সরকারকে পদত্যাগে সর্বশেষ আল্টিমেটাম দেবে বিএনপি
১৬ অক্টোবর ২০২৩বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
আর আওয়ামী লীগও ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে। তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদ দক্ষিণ গেটে এই শান্তি সমাবেশ করবে। বিএনপির সমাবেশ করার কথা রয়েছে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
দুই দলের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশও ব্যাপক প্রস্ততি নিচ্ছে। সমাবেশের দিন পুলিশ বরাবরের মতো ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশি চালাবে। ঢাকার ভিতরেও থাকবে তল্লাশি চৌকি। জানা গেছে, নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে এবার পুলিশ বাধা দেবে না। বিএনপি অনুমতি চাইলে অনুমতি দেবে।
বিএনপির নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সারাদেশ থেকে লোক সমাগমের পরিকল্পনা নেই তাদের। তারা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকা আসতে বলেছেন। এর কারণ হল বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, পূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করতে পারে। তাই তারা সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় এনে গ্রেপ্তারের মুখে ফেলতে চান না। তারা চান পূজার পরে যা করার একসঙ্গে করবেন।
বিএনপির আন্দোলন পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন নেতা বলেন, ১৮ অক্টোররের সমাবেশ শেষে পূজার পর ঢাকায় আরেকটি মহাসমাবেশ করতে চান তারা। ওই সমাবেশ থেকেই টানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারকে তারা ১৯ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহের সময় দেবেন পদত্যাগ করার জন্য। এই সময়ের মধ্যে সরকার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা না করলে পূজার পর সমাবেশের মাধ্যমে অবরোধ, ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘটসহ হরতালের মতো কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আর কর্মসূচি ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ বাইরের দুনিয়ার অবস্থান সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারনা পেতে চান।
এই সব আন্দোলন কর্মসূচি বিএনপি তার শরিকদের নিয়ে যুগপৎভাবে পালন করবে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ামান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেল,"বিএনপির সঙ্গে শরিকদের ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। আমরা পূজার পরই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছি। এর আগে সরকারকে পদত্যাগের সময় বেধে দেয়া হবে। আন্দোলন সফল করতে যে যে কর্মসূচি লাগে আমরা সবই দেব। তবে আগেই তা প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। পূজার পর দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে।”
জানা গেছে, সরকারবিরোধীরা তাদের সক্ষমতা বিবেচনা করে দীর্ঘ সময়ের জন্য টানা কোনো চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাবে না। তারা ৭-১০ দিনের একটি কর্মসূচি দিতে চায় সরকারের পদত্যাগের জন্য। আর সেটা নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগেই। আর এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা রাজধানী ঢাকাকে অচল করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চায়।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন জানান, "১৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে সরকারকে শেষ বারের জন্য পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আহ্বান জানিয়ে সময় বেধে দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে তারা পদত্যাগ না করলে আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা যেকোনো ধরনের কর্মসূচি দিতে পারি।”
তিনি বলেন, "আমরা আশা করি ১৮ অক্টোবর সরকার আমাদের নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেবে। কোনো বাধা দেবে না। যদি বাধা দেয় তখন আমরা দেখব।”
এদিকে ১৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ ডেকেছে। এছাড়া মহানগরের ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওইদিন সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের শেখ রাসেল দিবসের কর্মসূচিও আছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,"বিএনপি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করবে এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সরকার সেখানে কোনো বাধা দেবে না। তবে সমাবেশ বা কোনো কর্মসূচির নামে কোনো নৈরাজ্য করলে আমরা তা প্রতিরোধ করব।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"বিএনপি এখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে দেবতা মনে করে। তার দিকে বিএনপি তাকিয়ে আছে। তাদের আন্দোলনের সক্ষমতা নাই।”
আওয়ামী লীগ আগেই অক্টোবরে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর বাইরে বিএনপির যেদিন কর্মসূচি থাকে যেদিন আওয়ামী লীগেরও শান্তি সমাবেশ থাকে। সোমবার বিএনপি নয়াপল্টনে যুব সমাবেশ করেছে। আর আওয়ামী লীগও ঢাকায় যুব শান্তি সমাবেশ করেছে।