1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাকরি ছাড়ছেন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকর্তাকে বাঁচাতে ধর্নায় বসেছিলেন৷ কিন্তু এই রাজ্যেই বহু পুলিশ কর্মী নীরবে যোগ দিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও মর্যাদার অন্য চাকরিতে! প্রশ্ন উঠছে, এর রহস্য কী?

ছবি: DW/Payel Samanta

চাকরিতে বৈপরীত্য

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে তৎপর হয়েছিলেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তারপর তিনি ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল ধর্না মঞ্চ থেকে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করার ডাকও দিয়েছিলেন৷ এই ঘটনাক্রমে মনে হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কর্মীরা সরকারের ছাতার আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়েই দেখা যাচ্ছে, পুলিশের চাকরির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন পুলিশকর্মীদের একটা অংশ৷ গত ৮ বছরে শুধু ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকেই প্রায় ৬০ জন ইস্তফা দিয়েছেন৷ অতি সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোলে কর্মরত সার্জেন্ট করুণাময় চট্টোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের চাকরি ছেড়ে রেলের গ্রুপ ডি পদে যোগদান করেছেন৷ বেতন ও মর্যাদা তো বটেই, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকেও যা পুলিশের চাকরির সঙ্গে তুলনীয় নয়৷ তাঁর চাকরি ছাড়ার আবেদন ঘিরে পুলিশমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল৷ প্রশ্ন উঠছে, ভালো বেতন ও সম্মানের চাকরি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও নিচু পদের চাকরিতে যোগদান কি তবে পুলিশি পেশায় বিরক্ত হয়েই? অনেকের মতে, পুলিশের চাকরিতে স্বাধীনতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সর্বোপরি পুলিশ হেনস্থার যে সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে, তাতে এই চাকরি মোটেও আর সম্মানের নয়৷ এর পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ৷ 

পুলিশকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই: সন্ধি মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক কর্মচারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঠিকঠাক বেতন পেলেও পুলিশরা ভালো নেই৷ কাজের চাপ এত বেশি যে, ছুটিই পাওয়া যায় না৷ পাশাপাশি বিমার জন্য টাকা কেটে নিলেও ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না৷ আমাদের যা কিছু অভাব-অভিযোগ তা যদি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে যাই, তাহলে বদলির আশঙ্কা৷ পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অশ্রদ্ধা করে, উপরতলার চাপ তো আছেই৷ এ জন্যই অনেকে চাকরি পরিবর্তন করে স্কুলে জয়েন করেছেন বা বাড়িতে ব্যবসা শুরু করেছেন৷’’

যা কিছু বলেছি, তা আসলে স্লিপ অফ টাংগ হয়ে গেছে: অনুব্রত মণ্ডল

This browser does not support the audio element.

ঠুঁটো জগন্নাথ?

পুলিশমহলের অনেকেই স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক প্রভাবে পুলিশ ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’, কাজেও স্বাধীনতা নেই৷ রাজনৈতিক চাপে পিষ্ট পুলিশমহলকে যখন তখন রাজনৈতিক কর্তারা অপদস্থ করে থাকেন৷ এ ব্যাপারে নজির গড়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ পুলিশ যে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না সেটার প্রেক্ষিতেও বহু উদাহরণ আছে৷ অতীতে পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়ে সেই মামলায় খালাসও পেয়ে গিয়েছেন তিনি৷ রায় দেওয়ার আগে বিচারকও তাঁর মন্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার মূল কারণ পুলিশি ব্যর্থতা৷

এ ব্যাপারে প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই৷ দেশের ভয়ংকর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে আজ পুলিশকে যদি বোমা মারাও হয়, তা-ও পুলিশ কিছু করতে পারবে না৷’’

এই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা মনে করেন আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে যেভাবে দুর্বৃত্তদের কথা অনুযায়ী চলতে হচ্ছে, সেটা আগে এতটা ছিল না৷ অবস্থার অবনতি হতে হতে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে৷ সে কারণেই বিবেকের তাড়নায় আজ অনেকে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে৷’’    

