বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনে মুক্তির পর এখন সরকার বিরোধী আন্দোলন পুনর্গঠনের কথা হচ্ছে। বিএনপির চেয়ে তাদের যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের মধ্যে এই চিন্তা বেশি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সরকারের মুখোমুখি আন্দোলননিতে হলে কী করা দরকার সেটাই বিএনপি ও তাদের সমমনাদের ভাবনার বিষয় এখন। সেটা করতে কেনে কৌশলে যেতে হবে, কতটা সময় লাগবে তাও ভাবনার বিষয়। তাদের মধ্যে শুধু আন্দোলন নয় , দল এবং নেতৃত্ব পুনর্গঠনের প্রশ্নও উঠেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, " মুক্তি পাওয়ার পর মহাসচিব এখন কিছুটা অসুস্থ আছেন। আশা করছি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে বৈঠক করবেন।” আর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও তাদের সঙ্গে বৈঠকের আশা করছেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি ও তাদের সমমনারা আলাদা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে। তবে ওইসব কর্মসূচি গতানুগতিক। বিএনপির এক নেতা বলেন," এখন ঝড়ের পরের নীরবতা চলছে। আমরা তো প্রচণ্ড চাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তাই এখন একটু দম নিচ্ছি। আন্দোলন অবশ্যই পুনর্গঠন হবে।”
'মহাসচিব এরমধ্যে বৈঠকে বসতে পারেন'
বিএনপি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে "দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও” নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি শেষ হবে। এই কর্মসূচিতে তারা ঢাকাসহ সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করছে। ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ১৬ ফেব্রুয়ারি " ব্যাংক লোপাট” ও "অর্থ পাচারের” প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে তারা " প্রহসনের নির্বাচন মানিনা, গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর” শিরোনামে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছে।
১২-দলীয় জোট, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলও পৃথকভাবে সরকারের ‘প্রহসনের' নির্বাচনের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
তবে এই সব কর্মসূচি আসলে রুটিন কর্মসূচি। নির্বাচনের পর আর যুগপৎ কর্মর্সূচি হয়নি। তাদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আন্দোলনের দুইটি ধারায় মতামত আছে। একটি ধারা চাইছে এখন এইভাবেই সাধারণ কর্মসূচি দিয়ে সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। কারণ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে আছে। তারা মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। তার আগে আবার বড় আন্দোলনে গেলে আবার গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে। আরো অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে যেতে হবে। আরেকটি ধারা চাইছে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আবার একটি ডেটলাইন দিয়ে অল-আউট কর্মসূচিতে যেতে। তবে বিএনপি কোন ধারায় যাবে তা স্পষ্ট হতে আরো সপ্তাহ দুই সময় লাগবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শুরু করলে অনেক কিছুই বোঝা যাবে।
'আমাদের আন্দোলনে ফেল করেছে'
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন," আমরা যেভাবে আন্দোলন করেছি, সেটা তো ফেল হয়েছে। আমরা টার্গেটে যেতে পারিনি। আর সরকার নির্বাচন করেছে, কিন্তু সেই নির্বাচনে তো শতকরা পাঁচ ভাগ ভোটারও ভোট দেয়নি। আওয়ামী লীগের লোকজনও ভোট দেয়নি। সেই বিবেচনায় আন্দোলন সফল।”
তিনি বলেন, " কিন্ত আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ। নেতৃত্বের দুর্বলতা এগুলো নিয়ে মূল্যায়নের দরকার আছে। আমাদের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। আরো হবে। এখানে মূল দলতো বিএনপি। নির্বাচনের আগে বিএনপিনসহ আমাদের বিভিন্ন দলের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগরে পাঠানো হয়েছে। ফলে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া কঠিন ছিলো। আমরা তো নির্বাচন প্রতিহত করার কথা বলিনি, বর্জনের কথা বলেছি। দেশের মানুষ নির্বাচন বর্জন করেছে।”
