একদিকে বাণিজ্যিক স্বার্থ, অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণের তাগিদ – এই দুইয়ের মধ্যে সংঘাত আজ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়৷ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের এক দেশে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এক ভারসাম্য সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট লুসিয়ার জেলেদের গ্রাম সুফ্রিয়ার৷ বেশিরভাগ মানুষের রুজি-রোজগারের একমাত্র উৎস মাছ ধরা৷ জেলেরা যত বেশি সম্ভব মাছ ধরতে চান৷ ফলে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য৷ কারণ তাঁরা সমুদ্রে মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরা বন্ধ করতে চান৷ উপকূলের কাছে সংরক্ষিত এলাকা চিহ্নিত করে মাছ ধরা ও নোঙর করা নিষিদ্ধ করতে পারলে এটা সম্ভব৷ এর বদলে অন্যান্য জায়গায় জেলে, পর্যটক ও নৌকা মালিকরা যে যার কাজ করার অনুমতি পাবেন৷
স্থানীয় সমুদ্র সুরক্ষা সংগঠন বয়া দিয়ে সংরক্ষিত এলাকার সীমা চিহ্নিত করেছে৷ সুফ্রিয়ার সমুদ্র সুরক্ষা সংগঠনের অ্যান্টনি কাডাস বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে জেলেরা অনেকগুলি এলাকায় মাছ ধরতে চান৷ সেখানে আবার মানুষ আসে প্রকৃতি উপভোগ করতে৷ কয়েক ঘণ্টার জন্য ইয়ট নোঙর করা হয়৷ ফলে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়৷ তাই আমরা পাঁচটি ভিন্ন এলাকা আলাদা কাজের জন্য চিহ্নিত করে দিয়েছি৷ প্রত্যেকটিতে নির্দিষ্ট গ্রুপের অগ্রাধিকার রয়েছে৷''
কখনো কখনো হাজার হাজার পর্যটক এই দ্বীপে আসেন৷ গত বছর তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় চার লক্ষ, যা সেন্ট লুসিয়ার জনসংখ্যার দ্বিগুণ৷ এই দ্বীপ ও সেখানকার মানুষ পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু স্কুবা-ডাইভিং-এর ফলে অনেক প্রবাল প্রাচীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ সেখানে উদ্ভিদ ও প্রাণী লোপ পেয়েছে৷ আরও ক্ষতি এড়াতে সমুদ্র সুরক্ষা সংগঠন দিনে কয়েক বার পরীক্ষা করে৷
সৌরতে এগিয়ে, বায়ুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস বায়ু৷ কিন্তু ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও এই উৎসের ব্যবহার ততটা করতে পারেনি৷
ছবি: imago/Fotoarena
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিপিডিবি-র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০,৪১৬ মেগাওয়াট৷ এর মধ্যে ১৬ জুলাই রাতে রেকর্ড ৭,৪০৩ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Thorsten Schier
নবায়নযোগ্য জ্বালানি
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে, বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র আড়াই শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে৷ তবে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটা ৫-এ উন্নীত করতে চায় সরকার৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সৌরশক্তি
গত কয়েক বছরে সৌরশক্তি উৎপাদনে বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ৷ বর্তমানে মাসে প্রায় ৮০ হাজার ‘সোলার হোম সিস্টেম’ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৬৫ মেগাওয়াট৷
ছবি: BGEF
বায়ুশক্তি
সমুদ্র অঞ্চল বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযুক্ত৷ বাংলাদেশে প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন একটা নজর দেয়নি৷
ছবি: Jafar Alam/Coxs Bazar
মাত্র ২ মেগাওয়াট
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটো বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে৷ একটি ফেনীর সোনাগাজীতে৷ অন্যটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়৷ এই দুটোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ মেগাওয়াট৷
ছবি: Morten Stricker/AFP/Getty Images
৬০ মেগাওয়াটের জন্য চুক্তি
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের একটি যৌথ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ৷ এর আওতায় কক্সবাজারের কুরুশকুলে বঙ্গোপসাগরের তীরে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ আগামী মে মাস থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা৷
ছবি: cc-by-Shovon
‘উইন্ড ম্যাপ’
বায়ু থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালে সরকার ভারতীয় এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে৷ এর আওতায় কোম্পানিটি ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কুয়াকাটা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় বাতাসের গতি মেপে দেখছে৷
