স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত৷ পাঠ্যপুস্তকে ‘গোপনে’ ব্যাপক পরিবর্তনের পর দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এর বাইরেও অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন শিক্ষক এবং জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল৷
বিজ্ঞাপন
ড. জাফর ইকবাল, আপনার মতে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাটা কেমন হওয়া উচিত? এই প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয়েছিল টেলিফোন সাক্ষাৎকার৷ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনে করেন, ‘‘ছোট বাচ্চাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত যেন তা পরীক্ষানির্ভর না হয়, এটা যেন শিক্ষানির্ভর হয়৷'' তবে তিনিও উপলব্ধি করছেন যে, ‘‘আনফরচুনেটলি আমাদের দেশে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেছে৷ এখন ছেলে-মেয়েরা সবাই জানে যে, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়াটা লেখাপড়ার উদ্দেশ্য৷''
ড. জাফর ইকবালের মতে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষায় এটাই মূল সমস্যা৷ এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হলো, ‘‘ছোট ক্লাসে লেখাপড়ার মধ্যে পরীক্ষা-টরীক্ষা থাকাই উচিত না৷ ওরা জাস্ট জানার জন্য পড়বে, শেখার জন্য পড়বে৷ আমাদের পরীক্ষা করার প্রয়োজনও নেই সে কী জানল, কী শিখল৷ তারা তো শিখবেই, তারা জানবেই৷ আরেকটু বড় ক্লাসে গেলে তখন হয়ত মূল্যায়নটা দরকার হয়, কারণ, তখন তো বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়৷ অথচ সমস্ত রকমের সুযোগ নেই৷ কাজেই কাদেরকে সুযোগটা দেয়া উচিত, কোথায় সুযোগটা দেয়া উচিত, সেটা বোঝার জন্য মূল্যায়ন করতে হয়৷ তবে ছোট ক্লাসে মূল্যায়নের নামে, পরীক্ষার নামে ছেলে-মেয়েদের কষ্ট দেয়ার আমি বিরোধিতা করি৷''
Interview with Prof. Zafar Iqbal Final - MP3-Stereo
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক মনে করেন পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নটা শুরু হওয়া উচিত অষ্টম শ্রেণি থেকে৷ সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, জামিলুর রেজা শিক্ষানীতি বিষয়ক কমিটির সুপারিশে তাঁরা ইন্টারমিডিয়েট, অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মাত্র দুটো পরীক্ষার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু পরে তিনি বিস্ময় নিয়েই দেখেছেন, ‘‘চারটি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে৷ একটা প্রাইমারি, একটা ক্লাস এইটে, একটা ক্লাস টেনে এবং আরেকটা টুয়েল্ভথ ক্লাসে৷''
ড. জাফর ইকবাল হতাশা নিয়েই লক্ষ্য করেছেন, ‘‘বাবা-মা, ছেলে-মেয়েদেরকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ানোর জন্য এত পরিশ্রম করা শুরু করল, তাদেরকে কোচিং করানো, প্রাইভেট পড়ানো, মানে ওদের শৈশবটা একদম নষ্ট করে দিয়েছে আর কি৷ এখন জিপিএ ফাইভ পেতে হবে, গোল্ডেন এ পেতে হবে, না পেলে জীবন ব্যর্থ৷''
অথচ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কাজ হলে প্রাথমিক স্তর এখনকার মতো পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত থাকত না, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হতো৷ অষ্টম শ্রেণিতেই হতো প্রাথমিক পর্বের প্রথম পরীক্ষা৷ আরেকটা পরীক্ষা হতো দ্বাদশ শ্রেণিতে৷
জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ড. জাফর ইকবাল জামিলুর রেজা চৌধুরী শিক্ষানীতি কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করে পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন৷ সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামির দাবি মেনে স্কুলপর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে সে বিষয়ে তার ঘোরতর আপত্তির কথা জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে৷ তাঁর মতে, ‘‘হেফাজতের চাপে আমাদের পাঠ্যবইগুলোতে