কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো, গণপিটুনি এবং হিংসার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে এই মর্মে রেডিও, টেলিভিশন এবং গণমাধ্যমগুলিতে কড়া হুঁশিয়ারি দেবে৷
বিজ্ঞাপন
সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল গণপিটুনি ও হিংসারোধে শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা মেনে চলা হচ্ছে কিনা৷ সমাজতত্ত্ববিদ দেবদাস ভট্টাচার্য় মনে করেন, শুধু আইনই যথেষ্ট নয়, পালটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷
গণপিটুনি এবং গণহিংসায় যে কড়া শাস্তি হতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে হুঁশিয়ার করে দিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ ঐ নির্দেশিকায় রেডিও, টেলিভিশন, স্বরাষ্ট্র বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের ওয়েবসাইট এবং পত্রপত্রিকায় বার্তা দিয়ে জনসাধারণকে সাবধান করে দেবার কথা বলা হয়৷ কিন্তু সরকারের টনক না নড়ায় মানবতাবাদী কর্মী তেহসিন পুণাওয়ালার আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিং সেদিকে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ বলেন, আড়াই মাসেরও বেশি হতে চললে এ বিষয়ে সরকারের তরফে কার্যত কোনো সাড়াশব্দ নেই৷ সাধারণ মানুষকে সাবধান করা জরুরি যে, এই ধরনের ঘটনা কতটা গুরুতর৷ আইন চুপ করে থাকতে পারে না কিছুতেই৷ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক বেঞ্চ এই অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বেনুগোপাল এবং অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান যে, যদি ইতিমধ্যে তা পালন করা না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা করা হবে এবং সেটা সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই৷
D_Bhattacharya - MP3-Stereo
বিচারপতিদের বেঞ্চ বলে, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে৷ মানুষকে বোঝাতে হবে এই ধরনের হিংসায় জড়ালে আইন তাঁকে রেহাই দেবে না৷ আদালত আরো বলে, সুপ্রিম কোর্টের ১৭ই জুলাইয়েএর নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আটটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এখনো পর্যন্ত কিছুই জানায়নি৷ তিন দিনের মধ্যে হলফনামা পেশ করে তা জানাবার আদেশ দেওয়া হয়৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গণপিটুনির কারণ ধর্মীয় বিদ্বেষ কিংবা জাতি বিদ্বেষ৷ মুসলিম, দলিত, জনজাতি এবং খ্রিস্টানরা এর শিকার৷ মুখ্য কারণ গো-হত্যা, গো-পাচার, গো-মাংস ভক্ষন কিংবা লাভ জেহাদের নামে এই হিংসা৷ কারণ, এই ধরনের অভিযোগের জিগির তুললে গণপিটুনি এবং গণহিংসা সহজ হয়৷
‘আধ্যাত্মিকতা’: কোন দেশের কী অবস্থান
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ওয়েফেয়ারার ট্র্যাভেল সবচেয়ে ‘আধ্যাত্মিক’ দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে৷ ধর্মীয় বিশ্বাস, বৈচিত্র্য, স্বাধীনতা, জনকল্যাণ ও জীবনমান নিয়ে করা এই তালিকায় কোন দেশের কী অবস্থান তা জানতে দেখুন এই ছবিঘর...
