নির্বাচনের আগেই করোনা টিকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে জোরালো সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ তিনি উলটে বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন৷
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য টিকাকে কেন্দ্র করে দুই রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্বও তত বাড়ছে৷ ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগেই সেই টিকা মার্কিন জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর৷ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই তিনি এমন এক ‘অবাস্তব’ পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা করছেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছে৷ ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’ নামের এক কর্মসূচির আওতায় তিনি আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ৩০ কোটি করোনাভাইরাস টিকা মজুত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন৷ সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ট্রাম্প কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে জুয়া খেলছেন বলে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
ডেমোক্র্যাট দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস সোমবার নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এমন টিকা বিতরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে গভীর সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, এ ক্ষেত্রে তিনি ট্রাম্পের বক্তব্যের উপর ভরসা করেন না৷ একমাত্র গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা এমন আশ্বাস দিলেই তিনি সেই সম্ভাবনার কথা বিশ্বাস করবেন৷
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনও টিকার প্রশ্নে বিজ্ঞানীদের রায়ের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন৷ সত্যি টিকা আবিষ্কার হলে তিনিও যত দ্রুত সম্ভব সেই টিকা অ্যামেরিকার মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার পক্ষে সওয়াল করেন৷ এমনকি এর ফলে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতেও তিনি প্রস্তুত৷
ট্রাম্প অবশ্য এমন অভিযোগ না মেনে উলটে বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন৷ নিজের বক্তব্য অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে তিনি মোটেই নভেম্বেরের মধ্যে টিকা আবিষ্কারের দাবি করেন নি৷ তার আগেই সেই টিকা প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে৷ সোমবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও দাবি করেন, নিরাপদ ও অত্যন্ত কার্যকর এই টিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে৷ বিরোধীদের সংশয়কে তিনি বিপজ্জনক হিসেবে তুলে ধরেন৷ বিশেষ করে কমলা হ্যারিসের মন্তব্যকে ‘বেপরোয়া ও টিকা-বিরোধী বুলি’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি৷ ট্রাম্প বলেন, মানুষ যাতে সেই সাফল্যকে বড় করে না দেখতে পারে, সে কারণে হ্যারিস টিকার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করছেন৷ জো বাইডেন-কে ‘স্টুপিড’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইরাসের কাছে দেশকে আত্মসমর্পন করাতে চাইছেন৷
ট্রাম্প প্রশাসনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্টনি ফাউচি গত সপ্তাহে সিএনএন-কে বলেন, অক্টোবর মাসেই করোনার টিকা ছাড়পত্র পেতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ তাঁর মতে, অ্যামেরিকার মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর না হলে এমন টিকা মোটেই ছাড়পত্র পাবে না৷ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান স্টিফেন হান একই আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, যে টিকার মূল্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখা হবে না৷ তবে গোটা প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷
এসবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
কমলা হ্যারিস: প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস৷ জেনে নিন এই মার্কিন নারীর সাফল্যের গল্প৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
কমলার ইতিহাস
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নারীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন অনেকে৷ নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক বাঁকের রচয়িতা হয়েছেন তিনি৷ প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট - সবই যোগ করা যায় তার নামের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’
কমলা হ্যারিসের জয় মার্কিনিদের এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে বলা হয় সেকেন্ড লেডি৷ কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী ডগলাস এমহফেরকেতো সেকেন্ড লেডি বলার সুযোগ নেই৷ তাই তার জন্য লাগবে হবে নতুন পদবি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁকে ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’ বলে সম্বোধন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
জন্ম ও পরিবার
৫৫ বছর বয়সি কমলার বাবার জন্ম জ্যামাইকায় এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ অর্থনীতিবিদ বাবা ও জীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান কমলার রয়েছে মায়া নামের এক বোন৷ কমলার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড শহরে৷ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার পাশাপাশি তামিল মা ও জ্যামাইকান বাবার মিশ্র ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা কমলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
স্কুল জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর বার্কলের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় বাস করলেও কমলা পড়তেন অভিজাত থাউজেন্ড ওকস স্কুলে৷ সেই স্কুলে এক সময় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ বর্ণভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতি রদ হবার পর এই চিত্র বদলে যায়৷ কমলা যখন সেই স্কুলে ভর্তি হন, তখন সেখানে মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ৷ কিছুদিন মায়ের সাথে ক্যানাডায় ছিলেন কমলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক হবার সময়ে নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন কমলা হ্যারিস৷ ছবিতে বান্ধবী গোয়েন ভিটফিল্ডের সাথে তাকে দেখা যাচ্ছে অ্যাপারথাইড বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে৷ ছবিটি ১৯৮২ সালের৷ ১৯৮৬ সালে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি৷
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী ডগলাস এমহফকে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা৷ ডগলাসের আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে, কোল ও এলা, যাদের কমলা হ্যারিসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৩ সালে প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি৷ তখন থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে৷ পরে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়ার সেনেটর পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়ী হন৷
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images
উত্তরণ
সেনেটর হিসাবে তার ধারালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা বারবার আলোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায়৷ টানা দুই টার্ম ধরে সফল অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তার কাজও আলোচিত হয়েছে এতদিন৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের মিশ্র ঐতিহ্য বিষয়ে সাবলীল আলাপ তাঁকে জনসাধারণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে৷ এছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাঁর প্রতি সমর্থনও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Risberg
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সেনেটর পদে নির্বাচিত হবার পর কমলা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন৷ সমকামীদের বিবাহের অধিকারের পক্ষে, মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে থাকার পাশাপাশি কমলা বিভিন্ন সময়ে পুলিশনীতিতে বদলের দাবি তুলেছেন৷ বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও পুলিশের অনৈতিকতা যেভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি অংশগ্রহণ যথাযথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