1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সময় এখন অভিবাসীদের

১৬ জুলাই ২০১৯

আদিকাল থেকেই মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হতো৷যেমন কৃষিকাজের জন্য উর্বর জমির সন্ধান কিংবা শিকারের খুঁজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর৷

এউইন মরগ্যানছবি: Action Images via Reuters/J. Cairnduff

মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই অভিবাসন প্রক্রিয়ার শুরু, বলছেন নৃবিজ্ঞানীরা৷ আধুনিক যুগে এসেও অভিবাসন প্রক্রিয়া থেমে নেই৷ অভিবাসন চলছে নতুন নামে, ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে৷ এখনকার অভিবাসন প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি উপকরণ হলো অর্থনীতি৷ যুদ্ধ-বিগ্রহও এর আরেক বড় কারণ৷ আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তির মধ্যে দিয়ে জাতীয়বাদের যে  ধারণা তৈরি হয়েছিল, অভিবাসন প্রক্রিয়ার তীব্রতা সেই  ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে৷ উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে এমনকি খেলার মাঠ পর্যন্ত সব জায়গাতেই দেখা যায় আভিবাসনের ছোঁয়া৷

গত দুই বৈশ্বিক খেলার আসর বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ ও সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ২০১৯ এর কথাই ধরা যাক৷

সেরা পারফর্মেন্স দেখিয়ে ইংল্যান্ডের যে দলটি মাত্র শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জয় মুকুট ছিনিয়ে এনেছে এ দলটিতে ইংরেজ খেলোয়াড় যেমন আছেন, তেমনি অন্তত পাঁচ জন আছেন যাদের জন্ম অন্য দেশে, বা অভিবাসী পরিবারে৷ তবে অভিবাসীদের দাপট আরো বেশি ছিল ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী ফ্রান্স দলে৷ দলটির ২৩ জন খেলোয়ারের মধ্যে ১৫ জনই ছিলেন অভিবাসী পরিবারের৷ ভাবা যায়!

বেন স্টোকসছবি: Getty Images/C. Mason

তবে মজার কিছু ব্যাপার চোখে পড়ে বিশ্বকাপ জয়ী  ইংল্যান্ড দলটির দিকে তাকালে৷দলটির অধিনায়ককে দিয়েই শুরু করা যাক৷ অধিনায়ক এউইন মরগ্যানের জন্ম আয়ারল্যান্ডে৷ শুধু তাই নয়৷ আইরিশ-বংশোদ্ভূত এ ক্রিকেটার ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন৷ আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন মরগ্যান৷ মরগ্যানের মা ইংরেজ, বাবা আইরিশ৷ মা ইংরেজ বলে তাঁর জন্ম থেকেই ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল৷ সে সূত্রেই তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন ২০০৭ থেকে৷ এদিকে চলতি বিশ্বকাপে দলটির অন্যতম সেরা খেলোয়ার বেন স্টোকসের জন্ম নিউজিল্যান্ডে৷ অর্থাৎ যে দেশটির বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছে তাঁর দল সে দেশেই তার জন্ম৷ কি নিয়তি! অভিবাসন প্রক্রিয়া মুখোমুখোখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাঁর দুই পরিচয়কে৷ এখানেই শেষ নয়৷ ইংল্যান্ড দলে খেলা জেসন রয় এবং টম কুরান অর্থাৎ এ দুই খেলোয়াড় বংশপরম্পরায় সাউথ আফ্রিকান৷ আরো মজার বিষয় হলো, মঈন আলি এবং আদিল রশিদের জন্ম পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসী পরিবারে৷ আর জফরা আর্চারের জন্ম বার্বাডোজে৷এসব দিক মিলিয়ে বলা যায়, বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডের এ দলটি বিশ্বের কয়েকটি প্রান্তকে একত্র করেছে৷ আর দেখিয়েছে ‘তোমরা' বলতে আসলে কিছু নেই৷ সবাই মিলেই ‘আমরা'৷ 

অভিবাসনের ছোঁয়া তুলনামূলক একটু বেশি ছিল গত বছর বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী ফ্রান্সের দলটিতে৷ বৈচিত্রময়তাই সৌন্দর্য্য, এ বিষয়টিই বোধহয় ফুঁটিয়ে তোলতে চেয়েছিল তারা৷ গণমাধ্যমের খবর বলছে, ফ্রান্সের এ দলটিতে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১৫ জন, শতকরা ৭৮ ভাগ৷ আর একটু হলেই বোধহয় শতভাগ হয়ে যেত৷ শিল্প-সাহিত্যের দেশ ফ্রান্সে আসলে অভিবাসনের ইতিহাস নতুন নয়৷ ঠিক ২০ বছর আগে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের যে দলটি বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল সে দলেও অভিবাসী  খেলোয়াড় ছিলেন ১২ জন৷এমনকি ফ্রান্সের সর্বকালের সেরাদের একজন জিনেদিন জিদান নিজেও ছিলেন আলজেরিয়া থেকে আসা অভিবাসী পরিবারের৷ ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে চমক ছড়ানো পল পগবা, কিলিয়ান এমবাপ্পে, স্যামুয়েল উমতিতির ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই শিরোপা জয়ের পথ সুগম হয় ফ্রান্সের৷ পগবার বাবা এসেছেন গিনি থেকে, আর এমবাপ্পের মা আলজেরীয় ও বাবা ক্যামেরুনের৷ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ক্যামেরুন, আলজেরিয়া, কঙ্গো থেকে আসা অভিবাসীদের হাত ধরেই বিশ্বকাপ এনেছিল ফ্রান্স৷ কঙ্গোর কিনসাসাতে জন্ম নেওয়া স্টিভ মানদান্দা ছোটবেলায় চলে আসেন ফ্রান্সে৷ তার পর থেকে শুরু৷ ফ্রান্সের ফুটবল দলের অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মরক্কোন বংশদ্ভোত আদিল রামি৷ এদিকে প্রেসনেল কিম্পেম্বের বাবা কঙ্গোর নাগরিক, মা হাইতিয়ান৷ আরেক খেলোয়াড় মাতুইদির বাবা অ্যাঙ্গোলা ও মা কঙ্গো থেকে এসেছেন৷ মাঠে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা সেন্টার ব্যাক স্যামুয়েল উমতিতির জন্ম ক্যামেরুনে; দুই বছর বয়সে ফ্রান্সে পাড়ি জমায় তাঁর পরিবার৷ দলটির তারকা খেলোয়াড় এনগোলো কঁতের জন্ম ফ্রান্সে হলেও তাঁর পরিবার এসেছে মালি থেকে আর  মিডফিল্ডার টমাস লেমার নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত৷ এ সব মিলিয়ে ফ্রান্সের দলটিতে ছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমাহার ৷ 

কিলিয়ান এমবাপ্পেছবি: REUTERS

অর্থনৈতিক কারণে আফ্রিকা, এশিয়া, অ্যামেরিকার দেশগুলো থেকে অভিবাসনের ঘটনা দীর্ঘদিনের৷ বর্তমানে যোগাযোগ ব্যস্থার উন্নতি বিশ্বকে পরিণত করেছে একটি গ্রামে, যেখানে সব জাতের, বর্ণের কিংবা বিশ্বাসের মানুষেরা একত্রে বাস করবে বলে স্বপ্ন দেখেন অনেকেই৷ অভিবাসন প্রক্রিয়া হয়তো ‘অপরায়নের' বিদ্যমান এ বাধা ডিঙ্গিয়ে বিশ্বটিকে করে তুলবে আমাদের সকলের৷

আরআর/কেএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