সরকারকে বছরে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়৷ আজ সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এই পাল্টা প্রশ্ন৷
বিজ্ঞাপন
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন জানায়, বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন মন্তব্য করেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়৷ বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে৷ কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব৷ তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে৷''
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্ক আমরা সবসময় সচেতন৷ করোনার মধ্যে এমন কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই৷ একবার না বার বার দিয়েছি৷''
"আমাদের উপায়টা কী? উপার্জনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার৷ সুপারমার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি৷ আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই৷'' বলেন তিনি৷
তিনি আরো বলেন, "ট্যাক্সটা ফাঁকি দেওয়ার দিকেই সবার নজর৷ তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে? ''
গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অংকের ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানান তিনি৷ মানুষের খাবারের কষ্ট যাতে না হয়, সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকার প্রধান৷
গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়াসহ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী৷
এ সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গণপরিবহন নিয়ে যাত্রীদের যত হতাশা, ভয় আর আশঙ্কা
সাভারে চলন্ত বাসে এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ এবং বরিশালে ৭ বছরের শিশুকে জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় গণপরিবহনে যাত্রীদের নিরাপত্তা আবার প্রশ্নবিদ্ধ৷ চলুন দেখা যাক এ বিষয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ কী বলেন...
রাশেদ মর্তূজা
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘জানটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হই’
ঢাকার গুলশান ১ এর একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী সবুর মোল্লা জানান, “গণপরিবহনে প্রতিনিয়তই পরিবহণ শ্রমিকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। এতটাই বেপরোয়া তারা যে, কারো জীবনেরই মূল্য নেই তাদের কাছে। বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিরাপদে ফিরতে পারবো কিনা এর নিশ্চয়তা নেই।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘দায়িত্বপ্রাপ্তরা চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে’
ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নাজমি শাহাদাত বলেন, “গণপরিবহনকে নিরাপদ করার দায়িত্ব যাদের, তারা নিজেরা কি কখনো গণপরিবহনে চলাচল করেন? তাদের বিলাসবহুল গাড়ির আগেপিছে থাকে পুলিশি প্রহরা, সুতরাং তাদের কাছ থেকে এ সেক্টরের নিরাপত্তা অথবা সমাধান চাওয়াটা অকল্পনীয়।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘আমরা সবাই আসলে জিম্মি’
একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “ঢাকা শহরে রাত দশটার পরে গণপরিবহনে মেয়েদের পক্ষে চড়াটা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিএনজি বা রিকশা করে যাতায়াত করি, যদিও এতে আমার খরচ কয়েকগুণ বেশি হয়। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটা ভেবে এইটুকু ছাড় আমাকে দিতেই হয়। আমরা সবাই জিম্মি আসলে।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘পরিবহন শ্রমিকেরা যেন আইন-কানুনের ঊর্ধ্বে’
ঢাকার গুলশান ১-এর মুদি দোকানি রিয়াজ হোসেন বলেন, দূর্ঘটনা বা ধর্ষণের মতো ঘটনায় বাংলাদেশে কোনো ড্রাইভার বা হেল্পারের ফাঁসি হয়েছে এমন নজির জানা নেই। উপরন্তু, পরিবহনমালিকদের প্রায় সবাই রাজনীতিবিদ হওয়ার ফলে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হয় না। তার প্রশ্ন, তাহলে কি গুটিকয়েক পরিবহনশ্রমিক সাধারণ মানুষের চেয়ে শক্তিশালী?
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘কার জীবন গেল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না’
ব্যক্তিগত গাড়িচালক মোঃ ইউনুস হাওলাদার বলেন, “আমি নিজে একজন গাড়িচালক, কিন্তু গণপরিবহনে, বিশেষ করে দূরপাল্লার যানে উঠলে আমার নিজেরই ওদের গাড়ি চালানো দেখে ভয় লাগে। একেকজন যেন প্রতিযোগিতায় নামে, কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। কার জীবন গেল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিং প্রয়োজন’
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নুসরাত তারিন তন্বী বলেন, “যেখানে মানুষ আছে, সেখানে অপরাধ হবেই। পরিবহন শ্রমিকদের প্রয়োজন প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিং। পাশাপাশি তাদের সংগঠনের ভিতর ভালো কাজের পুরস্কার এবং অপরাধের জন্য শাস্তির কঠোর বিধান থাকা প্রয়োজন। সরকার বা জনগণ, কোনো পক্ষকেই তাদের বিপক্ষে দাঁড় করানো যাবে না। তারা যে সমাজের গুরুত্বপুর্ণ এবং দায়িত্বশীল একটা অংশ, এটা তাদের অনুধাবন করানো জরুরি।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘আইন আছে, প্রয়োগ নেই’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে অনেক কিছুরই আইন আছে, কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নেই ১ শতাংশও। আইন শুধু দুর্বলদের জন্য। পরিবহন মালিক যারা আছে, তারা অনেক শক্তিশালী। সরকারকে আন্দোলন এবং গণদুর্ভোগের ভয় দেখিয়ে তারা সবরকম আইনকে বুড়ো আঙুল দেখায়। আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমান করতে না পারলে গণপরিবহনের দুর্ভোগ বা নিরাপত্তা কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব না।”
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে’
একটি সরকারি কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী তিথী সাংমা বলেন, “কিছুদিন পরপর ধর্ষণ বা কোনো দুর্ঘটনার খবর আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। একটু উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখবেন, তারা সড়ক এবং গণপরিবহনের নিরাপত্তায় কতরকম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সিসিটিভি, গতিনির্ধারক নির্দেশনা, পুলিশের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ইত্যাদি আধুনিক ব্যবস্থা আমাদের দেশেও কার্যকর করা এখন সময়ের দাবি।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘দেশটাই তো অনিরাপদ’
একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আহাদ ইসলাম বলেন, “ঘরে কিংবা বাইরে, আমরা কোথাও নিরাপদ না। চারদিকে অব্যবস্থাপনার ছড়াছড়ি। আর গণপরিবহনের কথা যদি বলেন তো আমি বলবো, এটা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। সরকারের চরম অবহেলিত একটি খাত হচ্ছে এটা, যেখানে মাঝে মধ্যে কিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও অসাধু মহলের চাপে সেগুলো আলোর মুখ দেখে না।”
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘নিজেকে নিরাপদ রাখতে মার্শাল আর্ট শিখি’
এ লেভেল শিক্ষার্থী আইদা মোস্তফা জানান, গণপরিবহনে তাকে নিয়মিতই চলাফেরা করতে হয়। অনেক সময় বাস থেকে নামতে বা উঠতে বাসের স্টাফরা অশোভন আচরণ করেন, অধিকাংশ সময়েই যেসবের প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকে না। এ ধরণের ঘটনা থেকে বাঁচতে তিনি নিজের জমানো টাকা দিয়ে মার্শাল আর্ট শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং চলমান সময়ে প্রত্যেক মেয়েরই আত্মরক্ষার এই কৌশল শেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।