ছবি: Imago/Westend61
ক্যানাডা
গ্লোবাল স্পিরিচুয়ালিটি ইনডেক্স-এ ধর্মীয় আচার মেনে চলা মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে খুব কম নম্বর (৭-এ ২) পেয়েছে ক্যানাডা৷ তবে ধর্মে বৈচিত্র্য ও জীবনযাপনের মানের বিচারে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহনশীলতা, স্থাপনা ও জনকল্যাণে ৬ নম্বর করে নিয়ে ৪৯ এর মধ্যে ৪০ নম্বর পেয়ে তালিকায় প্রথম স্থানে এসেছে দেশটি৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
ইটালি
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান ভ্যাটিকানের অবস্থান ইটালির রাজধানী রোমে৷ দেশটির অন্যান্য শহরজুড়েও রয়েছে নানা ধর্মীয় স্থাপনা৷ বিভিন্ন ধর্ম-মতের মানুষের সংখ্যা (৭ এ ৭ নম্বর), ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জীবনমানসহ (৬ নম্বর) অন্যান্য বিচারে পাওয়া নম্বরের সুবাদে তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ইউরোপের এই দেশটি৷
ছবি: Getty Images/A.Solaro
ভারত
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতই এই তালিকার সেরা পাঁচে স্থান পেয়েছে৷ প্রচলিত ধর্মমত ছাড়াও বিভিন্ন গুরুর ভক্তকুল রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশে৷ ধর্মমতের বৈচিত্র্য এবং উপাসনাস্থলের সংখ্যা বিচারে এগিয়ে ৩৪ নম্বর নিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আধ্যাত্মিক দেশগুলোর মধ্যে তিন নম্বরে এসেছে তারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Jagadeesh NV
জাপান
বৌদ্ধপ্রধান জাপানে অন্যান্য ধর্মমতের মানুষও রয়েছে৷ এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ দেশটিতে মানুষের জীবনমানও উন্নত৷ ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা (১ নম্বর) ও ধর্মীয় স্থাপনার (২) দিকে খুব খারাপ হলেও জীবনমানে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর নিয়ে তাদের মোট নম্বরও হয়েছে ভারতের সমান ৩৪৷ তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে দেশটি৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটলেও বিশ্বের বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষের সহাবস্থান রয়েছে যুক্তরাজ্যে৷ ধর্মীয় সহনশীলতার দিক থেকেও অনেক এগিয়ে দেশটি৷ সেখানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মুসলিম-হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষও তাঁদের আচার-অনুষ্ঠান পালন করছে৷ ধর্ম-বিশ্বাসীর সংখ্যার দিক দিয়ে সর্বনিম্ন ১ পেলেও উন্নত জীবনের কল্যাণে তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে যুক্তরাজ্য৷
ছবি: Imago
যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রেও বহু দেশের নানা ধর্মমতের মানুষের সম্মিলন ঘটেছে৷ শিল্প, অর্থনীতি, গবেষণা ও প্রযুক্তিসহ নানা দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দেশটিতে ব্যক্তি স্বাধীনতা উপভোগের সুযোগও রয়েছে প্রশংসনীয় মাত্রায়৷ ধর্ম বিশ্বাসীর সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে থাকলেও ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও কল্যাণের ওপর ভর করে তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Bowmer
জার্মানি
এই তালিকায় যৌথভাবে দশম অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দুই দেশ জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড, তাদের নম্বর ৩১৷ সংখ্যাগুরু খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মমতের মানুষও এখানে তাদের ধর্ম পালন করতে পারছে৷ দুই দেশেই ধর্মবিশ্বাসীর সংখ্যা কম হলেও জীবনমানের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তারা৷ তালিকায় সপ্তম, অষ্টম ও নবম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইন্স৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. Gambarini
সৌদি আরব
মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনায় প্রতি বছর হজ করতে যান লাখ লাখ মানুষ৷ তারপরেও সৌদি আরবের নম্বর ২৭ এবং তালিকায় অবস্থান হয়েছে ২৩তম৷ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জনকল্যাণের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন ১ নম্বর পেয়েছে দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Sahib
পাকিস্তান
