1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারের ভেতরেই সিন্ডিকেট?

২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট এখন সবার জানা৷ ভোজ্য তেল, চাল, পেঁয়াজ, ডিম, চাল, ব্রয়লার মুরগির পর সর্বশেষ হলো ডাব সিন্ডিকেট৷ আর ইলিশ মাছের এই ভরা মৌসুমে মাছের উচ্চ মূল্যের পেছনেও আছে সিন্ডিকেট৷

Bangladesch | Dhaka Karwan Market
ফাইল ফটো৷ছবি: Samir Kumar Dey/DW

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাবের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা বিস্মিত হই৷ কারণ আমদানি পণ্য বা আরো কিছু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে৷ কিন্তু ডাবের ব্যবসা তো করেন হাজার হাজার হাজার ব্যবসায়ী৷ এখানে কীভাবে সিন্ডিকেট সম্ভব! এখানে যেটা হয়েছে ব্যবসায়ীদের অসৎ মানসিকতা৷ ডেঙ্গুর অজুহাত তুলে তারা যে যার মতো ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন যে অসৎ মানসিকতা ঢুকে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন৷ তারা সব সময় দাম বাড়ানোর অজুহাত খুঁজতে থাকেন৷''

‘‘এখন আমরা ইলিশ নিয়ে কাজ করছি৷ বোঝার চেষ্টা করছি ভরা মৌসুমেও দাম কেন এত বেশি৷ আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি৷ অভিযান চালানোর আগে আমরা তথ্য নিয়ে যাচাই করি৷ এখানেও একই পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি,'' বলেন তিনি৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘বড় বড় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ এখন যেকোনো পর্যায়ে সিন্ডিকেট হয়৷ সেটা স্থানীয়, আঞ্চলিক সবখানেই৷ এখানে ক্ষুদ্র আর বড় ব্যবসায়ী এখন আর বিষয় নয়৷ যে যেভাবে পারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলে৷''

এপর্যন্ত ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, চাল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ আরো কিছু পণ্যের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চিহ্নিত হয়েছে৷ যেমন ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান, চাল ২০টি প্রতিষ্ঠান, ব্রয়লার মুরগি-ডিম পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান৷ তাদের নোটিস করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং প্রতিযোগিতা কমিশন মামলাও করেছে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না৷

ব্যবসায়ীদের অসৎ মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন: এ এইচ এম সফিকুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

প্রধানমন্ত্রী এই সিন্ডিকেট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী আসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন৷ আর শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, ‘‘অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে৷ যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে৷''

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘মন্ত্রীদের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে৷ শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা মন্ত্রী৷'' এই কথা বলে অবশ্য কামাল আহমেদ মজুমদার অন্য মন্ত্রীদের তোপের মুখে পড়ে চুপ হয়ে গেছেন৷

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলের, ‘‘ভোগ্যপণ্য ও কৃষিপণ্যে বড় বড় ব্যবসায়ি গ্রুপ ঢুকে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে৷''

সিন্ডিকেট কারা?

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) হিসাব বলছে একাদশ জাতীয় সংসদের শপথ নেয়া সংসদ সদস্যদের একশ ৮২ জনই ব্যবসায়ী৷ যা মোট সংসদ সদস্যদের ৬২ শতাংশ৷ আর এই ব্যবসায়ীদের আবার আওয়ামী লীগের মহাজোট থেকে নির্বাচিত হলেন একশ ৭৪ জন৷ যা ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ৷

কনজ্যুমারস অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও আছেন যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত৷ তাদের চালসহ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা আছে৷ আর ব্যবসায়ী এমপিতো অনেক৷ ফলে তারা সবাই মিলে নিজেদের মানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখে৷''

তার কথা, ‘‘এর বাইরে আরো যারা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছেন তারা ওই মন্ত্রী এমপিদেরই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব৷ তারা সরকার ও প্রশাসনে অনেক প্রভাবশালী ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না৷ ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷ সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট থাকলে যা হয় তাই হচ্ছে৷''

একই কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা তো ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রিত সরকার৷ তাই  সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টুকটাক কথা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি৷ এই সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও মনে হয় না৷ কারণ সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে৷ সরকারে ব্যবসায়ীদের প্রভাব যতদিন থাকবে৷ ততদিন সিন্ডিকেটও থাকবে৷''

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট আছে৷ তাদের আমরা চিহ্নিতও করেছি৷ সরকারের কাছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনও দিয়েছি৷ কিন্তু আমরা ভোক্তা অধিকার আইনে সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি না৷ আমরা সাধারণত ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিই৷ সিন্ডিকেট, মজুদতদারীর রিুদ্ধে আইন আছে৷ বিশেষ ক্ষমতা আইন আছে৷ কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে৷ আমাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা কমিশন ৭৬টি মামলা  করেছে৷ ডিমের ক্ষেত্রে আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷''  

সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে: মনজিল মোরসেদ

This browser does not support the audio element.

কেন আইন প্রয়োগ হয় না?

ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সালের৷ আর প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ সালের৷ ভোক্তা আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড আর অনুর্ধ্ব দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে৷ আর প্রতিযোগিতা আইনে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে৷ তবে এই আইন সাধারনত খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে দেখা যায়৷ সিন্ডিকেট, মজুতদাদের বিরুদ্ধে নয়৷

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এইসব মজুতদার, কালোবাজারি, সিন্ডিকেটবাজদের ধরতেই ওই আইন করেছিলেন৷ এই আইনে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে৷ কিন্তু এই আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছেনা বাজার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে৷ মনে হয় যেন আইনটি আর নেই৷’’

তার মতে, ‘‘বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করলে ওই ব্যবসায়ীদের কারাগারে যেতে হবে৷ সেটা  হলে তো অনেকেই বিপদে পড়বেন৷ যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের সঙ্গেই তো এই ব্যবসায়ীরা আছেন৷ তাদেরকে তো সবাই চেনেন৷ সরকার চেনে৷’’

আর নাজের হোসেন বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখি না৷ এর কারণ হলো এই সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব৷ তারা জনবান্ধব নয়৷’’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমাদের টার্গেট থাকেভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন যাতে বিঘ্নিত না হয়৷ তাই আমাদের আইনে যে ব্যবস্থা আছে তাও অনেক সময় প্রয়োগ না করে আমরা ব্যবসায়ীদের মোটিভেটেড করার চেষ্টা করি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