একই সুরে প্রাক্তন আইপিএস ড. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ চিরকালই শাসকদলের হয়ে কাজ করে এসেছে৷ এটা নতুন নয়৷ তবে আগের সরকারের আমলে যেটুকু রাখঢাক ছিল, এই সরকারের আমলে সেটাও নেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না মঞ্চে যেভাবে আইপিএস অফিসাররা বসে ছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে, সেটা থেকে এটা স্পষ্ট৷’’ 

বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, তিনি মুখ ফস্কেই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা কথা বলে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমনিতে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই৷ পুলিশদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন৷ যা কিছু বলেছি, তা আসলে স্লিপ অফ টাংগ হয়ে গেছে৷’’ তবে নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘পুলিশরা যদি সৎ থাকতেন, তাহলে অনুব্রতর এমন বলার সাহস থাকত না৷’’

পুলিশকে হুমকির প্রবণতা

পুলিশ চিরকালই শাসকদলের হয়ে কাজ করে এসেছে: ড. নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

অনুব্রত মন্ডল যা-ই বলুন না কেন, সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ড, রবিলাল সোরেনের বাড়িতে আগুন লাগানো – সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু পুলিশ প্রমাণ করতে পারেনি সে সব৷ উল্টোদিকে আবার উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী যখন পুলিশকে গাছে বেঁধে পেটানোর কথা বলেছিলেন, তখন পুলিশ তাকে ঠিকই গ্রেপ্তার করেছে৷ এই দুমুখো আচরণ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিরোধীদের, বিশেষ করে বিজেপিকে আটকানোর জন্যই পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পুলিশ প্রশাসন আজ নিজের কাজ বাদ দিয়ে বাকি সব করছে৷ এতে প্রশাসনিক কাজকর্মের অসুবিধা হচ্ছে যেমন, তেমনি পুলিশও নিন্দার মধ্যে পড়ছে৷ পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, থানায় অ্যাটাক করা হচ্ছে৷ বড় বড় আইপিএস অফিসাররাও আইনমতো চলতে পারছেন না, অসম্মানের মুখোমুখি হচ্ছে৷ এসব তাঁরই পরিণাম৷ পুলিশ খুব হতাশ হয়ে পড়ছে, পুলিশ কষ্টের মধ্যে আছে৷’’  

অনুব্রত মণ্ডলের মতো দিলীপ ঘোষও পুলিশের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলে থাকেন৷ পুলিশের ইউনিফর্ম খুলে পিঠের চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়ার মতো হুমকিও দিয়েছেন তিনি৷ তবে এ জন্য তিনি অনুতপ্ত নন৷ বরং তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের দমন করার জন্য যদি পুলিশকে ব্যবহার করা হয়, তাহলে পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার বিরোধী নেতা হিসেবে আমার আছে৷ আমাদের হাজার হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে, বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে৷ আমারই দায়িত্ব এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা৷ সেটাই আমি করি৷’’

চাকরি ছাড়লেই নিষ্কৃতি?

করুণাময় চট্টোপাধ্যায় চাকরি ছাড়লেন কেন? তিনি জানিয়েছেন, পরিবারকে সময় না দিতে পারার জন্যই তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তনী জানিয়েছেন, তিনি ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই স্কুল শিক্ষকতা বেছে নিয়েছেন৷ ওই ব্যাচের আরো অনেকে ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বা আরো কম বেতনের চাকরিতে যোগদান করেছেন৷

বিজেপিকে আটকানোর জন্যই পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে: দিলীপ ঘোষ

This browser does not support the audio element.

রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম সরাসরি বলেন, ‘‘উপরের প্রচণ্ড চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সৎভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য যে দৃঢ়তা দরকার হয়, তা অনেকেরই থাকে না৷ এর মধ্যে অনেকে মাথা নিচু করে পদোন্নতি, আর্থিক সমৃদ্ধি বেছে নিয়ে চাকরি করেন৷ আবার মানসিক শান্তির জন্য অনেকেই কম চাপের চাকরিতে চলে যান৷’’

প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত৷ তিনি মনে করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের ৭ দফা গাইডলাইন অনুসরণ করে পুলিশ রিফর্ম কমিশন কার্যকর করা উচিত৷ গোটা কতক রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর জন্য পুলিশের চাকরি নয়, পুলিশ চাকরি করে দেশের জন্য, আইনের রক্ষায়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