1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সম্মান রক্ষার নামে হত্যা

দেবারতি গুহ৬ নভেম্বর ২০১২

‘অনার কিলিং’ বা পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা – খুব বর্বরোচিত হলেও পাকিস্তানে এটা নতুন কিছু নয়৷ এই তো, গত সপ্তাহেই ১৫ বছরের মেয়েকে অ্যাসিড ছুড়ে হত্যার জন্য আটক হলেন তার বামা-মা৷

ছবি: picture-alliance/dpa

বাবা-মায়ের জীবনে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছু কি হতে পারে? অথচ পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে গত বছর পাকিস্তানের কমপক্ষে এক হাজার নারী বা কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়েছে৷ সম্প্রতি দেশটির মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে এ তথ্য৷

গত সপ্তাহের ঘটনাটাই ধরা যাক৷ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মুজাফরাবাদে বাবা-মা'র সঙ্গে বাস করতো ১৫ বছরের একটি মেয়ে৷ জনৈক পুরুষের সঙ্গে তার ‘অনৈতিক' সম্পর্ক ছিল৷ শুধুমাত্র এ কারণেই নিজের বাবা-মার ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে মারা যায় সে! বাবা-মা বলেছে, পর পুরুষের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক তাঁরা মানতে পারছিলেন না৷ নিজের মেয়েকে হত্যার কথা স্থানীয় পুলিশ প্রধান ইমতিয়াজ আলির কাছে স্বীকারও করেছেন তাঁরা৷ তাঁদের একটাই কথা – মেয়ে তাদের পরিবারের সম্মানহানি করতে বসেছিল!

‘অনার কিলিং' – সোজা কথায় পরিবার বা বংশের মর্যাদা ক্ষুন্নকারীকে হত্যা৷ এর মাধ্যমে পরিবারের তথাকথিত মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা যায় – এমন বিশ্বাস থেকেই এ ধরণের হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে৷ দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক সিদ্ধান্তের বাইরে বিয়ে করা বা কারো সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে এভাবে প্রিয়জনের হাতে মরতে হয় মেয়েদের৷ অবাক করার মতো বিষয় হলেও এ কথা সত্য যে, এসব হত্যাকারীর বেশিভাগই নিহত মেয়েটির স্বামী, বড় ভাই না হয় জন্মদাতা পিতা৷

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, হালে সে দেশে ‘অনার কিলিং' বেড়ে গেছে কল্পনাতীত হারে (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/ dpa

জার্মানির অন্যতম নারীবাদী সংগঠন ‘ত্যার দে ফাম'-এর কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমেকের কথায়, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি পাকিস্তান, জর্ডান এবং তুরস্কের মতো ইসলামি দেশগুলোতেই এর ব্যাপকতা বেশি৷ তবে মুসলিম প্রধান নয় এমন দেশ, যেমন ব্রাজিল, ইকুয়েডর ও ভারতেও এর নজির রয়েছে৷''

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, হালে সে দেশে ‘অনার কিলিং' বেড়ে গেছে কল্পনাতীত হারে৷ ২০১০ সালে যেখানে ‘অনার কিলিং'-এর নামে প্রায় ৭৯১ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে ২০১১ সালে ‘অবৈধ' সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে ৫৯৫ জন এবং বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার কারণে অন্তত ২১৯ জনকে হত্যা করা হয় পাকিস্তানে৷ মৃত্যুর আগে নিহতদের অনেকে ধর্ষণ এমনকি গণধর্ষণেরও শিকার হন! অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুন করা হয় তাঁর পুরুষ সঙ্গীটিকেও৷

শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশে, এমনকি ইউরোপের মতো নিরাপদ জায়গাতেও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারে অহরহ ঘটে চলেছে এমন নির্মম ঘটনা৷ বেলজিয়ামে এ রকমই একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা একটি পরিবার৷ বেলজিয়ান একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ঐ পরিবারের একটি মেয়েকে হত্যা করা হয়৷ ঘটনার পর বেলজিয়ামের আদালত পরিবারের চারজন সদস্যকে কারাদণ্ড দেয়৷

Week 45/12 Women 2: 'Honour Killing' in Pakistan - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

সম্মান রক্ষার অজুহাতে নারী হত্যার বিরুদ্ধে ‘ত্যার দে ফাম' তাদের আন্দোলন চালাচ্ছে সেই ২০০৪ সাল থেকে৷ তারপরও ২০০৫ সালে ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারান হটন সুরুচু অথবা ২০০৯ সালে কুর্দি বংশোদ্ভূত ২০ বছর বয়সি গুলসুমকে হত্যা করে তাঁর বাবা এবং ভাই৷ এ বিষয়ে মারিয়া ব্যোমেকে জানান, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিবাসী নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন৷ এ জন্য আমরাও তাঁদের সমস্যাগুলো সময় মতো জানতে পারি না৷ অথচ এটা তাঁদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, যতক্ষণ তাঁরা জার্মানিতে আছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে না৷''

ভারতেও নিজের জাতের বাইরে কেউ যদি বিয়ে করেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে এমনটি ধরে নেয়া হয়৷ তখন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিষ্ঠুরতম উপায়ও অবলম্বন করেন৷

বলা বাহুল্য, আধুনিকতার ছোঁয়া পাকিস্তানি বা ভারতীয় সমাজকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে নি৷ তাই ‘অনার কিলিং'-এর মতো পাশবিক ঘটনা ঘটে৷ অবশ্য এসব অবিলম্বে নির্মূল করার আর্জি জানিয়েছেন পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মীরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