নয়-ছয় থেকে ‘স্মার্ট' পদ্ধতি চালুর পর বাংলাদেশে ব্যাংকঋণের সুদহার ক্রমাগত বাড়ছে৷ বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সরকারের ব্যয় মেটানোর চাপে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ সরকারকে তাই বাজেট ছোট করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের৷
বিজ্ঞাপন
নতুন হার অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে তাকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হবে৷ গত সেপ্টেম্বরেও যে হার ছিল দশ শতাংশের মতো৷ আর গত জুলাইর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেয়া সর্বোচ্চ হার ছিল নয় শতাংশ৷ এর ফলে চিন্তায় পড়েছেন উদ্যোক্তারা৷ কারণ, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ করতে তাদের খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে৷ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের জন্যও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে৷ অন্যদিকে লাভবান হচ্ছেন ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করছেন যারা৷ আমানতের বিপরীতে আগের চেয়ে বেশি হারে তারা সুদ পাচ্ছেন৷
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন সরকার তার ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে না পারার প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের সুদহারের উপরে৷ কিন্তু সুদহার বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না৷
‘স্মার্ট হার স্মার্ট নয়, বরং পশ্চাৎপদ’
ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনতে ২০২০ সালের এপ্রিলে নয়-ছয় সুদহার নীতি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এই নিয়ম অনুসারে ছয় শতাংশের মধ্যে আমানত এবং নয় শতাংশ সুদের মধ্যে ঋণ বিতরণের বাধ্যবাধকতা ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য৷ কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদই এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন৷ বিশেষ করে গত বছর মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর প্রকৃত অর্থে ঋণের সুদহার শুন্য বা ঋণাত্মক হয়ে যায়৷ এতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিলাসবহুল পণ্য কেনার সুযোগ তৈরি হয়৷ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারাও ব্যাপকহারে ঋণ নিতে উৎসাহী হন৷ তাতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়৷
এমন অবস্থায় গত বছরের জুলাইতে সুদ নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার নাম দেয়া হয় ‘স্মার্ট'৷ সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা আগের ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের সুদের হারের গড় দিয়ে এই হার নির্ধারণ করা হয়৷ তার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি মার্জিন ধরে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করে, যা এপ্রিলের জন্য ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ৷ গত জুলাইর পর থেকে স্মার্ট হার ক্রমাগত বাড়ছে৷ এ পরিস্থিতিতে আগের মাসগুলোতে মার্জিন সাড়ে তিন শতাংশ থেকে তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হলেও এবার তা কমিয়ে তিন শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন ‘স্মার্ট সুদহার নীতি বাস্তবে মোটেও স্মার্ট নয়’৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি হলো পেছনের ছয়মাসের সুদের গড়, যা কিনা ব্যাকওয়ার্ড লুকিং (পশ্চাৎপদ )৷''
তার মতে এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাসেই মূলত সরকার বেশি ঋণ করে৷ সরকারের বাজেট খরচের ষাট শতাংশই হবে আগামী দুই-তিন মাসে, যার বড় অংশটাই হবে ব্যাংক থেকে ঋণ করে৷ এতে সুদের হার আরও বেড়ে যাবে৷
বাণিজ্য ও হুন্ডির আড়ালে টাকা পাচারের যত কৌশল
বৈধভাবে স্থানান্তরের সহজ উপায় না থাকলেও বিদেশে ঠিকই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছেন অনেক বাংলাদেশি৷ বিপুল টাকা রাখছেন ব্যাংকেও৷ এই অর্থপাচারের কৌশলগুলো কী জেনে নিন ছবিঘরে...