তিনি বলেন," আন্দোলনকে এখন নতুন করে সাজাতে হবে। সেটা নিয়েই কাজ করছি আমরা। আমরা দ্রব্যমূল্যসহ সাধারণ মানুষের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন," নেতৃত্বের তো সংকট আছে। সেটা ওনারাও বুঝতে পারছেন। আমরাও বলছি। কিন্তু সেটা আমার দিক থেকে ঠিক করা কঠিন। সেটা কীভাবে ব্যালেন্স করা হবে। এটা এটা সার্বিক বিষয়। সেটা করা হয়তো কঠিন। তবে আন্দোলটা পুনর্গঠন করা দরকার । আমাদের মধ্যে এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।”
'আন্দোলন পুনর্গঠন করা প্রয়োজন'
তিনি মনে করেন," আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি একই আছে। ফলে আমাদের আন্দোলনটা জারি আছে। সরকার সফল হয়নি। নির্বাচন করা সফলতা নয়। তবে আমরা যেটা পারিনি সেটা কেন পারনি দেখা দরকার। আমাদের ঘাটতির জায়গাগুলো বের করা দরকার। এখন আমরা যে যার মতো কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু আমাদের তো আবার সরকারের মুখোমুখি যেতে হবে। সেই জায়গায় আন্দোলনের পুনর্গঠন করা দরকার।”
বিএনপিও মনে করে, তাদের আন্দোলন এবং নেতৃত্ব সব কিছুই রিভিউ করা দরকার । দেখা দরকার কোথায় দুর্বলতা আছে। আন্দোলনের জন্য সব কিছু প্রস্তুত থাকার পর কেন সফলতা আসলনা সেটা দেখা দরকার। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন," জনগণতো তৈরি আছে। আন্দোলনের কৌশল হিসেবে কর্মসূচির পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। আমরা সেটাই করছি। আমরা আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। যোগাযোগ হচ্ছে। আন্দোলন তো চলছে এবং আরো নতুন রূপে আসবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এমনিতেই ছাড়া পেয়ছেন। সরকার মিথ্যা মামলায় কতদিন কারাগারে রাখবে? আরো যারা নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন তারাও ছাড়া পেয়ে যাবেন।”
তিনি বলেন ," মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের সঙ্গে তার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তার শরীর এখনো কিছুটা খারাপ। আশা করছি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শরিকদের সঙ্গেও বসবেন।”
জানা গেছে আন্দোলন পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শরিকদের ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। আবারো মুলতবি বৈঠক হবে। ওই দিনের বৈঠকে শুধু আন্দোলন পুনর্গঠন নয়, যার দল ও নেতৃত্ব পুনর্গঠনের বিষয়ও উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ১২ সংসদ: সরকার, বিরোধী ও গণতন্ত্র
কখনো সংসদে নেই বিরোধী দল, কখনো নেই নির্বাচনেই। কখনো নামকাওয়াস্তে বিরোধী দল, কখনো একই দল বিরোধী এবং সরকারের ভূমিকায়। নির্বাচনে নানা ধরনের নাটকীয়তার তথ্য জানুন ছবিঘরে।
ছবি: AFP
১৯৭৩: প্রথম সংসদে ছিল না বিরোধী নেতা
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয় পায় আওয়ীমী লীগ। জাসদ একটি, জাতীয় লীগ একটি এবং স্বতন্ত্ররা পান পাঁচটি আসন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯। উল্লেখযোগ্য আসন না থাকায় ছিলেন না কোনো বিরোধী দলীয় নেতা। সেই সময় সাতজন সংসদ সদস্য বিরোধী দল গঠনের দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। আড়াই বছর পর সংসদ ভেঙে দিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়, গঠন করা হয় একক দল বাকশাল।
৫১.৩% ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে গঠিত বিএনপি ২০৭ আসন জিতে সরকার গঠন করে। ৫৪ আসন জিতে আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান নেয়, দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান হন বিরোধী নেতা। মুসলিম লীগ ২০টি, জাসদ ৮টি এবং অন্যান্য দল পায় ১০টি আসন। ১৯৮১ সালে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের মার্চের পর দ্বিতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়, ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
ছবি: imago/Belga
১৯৮৬: বিএনপির বর্জন, বিরোধী আওয়ামী লীগ
নিজের দল জাতীয় পার্টি গঠন করে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১.১%। আন্দোলনের মুখে ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন এরশাদ।
ছবি: imago/Xinhua
১৯৮৮: প্রধান বিরোধীদের বর্জন, সম্মিলিত বিরোধী দল
