ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ১৭৭, সুস্থ হয়ে ফেরার সংখ্যাও ১৭৭, অথচ আগের দিন (রোববার) প্রেসব্রিফিংয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭৭ বলা হলেও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের সংখ্যা বলা হয়েছিল এক হাজার ৬৩৷
বিজ্ঞাপন
এটা করোনা সংকট মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতার একটা দৃষ্টান্ত মাত্র৷ এমন দৃষ্টান্ত আরো অনেক দেয়া যাবে৷
অবশ্য বিষয়টাকে অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে৷
মনে হতেই পারে যে, দায়িত্বশীলদের অনেকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সুনজরে থাকার খুব চেষ্টা করছেন, কিন্তু জাতীয় দুর্যোগ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলার চেষ্টা ঠিক সেভাবে তারা করছেন না৷ তাদের কাছে মনে হয় ‘চাকরি বাঁচানো’ এবং ব্যক্তিগত উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখাই ‘ফরজ’৷
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়৷
তবে মারণব্যাধি মোকাবিলা করার সময়ও প্রশাসনকে পুরনো এই ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে না পারা সরকারের জন্য খুব বড় ব্যর্থতা৷
করোনা যেভাবে পালটে দিচ্ছে কৃষি
করোনা লকডাউন মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে৷ এর বাইরে নয় কৃষিও৷ ছবিঘরে দেখুন কৃষি ও পশুপালনে কী প্রভাব ফেলছে এই মহামারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
খামারে পশুপালন নিয়ে ভাবনা
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত৷ মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
বন্যপ্রাণীর ব্যবসা
এখন পর্যন্ত গবেষকেরা ধারণা করছেন নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে৷ মহামারির আগে বন্যপ্রাণীর বিশাল ব্যবসা সম্পর্কে মানুষের ধারণা কমই ছিল৷ কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৯ হাজার বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
স্থিতিশীল খাতের সন্ধানে
মহামারি আমাদের খাদ্য সরবরাহেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে৷ লকডাউন ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধের ফলে এই খাত স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের কাছে খাবার সরবরাহে নানা পন্থা বেছে নিয়েছে৷ পশুচারণ থেকে শুরু করে শ্রমিক সংকট সবক্ষেত্রেই কৃষকেরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের অপেক্ষা সব স্বাভাবিক হওয়ার অথবা বিকল্প কোনো পথ খুঁজে নেয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শহুরে চাষবাস বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এখন বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন৷ তাদের অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় সীমিত পরিসরে হলেও কৃষি কাজ করছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শহরে বাস করবে৷ ফলে তখন শহুরে চাষবাস ও খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও জমির চাহিদার কারণে পরিবেশে তা ভালো প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Imago/UIG
প্রকৃতির ওপর চাপ কমছে
২০৫০ সালের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছাড়াবে ১০০০ কোটি৷ ফলে খাবারের উৎপাদনও বাড়াতে হবে সে হারেই৷ এতদিন কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানোকেই এর একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ কিন্তু শহরে চাষাবাদ বাড়তে থাকায় এই সংকটের নতুন সমাধান মিলতে পারে৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
উদ্ভিজ্জ আমিষের খোঁজ
মাংসের চাহিদা যত বাড়ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে উদ্ভিজ্জ পণ্য়ের দিকে মানুষ ঝুঁকছে৷ পশ্চিমা দেশগুলোতেও বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ করোনা ভাইরাস মহামারি এই প্রবণতা আরো ত্বরান্বিত করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Neibergall
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রভাব ফেলবে বেশি৷ জাতিসংঘ এরইমধ্য়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ দুর্ভিক্ষ রোধে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ, খাবার সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের শস্যের চাষ, কৃষি জমির সুরক্ষাসহ নানা দিক নিয়ে ভাবতে হবে দেশগুলোকে৷
ছবি: DW/K. Makoye
7 ছবি1 | 7
মূলত এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভুগছে৷ হ্যাঁ, করোনা সংকটেও ভোগান্তির মূল কারণ এটাই৷ ‘দায়িত্বশীলরা’ সব কাজ সততা নিয়ে, গুরুত্ব দিয়ে করলে দেশে ‘‘লকডাউন আছে এবং লোকজন নেই’’-এর মতো অদ্ভুত পরিস্থিতি কখনোই তৈরি হতো না৷
যেসব দেশ করোনা সংকট মোকাবেলায় খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি, তাদের জন্য সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, স্পেন, ব্রিটেন, ইরান ইত্যাদি তার প্রমাণ৷ দেরিতে সক্রিয় হওয়া দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থাও উন্নত না হলে তো আরো মুশকিল৷
