৃষ্টি করেছেন৷ এক রাতের জন্য এই মঠ লাইট শো-র উজ্জ্বল মঞ্চ হয়ে উঠেছে৷ ইলেকট্রো বিটের তালে প্রাচীন প্রাচীর কেঁপে উঠছে৷
ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম অবশ্য তাঁর প্রিয় মঁ স্যাঁ মিশেলে নীরবতাই পছন্দ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি সন্ধ্যায় এখানে অসাধারণ এক প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে৷ সেটা হলো সূর্যাস্ত৷ সূর্যাস্তের এমন অভিজ্ঞতা অন্য কোথাও সম্ভব নয়৷''
পরিবর্তনশীল বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে মঁ স্যাঁ মিশেল অতীতের মতো বর্তমানেও মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে চলেছে৷
কাটিয়া লিয়র্শ/এসবি
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য় তালিকায় ইউরোপের ১১ ‘স্পা টাউন’
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় আছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ১১টি স্পা শহর৷ এই বিশ্ব ঐতিহ্যগুলোকে নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hackenberg
বাড কিসিংগেন, জার্মানি
প্রতিটি স্পা-এর মূল আকর্ষণই হলো এর জলের শরীর সারিয়ে তোলার ক্ষমতা৷ জার্মানির বাড কিসিংগেনে সাতটি খনিজ-সমৃদ্ধ ঝরণার জলে এমন স্পা গড়ে উঠেছে৷ এই জলের ভাপ আপনি নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিতে পারবেন, স্নান করতে পারবেন, এমনকি পানও করতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hackenberg
বাড এমস, জার্মানি
স্বাস্থ্য যত গুরুত্বপুর্ণ, সুখের অনুভূতিও ততই গুরুত্বপূর্ণ৷ নিজের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশা থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে নতুন ধরনের পর্যটন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ অভিজাতরা ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে শুরু করেন এবং এক স্থানে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় থাকতে শুরু করেন৷ তাদের চাহিদা মেটাতেই স্পা, পার্ক ও হোটেলের মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠে৷ ছবিতে তেমনই এক হোটেল, রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট রাজ্যের বাড এমসের কুরহোটেল৷
ছবি: picture-alliance /imageBROKER/M. Moxter
বাডেন-বাডেন, জার্মানি
ইউরোপের স্পা-শহরগুলোতে কেবল স্পাই থাকে না, বলড্যান্সের মতো নানা ধরনের বিনোদনের আয়োজনে অতিথিদের মন প্রফুল্ল করার সব ব্যবস্থাই থাকে৷ বাডেন-বাডেনের বিখ্যাত ক্যাসিনোর জুয়া খেলাও ছিল খুবই বিখ্যাত৷ ফিয়োদর দস্তয়ভস্কি এবং লিও টলস্টয়ের মতো শিল্পী-সাহিত্যিক-মিউজিশিয়ানরাও এখানে নিয়মিত আসতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
ফ্রানচিশকোভি লাজনিয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র
ইউরোপে পশ্চিম বোহেমিয়ান ট্রায়াঙ্গেলের স্পাগুলো বিশেষভাবে খ্যাত৷ ফ্রানচিশকোভি লাজনিয়ে এই অঞ্চলের তিন স্বাস্থ্য রিসোর্টের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং তুলনামূলক নতুন৷ আঠারোশ শতকের শুরুর দিকে এখানে এই ঝরণাগুলোর খোঁজ মেলে৷ শত বছর পর সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রানৎস এখানে একটি বিশাল স্পা তৈরি করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/Rodemann
কারলভি ভারি, চেক প্রজাতন্ত্র