ছবি: imago/Fotoarena
7 ছবি1 | 7
তারা ডুবুরিদের সংখ্যা গোনে এবং মাথাপিছু মাশুল সংগ্রহ করে৷ সেই টাকা তাদের প্রকল্পে ব্যয় করা হয়৷ গোটা বিশ্বেই সামুদ্রিক ইকো-সিস্টেম হুমকির মুখে পড়ছে৷ ক্যারিবীয় অঞ্চলে হর্স্ট ফোগেল-এর প্রকল্প সেই জন্য ‘ব্লু সলিউশানস' নামের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে স্থান পেয়েছে৷ প্রকল্পের প্রধান হর্স্ট ফোগেল বলেন, ‘‘ব্লু সলিউশানস কর্মসূচি গোটা বিশ্বেই চালু রয়েছে৷ এর আওতায় সমুদ্র ও সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের টেকসই সুরক্ষার উপায় খোঁজা হয়৷ ক্যারিবীয় অঞ্চলে আমরা এমন সমাধানসূত্র খুঁজছি৷ এ ভাবে গোটা বিশ্বের কর্মসূচির সঙ্গেই আমরা যুক্ত৷''
‘ব্লু সলিউশানস' নামের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সুরক্ষা উদ্যোগ এই নেটওয়ার্কের জন্য অর্থ দেয়, যাতে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে৷ ‘হকবিল টার্টল'-এর মতো সামুদ্রিক কচ্ছপ লুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলির অন্যতম৷ সেগুলি এক মিটার পর্যন্ত লম্বা ও ৮০ কিলো ভারী হতে পারে৷ কিন্তু তাদের সুরক্ষার উদ্যোগে হয়ত বড্ড দেরি হয়ে গেছে৷
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য কি ধ্বংস হয়ে যাবে?
‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের অয়েল ট্যাংকারটির তলদেশ ফেটে যাওয়ায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল শেলা নদী থেকে পশুর নদী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ এদিকে স্থানীয় পদ্ধতিতে এ যাবৎ সামান্য পরিমাণ তেল অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
শ্বাসমূলীয় বন ও পশুপাখির জীবন বিপন্ন
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে৷ এর ফলে সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ ও পশুপাখির প্রাণ বিপন্ন হতে পারে৷ এছাড়া তেল সরানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া গেলে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসমূলীয় বন ও বনের পশুপাখির জীবনে বিপর্যয় বয়ে আসতে পারে৷ অথচ নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান দাবি করেছেন যে, তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
যে দুটি কাজ করা উচিত ছিল
সুন্দরবনে জাহাজ ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তত দুটি কাজ দ্রুত করা উচিত ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রথমত, নদীতে ফ্লোটিং বুমের সাহায্যে ভাসমান তেল যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা৷ দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণে আনা ভাসমান তেল তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
মন্ত্রণালয়ের নীতি লঙ্ঘন
সাম্প্রতিক কালে ফার্নেস তেল আমদানি অন্তত ২০ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশে৷ এ সব বিপজ্জনক পদার্থকে বলা হয় ‘হ্যাজম্যাট’ (হ্যাজারডাস ম্যাটেরিয়াল বা ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ) এবং এর পরিবহনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সাধারণ রীতি৷ মন্ত্রণালয় এই রীতি লঙ্ঘন করেছে৷ কোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি তাদের ছিল না৷
ছবি: DW/M, Mamun
জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কেন
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক যান চলা দেশের ও আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন৷ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কেন দেওয়া হলো, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: DW/M, Mamun
ডলফিনের মৃত্যু
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দুর্ঘটনার পর সুন্দরবন এলাকা ঘুরে এসেছেন৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মরতে শুরু করেছে৷
ছবি: Ingrid Kvale
জেলেদের কর্ম বিপর্যয়
সুন্দরবনে শেলা নদীতে তেল ছড়িয়ে বিপর্যয়ের পর সেখানকার কয়েক হাজারেরও বেশি জেলে পরিবারের দিন কাটছে অলস৷ নদী ও খালে তেল ভেসে থাকায় এসব জেলেরা জাল পেতে মাছ শিকার করতে পারছেন না৷ এর ফলে তাঁদের সংসার চালাতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
শেলা নদীতে ট্যাংকার দুর্ঘটনা
৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের ফার্নেল ওয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর, ছড়িয়ে পড়েছে তেল৷ সুন্দরবনের ৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায় এরই মধ্যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