আর বাস্তবতা হলো, করোনা সংকটকে বাংলাদেশ কার্যত অনেক দেরিতেই গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অর্থনীতির চেয়েও অনেক বেশি দুর্বল৷ সুতরাং লড়াইটা যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইরানের চেয়ে অনেক কঠিন হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ মৃতের সংখ্যা এখনো কম, সংক্রমণের হার খুব বেশি নয়- ইত্যাদি বলে যারা এখনো তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন অচিরেই তারা লজ্জায় মুখ লুকালে খুব অবাক হবো না৷
কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি তথ্য পরিবেশনে স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা না বাড়ালে সংকট বাড়তেই থাকবে৷
এ আশঙ্কা আরো বাড়িয়েছে সুস্থ হয়ে ফেরা রোগীর সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য৷ রবিবার অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, নতুন ক্লিনিক্যাল মানেজমেন্ট কমিটির গাইডলাইন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ফেরা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬৩৷
সংখ্যাটি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই৷ গণমাধ্যমে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এর একটা ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে, অল্প সময়ের ব্রিফিংয়ে সব তথ্য বিস্তারিতভাবে দেয়া যায় না, মূলত এ কারণেই নাকি কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস্য এই সংখ্যা বৃদ্ধি৷ আরো বলা হচ্ছে, করোনায় সংক্রমিত হলে সেরে উঠতে উঠতে ২৪ দিনও লেগে যায়, সুতরাং সুস্থ হয়ে ফেরার সংখ্যা নিয়ে প্রতিদিন নতুন তথ্য দেয়া সম্ভব নয়৷
প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই৷ তা প্রত্যাশিতও নয়৷
তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হবে এক কথা, ওয়েবসাইটে থাকবে আরেক তথ্য- এমনটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত৷ করোনা সংকট ছেলেখেলার বিষয় নয়৷ যে-কোনো উপায়ে যা খুশি তথ্য দিলেই বিশ্বাস করতে কেউ বাধ্য নয়৷
করোনা সংকটে দিকে দিকে শুভ বিবাহ
করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে যেসব উৎসব, অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়েছিল, তার সব কি বাতিল হয়েছে? না, চাইলেও সব বাতিল করা যায় না। তাই এমন পরিস্থিতিতেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ে হয়েছে, হচ্ছে। দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: Reuters/R. Zvulun
ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
টু ওয়ে রেডিওর মাধ্যমে গির্জার যাজকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করানোর জায়গাতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিচ্ছেন এক যুগল। ১৭ এপ্রিলের ছবি।
ছবি: Reuters/M. Blake
ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি
ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের টাউন হলের বাইরে বিয়ের সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা। ছবিটি ২০ মার্চের।
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
মস্কো, রাশিয়া
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন নবদম্পতি। অনুষ্ঠানের দিন অতিথিরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাদের। ৮ এপ্রিলের ছবি।
ছবি: Reuters/Sergei Kiselyov/Moscow News Agency
জেরুসালেম, ইসরায়েল
গত ২৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাস্ক পরেইপরস্পরকে চুমু খেয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন এক যুগল।
ছবি: Reuters/R. Zvulun
কায়রো, মিশর
একটু পরেই শুরু হবে কারফিউ। সারারাত আর ঘর থেকে বেরোনো যাবে না। তাই বিয়ের পর গাড়িবহর নিয়ে আনন্দে মেতেছে নবদম্পতির পরিবার।
ছবি: Reuters/A. A. Dalsh
জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
বিয়ের পর ক্যামেরার সামনে এক সমকামী দম্পতি। ১৪ এপ্রিলের ছবি।
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
পেসকালা, ইতাল
করোনা ভইরাস থেকে বাঁচতে বিয়ের অনুষ্ঠানেও পাত্র-পাত্রী এবং অতিথিরা এসেছেন মাস্ক পরে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও ভুলেননি অতিথিরা। ছবিটি গত ২৭ এপ্রিলের।
ছবি: Reuters/J. Lorenzini
ব্রাসেলস, বেলজিয়াম
গত ১১ এপ্রিল বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেছেন ব্রাসেলসের এই জুটি। পাত্র-পাত্রী মাস্ক না পরলেও অতিথিরা এ ভুল করেননি।
ছবি: Reuters/J. Geron
কারবালা, ইরাক
ইরাকের এই যুগল খুব সতর্ক, পাত্র নাক মুখ ঢেকেছেন মাস্কে, পাত্রীর কপালও ঢাকা।
ছবি: Reuters/A. Dhiaa Al-deen
ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
গত ১৭ এপ্রিল এমন মাস্ক পরেই বিয়ে সেরেছেন প্রবীণ এই যুগল।
ছবি: Reuters/M. Blake
কায়রো, মিশর
১৬ এপ্রিল কায়রোয় হয়ে যাওয়া এই বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি খুব কম ছিল না।
ছবি: Reuters/R. Gomaa
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার এই তরুণ-তরুণী স্বামী-স্ত্রী হয়েছেন গত ১১ এপ্রিল।
ছবি: Reuters/Antara Foto/Sigid Kurniawan
অপেক্ষার প্রহর
মেক্সিকোর এই যুগলের গত ১০ এপ্রিল বিয়ে হওয়ার কথা। খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়া যেতো। কিন্তু জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনকে প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে বরণ করতে চান বলে আগামী আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়েছেন তারা