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক বড় দেশ পাকিস্তানের অবস্থান তালিকায় ৯১তম৷ মুসলিম প্রধান দেশটির মোট নম্বর হয়েছে ১৮৷ ধর্ম বিশ্বাসীদের দিক দিয়ে ৭ এর মধ্যে ৫ নম্বর পেয়েছে দেশটি, তবে ধর্মীয় স্বাধীনতার দিক দিয়ে জুটেছে সর্বনিম্ন ১ নম্বর৷ ধর্মীয় সহনশীলতায় মাত্র ২ পয়েন্ট পেয়েছে তারা৷ আর আধ্যাত্মিক স্থাপনা ও জনকল্যাণে সর্বনিম্ন ১ করে এবং জীবনমানের দিক দিয়ে ২ পেয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. M. Chaudary
বাংলাদেশ
বিভিন্ন ধর্মমত ও ধর্মবিশ্বাসীর সংখ্যার দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও (৬ নম্বর করে) ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহশীলতার দিক দিয়ে অবস্থা খুব একটা ভালো নয় (৭ এর মধ্যে ২)৷ আর জীবনমান, জনকল্যাণ ও ধর্মীয় স্থাপনার দিক দিয়ে সর্বনিম্ন ১ নম্বর করে নিয়ে ১৯ নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তাই তালিকায় অবস্থান ৮৩তম৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সিরিয়া
তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধকবলিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া৷ তাদের সবচেয়ে বেশি নম্বর এসেছে ধর্মবিশ্বাসীর দিক দিয়ে ৭-এ ৫৷ এছাড়া ধর্মীয় বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে পেয়েছে ২৷ জীবনমানসহ বাকি দিকগুলোতে সর্বনিম্ন ১ করে নিয়ে তাদের মোট নম্বর হয়েছে ১২৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Diyab
11 ছবি1 | 11
এ বিষয়ে সমাজতত্ত্ববিদ দেবদাস ভট্টাচার্যের অভিমত জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো একটা রাজনৈতিক ট্যাক্সি৷ শুধু পাগল-ছাগল করে বেড়াচ্ছে তা তো নয়৷ কাজেই উদ্যোগটা রাজনৈতিকই হতে হবে৷ সেটা করতে পারলে সমাধান সম্ভব৷ অন্য লোকেরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলেই সম্ভব৷ মুশকিলটা হচ্ছে গণধোলাই যারা দেয়, সাধারণত তাদের একটা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে৷ কিছুদিন আগে উত্তরপ্রদেশে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণধোলাইয়ের অভিযোগ আছে, সে নাকি এবার ভোটে দাঁড়তে যাচ্ছে৷ কাজেই আমি মনে করি, পালটা প্রতিরোধটা হতে হবে রাজনৈতিক৷''
এক্ষেত্রে আইনের ভূমিকা কী হবে জানতে চাইলে দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইন তো আছেই৷ আদালত তো বলে দিয়েছে এটা ঠিক নয়৷ আসলে ভারতে আইনের বিষয়টা একটা লম্বা ব্যাপার৷ সবকিছুতেই যদি সর্বোচ্চা আদালতে যেতে হয়, তাহলে তো চলে না৷ কোথায় কোন গ্রামে কে কাকে পিটিয়ে মারলো, তারজন্য কে আদালতে লড়তে যাবে৷ যার সোশ্যাল ক্যাপিট্যাল, যাকে বলে সামাজিক মূলধন আছে, সে লড়তে পারে৷ যার সেটা নেই, সে কী করবে ?''
সমকামের স্বীকৃতি উদযাপন
১৪৬ বছরের পুরনো আইন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গেল বদলে৷ ঐতিহাসিক এই রায়ে ভারত জুড়ে উদযাপনে মেতে উঠেছেন সমকামী অধিকার কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
নির্যাতনের হাতিয়ার
ঔপনিবেশিক শাসনামলের এ আইন সংবিধানের সাথে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে মনে করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র৷ আরেক বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা বলেছেন, ‘‘এই সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে দেরি হওয়ায় ইতিহাসের ক্ষমা চাওয়া উচিত৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
আমার শরীর, আমার অধিকার
নিজের শরীরের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছেন সমকামী অধিকার কর্মীরা৷ এ পথেও ছিল বাধা৷ সামাজিক হেনস্তা তো ছিলই, আইনি সুরক্ষাও ছিল না তাঁদের পক্ষে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
উদযাপন
রায় ঘোষণার পরপরই ভারতের বিভিন্ন স্থানে নাচে গানে উদযাপনে মেতে ওঠেন সমকামী অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ভারতের ইতিহাসে মানবাধিকারের লড়াইয়ে একে অসাধারণ এক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
করণ জোহর
বলিউডের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক করণ জোহর এক টুইটে এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন৷ মানবতা ও সমঅধিকারের পক্ষে ভারত আরেকটু এগিয়ে গেল বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
৭৩ দেশে অপরাধ
