সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেই ভর্তুকি কমাতে গিয়ে চাপ পড়ছে গ্রাহকদের ওপর৷ তাই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতর দাম শতকরা ৫৮ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ বলা হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব নেই৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে৷ কারণ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না৷
ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আসলে সৎ উদ্দেশ্যে করা হয়নি: শামসুল আলম
গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে৷
বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা৷ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩ টাকা ৩৯ পয়সা৷ এই বছর বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা৷
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সংকটে পড়েছে৷ এর জন্য প্রধানত সঠিক পরিকল্পনা না নেয়াকে দায়ী করা হচ্ছে৷
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. এজাজ হোসেন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ খাতে কিছু ভুল পরিকল্পনার কারণে এখন আমরা খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছি৷ করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী একটা প্রভাব আছে৷ কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে আমাদের এখানে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভুল পরিকল্পনা এবং দুর্নীতির কারণে৷ আমরা ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ পাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, যাতে অনেক বেশি খরচ পড়ে৷''
এগুলো হলো জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য: এম তামিম
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি৷ কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা আছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি৷ ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি৷ বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ২৭ লাখ৷ সেচ সংযোগ চার লাখ ৪৬ হাজার৷
অলস পড়ে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রভাড়া গুনতে হয় সরকারকে৷ এসব অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বিদ্যুতের দাম বাড়ার আরো একটি বড় কারণ৷
অধ্যাপক এজাজ বলেন, ‘‘সরকারের একটা ভিশন ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোবে তাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বাড়বে৷ কিন্তু সেভাবে বিদ্যুৎভিত্তিক উৎপাদন বা শিল্প কারখানা হয়নি৷ ফলে পরিকল্পনা সঠিক হয়নি৷ সরকারও সেটা বুঝতে পারছে৷ এখন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন৷''
দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৫২টি৷ সাধারণভাবে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস' (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেয়া হয়৷
শিল্প উৎপাদনের খরচ বাড়বে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷
সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যেটুকু বিদ্যুৎ কেনা হয় তার দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়ে যাচ্ছে, যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা৷''
তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ‘‘ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এমন যে সেখানে উৎপাদন করলে বেশি ভর্তুকি দিতে হয়৷ বসিয়ে রাখলে বরং কম ভর্তুকি৷ এগুলো হলো জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য৷ এখন গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোতে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি৷ কিন্তু শীতকালের চাহিদা হিসাব করে তো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট করা যাবে না৷ সর্বোচ্চ চাহিদার হিসাব করতে হবে৷ যখন শীতকালে বিদ্যুৎ কম লাগবে তখন তো কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখতে হবে৷''
তার কথা, তেলের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে, কিন্তু এলএনজির দাম আরো বেড়েছে৷ তাই এখন গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, কম খরচে হতে পারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ৷
বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা প্রকৌশলী শামসুল আলম দাবি করেন, ‘‘এইসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আসলে সৎ উদ্দেশ্যে করা হয়নি৷ এর উদ্দেশ্যই ছিল একটি গোষ্ঠীকে লাভবান করা৷ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তারা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ভাড়া পাচ্ছে৷ এখন তার চাপ আসছে সাধারণ মানুষের উপরে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভারত থেকে আমরা বিদ্যুৎ আমদানি করি বাণিজ্যিক রেটে৷ তাও প্রতি কিলোওয়াট ৬ টাকা ২৫ পয়সা দামে, যা বাংলাদেশের তুলনায় কম৷ এখন সারাদেশে বিদ্যুৎ দেয়া হলো৷ কিন্তু মানুষ যদি উচ্চমূল্যের কারণে বিদ্যুৎ না কেনে তাহলে কী হবে? আসলে পরিকল্পনাটা গণমুখী ছিল না৷ যারা পরিকল্পনা করেছেন তাদের মাথায় ছিল লুটপাট৷''
পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন: ড. এজাজ হোসেন
চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াচ্ছে ৪.২৪ টাকায়৷ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে পিডিবির৷
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘সরকার যদি এখন ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় তার প্রভাব বিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত সব খাতে পড়বে৷ শিল্প উৎপাদনের খরচ বাড়বে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে৷ কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে৷''
তাই তিনি মনে করেন, ‘‘এখনই ভর্তুকি না কমিয়ে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বের করতে হবে৷ অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে৷ সরকারকে নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট পলিসিতে যেতে হবে৷''
আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম মনে করেন, ‘‘ভর্তুকির পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে হবে৷ সবাইকে সাধারণ ভর্তুকি না দিয়ে হাউজহোল্ড ভিত্তিক ভর্তুকি দিতে হবে আয়-ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে৷ তাহলে যার ভর্তুকি প্রাপ্য, তিনি পাবেন৷ ভর্তুকিও কমে আসবে৷''
দ্রব্যমূল্যের তুলনা: ২০০৯ বনাম ২০২১
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ঢাকার একটি বাজারে ২০০৯ ও ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ করা হয়েছে৷
