পোশাক শ্রমিকদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত৷ কারখানা মালিকদের দ্রুত শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বেশ সরব বাংলাদেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহলৎস৷ এক টুইটে বৃহষ্পতিবার ফারেনহলৎস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন৷ দুর্ঘটনা বিমা চালুর জন্য পোশাক কারখানা মালিকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘সরকারের পেছনে লুকাবেন না৷’’
বুধবার আরেক টুইটে দুর্ঘটনা বিমা চালুর ব্যাপারে জার্মান সরকার সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান ফারেনহলৎস৷ এজন্য শ্রমিকের জন্য বছরে মাথাপিছু মাত্র কয়েক ডলার খরচ হবে বলে জানান তিনি৷
তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা রাষ্ট্রগুলোর একটি জার্মানি৷ ন্যায্য মজুরির দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে সড়কে বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা৷ সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া নতুন বেতন কাঠামো মালিকপক্ষ মানছে না বলে অভিযোগ তাঁদের৷
৬ জানুয়ারি বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন উত্তরার কয়েকটি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা৷ এরপর প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন জায়গায়৷ আন্দোলন শুরু হয়েছে সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জেও৷
৮ জানুয়ারি সাভারে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে নিহত হন সুমন নামের এক শ্রমিক৷ পরদিন সাভার হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র৷ আশুলিয়া এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় প্রায় অর্ধশত কারখানা৷ আজও বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা৷
পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ: ডিডাব্লিউ টিভির বিশ্লেষণ
03:25
দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার৷ ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা৷ অর্থাৎ, জানুয়ারির বেতন নতুন কাঠামোয় পাবেন শ্রমিকরা৷ কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানায় মানা হচ্ছে না নতুন কাঠামো৷
নতুন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিুপু মুনশি এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান ৮ জানুয়ারি বিকালে পোশাক কারখানা মালিক, শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন৷ বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, নতুন মজুরি কাঠামোও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ চলতি মাসের ঘাটতি সমন্বয় করে ফেব্রুয়ারিতে বেতন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী৷
এডিকে/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি: অতীত-বর্তমান
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে৷ পোশাক খাতই দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল শিল্প খাত৷ অথচ এই খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বারবার নামতে হয় রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুতে মাত্র ৬৩০ টাকা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়৷ ওই সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দশ বছরে বাড়ে ৩০০ টাকা
১৯৯৪ সালে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৯৩০টাকা৷ এরপর ১২ বছর এই খাতে কোনো বেতন কাঠামো ঘোষিত হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
দুই দশক পর হাজারের ঘরে বেতন!
গত ৪০ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বাইরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আয়ই প্রধান৷ অথচ এই খাতে মজুরি এখনো কম৷ ২০০৬ সালে ন্যূনতম বেতন হাজারের ঘর স্পর্শ করে৷ ১৯৯৪ সালের ঘোষিত ৯৩০ টাকা ২০০৬ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু অপ্রতুল
২০১০ সালে মজুরি বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু তখন ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার দাবি ছিল শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৩ সালেও প্রত্যাশার চেয়ে কম
২০১৩ সালের জুন মাসে গঠিত মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ করে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ দ্রব্যমূল্য বাড়লেও শ্রমিকরা ২০১০ সালের দাবি অনুযায়ীও মজুরি পায়নি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
২০১৮ সালে ১১ গ্রেডের বেতন কাঠামো
গত বছর নতুন করে পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ১১টি গ্রেড করা হয়৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য সাতটি ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় চারটি গ্রেড৷ শ্রমিকদের প্রথম গ্রেডে মজুরি ধরা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা৷ এর মধ্যে শিক্ষানবিশ গ্রেডও রয়েছে৷ শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে পাঁচ হাজার ৯৭৫ টাকা পাবেন৷
ছবি: bdnews24.com
কী হয় এ বেতনে!
শ্রমিকদের সপ্তম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷ তবে বলা বাহুল্য, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি বা বর্তমান মজুরি কাঠামোকে পোশাক শ্রমিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছেন না৷
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
টাকার অংকে মজুরি বেড়েছে মাত্র ২৭১ টাকা
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ডের আইন অনুযায়ী মূল মজুরি প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ে৷ পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার আইনও রয়েছে৷ সে অনুযায়ী সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের ২০১৩ সালের মূল ছিল ৩ হাজার ৮২৯ টাকা৷ আর এখন নতুন মূল মজুরি ঘোষিত হলো ৪ হাজার ১০০ টাকা৷ অর্থাৎ, এই গ্রেডের মজুরি বেড়েছে ২৭১ টাকা মাত্র!
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi
অন্য খাতের মজুরি
২০১৮ সালে চামড়া খাতে নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষিত হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন গ্রেডের শ্রমিকদের মোট মজুরি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা৷ শিপব্রেকিং খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যানামেল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার ৭০০ টাকা৷ পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে অনেক কম৷