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো
ধরা যাক শিল্প কারখানার জন্য এক লাখ ডলারের যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খুললেন দেশের কোনো আমদানিকারক৷ কিন্তু এই পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৫০ হাজার ডলার৷ মূল্য বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি এক লাখ ডলার পাঠিয়ে দিলেন বিক্রেতাকে৷ সেই ব্যক্তি তার দামটি রেখে বাকি টাকা আমদানিকারকের বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ এতে দেশ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাচার হয়ে গেল৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘ওভার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images
রপ্তানির মূল্য কম দেখানো
ধরা যাক দেশের কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার ডলারের পণ্য বা সেবা রপ্তানির ঘোষণা দিলেন, যদিও তার প্রকৃত মূল্য এক লাখ ডলার৷ পণ্য পৌঁছানোর পর ক্রেতা দেশে ৫০ হাজার ডলার রপ্তানিকারককে পাঠালেন, আর অঘোষিত ৫০ হাজার ডলার তার বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে এভাবে রপ্তানিকারক দেশে অর্জিত ৫০ হাজার ডলার পাচার করলেন৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Yu Fangping/Costfoto/picture alliance
পণ্যের পরিমাণে হেরফের
শুধু টাকার গড়মিল না, আমদানি বা রপ্তানিকৃত পণ্যের হিসাবের গড়মিলের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়৷ যেমন, কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার পিস পোশাক রপ্তানির ঘোষণা দিয়ে এক লাখ পিস রপ্তানি করতে পারেন৷ এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০ হাজার পিসের টাকা তিনি বিদেশে পাচার করলেন৷ উল্টোভাবে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ অতিরিক্ত দেখিয়ে বেশি দাম পরিশোধের মাধ্যমে টাকা পাচার হতে পারে৷
ছবি: Saudi Press Agency/REUTERS
ভুয়া কাগজপত্র তৈরি
বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচারের আরেকটি উপায় হলো ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা৷ কোনো পণ্য আমদানি না করেই ভুয়া ঋণপত্র এবং শুল্ক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুয়া ছাড়পত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়৷ অনেক সময় একই পণ্যের আমদানির বিপরীতে একাধিক ঋণপত্র খুলে সেই পণ্যের নামে একাধিকবার টাকা পাঠানো হয়৷ সহজে যাতে ধরা না পড়েন তার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন টাকা পাচারকারীরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টাকা পাঠানোর ভিন্ন চ্যানেল বা হুন্ডি
প্রবাসীরা জটিলতা এড়াতে স্বীকৃত পদ্ধতির বদলে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে টাকা পাঠান, যা হুন্ডি নামে পরিচিত৷ এই পদ্ধতিতে তারা বিদেশে কোনো ব্যক্তির কাছে বা কোনো মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করেন৷ হুন্ডি পরিচালনাকারী নেটওয়ার্ক সমপরিমাণ টাকা প্রবাসীর পরিবারকে পরিশোধ করে দেয়৷ এতে পরিবার টাকা বুঝে পেলেও প্রবাসীর অর্জিত মূল্যবান অর্থ দেশে পৌঁছে না৷ টাকা পাচার করতে চান- এমন কারো বিদেশি অ্যাকাউন্টে হয়ত তা চলে যায়৷
ছবি: Imago/Steinach
কর স্বর্গে ছায়া কোম্পানি
পাচার করা অর্থ বিদেশে রাখা ও কর ফাঁকি দেয়ার আরেকটি প্রচলিত উপায় হলো ‘কর স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে বেনামে কোম্পানি খোলা৷ এই কোম্পানিগুলোর সাধারণত কাগজ-কলমেই অস্তিত্ব থাকে৷ কয়েক স্তরে এমনভাবে এর মালিকানা আড়াল করা হয় যে প্রকৃত ব্যক্তির নাম জানা কঠিন হয়ে পড়ে৷ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ জমা রাখা, নিজ দেশের বড় অংকের কর ফাঁকি দেয়া ও পাচারকৃত টাকা আড়াল করতে এই ধরনের কোম্পানি ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷
ছবি: Imago/M. Bäuml
বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব
বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মেলে৷ উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা এই সুযোগ লুফে নেন৷ ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের মাল্টা, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, লুক্সেমবুর্গে বিদেশিদের জন্য এমন স্কিম আছে৷ এই ‘গোল্ডেন ভিসা স্কিম’-এর মাধ্যমে ইইউ দেশগুলো গত দশকে আড়াই হাজার কোটি ডলার আয় করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সাইপ্রাস ও স্পেন৷
ছবি: DW/A. de Loore
কর স্বর্গে বাংলাদেশিরা
পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা হংকংয়ের মতো কর স্বর্গে বিভিন্ন সময়ে কোম্পানি খুলেছেন বাংলাদেশিরাও৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে-র ফাঁস হওয়া চারটি নথিতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ১০২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে দুদক ২০২১ সালে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে উঠে আসা ৪৩টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০২১-২২ অর্থবছরে শতকরা ২০ থেকে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি মূল্যের ৮,৫৭১টি অর্থপাচারের ঘটনা শনাক্ত করে৷ এই সংখ্যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬২.৩৩ শতাংশ বেশি৷ ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩৩টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ৮২১ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর৷ ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বছরে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের হিসাবে, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করে কর ফাঁকির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় চার হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা হারাচ্ছে৷ এই অর্থ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেটের ৩১ শতাংশ ও শিক্ষার ছয় শতাংশের বেশি৷ মাথাপিছু হিসাবে দুই ডলার বা ২০০ টাকার উপরে৷ এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ৩৭ কোটি ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ফাঁকির পরিমাণ দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
গোল্ডেন ভিসায় বাংলাদেশিরা
বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেয়ার পদ্ধতি পরিচিত গোল্ডেন ভিসা স্কিম নামে৷ গত কয়েক বছরে ক্যানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের এই সুযোগ নেয়ার খবর উঠে এসেছে৷ যেমন মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে ন্যূনতম এক লাখ ২৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হয়৷ দেশ থেকে বৈধভাবে এত টাকা স্থানান্তরের সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিকেরা এই স্কিম ব্যবহারে উপরের দিকে আছেন৷
ছবি: bdnews24.com
পরিসংখ্যানে অর্থ পাচার
কোন দেশ থেকে কত টাকা পাচার হয় তা বোঝার একটি কৌশল আমদানি-রপ্তানি করা দেশ ও গন্তব্যের পরিসংখ্যান তুলনা করা৷ তার ভিত্তিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি জানাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে বছরে সম্ভাব্য ৮২৭ কোটি ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে৷ অন্যদিকে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমান ছিল ৮৭ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি৷
ছবি: Stefan Klein/imagebroker/picture alliance
12 ছবি1 | 12
বিকল্প নেই সরকারের সামনে
চলতি অর্থবছরের সরকারের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বা অর্ধেকই দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বেশি৷
এর আগে গত অর্থবছরে সরকার এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয় যার বড় অংশই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে যোগান দেয়া হয়৷ কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেই প্রবণতা থেকে এবার সরকার সরে এসেছে৷ নানা শর্তের বেড়াজালে অর্থ সংগ্রহের আরেক উৎস সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমেছে৷ তাই এবার বিকল্প হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ঝুঁকেছে সরকার৷ এমনকি বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির তহবিল সংগ্রহেও বিশেষ বন্ডের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ সেই বিল ও বন্ড কিনে সরকারকে অর্থ সরবরাহ করছে ব্যাংকগুলো৷ এদিকে ডলার সংকট, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এমনিতেই তারল্য সংকটে ভুগছে৷ ফলে চাহিদার চেয়ে অর্থের যোগান কম থাকায় সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে৷ ড. আহসান মনসুর বলেন, ‘‘ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কম যা দেড় লক্ষ কোটি টাকার মতো৷ সেই টাকা যদি সরকারই নিয়ে নেয় তাহলে বাজারে কী পরিস্থিতি হবে? আর সেটাই হচ্ছে৷''
অর্থাৎ চড়া সুদে ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে হচ্ছে সরকারকে৷ গত জুলাইতে ট্রেজারি বিলের ছয়মাসের গড় সুদহার যেখানে সাত দশমিক এক শতাংশ ছিল, মার্চে তা দশ শতাংশ ছাড়িয়েছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন এক্ষেত্রে আর কোনো বিকল্প সরকারের সামনে খোলা নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে ব্যাংক থেকে ধার করতেই হবে, কারণ সরকারের সম্পদ কম৷ এতে সুদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে৷ এখানে কিছু করার উপায় নেই যদি রাজস্ব না বাড়ে, আয়করের আওতা না বাড়ে৷''
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দুই লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার রাজস্ব তারা আদায় করেছে, যা গোটা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ শতাংশ৷
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘কর-জিডিপি অনুপাত যেখানে আট শতাংশের মতো, এত কম অর্থ দিয়ে সরকারের পরিচালন ব্যয়, উন্নয়ন ব্যয় ইত্যাদি পরিচালন করা তো সম্ভব না৷ সরকার যদি ঋণ এত না বাড়াতো তাহলে ব্যক্তিখাতের জন্য ঋণ থাকতো, তখন এতবেশি সুদহার করতো না ব্যাংকগুলো৷''
বিনিয়োগে কতটা প্রভাব পড়বে?
