1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিবাংলাদেশ

‘সরকারি কর্মকর্তাদের পুরস্কার, পুলিশের পদক স্থগিত রাখা উচিত’

হারুন উর রশীদ স্বপন
২৮ জুন ২০২৪

কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির সম্পদের পাহাড় তাদের সততা সম্পর্কে সন্দেহ জাগায়৷ উঁচু পদে বসে থাকা ব্যক্তিরাই দুর্নীতিগ্রস্ত হলে সমাজ দুর্নীতিমুক্ত করা কি কখনো সম্ভব?

সরকারি অফিস ভবন উপরে জাতীয় পতাকা
বেনজীর, মতিউরদের দুর্নীতির কথা সরকার আগে জানতো না বিশ্বাস করেন না আলী ইমাম মজুমদারছবি: DW

 এ বিষয়েই ডয়েচে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷

ডয়চে ভেলে: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তো ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করেন। এটা দিয়ে তাদের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ কি বোঝা যায়?

আলী ইমাম মজুমদার: ট্যাক্স রিটার্নের মধ্যে সম্পদ বিবরণী থাকে। এটা শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি নয় , বেসরকারি চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ , ব্যবসায়ী সাধারণ নাগরিক সবাই ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করেন। এখন তারা যদি তাদের সম্পদ গোপন করেন, সেই গোপন করার সুযোগ আছে। কেউ চাইলে সম্পদ গোপন করতে পারে। এখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ওয়াচ ডগ হিসাবে কাজ করার সুযোগ আছে।

দুনীতি কি শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরাই করেন?

না, দুর্নীতি শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই করেন না। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসার সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রসারিত। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নামে ব্যাংক খালি করে ফেলেছে। এটা করাপশন, এটা লোন নয়। 

এটা ধরা যায় কীভাবে?

একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অডিট হয়। এখন যারা দুর্নীতিবাজ হিসাবে পরিচিত,  সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের ব্যাপারে দুর্নীতির খবর জানা আছে, এখন তাদের যদি একটা তালিকা করে দেখা হয় যে তারা ঠিকমতো রিটার্ন সাবমিট করেছেন কিনা, অথবা রিটার্নের বাইরে তার সম্পদ আছে কিনা, এরপর রিটার্নে সে সম্পদ বিবরণী দিয়েছেন সেটা সে আইনগতভাবে অর্জন করেছে কিনা, সম্পদের সে আন্ডার ভ্যালুয়েশন করেছেন কিনা৷ গুলশানের জমির দাম আর পূর্বাচলে জমির দাম এক নয়। এগুলো দেখলে দুর্নীতি কী পরিমাণ করেছে বা দুর্নীতি করে নাই তা বের করা সম্ভব। তবে এখন সব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ব্যাপারে একসঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ, সেটা করার জন্য এত জনবল নাই। তাহলে আরো পাঁচটি মন্ত্রণালয় বানাতে হবে এই কাজের জন্য। সুতরাং যারা সন্দেহজনক, হাইলাইটেড তাদের বাছাই করে আগে ধরতে হবে।

আপনি তো বললেন এটা এনবিআর করতে পারে। কিন্তু দুদক এটা করতে পারে কিনা...

শুধু সরকারি কর্মচারি নয়,  দুদক তাদের বাইরেও তদন্ত করতে পারে। আমি বলেছি, শুধু সরকারি কর্মচারি নয়, পলিটিক্যাল লিডারদের একটা বড় অংশ দুর্নীতিবাজ, ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি অংশ দুর্নীতিবাজ, ঋণের নামে ব্যংকের দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোনো অংশই তো বাদ নাই। এখন দুদকের ক্যাপাসিটিতে কুলাবে কিনা। তাই দুদক সন্দেহজনক দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করে কাজ শুরু  করতে পারে। এখানে আসলে এখন স্যাস্পলিং করে কাজ শুরু করতে হবে। সবাইকে ধরার মতো জনবল নাই। আর দুদকেও যে সবাই সৎ অফিসার তা তো নয়।

সরকার তাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে: আলী ইমাম মজুমদার

This browser does not support the audio element.

এখন এই যে সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতি এটার কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

আনার এমপি মারা গেছেন। প্রতিটি মৃত্যুই দু:খজনক। কিন্তু উনি তো ওয়ান ইলেভেনের সময় ডজন খানেক মামলায় ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্টে ছিলেন। এরপর তিনি দেশে আসলেন। ২০০৮-এ নির্বাচন হলো। উনি দল পরিবর্তন করলেন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এ নির্বাচন সেই অর্থে না হলেও তিনি প্রতিবারই এমপি হয়েছেন। তার পেশা কী ছিল? এই জাতীয় লোক কি একজন? টেকনাফে একজন  সাবেক এমপি আছেন বদি। তার ওয়াইফ পরপর দুইবারের এমপি। সে নামে এমপি। ক্ষমতা বদির হাতে। এখন তাদের যে আয়, তার অংশীদার নিশ্চয়ই রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে আছে। তাদের পৃষ্ঠপোষক আছে, তাদের পেট্রোনাইজ করা হচ্ছে।

এখন যেহেতু দুর্নীতি সর্বব্যাপ্ত। তাই সরকার এটার লাগাম টানতে আলাদা একটি কমিশন করতে পারে কিনা। আরো বেশি জনবল দিয়ে। প্রয়োজনে বিচারের জন্য বিশেষ আদালত? একটা বিশেষ দুর্নীতিবিরোধী অভিযান?

