‘সরকারকে ঠিকমতো চালানোর জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার'
১৫ জানুয়ারি ২০২১
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকা৷ যে কারণে সাংবাদিকতাও একপেশে হয়ে গেছে বলে মনে করেন সাংবাদিক প্রভাষ আমিন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এ এসে তিনি এই মত প্রকাশ করেন৷ দেশের সাংবাদিকতা ঠিকঠাক চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রভাষ আমিন বলেন, ‘‘একদমই ঠিকঠাক চলছে না৷ তবে গুণগত পরিবর্তন আসবে৷ সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে থাকতে পারে, কিন্তু যখন তিনি কলম হাতে নিবেন তখন তার চোখ, কান খোলা রাখতে হবে৷ সবার ভুল ভ্রান্তি ধরা পড়তে হবে৷ কোনো দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য সাংবাদিকের থাকবে না৷’’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা হলো শক্ত বিরোধী দল না থাকা৷ ‘‘সরকারকে ঠিকমতো চালানোর জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার৷ মাঠে যখন শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে তখন সাংবাদিকতা আরো অনেক ভালো হবে৷ সাংবাদিকতাও একপাক্ষিক হয়ে গেছে৷ কারণ আরেক পক্ষও একদমই ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে,’’ বলেন তিনি৷
আলোচনায় অংশ নেয়া সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লেখালেখির জন্য বিএনপিতে তিনি জায়গা পেয়েছেন৷ তারা বুঝেশুনেই তাকে দলে নিয়েছে৷ বিএনপির আদর্শগত জনপ্রিয়তা দলটির জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী দিক বলে মনে করেন তিনি৷ তার মতে, ‘‘আওয়ামী লীগের যেসব মানুষ দলটির উপর বিরক্ত তারা যখন প্লাটফর্ম খুঁজবে তখন তারা বিএনপিকেই খুঁজবে৷ বিএনপির নিজস্ব ভোটের বাইরে আওয়ামী লীগের ভোট রয়েছে, এটাই তার সবচেয়ে বড় সুবিধা৷’’
অন্যদিকে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির নেতৃত্ব এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া কেন্দ্রিক৷ তিনি মামলায় কনভিক্টেড, তার বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো বাংলাদেশে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই৷ তারেক রহমান দেশের বাইরে৷ লন্ডনে থেকে দেশের মাঠে ময়দানের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ সত্যিকারের দুরূহ ব্যাপার৷ কাজেই এখানে নির্দেশনায় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে৷’’
এফএস/জেডএইচ
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