আফগানিস্তানের নতুন সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করা৷ তবে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিকোলাস হেসম মনে করেন, জনগণকে আস্থায় নিতে পারলে সরকার সব চ্যালেঞ্জেই জয়ী হতে পারবে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছে নতুন সরকার৷ আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে দেশের প্রধান নির্বাহী এবং আশরাফ গনিকে প্রেসিডেন্ট করে ‘জাতীয় সরকার' কাজ শুরুর পর থেকেই সামনে আসছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ৷ সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল মন্ত্রী পরিষদ গঠন করার ব্যাপারটি৷ অবশেষে ২৫ সদস্যের মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট গনির আশা, কোনো কোনো মন্ত্রিকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সংসদনের অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রিসভা শিঘ্রই কাজ শুরু করবে৷
আফগানিস্তানের জন্য সেটা খুব দরকার৷ বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং তালেবানের হুমকি মোকাবেলা করতেও অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠাটা খুব জরুরি৷ গাব্রিয়েল ডমিনগেজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিকোলাস হেসমও এ কথা বলেছেন৷
ডিডাব্লিউ: আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
নিকোলাস হেসম: আফগানিস্তান এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ প্রেসিডেন্ট গনি এবং প্রধান নির্বাহি আব্দুল্লাহ বেশ কিছু সমস্যা, সেসব সমাধানের উপায় এবং সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছেন৷ দেশে নিরাপত্তা বিধানের বিষয়েও পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে সরকার৷ আফগানিস্তানের সৈন্যরা এখন সাহসের সঙ্গেই জঙ্গিদের আক্রমণ মোকাবেলা করছে৷ সাম্প্রতিক কিছু সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে কিছু তালেবান অবশ্য এখনো মনে করে যে যু্দ্ধে তারাই জয়ী হবে৷ তাদের ধারণাটা ভুল৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
আফগানিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে৷ এর ফলে কি গত এক দশকে শিক্ষা, নারী অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যেটুকু অর্জন সম্ভব হয়েছিল সবই নষ্ট হয়ে যাবে?
আমান তা মনে হয় না৷ এ সব অর্জন ধরে রাখার ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসন কিন্তু বদ্ধপরিকর৷ তাছাড়া গত তিন বছরে আমি আফগানিস্তানে বিভিন্ন পেশায় অনেক সাহসি মানুষের দেখা পেয়েছি, যাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন৷ সংসদ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যোগ্য এবং সাহসি লোক বাড়ছে৷ জাতিসংঘ এসব অর্জনকে ধরে রাখতে সরকার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত নারী এবং সিভিল সোসাইটির সঙ্গে কাজ করে যাবে৷
আপনার দৃষ্টিতে কী কী বিষয় আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে সাফল্য এনে দিতে পারে?
সরকারকে জনগণকে আস্থায় নিতে হবে, যাতে সবার মনে হয় যে আফগানিস্তানের সব মানুষের স্বার্থেই কাজ করছে সরকার৷ জনমনে সুদিনের আশাও জাগিয়ে তুলতে হবে সরকারকে৷
নিকোলাস হেসম, আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি৷
আফগানিস্তান ত্যাগ করছে জার্মান সেনাবাহিনী
আফগানিস্তানে জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ এর কম্ব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালে৷ তাই সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েক হাজার টন যুদ্ধ উপকরণ এবং অন্যান্য পণ্যও ফেরত আনতে হবে৷ বিছানা থেকে শুরু করে বিশাল ট্যাংক রয়েছে তালিকায়৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
বিশাল কর্মযজ্ঞ
জার্মান সেনাবাহিনীর সাড়ে চার হাজারের মতো সেনা সদস্য, সতের শত যান এবং ছয় হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে আফগানিস্তানে৷ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনী আইসাফ এর কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার আগেই জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক সম্পদ ফিরিয়ে আনা হবে৷ এই সম্পদের মধ্যে মেশিনগান থেকে শুরু করে পঞ্চাশ টন ওজনের ট্যাংক রয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
ট্রাবজন হাব
হিন্দুকুশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ফিরিয়ে আনতে জার্মানি যে দুটি হাব ব্যবহার করছে তার একটি তুরস্কের ট্রাবজন৷ এই বন্দর হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাবে বুন্ডেসভেয়ার-এর বিভিন্ন পণ্য৷ তবে আফগানিস্তান থেকে ট্রাবজন পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
ছবি: cc-by-nd/Sebastian Wilke/Bundeswehr
পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার
গত এগারো বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ তাদেরকে মূলত সেদেশের উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতোমধ্যে অনেক ক্যাম্প খালি করা হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
সবাই সম্ভবত ফিরছেন না
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সম্ভবত সকল জার্মান সেনা ঘরে ফিরবেন না৷ জার্মানি আইসাফের ম্যান্ডেট মেনে আটশো সেনা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব পণ্য ফিরবে না
আফগানিস্তানে পাঠানো কিছু জার্মান পণ্য ফেরত আনা হবে না৷ কিছু পণ্য বিক্রি অথবা ধ্বংসে করে ফেলা হবে৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র কন্টেইনারে ভরে নিয়ে আসা হবে৷ ইতোমধ্যে এসব পণ্য জমা করা শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরেক হাব: মাজার-ই-শরিফ
আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনাবাহিনীর পণ্য ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাব হচ্ছে মাজার-ই-শরিফ৷ সে দেশের চতুর্থ বড় এই শহর থেকে অধিকাংশ পণ্য বিমানে পরিবহন করা হচ্ছে৷ তবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজাকিস্তান হয়ে সড়ক পথেও কিছু পণ্য ফেরত আনা হবে৷ তবে নিরাপত্তার কারণে বেশি পণ্য এভাবে পরিবহন হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীবাণুমুক্তকরণ
জার্মান সেনাবাহিনীর এসব পণ্যের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে কোন জীবাণু যাতে জার্মানিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা হবে৷ জার্মানিতে এসব পণ্য প্রবেশের আগেই এটা করা হবে৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
বিমানে আফগানিস্তান ত্যাগ
বড় এবং ভারি যানবাহন পরিবহনের মতো বিমান জার্মান সামরিক বাহিনীর নেই৷ ফলে ছবির এই বিশাল সামরিক যান পরিবহনের জন্য একটি ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান কনসর্টিয়ামের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে৷ এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক উড়ালে ৩৭ মিটার দীর্ঘ জায়গায় ১৫০ টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Weinrich
সরাসরি জার্মানিতে ফেরত
অস্ত্র এবং কারিগরিভাবে সংবেদনশীল বিভিন্ন পণ্য বিমানে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরত আনা হচ্ছে৷ ছবির ট্যাংকটি এই সুবিধা পাচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Schmidt.
বাকি পণ্য আসছে তুরস্ক হয়ে
অস্ত্রবিহীন গাড়ি, রেডিও এবং তাঁবুর মতো পণ্য সরাসরি জার্মানিতে আনা হচ্ছে না৷ আফগানিস্তান থেকে বিমানে এগুলো তুরস্কের ট্রাবজন বন্দরে আনা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
জাহাজে প্রত্যাবর্তন
ট্রাবজন বন্দরে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করছেন ১৭০ ব্যক্তি৷ এই বন্দর থেকে ত্রিশ হাজার বর্গমিটার পণ্য জাহাজে জার্মানিতে পাঠাতে কাজ করছেন তারা৷ সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য ট্রাবজান থেকে জার্মানিতে পোঁছাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো৷