1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিসৌদি আরব

সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ইরান-সৌদির সতর্ক প্রয়াস

১১ নভেম্বর ২০২৪

কয়েক দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে চলছে বৈরি সম্পর্ক৷ তবে সৌদি আরব ও ইরান বুঝতে পারছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশেরই স্বার্থ রক্ষা হতে পারে৷

সৌদি আরব এবং ইরানের পতাকা
পাঁচ দশক ধরে চলা বৈরী সম্পর্কের অবসান চায় দুই দেশই, এমন আভাস মিলছেছবি: Daniel0Z/Zoonar/picture alliance

কয়েক দশক ধরে ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ তবে গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর দেশ দুটি সেই বৈরি সম্পর্ক থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে বলা যেতে পারে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের সাম্প্রতিক সময়ের কূটনৈতিক আদানপ্রদান এমন ইঙ্গিত দেয় যে, সম্পর্ক গভীর করতে চায় তারা৷ 

যেমন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরঘাচির সর্বশেষ সৌদি সফরের কথা বলা যেতে পারে৷ সফরে তিনি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ 

পাঁচ দশকের বৈরিতা

এই দেশ দুটির বৈরি সম্পর্কের ইতিহাস বেশ পুরোনো৷ বলা যেতে পারে, ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের পর থেকেই এমন সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ কয়েক দশকের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে দুই দেশের এই চেষ্টা খুবই নতুন এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট৷  

মূলত রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের ভাবনা একেবারে দুই রকম৷ আর এখান থেকেই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের যাত্রা শুরু৷ ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইসলাম নিয়ে ইরান সরকারের বোঝাপড়া ছিল সামাজিক বিপ্লবের জায়গা থেকে৷ দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে দেশটি নিজেকে শিয়া মুসলিমদের নেতা হিসেবে মেলে ধরেছে৷   

এদিকে সুন্নি মতাদর্শের সৌদি রাজপরিবার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ধর্মের ভূমিকার উপর নির্ভর করে থাকে৷ মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে ইসলামের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে এবং মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা এবং মদিনার জিম্মাদার মনে করে দেশটি৷ 

২০১০ সালের আরব বসন্তের সময়ে দেশ দুটির দুই মেরুর অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে৷ সৌদি রাজপরিবারের আশঙ্কা ছিল, গাঠনিক রূপ দিয়ে ইরান এই আন্দোলনকে ব্যবহার করতে পারে৷

দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে ইয়েমেন

তবে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নানা আলাপ-আলোচনা থাকা সত্ত্বেও দেশ দুটি ইয়েমেন প্রশ্নে দুই মেরুতেই অবস্থান করছে৷ ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবেদ রাবু মানসুরকে ক্ষমতাচ্যুত করা চেষ্টা করেছে এবং দেশটির কিছু অঞ্চল নিজেদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে৷ 

এদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নি দেশগুলোর যে জোট তা আবার পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে৷ তারা হুতিদের মোকাবিলা করতে চায়৷ মূলত এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ঠেকাতে তৎপর তারা৷

সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সৌদির স্বার্থ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এই চেষ্টায় সৌদি আরবের দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে৷

জার্মানির থিংক ট্যাংক সিএআরপিও-এর বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান সোনস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেলের স্থাপনায় ইরানের হামলার পর সৌদি সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারবে না৷ সেই সাথে প্রতিবেশী ইরানের সাথে বৈরিতার সমাধান করতে হবে৷''

তিনি বলেন, তেলের উপর নির্ভর করা রিয়াদের কাছে দেশটির অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করবে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার উপর৷ এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে সৌদি আরব৷

তাছাড়া সৌদি আরবে মিসাইল হামলার ঘটনাও বন্ধ করতে চায় রিয়াদ৷ সৌদি আরব মনে করে,হুতি মিলিশিয়াদের প্রভাবিত করতে পারে ইরান৷

তবে বার্লিনের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের হামিদরেজা আজিজি ডয়চে ভেলেকে বলেন, হুতির সব কার্যক্রমের উপর ইরান প্রভাব ফেলতে পারবে বিষয়টি এমন নয়৷ তবে হুতি এবং ইরান একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে৷ এই সম্পর্ক ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখতে পারে৷ 

ইরানের স্বার্থ

সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে নিজের সুনির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিল করতে চায় ইরান৷

আজিজি বলেন, বছরের পর বছর ধরে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি ইরানকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে৷ অর্থনৈতিক এই অস্থিরতার কারণে দেশের ভেতরে মারাত্মক বিক্ষোভ, আন্দোলন তৈরি হতে পারে আশঙ্কা ইরান সরকারের৷

আজিজির মতে, সরকার কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না এমন ভাবনা ইরানিদের মধ্যে রয়েছে৷

যেহেতু পশ্চিমাদের সাথে পরমাণু বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠাতে পারেনি, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইরান ভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করছে৷ এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা যেমন ব্রিকস, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন ইত্যাদি জায়গায় নিজেদের যুক্ত করতে চাইছে৷ সেই সাথে প্রতিবেশী দেশ যেমন সৌদি আরবের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইছে ইরান৷ 

নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে ইরানের৷ আজিজির মতে, চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আগে সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেখা গিয়েছিল৷ এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মিলে ইরানবিরোধী একটি জোট তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছিল ইরান৷ এর সমাধান হিসেবে কূটনৈতিকভাবে আরব দেশগুলোর সাথে যোগাযোগে এগিয়ে আসে ইরান৷

যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌদি-ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা আর প্রাসঙ্গিক নয়৷ উদাহরণ হিসেবে আজিজি বলেন, সৌদি আরব এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে দুই রাষ্ট্রের পরিকল্পনা সামনে এনেছে যা ইসরায়েলের কূটনৈতিক মনোভাবের বিরোধী৷ 

তবে আজিজি এ-ও বলেন যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কিংবা ইরানের সাথে গভীরতা বাড়িয়ে পশ্চিমাদের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা সৌদি আরবের নেই৷ এর পরিবর্তে এক ধরনের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে চায় সৌদি আরব৷

মধ্যস্থতাকারী হওয়ার ইচ্ছা সৌদির

বিশ্লেষক সোনসের মতে, সব পক্ষের মধ্যস্থতাকারী হওয়ার মতো একটি অবস্থানে যেতে চায় সৌদি আরব৷

সোনস বলেন, একই ভূমিকা পালন করছে কাতার৷ সৌদি আরব ছিল অনেকটা রক্ষণশীল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটি তেহরানের সাথে যোগাযোগের রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে চায়৷  

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরবের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা পাঠানো হয়েছে৷ এধরনের কৌশলগত অবস্থান হতে পারে সৌদি আরবের আঞ্চলিক নীতি ওবং কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বলেন তিনি৷  

একই কথা বললেন আজিজি৷ এই বিশ্লেষকের মতে, ইরান-সৌদি আরবের সুসম্পর্ক এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা তৈরি করবে৷ আর ইরান বুঝতে পারছে, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন সব পক্ষের জন্যই লাভজনক৷

ক্রেস্টেন নিপে/আরআর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