যে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটা সরকার স্বীকার করুক বা অস্বীকার করুক কিছু আসে যায় না, কিন্তু আমরা সেটা জানি৷ আমরা নিজের চোখে দেখেছি ঘটনাটা ঘটেছে৷ এবং এটা খুবই আনফরচুনেট৷ প্রথমে অবহেলার কারণে হতে পারে এমন কিছু ভুলত্রুটি চোখে পড়ল৷ সেটা নিয়ে আমরা একটু বিচলিত ছিলাম৷ কিন্তু কিছুদিন পরে হঠাৎ করে আমরা আবিষ্কার করলাম যে ওই ভুলগুলি আমাদের চোখে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারই নয়, কারণ ফান্ডামেন্টাল যে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে হেফাজতের কারণে, সেটা আসলে অনেকই গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা একেবারে পুরোপুরি নতি স্বীকার করে নেয়া৷ এতে মনে হচ্ছে সরকার হেফাজতের জন্য পাঠ্যপুস্তকগুলো পরিবর্তন করতে রাজি আছে এবং পরিবর্তন করেও ফেলেছে৷ এখন ভবিষ্যতে তারা আরো কী করবে সেটা নিয়ে আমরা খুবই দুর্ভাবনায় আছি৷''
বিশ্বের সেরা ১১টি শিক্ষা ব্যবস্থা
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ প্রতিবছর ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে৷ শিক্ষা সহ ১২টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোর তালিকা তৈরি করে সংগঠনটি৷ ছবিঘরটি শিক্ষা বিষয়ক তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Simin Wang
নবম: জাপান (৫.৬)
সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার ক্ষেত্রে ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে জাপানের বেশ নামডাক আছে৷ সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ছয় বছর৷ তারপর তিন বছর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ালেখা শেষ করে আরও তিনবছর হাইস্কুলে যায়৷ এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
নবম: বার্বাডোজ (৫.৬)
সরকারের বিপুল বিনিয়োগের কারণে সেদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ৷ বার্বাডোজের বেশিরভাগ স্কুলই সরকারি৷
ছবি: picture alliance/robertharding/H.-P. Merten
নবম: নিউজিল্যান্ড (৫.৬)
তিন ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সেখানে৷ এর মধ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ আর সরকারিকৃত (বেসরকারিভাবে পরিচালিত) স্কুলে পড়ে ১২ শতাংশ৷ বাকি তিন শতাংশ যায় বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অষ্টম: এস্তোনিয়া (৫.৭)
২০১৫ সালে জিডিপির প্রায় চার শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করেছিল দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Kalnina
ষষ্ঠ: আয়ারল্যান্ড (৫.৮)
দেশটির মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হলেও অর্থ দিয়ে থাকে সরকার৷ এছাড়া আছে সরকারি কারিগরী বিদ্যালয়৷
ছবি: privat
ষষ্ঠ: কাতার (৫.৮)
‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করছে দেশটি৷ সরকারি স্কুলগুলোতে কাতারের নাগরিকদের সন্তানরা বিনামূল্যে পড়ালেখা করতে পারে৷ আর বিদেশিরা তাঁদের সন্তানদের পাঠান বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: imago/imagebroker
পঞ্চম: নেদারল্যান্ডস (৫.৯)
২০১৩ সালে ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদন বলছে, নেদারল্যান্ডসের শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখি জীবন কাটায়৷ মাধ্যমিক পর্যায়ের আগে স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না৷ তাছাড়া লেখাপড়া করতে শিশুদের উপর বেশি চাপ প্রয়োগ করা হয় না৷
ছবি: AFP/Getty Images/C. van der Veen
চতুর্থ: সিঙ্গাপুর (৬.১)
বিজ্ঞান, রিডিং ও গণিত বিষয়ে বিভিন্ন দেশের ১৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ের পদ্ধতি হচ্ছে ‘পিসা’৷ এই তালিকায় সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো করে থাকে৷ তবে সে দেশে শিক্ষার্থীদের বেশ চাপে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়: বেলজিয়াম (৬.২)