ফ্রানচিশকোভি লাজনিয়ের পাশের শহর কারলোভি ভারি৷ পৃথিবীর সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী স্বাস্থ্য রিসোর্টগুলোর একটি এটি৷ চৌদ্দশ শতকেও এর ব্যবহারের কথা জানা যায়৷ প্রায় পাঁচশ বছর পর রাজ পরিবারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক জোসেফ ফন ল্য়োশার এই স্পায়ের জলে শরীর সারিয়ে তোলার ক্ষমতা নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখে এটিকে আরো জনপ্রিয় করে তোলেন৷ এরপর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে ফ্যাশনেবল স্পা রিসোর্ট হিসেবে গড়ে উঠেছে কারলভি ভারি৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Hubatka
মারিয়ান্সকে লাজনিয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র
চেক প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় স্পা রিসোর্টটিও বিশ্ববিখ্যাত৷ হাবসবুর্গ সম্রাট ফ্রানৎস ইয়োসেফ, ব্রিটিশরাজ এডওয়ার্ড, ইয়োহান ভোল্ফগাং ফন গ্যোয়েটে এবং ফ্রেডেরিক চোপিনও এখানে আসতেন৷ ঐতিহাসিক নোভে লাজনিয়ে হোটেলে ২২৫টি বিলাসবহুল কক্ষ রয়েছে৷ এখনও সেখানকার রাজকীয় কক্ষটি ভাড়া নেয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hackenberg
স্পা, বেলজিয়াম
‘হিলিং ওয়াটার‘ বা ‘শরীর সুস্থ করার জল‘ না বলে এখন এই খনিজ-সমৃদ্ধ জলধারাকে ‘স্পা‘ নামেই ডাকা হয়৷ বেলজিয়ামের এই শহরটিই স্পা নামে পরিচিত৷ শহরটিতে এমন প্রায় ৩০০ জলধারা রয়েছে৷ অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে এই ঝরণাগুলোকে কেন্দ্র করে স্পা হল, স্পা ভবন এমনকি স্পা ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়৷ বিভিন্ন রাজ্যের রাজা-সম্রাটরাও এখানে জড়ো হতেন নিয়মিত৷ এজন্য এই শহরকে কাফে দে লা ইউরোপ বা ইউরোপের কাফে নামেও ডাকা হতো৷
ভিশির জল বিশ্বজুড়ে পরিচিত৷ এই শহরের ভিত্তি এবং আত্মাও বলা যায় এই স্পা-কে৷ পঞ্চদশ লুই এবং বোনাপার্তেকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এখানে৷ তৃতীয় নেপোলিয়ান এই শহরে নিজের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ বানিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/B. Jaubert
মন্টেকাটিনি টের্মে, ইটালি
ইটালির পিসা এবং ফ্লোরেন্সের মাঝখানে অবস্থিত এই স্পা নগরী৷ শহরটিতে মাত্র ২০ হাজার বাসিন্দা৷ টুসকানির সবচেয়ে বড় এবং বিলাসবহুল স্বাস্থ্য রিসোর্ট এটি৷ অতিথিদের জন্য এখানে নানা ধরনের ২০০টি হোটেল এবং তিনটি থার্মাল বাথ রয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্টাবিলিমেন্টো টেট্টুচিও৷ এই স্পায়ের প্রবেশপথই মুগ্ধ করে দেয়ার মতো৷
ছবি: picture-alliance/Photononstop/B. Bacoup
বাথ, গ্রেট ব্রিটেন
ঊনবিংশ শতকে এই শহরে নির্মাণকাজ চলাকালে রোমান সাম্রাজ্যের একটি স্নানাগার আবিষ্কার হয়৷ প্রাচীন এই নিদর্শন পুনরুদ্ধার করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ তবে এখন আর এই প্রাচীন স্নানাগারে কাউকে স্নান করতে দেয়া হয় না৷ স্নানের জন্য ২০০৫ সালে পাশেই একটি আধুনিক থার্মাল স্পা তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Kung
বাডেন বাই ভিয়েন, অস্ট্রিয়া
২০০০ বছরের ঐতিহ্য় ধারণ করে আছে এই শহর৷ অন্য অনেক স্পা শহরের মতো এই শহরও রোমানরা তৈরি করেছিল৷ তবে বাডেনের নিজস্ব স্থাপত্য শিল্প সবাইকে মুগ্ধ করে৷ এখানে থার্মাল স্পা-এর ছাদ তৈরি ঝুলন্ত কাঁচ দিয়ে, যা ইউরোপের বৃহত্তম৷ আর নীচে রয়েছে ১৪টি ঝরণার সালফারসমৃদ্ধ জল৷