1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিবাংলাদেশ

সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির নজির, বেনজির ও দায়মুক্তি

DW Mitarbeiterportrait | Faisal Ahmed
ফয়সাল শোভন
৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির খবর নতুন নয়৷ তবে এ নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে৷

দুদকের বাইরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্য সংস্থাগুলোর ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছেছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance

দৈনিক কালের কণ্ঠ তাদের প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার দাবি করেছে, যা তার চাকরিজীবনের বৈধ আয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি৷ যিনি কিনা দারিত্বরত অবস্থায় রাষ্ট্রের শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেছেন, আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন

একটা সময় ছিল যখন সংবাদ মাধ্যমে এমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আলোড়ন তৈরি হতো৷ নীতি নির্ধারণী মহলে তার প্রভাব পড়তো৷ সরকার চাপে পড়তো এবং সেই চাপ মোকাবিলার চেষ্টা থাকতো৷ সেই পরিস্থিতি এখন বদলেছে৷ সংসদে আপাত বিরোধিতাবিহীন সরকারকে তেমন জোরালো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না৷ নাগরিক সমাজের কণ্ঠও ততটা জোরালো নয়, হলেও সরকারের কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ বড়জোর আলোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমে, যার স্থায়িত্ব থাকে টেনেটুনে এক সপ্তাহ৷ বেনজীর আহমেদকে নিয়ে প্রতিবেদন নিয়েও নীতিনির্ধারণী মহলে এখন পর্যন্ত তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ বরং সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, এই খবর অসাধুদের সরকারি চাকরির প্রতি আরো উৎসাহী করবে৷ এমন উচ্চপদে আসীন হয়ে কত সম্পদ গড়া যায় খবরটি তার বিজ্ঞাপন হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যৎ বেনজীর আহমেদদের কাছে৷

সরকারি কর্মকর্তারা এত টাকা কোথা থেকে পান? ২০২২ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি তাদের এক জরিপে দেখিয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৭০ দশমিক নয় শতাংশ খানা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে৷ তাদের জরিপে উঠে আসা ১৭টি খাতের মধ্যে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (সে সময় পুলিশের আইজিপি বা মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন বেনজীর আহমেদ)৷  জরিপে ঘুসদাতা খানার ৭২ শতাংশ কারণ হিসেবে বলেছে ‘ঘুস না দিলে সেবা পাওয়া যায় না'৷ অর্থাৎ, সরকারি সেবা পেতে ঘুস দেয়াই অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে পরিণত হয়েছে৷ টিআইবির হিসাবে সেই সময়ে দেয়া মোট ঘুসের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) পাঁচ দশমিক নয় শতাংশ৷ গত বছর উদ্বোধন হওয়া কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ খরচের চেয়েও যা বেশি৷

অথচ দুর্নীতি কমবে এমন প্রত্যাশায় ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন শতভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছিল৷ তাতে বহু তরুণের কাছে সরকারি চাকরি পাওয়া জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে৷ বর্তমানে বেতন ও অবসরভাতা মিলিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পেছনে বছরে সরকারের ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ৷

এত সুবিধার পরও কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রবণতা ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ আবার যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সেখানে উচ্চপদের কর্মকর্তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির মামলায় ২০১৬ সাল থেকে সে বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক৷ তাদের মধ্যে ৩৯০ জন ছিলেন​ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যার মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি ছিলেন নিম্ন পদের চাকরিজীবী৷

দুদকের বাইরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্য সংস্থাগুলোর ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে৷ ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল' অনুসারে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না৷ দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা সম্পর্কিত ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য৷ গত বছর এই আইন পাস করেছে সরকার৷

নতুন খবর হলো কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল সেটিও তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ এজন্য ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯' সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷ আগে প্রতি বছর সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার বিধান থাকলেও সরকার সেটি শিথিল করে পাঁচ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করে৷ এখন এই বাধ্যবাধকতাও সরিয়ে দেয়া সরকারি কর্মচারিদের দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে ব্যাপক উৎসাহ দেবে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে টিআইবি৷ সব মিলিয়ে কঠোর অবস্থানের বদলে সরকার ক্রমাগতভাবে দুর্নীতির পথ যেন উল্টো প্রশস্ত করছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকের আচরণ ও বক্তব্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর চেয়ে তাদের দলীয় পরিচয়ই বেশি প্রকাশিত হয়েছে৷ যে অভিযোগ ছিল বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধেও৷ তাদের এবং সার্বিকভাবে আমলাতন্ত্রের উপর সরকারের অতি নির্ভরশীলতা উচ্চপদের কর্মকর্তাদের দুনীতি ও দায়মুক্তির বাড়বাড়ন্ত সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা ভেবে দেখা প্রয়োজন৷

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