চাল
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি সরু বোরো চালের দাম ছিল ৩৪-৩৬ টাকা৷ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর একই বাজারে ঐ চালের দাম ছিল ৫৭-৭০ টাকা৷ মোটা বোরো চালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২১-২৩ টাকা৷ ২০২১ সালে ছিল ৪৪-৪৭ টাকা৷
ছবি: DW
ডাল
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ১০৮-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১০০-১১০ টাকা৷ আমদানিকৃত মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ১১২-১১৫ টাকা৷২০২১ সালে সেটা কমে হয় ৮৫-৯০ টাকা৷ মুগ ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮৫-১০০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১২০-১২৫ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/T. Ahammed
পেঁয়াজ
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ছিল ৪০-৪৪ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৫৫-৬০ টাকা৷ আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৮-৩৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৪৫-৫০ টাকা৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
রসুন
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি রসুনের দাম ছিল ৯০-১০৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা কম ছিল, ৫০-৭০ টাকা৷ আমদানিকৃত রসুনের এক কেজির দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮০-৮৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১১০-১২০ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
কাঁচা মরিচ
২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা৷ ঐ একই বাজারে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা৷
ছবি: DW/H.U.R. Swapan
সয়াবিন তেল
২০০৯ সালে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০-৭৩ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ১৩৮-১৪২ টাকায়৷
ছবি: Gustavo Cuevas/dpa/picture-alliance
চিনি
২০০৯ সালে আমদানিকৃত এক কেজি চিনির দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৭৫-৭৭ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Kalaene
ডিম
২০০৯ সালে দেশি মুরগির ডিম ছিল ৩২-৩৪ টাকা হালি৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়৷ ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৫-২৬ টাকা৷ ২০২১ সালে ৩৬-৪০ টাকা৷
ছবি: Reuters/W. Kurniawan
গরুর মাংস
গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম ২০০৯ সালে ছিল ২২০-২৩০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৮০-৬০০ টাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Bachmann
খামারের মুরগী
২০০৯ সালে কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১৫০-১৬০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Dinh Nam
দেশি রুই
২০০৯ সালে ছিল ১৪০-১৬০ টাকা৷ ২০২১ সালে ২০০-৩০০ টাকা৷ বিস্তারিত জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mortuza Rashed
পানির দাম
গত ১২ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা৷ ২০০৯ সালে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা৷ গত জুলাই থেকে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা দরে দাম দিতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইউনিটপ্রতি পানির দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে৷ সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসাও আগামী মাস থেকে পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: AP
বিদ্যুৎ
এ বছরের ২১ জুন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত এক ওয়েবিনারের মূল নিবন্ধে বলা হয়, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম ১০ বার বেড়েছে৷ পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ আর খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷
ছবি: DW
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি
৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়৷ ডিজেলের মোট চাহিদার ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে৷ আর সেচকাজে ব্যবহৃত হয় ১৬ শতাংশ৷ ৪ নভেম্বর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ৬২ টাকা করা হয়৷ আরও বেড়েছে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম৷ ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫৪ টাকা৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
মুনাফা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সবশেষ ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল৷ মাঝে ২০১৬ সালে দাম কিছুটা কমানোও হয়েছিল৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম যখন কম ছিল তখন তেলের দাম ততটা না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সাত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিল৷ আর এবার টানা পাঁচ মাস ক্ষতি হওয়ার পর দাম বাড়ানো হলো৷
ছবি: Alastair Grant/AP/picture alliance
ঢাকায় বাসা ভাড়া দ্বিগুন হয়েছে
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বলছে ঢাকায় ২০১০ সালে দুই কক্ষের পাকা বাসার গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা৷ আধাপাকা (টিন শেড) বাড়ির দুই কক্ষের ভাড়া ২০১০ সালে ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা৷ ২০১৯ সেটা বেড়ে হয় ১৩ হাজার ২০০ টাকা৷ ২০১০ সালে দুই কক্ষের মেসের গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৫০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৩ হাজার ২০০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে
এ বছরের জুনে ক্যাব জানায় ২০২০ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬.৩১ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬.৫০ শতাংশ ও ৬.০৮ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫.১৯ শতাংশ৷ ঢাকার ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য ও ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাব৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে ২০০৯-২০১০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ মার্কিন ডলার৷ আর সবশেষ হিসাব বলছে, মাথাপিছু আয় এখন ২,৫৫৪ ডলার৷ তবে এই আয়ের সুষম বণ্টন হচ্ছে বলে মনে করেন না অনেক অর্থনীতিবিদ৷ কারণ একদিকে যেমন একদল মানুষ দ্রুত ধনী হচ্ছেন, আবার গরিবের সংখ্যাও বাড়ছে৷ করোনার সময়ে প্রায় সোয়া তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন বলে সম্প্রতি এক জরিপে জানা গেছে৷