1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যভারত

সরকারি হাসপাতালে বিষাক্ত স্যালাইনে রোগী মৃত্যুতে দায় কার?

১৪ জানুয়ারি ২০২৫

বাতিল বিষাক্ত স্যালাইনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করলো সিআইডি। তারা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যান। কলকাতায় ভর্তি অন্য তিন প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিষাক্ত স্যালাইনে রোগীর মৃত্যুর পর সিসিইউ-এর বাইরে উদ্বিগ্ন মানুষ।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিষাক্ত স্যালাইনে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিআইডি তদন্ত করছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সোমবার সিআইডির হাতে তদন্তভার তুলে দেয় তারা।

মেডিক্যালে সিআইডি

পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি রিঙ্গার ল্যাক্টেড (আরএল) স্যালাইনের উৎপাদন ও সরবরাহ আগেই নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য। তবু মেদিনীপুর মেডিকেলে অস্ত্রোপচারের সময় গত আট ও নয় জানুয়ারি এই স্যালাইন ব্যবহার করা হয়। এরপর সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয় মামনির। সেই দিনে অস্ত্রোপচার হওয়া আরও তিন প্রসূতির চিকিৎসা চলছে কলকাতার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল এসএসকেএমে। 

চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে গাফিলতি হয়েছিল তা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে রাজ্য। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পর স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ও মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। 

এক প্রসূতি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাতিল স্যালাইনের ব্যবহারের পাশাপাশি চিকিৎসকদের ভূমিকা, সবটাই তদন্ত করে দেখবে সিআইডি। মঙ্গলবার সকালে সিআইডির প্রতিনিধিরা হাসপাতালে পৌঁছন। এখনো তারা কোনো এফআইআর দায়ের করেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ প্রসূতি মৃত্যুর পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছিল।

কিন্তু বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসছে নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহারের প্রসঙ্গ। শুধু স্যালাইন নয়, অক্সিটোসিন ইনজেকশনের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

একগুচ্ছ প্রশ্ন

রাজ্য সরকার আগেই যে স্যালাইনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল, সেটা কীভাবে একটি মেডিক্যাল কলেজে ব্যবহার করা হল, সেটা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। 

মুখ্যসচিব এর জবাবে বলেছেন, উৎপাদক সংস্থাকে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই সংক্রান্ত দ্বিতীয় নির্দেশিকাটি জারি হয় ৭ জানুয়ারি। তার পরেও কী কারণে হাসপাতাল থেকে আরএল স্যালাইন সরিয়ে ফেলা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, শুধু মেডিক্যাল কলেজ নয়, বিভিন্ন হাসপাতালে মজুত স্যালাইন ও ওষুধ বাতিলের ক্ষেত্রে কেন গড়িমসি করা হল। 

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজকে গত মাসে অনলাইন বৈঠকে এ ব্যাপারে জরুরি নির্দেশ দেয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তা সত্ত্বেও কার অঙ্গুলিহেলনে বাতিল স্যালাইন হাসপাতালে রয়ে গেল, তা তদন্ত করে দেখবে সিআইডি। 

অভিযোগ উঠেছে, বাতিল স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে সজাগ ছিল হাসপাতাল। কারো অজ্ঞাতে এই স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে, এমনটা নয়। ব্যাচ নম্বর উল্লেখ করে আরএল স্যালাইন ব্যবহারের অনুমোদন হিসেবে প্রসূতিদের পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। 

অন্যান্য জায়গার মতো মেদিনীপুর মেডিক্যালে এই স্যালাইনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট আসার আগে কেন স্যালাইন ব্যবহার করা হল, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্যালাইনের পাশাপাশি অক্সিটোসিন ইনজেকশন নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। 

প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ ঠেকাতে অক্সিটোসিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। মামনি ও অন্যান্য প্রসূতিদের ক্ষেত্রে সেটা সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না, সেটাও সন্দেহের আবর্তে রয়েছে।

মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, প্রসূতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ থেকে মুচলেকা দেয়ার অভিযোগ, সব কিছুই খতিয়ে দেখবে সিআইডি। 

প্রসূতিরা সংকটজনক 

কলকাতার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি তিন প্রসূতির অবস্থা ভালো নয়। তাদের দেহে সংক্রমণ রয়েছে। কিডনি ও ফুসফুস ঠিক ভাবে কাজ করছে না। 

এ জন্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন চিকিৎসকরা। সাবেক সাংসদ ও চিকিৎসক-নেতা তরুণ মণ্ডল বলেন, "যে সামগ্রী নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা হাসপাতালে থাকাই উচিত নয়, সেটা কার নির্দেশে থেকে গেল স্টকে, এর উত্তর খুঁজতে হবে। স্বাস্থ্য ভবন যেটিকে বাতিল করে নির্দেশ পাঠিয়েছে, সেটা চিকিৎসায় ব্যবহার শুধু অজ্ঞানতাবশত হয়েছে, এটা ভাবার কারণ নেই। কিন্তু রাজ্য সরকারের অধীন সিআইডি প্রশাসনিক স্তরের গাফিলতি কতটা প্রকাশ্যে আনবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।"

সিআইডি প্রশাসনিক স্তরের গাফিলতি কতটা প্রকাশ্যে আনবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে: ডা. তরুণ মণ্ডল

This browser does not support the audio element.

কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো সিনিয়র চিকিৎসক কি প্রসূতির অপারেশনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন? এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার ও এমএসভিপির সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক পড়ুয়ারা অপারেশন থিয়েটারে আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করেন। তৃতীয় বর্ষের পিজিটিরা অস্ত্রোপচার করতে পারেন সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতিতে। সিনিয়র কেউ না থাকলে অস্ত্রোপচার করার কথা নয়।

মুখ্যসচিব বলেছেন, "সে সময় যারা কর্তব্যরত ছিলেন, তারা অস্ত্রোপচার করেন। এদের সকলে পিজিটি। তাই এটা বিধি অনুযায়ী হয়েছে বলা যাবে না। সিনিয়র চিকিৎসকদের অধীনে পিজিটিদের কাজ করতে হয়।"

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতিতে অপারেশন হয়েছে বলে শুনেছি। তারা স্যালাইনের মেয়াদ দেখে নিয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়া প্রয়োগের পরে হয়েছে। এমনিতে আমাদের সরকারি হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এর দায় চিকিৎসকদের নয়।"

বাতিল স্যালাইন ব্যবহারের সঙ্গে অনেকে দুর্নীতির যোগ খুঁজছেন। আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক পড়ুয়ার হত্যার পর এ নিয়ে বিস্তার হইচই হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে।

চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,  "কোনো দুর্নীতির চক্র স্যালাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছিল কি না, সেটাও নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে হবে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চিকিৎসকরা আগেও আন্দোলন করেছেন। আরজি করের দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, সেটা আর একবার দেখা যাচ্ছে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