এমন অবস্থায় সুদহার বৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ আমানত আকর্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছেও তার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা৷ কিন্তু এর ফলে ব্যবসায়ীদের ঋণ নেয়ার খরচ বাড়ছে, যা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ ঋণের সুদহারসহ ব্যবসার যেকোন খরচ বৃদ্ধির প্রভাব বিনিয়োগে পড়ে৷ বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ৷ তবে অন্যদিকে যদি সরকার ভর্তুকি দেয় যেমন, গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা যদি পাওয়া যায়, ছাড় দেয়া হয় তাহলে অন্ততপক্ষে বিনিয়োগটা বাড়বে৷'' সুদহার বর্তমান পর্যায় থেকে যাতে আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিত করার দাবিও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা৷
তবে বাংলাদেশে ব্যবসার খরচ বৃদ্ধিতে সুদহারকে বড় নিয়ামক বলে মনে করেন না অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন৷ তিনি বলেন, যখন নয়-ছয় সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছিল তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যাশা ছিল এতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়বে, ব্যবসার খরচ কমবে৷ কিন্তু সেটি হয়নি৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসার খরচ এককভাবে শুধু সুদের হারের উপর নির্ভর করে না, এর সঙ্গে অবকাঠামো প্রতিবন্ধকতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা,ঘুস, দুর্নীতি, মানবসম্পদের দক্ষতা এ সমস্ত নানা বিষয় জড়িত৷ বরং আমরা দেখেছি নয় শতাংশের উপরে যখন সুদের হার ছিল তখন কিছুটা বিনিয়োগ বেড়েছিল৷ তারপরে বরং ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে গেছে৷ জিডিপির ২৪ শতাংশের মধ্যে আছে৷ এখান থেকে বাড়ছে না৷''
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বড় ব্যবসায়ীদের বর্তমান সুদহারের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সামর্থ্য থাকা উচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আর সস্তায় টাকা পাওয়ার সময় নেই৷ এটা তাদের মানতেই হবে৷'' ব্যবসায়ীদের দক্ষতা বাড়িয়ে খরচ কমানোয় পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে ছোট ও মাঝারি শিল্প যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷ তাদের জন্য আলাদা সুদহার নির্ধারণের পরামর্শ দেন৷
মূল্যস্ফীতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না?
অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, সুদের হার কম থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, সুদের হার বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমে৷ বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই চড়া মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে৷ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে নয় দশমিক ৮১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে নয় দশমিক ৬৭ শতাংশ আর জানুয়ারিতে ছিল নয় দশমিক ৮৬ শতাংশ৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ঘোষণা এবং সুদহার এত বৃদ্ধির পরও কেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এর উত্তরে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘আমাদের দেশে শুধু মুদ্রানীতি এককভাবে কাজ করবে না যদি না আর্থিকনীতিও একই হয়৷ আমি মুদ্রানীতিতে টাকার সরবরাহ কমাচ্ছি কিন্তু আর্থিক বা রাজস্বনীতি যদি সম্প্রসারণমূলক হয় অর্থাৎ, আমি যদি খরচই করতে থাকি, প্রশাসনিক ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় যদি কমাতে না পারি তাহলে তো মুদ্রানীতি এককভাবে কাজ করবে না৷ দ্বিতীয়ত, বাজার তো বাজারের নিয়মে চলে না৷ বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার সমন্বয়ে দাম নির্ধারণ হয়৷ এখন দেখা যাচ্ছে সরবরাহে ঘাটতি নাই, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়৷ সেই কারণে সরবরাহ হঠাৎ কমে যায়৷ তখন দাম বেড়ে যায়৷ সেকারণে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখতে পারছি না৷''
তবে ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন মূল্যস্ফীতির উপরে সুদহার বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব সামনের দিনে দেখা যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘এরইমধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কিছুটা বেড়েছে, ডলার ১১৬-১১৭ টাকায় পাওয়া যায় বাজারে৷ এটা এই হারে যদি চলে তাহলে আমার মনে হয় মূল্যস্ফীতি দ্রুতই কমে আসবে৷''
এই তিন অর্থনীতিবিদই মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন৷ রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে চাপ বৃদ্ধি না করে বরং সরকারকে ব্যয় কমনোর পরামর্শ দেন তারা৷ ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে সরকারের অন্তত এক লাখ কোটি টাকার খরচ সাশ্রয় করা প্রয়োজন৷ এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে কাটছাঁট করার কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ৷ তার মতে, ‘‘অনেক আজেবাজে প্রকল্প থাকে যেগুলোর কোনো মানে হয় না নেওয়ার৷ সেখানে ব্যয় কাটছাঁট হতে পারে৷ তাহলে বাজেটের খরচ কিছুটা কমবে৷’’