মাধ্যমিক পর্যায়ে চার ধরনের স্কুল আছে – সাধারণ স্কুল, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক স্কুল, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আর্ট স্কুল৷ ছবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/T. Schulz
দ্বিতীয়: সুইজারল্যান্ড (৬.২)
প্রাথমিক পর্যায়ের পর শিশুদের দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্কুলে পাঠানো হয়৷ অঞ্চলভেদে জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইটালীয় ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়৷
ছবি: Imago
প্রথম: ফিনল্যান্ড (৬.৭)
বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার এই দেশে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি হোমওয়ার্ক করতে হয় না৷ ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়৷ আরও জানতে উপরের (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wennström
11 ছবি1 | 11
মুক্তিযুদ্ধে পিতৃহারা হওয়া ড. জাফর ইকবাল আক্ষেপ করে বললেন, ‘‘আমরা যখন স্বাধীন হয়েছিলাম তখন ধরে নিয়েছিলাম আমাদের স্বাধীন দেশে সব সুন্দরভাবে হবে, ঠিকভাবে হবে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পরেও অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের চিৎকার করতে হচ্ছে, চ্যাচামেচি করতে হচ্ছে, অনেকটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে৷ এক মুহূর্তও আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না৷''
এ অবস্থার জন্য ধর্ম নিয়ে কিছু মানুষের বাড়াবাড়িকেই দায়ী মনে করেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আসলে সমাজের ভেতরে অনেক ব্যাপার ঢুকে গেছে৷ এটাকে ঠিক করতে হবে৷ যেমন ধর্মটাকে এমনভাবে নেয়া এবং আমার ধর্মের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং অন্যের ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা – এমন তো হওয়ার কথা ছিল না৷''
এ অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পক্ষে সোচ্চার ড. জাফর ইকবাল বললেন, ‘‘সরকারকে বুঝতে হবে তাদের বন্ধু কারা৷ হেফাজত কিংবা ধর্মীয় যে সমস্ত গোষ্ঠী আছে তারা কখনোই সরকারের বন্ধু না৷ তারা সরকারকে সাহায্য করবে, সরকার যদি এটা আশা করে, সেটা খুবই ভুল আশা৷ আশা করবো যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা বুঝতে পারবেন যে হেফাজতের কাছে নতি স্বীকার করে কোনো লাভ হয় না৷''
কিন্তু সরকারের যদি বোধোদয় না হয়? সেক্ষেত্রে সর্বস্তরে প্রতিবাদ এবং আলোচনার প্রয়োজনের কথাও বলেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল৷ সাক্ষাৎকার শেষ করেছেন আশার কথা শুনিয়ে৷ বলেছেন, ‘‘আমরা যারা একাত্তরটা দেখে এসেছি, সেখানে এমন একটা অবস্থা ছিল যে আমরা যে একটা স্বাধীন দেশে নিঃশ্বাস নিতে পারবো, সেটা কল্পনাও করা যেতো না৷ সেখানে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি৷ কাজেই এখনকার অবস্থাটাকে আমি মনে করছি এক ধরনের সাময়িক বিপর্যয়৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
শিশুদের নানা রকমের ক্লাসরুম
বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষাজীবন৷ সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই৷ চলুন দেখা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেণিকক্ষে শিশুদের কীভাবে লেখাপড়া শেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/landov
বেশির ভাগ দেশের শ্রেণিকক্ষে যা থাকে...
বিশ্বের প্রায় সব দেশের শ্রেণিকক্ষেই চক আর ব্ল্যাক বোর্ড থাকে৷ শিক্ষক বা শিক্ষিকা সেই ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের বোঝান৷ শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসে বসে শোনে৷ তবে অনেক দেশই এই সাবেকি ব্ল্যাকবোর্ড এবং চক ছেড়ে দিয়েছে৷ আবার এমন দেশও আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই৷ মাটিতে বসেই লেখাপড়া করতে হয় তাদের৷
ছবি: AP
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিজিটাল বই...
দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলে এসে গেছে কম্পিউটার৷ ইন্টারনেট সংযোগও দেয়া হয়েছে প্রতিটি ক্লাসরুমে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো বই-খাতা থাকবে না৷ বইয়ের পরিবর্তে ‘ই-বুক’ দেয়া হবে তাদের৷ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার৷ সবাইকে ডিজিটাল শিক্ষাদান পদ্ধতির আওতায় নিতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে ‘ট্যাবলেট পিসি’ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: AP
ঘানার শিশুদের অবস্থা
অনেক দেশের স্কুলে আবার কম্পিউটার তো দূরের কথা, ক্লাসরুমই নেই৷ আফ্রিকার দেশ ঘানার এই স্কুলটি দেখুন৷ ভবনই নেই! তাই গাছের ছায়াতেই নেয়া হচ্ছে ক্লাস৷ শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন আর ছোটমনিরা বেঞ্চে বসে মন দিয়ে শুনছে তাঁর কথা৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
জার্মানির অত্যাধুনিক ক্লাসরুম
জার্মানিতে কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চারাও ক্লাসে পেন্সিল ব্যবহার করে না৷ নোট লেখার বইও নয়৷ টাচ প্যাড, স্মার্টবোর্ড, নেটবুক – এই সমস্ত আধুনিক জিনিসপত্র এ বয়সেই এসে গেছে তাদের হাতে৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিশুদের শিক্ষা যেন বাড়তি চাপ৷ ছবির এই চার বছর বয়সি শিশুগুলোর মতো সব শিশুকেই বলতে গেলে মায়ের কোল থেকে নেমে ঢুকে পড়তে হয় স্কুলে৷ চাপ যে তখন থেকেই শুরু!
ছবি: AP
কেনিয়ার স্কুল এবং ক্লাসরুম
কেনিয়ায় শিক্ষাজীবনের প্রথম আট বছর শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন দিতে হয় না৷ তারপরও লেখাপড়া করা সবার জন্য খুব সহজসাধ্য নয়৷ দরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েরা বই-খাতা, পেন্সিল, পোশাক, জুতো ইত্যাদির খরচ জোগাতে পারেন না বলে অনেক শিশুকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়৷
ছবি: DW/J.Bruck
ব্রিটেনের স্কুলে ‘ইউনিফর্ম’ বাধ্যতামূলক
ইংল্যান্ডের প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পোশাক পরতে হয়৷ সবাই এক রকম পোশাক পরলে শিক্ষার্থীদের চিনতে সুবিধা হয় এবং তাদের পড়াশোনাতেও মন বসে – এমন কিছু যুক্তিতেই শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার নিয়ম মানছে স্কুলগুলো৷ তবে ব্রিটেনে একটা সুবিধা আছে৷ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ হিসেবে অনুদান দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্ররা চাইলেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাকিস্তিনে অবহেলিত শিক্ষাখাত
পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে শিক্ষার হার আরো কমছে, কমছে স্কুলও৷ ওপরের ছবিতে একটি পার্কে লেখাপড়া করতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের৷ পাকিস্তানে এমন দৃশ্য অপরিচিত নয়৷
ছবি: AP
দক্ষিণ সুদানে মেয়েরা বিপদে...
দক্ষিণ সুদানেও প্রায় একই অবস্থা৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷ সে দেশের মাত্র ১৬ ভাগ নারী এখন কোনো রকমে পড়তে এবং লিখতে পারে৷ যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্কুল রক্ষা পেয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ নেই৷ বই-পত্রও নেই কিছু স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: dapd
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবং বাংলাদেশ...
২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় অসংখ্য স্কুলের ক্ষতি সাধন করা হয় বাংলাদেশ৷ এ বছর দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধ চলায় স্কুলগুলোও অনেক দিন বন্ধ ছিল৷ এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নিতে শুরু করে কিছু স্কুল৷ হরতাল-অবরোধের কারণে সপ্তাহের ৫-৬ দিন গৃহবন্দী, তারপর ছুটির দিনে স্কুলবন্দী৷ বাংলাদেশের শিশুদের অসহায়ত্ব ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন৷