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৭৪টি দেশে সমকামিতা ছিল নিষিদ্ধ৷ কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বরের রায়ে সে তালিকা থেকে নিজের নাম সরাতে পারলো ভারত৷ নিষিদ্ধের তালিকায় বেশিরভাগই এশিয়া ও আফ্রিকার৷ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকাও রয়েছে এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
২৬ দেশে সমকামী বিয়ে
বিশ্বের ২৬টি দেশ সমকামীদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এই তালিকায় এশিয়ার কোনো দেশ নেই৷ আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে আছে সাউথ আফ্রিকার নাম৷ ২০০০ সালে প্রথম দেশ হিসেবে সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি দেয় নেদারল্যান্ডস, সবশেষ ২০১৭ সালে তালিকায় নাম লিখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, মালটা ও জার্মানি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
6 ছবি1 | 6
সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷বলা হয়েছে, পাঁচজনের বেশি ফরোয়ার্ড করা যাবে না৷ এই ধরনের সেন্সরশিপ থাকা জরুরি৷ লিগ্যালি বলছি না, তবে দেখবেন, আমাদের দেশে লিগ্যাল প্রোটেকশন শেষ পর্যন্ত সেই পায়, যার সোশ্যাল ক্যাপিটেল আছে৷ যার নেই, সে তেমন আইনের সাহায্য পায় না৷ সামাজিক মূলধন বলতে বোঝাতে চাইছি পাড়ার লোকজন৷ তাঁরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে সে বেঁচে যাবে৷ রাজস্থানে যে বাঙালিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেই হত্যাকারীদের একজন এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছে৷ কাজেই রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলে এই ধরনের কাজ করতে কেউ সাহস পায় না৷ সর্বোচ্চ আদালত আইনত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা ছাড়া আর বেশি কী বলতে পারেন? রাজনৈতিক খেলা তো বলতে পারেন না৷ মোটকথা, যারা নোংরা রাজনীতি করছে, তাঁদের বরোধিতা করতে হবে৷ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে৷ তবেই এই ধরনের ঘটনা হয়ত বন্ধ হবে৷''
পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গোরক্ষার নামে হিংসা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলি মনে করে, কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের এটা এক ধরনের জাতি বিদ্বেষ, যেখানে শত্রুকে ধর্ম, জাতি ও আদর্শ থেকে ভিন্ন ভাবা হয়৷ অন্য কথায় তাদের নিশ্চিহ্ন করার কথা ভাবা হয়৷ আরেকটা কারণ, ছেলে ধরার অভিযোগ দেগে দেওয়া৷ এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলে ধরার গুজব একবার ছড়িয়ে দিলেই হলো৷ আর রক্ষা নেই৷
এই তো কয়েকদিন আগেকার ঘটনা৷ লাভ জেহাদের জিগির তুলে দিল্লির কাছে মিরাট শহরে একজন মুসলিম যুবককে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কিছু লোক৷ পুলিশের নাকের ডগায়৷ অপরাধ, সে একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের নামে প্রেম করছে৷ তাদের কাছে ভিন ধর্মের মেয়ের সঙ্গে রোমান্স অসহ্য৷ মেয়েটিকেও কম হেনস্থা করা হয়নি৷ ঐ ছেলে-মেয়ে দুটি মেডিকেলের ছাত্রছাত্রী৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল শুরু হয়৷ কর্নাটকের বিদার থেকে কিছু মুসলিম যুবক হায়দ্রাবাদে ফিরছিলেন৷ পথে এক জায়গায় থেমে স্নেহবশত বাচ্চাদের চকলেট দেয়৷ গুজব ছড়ায়, ওরা নাকি ছেলে ধরা৷ সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে মুসলিম যুবকদের গাড়ি থেকে নামিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে৷ ঘন্টা খানেক ধরে চলে এই গণপিটুনি৷ তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয় জনা তিনেক পুলিশ৷ মাস দুয়েক আগে মহারাষ্ট্রে গণপিটুনির শিকার হয় পাঁচজন৷ একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সন্দেহ হয়, এরা ছেলেধরা৷ ঝাড়খন্ড রাজ্যে গণপিটুনির শিকার সাতজন৷ এ পর্যন্ত গণপিটুনিতে মারা গেছে ২৫ জন৷ বেশির ভাগই বাইরের লোক৷ স্থানীয় নয়৷ তাই সন্দেহটা গাঢ় হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার হোয়াটসঅ্যাপকে গুজব ছড়ানোর জন্য আংশিক দায়ী করে৷ গুজব ছড়াতে এই সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা থাকে৷ তাই সরকার এই ধরনের গুজব ছড়াতে হোয়াটসঅ্যাপের উপর বিধিনিষেধ জারি করেছে৷ হোয়াটসঅ্যাপ বড় জোর জনা কুড়িকে ম্যাসেজ ফরোয়ার্ড করতে পারবে৷