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের চিত্র
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি সবচেয়ে শোচনীয়৷ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত প্রতি ১০০ টাকার ২০ টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
খেলাপি ঋণ কী
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহক তার ঋণ বা এর উপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করলে তা খেলাপি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয়৷ বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে৷ ছয় থেকে ১৮ মাসের বকেয়া ঋণকে নিম্নমানের, ১৮ থেকে ৩০ মাসের বকেয়াকে সন্দেহজনক এবং তার বেশি সময় পরিশোধ না হলে তা অনাদায়ের ঝুঁকিতে থাকা মন্দ ঋণ৷
ছবি: Mika Volkmann/picture alliance
আট শতাংশ
আইএমএফ থেকে নেয়া ঋণের শর্ত মেনে আগস্টে প্রকাশিত বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে গত বছরের খেলাপি ঋণের বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ সেই হিসাবে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের আট শতাংশের বেশি৷ সবশেষ মার্চের হিসাবে তা বেড়ে আট দশমিক আট শতাংশ হয়েছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি
বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, এই পরিসংখ্যানেও খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না, কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায়ই নানা সুবিধা দিয়ে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করে৷ সেগুলো তখন আর খেলাপির তালিকায় রাখা হয় না৷ ২০২২ সালে এমন বকেয়া পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা৷ আর বকেয়া খেলাপি ঋণ ছিল ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
দেশের বাজেটের অর্ধেক
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা৷ অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের এক বছরের বাজেটের অর্ধেকের সমপরিমাণ৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
৮৮ শতাংশই মন্দ ঋণ
মোট খেলাপি হওয়া ঋণের সাড়ে ৮৮ শতাংশই আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে অনাদায়ী৷ অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো গ্রাহককে তাগাদা দিয়েও সেগুলো আদায় করতে পারছে না বা পুনঃতফসিল করা যাচ্ছে না৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের শ্রেণি অনুযায়ী, যা মন্দ বা না পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ঋণ৷
ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance
পাঁচ ব্যাংকেরই অর্ধেক
বাংলাদেশে এখন মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি৷ এর মধ্য মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৬ শতাংশ ৫টি ব্যাংকের গ্রাহক৷ আর প্রথম দশটি ব্যাংকের প্রায় ৬৫ শতাংশ৷ আটটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের বেশি৷ এর তিনটি সরকারি, তিনটি বেসরকারি, একটি বিদেশি আর একটি বিশেষায়িত৷ ৩৮টি ব্যাংকের খেলাপির হার পাঁচ শতাংশের কম৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি ব্যাংকে ২০%
সরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত প্রতি ১০০ টাকার অন্তত ২০ টাকাই খেলাপি৷ বিশেষায়িত ব্যাংকে এটি প্রায় ১৩ শতাংশ৷ অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকে এই হার পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি৷ তবে বেসরকারি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণ বেশি হওয়ায় তাদের খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ সরকারি ব্যাংকেরই সমান৷ খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে কম বিদেশি ব্যাংকগুলোর যা পাঁচ শতাংশেরও কিছু কম৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারিতে বাড়ছে, বেসরকারিতে কমছে
গত এক বছরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ এক শতাংশ বেড়েছে৷ কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকে উল্টো দশমিক এক-আট শতাংশ কমেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক
খেলাপি ঋণে সবচেয়ে এগিয়ে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানগুলো৷ মোট খেলাপির প্রায় ২৭ শতাংশ আছে তাদের কাছে৷ সব মিলিয়ে খেলাপির ৫৫ ভাগই শিল্প খাতের৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ফিরে দেখা
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশে পৌঁছায়৷ সত্তর ও আশির দশকে ব্যাংকগুলো যাথযথ নিয়ম মেনে ঋণ প্রদান না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে৷ তবে নজরদারি বৃদ্ধির কারণে ধারাবাহিকভাবে কমে ২০১১ সালের দিকে খেলাপি ঋণের হার ৬.১ শতাংশে নামে৷ কিন্তু পরের বছর তা দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অন্যান্য দেশ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় ভারতে এই হার সাড়ে ছয় শতাংশ, পাকিস্তানে সাত দশমিক তিন, নেপালে দুই দশমিক চার, শ্রীলংকায় প্রায় পাঁচ, মালদ্বীপে প্রায় ছয় শতাংশ৷ যেখানে বাংলাদেশ খেলাপি ঋণের হার আট শতাংশের বেশি৷