গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেছেন সরকারের কেউ কেউ জামায়াতকে রক্ষার চেষ্টা করছে৷ তিনি বলেন, সরকার যদি আস্থার জায়গায় না থাকে তাহলে সরকারকে কিভাবে টেনে-হিঁচড়ে নামাতে হয় তা তাদের জানা আছে৷
বিজ্ঞাপন
বর্তমান ট্রাইব্যুনাল আইনে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার সম্ভব নয় – আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল গণজাগরণ মঞ্চের৷ তবে পুলিশি বাধার মুখে সেই কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায়৷ পুলিশের হামলায় আহত হন দু'জন৷
পুলিশি নির্যাতনের শিকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা
পাকিস্তানের সঙ্গে অস্থায়ী কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ এতে নারীসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন৷ প্রতিবাদে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়৷ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ এমনকি সেদেশের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবও পাস হয়৷ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW
‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদ
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সেদেশের দূতাবাসের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা পুলিশের বাধার কারণে সফল হয়নি৷ তাই গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাসের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সম্পর্ক ছিন্নের আল্টিমেটাম
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বুধবারের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আপাতত স্থগিত রাখতে সরকারকে ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়৷ এই সময়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করার ঘোষণাও দেয় তারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও চেষ্টা
আল্টিমেটাম অনুযায়ী, ২০ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আবারো সক্রিয় হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে তাদের মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ৷ ফলে দূতাবাস অবধি পৌঁছানো আর সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে৷
পুলিশের লাঠিপেটায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার৷ পুলিশ তাঁকে মিছিল থেকে একাধিকবার আটকের চেষ্টা করে বলে দাবি করেছেন মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু কর্মীদের বাধার মুখে ইমরানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ৷ গণজাগরণ মঞ্চের মারুফ রসুল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইমরানকে পুলিশ দু’দফায় লাঠিপেটা করলে তিনি মাথা, বুক ও পিঠে আঘাত পান৷ তাঁকে প্রথমে ল্যাবএইড এবং পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
বাদ যায়নি নারী কর্মীরাও
পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের নারী কর্মীরাও৷ এক নারী কর্মীকে পুরুষ পুলিশের পেটানোর এবং টানাহ্যাঁচড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তারা গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা বা নির্যাতন করেনি৷ ঐ এলাকা কূটনৈতিক পল্লি হওয়ায় স্পর্শকাতর এলাকা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে৷
ছবি: DW
‘পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়’
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ যে অবস্থান থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিতের দাবি জানিয়েছে তা ঠিকই আছে৷ কিন্তু সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সবদিক বিবেচনা করে৷ তবে গণজাগরণ মঞ্চের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
‘সাত দিনের মধ্যে বিচারের দাবি’
এদিকে, কর্মীদের ওপর হামলাকারী পুলিশের ৭ দিনের মধ্যে বিচার না হলে আগামী শুক্রবার কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ শুক্রবার শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একথা জানান তাঁরা৷ এসময় বাংলাদেশিদের প্রতি পাকিস্তানের পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানায় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গণজাগরণ মঞ্চ
উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ শাহবাগের এই সমাবেশ থেকেই সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চ, যাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আপিলের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
পুলিশের বাধা পেয়ে নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় সমাবেশ করে৷ সেখানে মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি আমাদের আস্থা নষ্ট করবেন না৷ যেসব বুদ্ধিজীবী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে তাদের ছেঁটে ফেলুন৷ সেসব বুদ্ধিজীবীর ভূত নামিয়ে ফেলুন৷''
তিনি বলেন, ‘‘একজন মন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার দাবি করছে তারা বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায়৷ যে মন্ত্রী ফুল নিয়ে জামায়াত নেতাদের বরণ করে নেন তাঁর কাছে গণজাগরণ মঞ্চকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিখতে হবে না৷''
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, আমরা কেন তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না৷ আমি বলতে চাই আমরা আস্থা রেখেছি বলেই এখনো আন্দোলন করছি৷ না হলে কিভাবে সরকারকে টেনে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয় তা আমাদের জানা আছে৷''
যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষের সমাবেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চের শক্তি এক বছরেই ভুলে গেছেন? ভেবেছেন পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে, দলীয় পেটোয়া বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে, বিভাজন সৃষ্টি করে গণজাগরণ মঞ্চ শেষ হয়ে গেছে?'' যারা জামায়াতকে রক্ষা করতে চায় ‘ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে' তাদের অবস্থান হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ব্লগার আরিফ জেবতিকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা৷
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আইনমন্ত্রী হতে হলে জনগণের সামনে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে৷ মানুষকে বোঝাতে হবে, তিনি আইন বোঝেন৷ তাঁরা সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করেন৷