সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে শাসকদলের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে এবং তার বহিঃপ্রকাশও ঘটছে৷ তথ্যমন্ত্রণালয় বলেছে যে, সম্প্রচার নীতিমালা নির্দেশনামূলক, এটা কোনো আইন নয়৷ তাই সম্প্রচার কমিশনই নীতিমালা আইনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করবে৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়া সম্প্রচার নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয় দ্রুতই৷ তাতে বলা হয় যে, সম্প্রচার নীতিমালা কমিশন হওয়ার আগ পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে৷ তার লক্ষণও দেখা দিয়েছিল৷ আদিবাসী দিবসে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরামর্শ দেয়া হয় যে, ‘আদিবাসী' শব্দটি লেখা বা প্রচার করা যাবে না, বলতে হবে উপজাতি৷ কিন্তু সেই পরামর্শকে আমলে নেয়নি সংবাদমাধ্যম৷
এরইমধ্যে এই নীতিমালা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ সাংবাদিক নেতারা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হলেও সরকার ঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷ ওদিকে বিরোধী দল বিএনপি এই নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নীতিমালার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছে৷
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সোমবার বলেছেন, ‘‘সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে আমার ভয় হয়৷ এটা খুব ভালো কাজ হলেও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতিতে এটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সেটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে৷ এটা নিয়ে দলমত নির্বিশেষ সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে৷ সরকারকে বলবো, লেখা হয়ে গেছে – এটাই তো শেষ কথা নয়৷ সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে৷ এ জন্য সকলের সহযোগিতা দরকার৷ কমিশন হলে এটা অধিকতর গণতান্ত্রিক হবে৷''
একই অনুষ্ঠানে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘মন্ত্রী হলে সংযমী হতে হবে৷ চট করে উত্তেজিত হলে চলবে না৷ আগের দিন গালমন্দ, করে পরের দিন ক্ষমা চাইলে হবে না৷ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ৷ তাই এটাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র হয় না৷''
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
এদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সোমবার দুপুরে সচিবালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘‘সম্প্রচার নীতিমালা দিক-নির্দেশনামূলক৷ এর আলোকে প্রণিতব্য আইন দ্বারা গঠিত কমিশন সম্প্রচার মাধ্যম সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত করবে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত আইন না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচলিত আইনই প্রযোজ্য হবে৷''
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সম্প্রচার নীতিমালা কোনো আইন নয়৷ এতে শাস্তির কোনো বিধান নেই৷ তাই কণ্ঠরোধের বিষয়টি সম্পূর্ণ অমূলক ও কল্পণাপ্রসূত৷'' তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ করা হয়েছে, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে৷ এ অভিযোগ অমূলক৷''
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘বরং এ নীতিমালার মাধ্যমে সম্প্রচার মাধ্যমের ওপর থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গুটিয়ে নিয়ে কমিশনের হাতে অর্পণের নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে৷ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কথা বলা হলেও বাস্তবতা হলো, ক্ষমতার হাত গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে৷''