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ প্রায় সবকয়টি প্রধান বিরোধী দল এরশাদের অধীনে নির্বাচন বয়কট করে। জাতীয় পার্টি পায় ২৫১টি আসন। বেশ কয়েকটি নতুন তৈরি হওয়া দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ১৯ সদস্যের সম্মিলিত বিরোধী দল। কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ নামের ওই বিরোধী দলের নেতা করা হয় আ স ম আবদুর রবকে। নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫২.৫%।
ছবি: bdnews24.com
১৯৯১: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন এরশাদ। সংবিধানে তখনও ছিল না নিরপেক্ষ সরকারের বিধান। কিন্তু সব দলের সম্মতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয় লাভ করে ১৪২ আসনে, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়, বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫.৪%। এছাড়া, জাতীয় পার্টি ৩৫ এবং জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল ১৮টি আসন।
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
১৯৯৬: আবার বর্জন, বিরোধী নেতা বঙ্গবন্ধুর খুনি
এই নির্বাচন বেশি পরিচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নামেই। অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনটি বর্জন করে, ভোটদানের হার ছিল মাত্র ২১%। বিএনপি জিতেছিল ২৭৮ আসনে। ফ্রিডম পার্টির হয়ে একটি আসন জিতেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ৷ স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছিলেন ১০ আসনে। বাকি ১১টির মধ্যে ১০টি আসনের ফলাফল ‘অসমাপ্ত' থাকে ও আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ছবি: Getty Images
১৯৯৬: তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন
আগের সংসদ টিকেছিল মাত্র ১১ দিন। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে ১২ জুন দেয়া হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৪৬ আসনে জেতে আওয়ামী লীগ, ১১৬ আসন পায় বিএনপি। ৩২ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলের নেতা হন খালেদা জিয়া।
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
২০০১: জোটের নির্বাচনে বিএনপি
এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৯৯৯ সালেই জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এরশাদ জোট ত্যাগ করলেও নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায় জোটে। বিএনপি একাই ১৯৩ আসনে জয় পায়, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি এবং জামায়াত পায় ১৭ আসন। আওয়ামী লীগ পায় ৬২ আসন। বিএনপির সঙ্গে সরকারে যোগ দিয়েছিল জামায়াত।
সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী, গঠিত হয় সেনাসমর্থিত সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে, অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০, জাতীয় পার্টি পায় ২৭ আসন। চার দলীয় জোটে বিএনপি পায় ৩০ আসন।
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা
বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায় ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগের। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পায় ৩৪ আসন। এই সংসদে জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে ছিল বিরোধী দল এবং সরকারে। রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রিসভায় ছিলেন তার দলেরই তিন জন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
২০১৮: বিএনপির অংশগ্রহণ, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করা হয়। এরশাদ বারবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরোধী নেতা ছিলেন এরশাদ, এরপর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।
২০২৪: ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এত স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনো নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২২ আসন, স্বতন্ত্ররা ৬২ আসন এবং জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১ আসনে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়াই করে জয়ী হওয়াদের বেশিরভাগই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা। দুটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এবারও জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে, নাকি স্বতন্ত্ররাই জোট করবেন তা এখনো জানা যায়নি।