আমার মনে হয় এটা হলে ব্যাক ফয়ার করবে। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। তখন যে কিছু কাজ হয়নি তা নয়। তখন এমন লোককেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের কেউ আইনের আওতায় আনার কথা আগে চিন্তাও করতে পারেনি। কিন্তু এটা শেষ পর্যন্ত তো সাসটেইন করেনি। আমার কথা হলো, এখন যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোকে দিয়ে কাজ করান। এখন যে দুদক আছে, তার ক্যাপাসিটি বাড়ান। আইন-কানুন পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু এর বাইরে অন্য কোনো ব্যবস্থা দরকার আছে বলে মনে হয় না। আরেকটা কমিশন করে কী হবে? একই তো ব্যাপার।

সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিধান কি আছে?

হ্যাঁ, যোগ দেয়ার সময় সম্পদের হিসাব দিতে হয়। আমরা দিয়েছি। কিন্তু সেটা তো ওই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমি কিছু সম্পদ পেলাম। এর সঙ্গে আমার স্ত্রীর বাবা যখন মারা যান, আমার স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু সম্পদ পেলেন। আমি সরকারের একটা প্লট পেলাম উত্তরায়। সেটা আমি ডেভেলপারকে দিয়ে চারটি ফ্ল্যাট পেয়েছি। আজকে যদি আপনি বলেন- এই লোকটা চারটি ফ্ল্যাটের মালিক কীভাবে হলো? চারটি ফ্ল্যাটের দাম দুই কোটি টাকা। আমি তো বলবো, আমার ফ্ল্যাটের দাম জিরো। আমার এক টাকাও খরচ হয়নি। কথা হলো, সরকারি কর্মচারিদের সম্পদের হিসাব দেয়ার, দিচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরাট একটি অংশ দুর্নীতিতে অধিকতর যুক্ত হয়ে পড়ছে।  এর কারণ হলো, এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করছে। ফলে শুধু সরকারি কর্মচারি নয়, সকলে মিলে লুটপাট করছে।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ বা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বৈধ সুযোগ-সুবিধার বাইরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ব্যবসা বা অন্য উপায়ে অর্থ আয়ের কোনো সুযোগ আছে ?

বেনজীর সাহেব তো বলছেন তার স্ত্রীর ব্যবসা আছে। লিমিটেডভাবে শেয়ার ট্রেডিং করা যায় কিনা আমি জানি না। আমি চাকরিতে থাকার সময় সামান্য কিছু শেয়ার কিনেছিলাম। পরে লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছি। এখন শুনছি, কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা শেয়ার মার্কেটে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। আসলে এটা কারসাজি করে শেয়ার বাজার লুটপাট। এই লুটপাটকারীরা বর্তমান সরকারের উঁচু মহলে নীতি নির্ধারণ করে।

জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার বেনজীর সাহেব পেয়েছেন, মতিউর রহমান সাহেব পেয়েছেন। এটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কারা কী করে সেটা দেখার কেউ নেই? কোনো সিস্টেম নেই?

ঊর্ধ্বতন যিনি, তার দায়িত্ব হচ্ছে অধস্তনের মূল্যায়ন করা। এখন এই দুই জনের যারা ঊর্ধ্বতন. তারা তাদের শুদ্ধাচার পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। তারা কী দেখেছেন তারাই বলতে পারেন । এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার স্থগিত রাখা উচিত। আপাতত উঠিয়ে দেয়া উচিত। শুধু শুদ্ধাচার পুরস্কার নয়, পুলিশের পদকও আপাতত স্থগিত রাখা উচিত।

বেনজীর তো পুলিশের যত পুরস্কার আছে সব পেয়েছে। আরো থাকলে সেগুলোও পেতো।

বেনজীর, মতিউর সাহেবদের দুর্নীতির কথা এখন আমরা জানলাম। এটা কি সরকারের কোনো সংস্থা জানতো না? সরকার জানতো না এটা কি আপনার বিশ্বাস হয়?

এটা আমি আদৌ বিশ্বাস করি না যে, তারা জানতো না। যদি তারা না জেনে থাকে, তাহলে তাদের অস্তিত্বই তো প্রশ্নবিদ্ধ। আর তারা যদি জেনে থাকে এবং জানিয়ে থাকেন, যাদের জানানোর কথা, তারপরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয়ে থাকলে বুঝতে হবে স্টেট ইজ নট ফাংশনিং।

তারা আবার ধরা পড়ার আগেই বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ পায়। এসব দেখে আপনার কী মনে হয় সরকার কি আন্তরিকভাবে দুর্নীতিবাজদের ধরতে চায়?

সরকার বরং তাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। তারা সরকারের পলিটিক্যাল টুল হিসেবে কাজ করেছে। তারা আবার এই সুযোগ নিয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। এখন যখন বিষয়গুলো সামনে এসেছে তখন সরকার লোক দেখানো একটা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের আবার দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে, অথবা পালিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়নি।

এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের গন্তব্য কোথায়? আমরা কি একটি দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবো?

একটা রাষ্ট্র তো সব সময় দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। আমি তো আশাবাদী মানুষ। এরকম পরিস্থিতি সব সময় থাকবে না। একটা পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট দিয়ে শুরু করতে হবে। উপরের দিক দিয়ে শুরু করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে উপরের দিকে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের আগে ধরতে হবে।

তাহলে আপনি বলছেন আগে মাথা দিয়ে শুরু করতে হবে?

অবশ্যই আগে মাথা ধরতে হবে। যারা পরিচালনা করে, তাদের আগে ধরতে হবে। তারাই তো মূল দায়ী।

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