1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারের ইচ্ছায় নতজানু বাংলাদেশ ব্যাংক

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ আগস্ট ২০১৮

সাম্প্রতিক সময়ে নানা কেলেঙ্কারিতে আলোচনায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির পর ভল্টে থাকা সোনা বদলে হয়ে গেছে অন্য ধাতু৷ এমনকি সোনার ক্যারেটও কমে গেছে৷

ছবি: DW

বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন এত সব ঘটনা ঘটছে? কোথায় গলদ, কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব? এ সব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সবশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে, স্বর্ণ বদলে অন্য ধাতু বা কম ক্যারেটের স্বর্ণ বদলে দেয়া, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন ঘটনা কিভাবে ঘটে?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: এটি আসলে সম্ভব না হওয়ারই কথা৷ যে পদ্ধতিতে এগুলো জমা রাখা হয় সেখানে কোনো ফাঁক নেই৷ কিন্তু পদ্ধতির পেছনে যে মানুষগুলো কাজ করে তারা যদি দুষ্ট প্রকৃতির হয়, অসৎ হয় তাহলে তো হতেই পারে৷ দুষ্ট লোকেরা সিস্টেমকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারে৷ এখানে ৫/৬ জন লোক একত্রিত না হলে কাজটা করতে পারবে না৷ লোকগুলো যদি একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্র করে কাজটি করে তাহলে তো হতেই পারে৷ এ কারণে আমি মনে করি এটা নিয়ে একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে৷ সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের যে টাকা চুরি হয়ে ফিলিপাইন্সে গেছে, সেটার কেন কোনো সুরাহা হচ্ছে না?

এটা হ্যাকিং৷ চুরি বলতে আমরা যেটা বুঝি সিঁধ কেটে, এটা সেটা নয়৷ হ্যাকিংটা করে মূলত খুবই মেধাসম্পন্ন মানুষ৷ তারা এই প্রযুক্তিটা ভালোভাবে বোঝে৷ বাংলাদেশে এটা নতুন৷ এতদিন বাংলাদেশ গরিব দেশ ছিল৷ ৫/১০ হাজার টাকার জন্য কেউ হ্যাকিং করে না৷ এখন যেহেতু আমাদের টাকা পয়সা বেড়ে গেছে, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি তাই প্রথম হ্যাকিংটা এখানে হলো৷ হ্যাকিংয়ে শীর্ষে আছে আমেরিকা৷ আর দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া৷ হ্যাকিংয়ে আমাদের অবস্থান ছিল ২০তম৷ এই ঘটনার পর আমরা ১৯তম স্থানে উঠে এসেছি৷ হ্যাকিংটা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা৷ এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়৷ আমার জানা মতে, ঐ ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক পদ্ধতিগতভাবে, প্রযুক্তিগতভাবে কিছু উন্নতি করেছে৷ আশা করা যায় এখন তারা অনেকটাই ভালোভাবে দেখতে পারবে৷ তবে হ্যাকিং হবে না, এমন নিশ্চয়তা আমেরিকাই যখন দিতে পারে না, বাংলাদেশ কোথা থেকে দেবে৷

এই দুটো ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা (ডিজিটাল ও ফিজিকাল) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ আপনি কী মনে করেন?

এই যে হ্যাকিংয়ের কথা বলছিলাম, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ত নিম্নমানের ছিল৷ এটা স্বীকার করব আমি৷ কিন্তু এখন যেটা ঘটল সেটা কিন্তু প্রযুক্তির জন্য নয়৷ যদি ঘটে থাকে তাহলে সেটা মানুষের জন্যই৷

ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে কতটা সফল বা ব্যর্থ বলবেন আপনি?

এখন তো ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী দেখছি৷ আগে সবসময় এটা ছিল না৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে অনেকদিন সফলতার সঙ্গে তারা কাজ করেছে৷ এখন কিছুদিন দেখছি তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে৷ এর একটা কারণ আমার কাছে মনে হয়, তাকে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া হচ্ছে না৷ সরকারের তরফ থেকে যথেষ্ট হস্তক্ষেপ রয়েছে৷ তাদের ক্ষমতা আছে, আইন আছে সেটা ব্যবহার করতে আস্তে আস্তে তারা ভুলে যাচ্ছেন৷

তাহলে কি সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক নতজানু?

এটিই মনে হচ্ছে আপাতত৷ সরকারের হস্তক্ষেপ করার কথা না৷ কিন্তু সরকার হস্তক্ষেপ করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা মেনে নিচ্ছে৷ নতজানু তো হচ্ছেই৷

বাংলাদেশে প্রাইভেট ব্যাংক সেক্টরের অবস্থা বেশ ভালো ছিল৷ কিন্তু অনেকগুলো নতুন ব্যাংক দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়৷ এতে ব্যাংকখাত অনেকটা ঝুঁকিতে পড়েছে৷ নিয়ন্ত্রক হিসেবে সেখানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক?

হ্যাঁ, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ৷ যেখানে সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই বাংলাদেশ ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে স্বল্প পরিসরের অর্থনীতির মধ্যে বেশি করে ব্যাংক দেয়া তো অবশ্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজকে বেশ দুরুহ করে তুলেছে৷

একের পর এক প্রাইভেট ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কেলেঙ্কারির দায় কতটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বর্তায়?

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর আংশিক বর্তায়৷ কারণ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলিকে দমন করার আইন নেই৷ আর্টিকেল ৪৬-এ লেখা আছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বোর্ডকে ভেঙে দিতে পারবে, দায়িত্ব দিতে পারবে, সেটা শুধু প্রাইভেট ব্যাংকের ক্ষেত্রে৷ সেজন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে যে ঘটনা ঘটছে সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকার দায়ী৷ আর প্রাইভেট ব্যাংকে যা ঘটছে তার জন্য অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়-দায়িত্ব আছে৷

ব্যাংক চলে মূলত আমানতকারীদের অর্থে৷ আর উদ্যোক্তা-পরিচালক ছাড়াও ব্যাংকের মালিকানায় ভাগ আছে হাজার হাজার শেয়ারধারীর৷ অথচ তাঁদের না জানিয়েই একের পর এক ব্যাংকের মালিকানায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ এই কাজে সব ধরনের বৈধতা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ এটা কেন?

মালিকানা তো পরিবর্তন হবেই৷ এটা শেয়ার মার্কেটের ব্যাপার৷ কেউ যদি শেয়ার কিনে নেয় তাহলে মালিকানায় পরিবর্তন হবে৷ এটা সারা পৃথিবীতে হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তো এটা ঠেকাতে পারবে না৷

ইব্রাহিম খালেদ

This browser does not support the audio element.

সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো অনেক বেশি ঋণ দিচ্ছে৷ সেই ঋণ নানা অজুহাতে পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন গ্রহীতারা৷ এসব ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে আমরা শুনছি৷ বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাব, সময় মতো অডিট না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ অডিট ঠিকমতো না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ কীভাবে, ব্যাখ্যা করবেন?

এটা আমার কাছে একেবারেই মনে হয় না৷ কারণ যা কিছু বের হচ্ছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটের ফলেই বের হচ্ছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করা পর্যন্ত ঠিক আছে৷ কিন্তু অডিটে যা পাওয়া যায় সেই দোষ ত্রুটিগুলো ঠিক করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আইন প্রয়োগ, সেটাই ব্যর্থ হচ্ছে৷ সরকার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে যে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে এর মধ্যে এটা একটা কারণ৷ আরেকটি কারণ হলো বাংলাদেশে বড়লোকদের যে গ্রুপটা তারা সরকারকেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে ফেলছে৷ সেখানে ব্যাংকের কথা আর নাই বা বলি৷

অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা এ খাতের অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মনে করেন কি?

এখানে তো সমন্বয়ের কোনো প্রশ্নই নেই৷ আমি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেও গিয়েছি, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও গিয়েছি৷ তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন৷ সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই৷ আইন তাদের হাতে৷ অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয় বা সরকার কখনই তাদের প্রভাবিত করে না৷ এই জিনিসটা বাংলাদেশে নেই৷ এখানে সমন্বয়ের কোনো বিষয় নেই৷ যদিও দরকার হয় সেখানে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কো-অর্ডিনেশনের জন্য কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল আছে৷

একজন সাবেক গভর্নর একবার বলেছিলেন, নীচের তলায় কী হয়, ওপরের তলার লোকেরা জানেন না৷ এটা কীভাবে সম্ভব?

এটা তো হতেই পারে৷ যখন নাকি সুশাসন না থাকে দেশে বা প্রতিষ্ঠানে তখন এ ধরনের ঘটনাই ঘটে থাকে৷ এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক জায়গায় সুশাসন নেই৷

বাংলাদেশ ব্যাংককে কীভাবে আরো কার্যকর এবং দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব?

সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব না৷ সরকার যদি মনে করে করতে হবে তাহলে এটা করা সম্ভব৷ অর্থাৎ যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় বসিয়ে অযোগ্য লোককে সরিয়ে দিলে এটা সম্ভব৷ এটা বড় রকমের একটা সংস্কার৷ এটা করলে তো খুবই সম্ভব৷

এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা কতখানি আছে?

একেবারেই নেই বলে মনে হচ্ছে৷ এখানে একটু ব্যাখ্যা করে বলা দরকার৷ আব্দুল হাই বাচ্চু যাকে দুর্নীতি দমন বিভাগ পর্যন্ত কিছু করতে পারছে না৷ এতে বোঝা যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কোনোরকমের যুদ্ধ নেই৷

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