1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকার কি ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম৷
আরাফাতুল ইসলাম
২৫ অক্টোবর ২০১৯

ফেসবুক ব্যবহার করছি একযুগ ধরে৷ একসময় নেহায়েত সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার এই ওয়েবসাইট এখন হয়ে উঠেছে মহিরুহ৷ বাকস্বাধীনতা চর্চায় যেমন ফেসবুক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আবার এটির মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া খবরের কারণে ঘটছে সহিংসতা, প্রাণহানি৷

প্রতীকী ছবিছবি: picture.alliance/AP Photo/A.M. Ahad

ফেসবুক কি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত? এই প্রশ্ন বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা সময়ে উঠেছে৷ এক্ষেত্রে দু'টি বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ প্রথমত, বাকস্বাধীনতা৷ দ্বিতীয়ত, ভুয়া খবর আর গুজব রোধে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ৷

বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে সচেতন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এমন কেউই ফেসবুকের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে কথা বলবেন না৷ কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে এক বড় ভূমিকা রাখছে৷ এখন যেকেউ একটি ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে তার মতামত গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে৷ ফলে, সাধারণ-অসাধারণ সব মানুষের বাকস্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিতে এক শক্তিশালী হাতিয়ার ফেসবুক৷ 

কিন্তু ফেসবুকের এই ব্যবহার জনগণের উপর অযোচিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, স্বৈরতন্ত্র বা স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করে - এমন সরকারগুলোর পছন্দ নয়৷ ফলে তারা নানাভাবে সরকার সমালোচক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাসহ অনেকের বাকস্বাধীনতা হরণ করতে তাদের ফেসবুক একাউন্টটি বন্ধ করে দিতে তৎপরতা দেখায়৷

হতাশার কথা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে এই চর্চা বাংলাদেশেও দেখা গেছে৷ সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এক্ষেত্রে এক বড় উদাহরণ৷ বাংলাদেশে ‘সরকার সমালোচক' হিসেবে পরিচিত যে কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফেসবুকে সরব, তাদের একজন তিনি৷ ফেসবুকে তাঁর একাউন্টটি অনুসরণ করতো বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷ তিনি গতবছর প্রথমে কয়েক মাসের জন্য তাঁর একাউন্টটি হারান৷ সেসময় একদল হ্যাকার স্বল্প সময়ের জন্য তাঁর একাউন্টটির দখল নিতে ও সেখান থেকে পোস্ট করতেও সক্ষম হয়৷

সে যাত্রায় গোলাম মোর্তোজার একাউন্টটি উদ্ধার সম্ভব হলেও এবছর সেটি পুরোপুরি হারিয়েছেন তিনি৷ অবস্থা এমন যে তাঁর নামে তৈরি করা একটি পাতায় বাংলাদেশ থেকে কাউকে মডারেটরও করা যায় না৷ কেননা কাউকে মডারেটর নিয়োগ করা হলে তাঁর একাউন্ট দ্রুতই নিষিদ্ধ করে দেয় ফেসবুক৷

এটা সত্য যে, কোন দেশের সরকারের পক্ষেই ফেসবুককে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়৷ আবার, একটি ফেসবুক পাতার এডমিন বা মডারেটর কে কে সেটাও সেই ব্যক্তিরা না জানালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়৷ তাহলে, গোলাম মোর্তোজার ফেসবুক পাতার মডারেটর কারা, সেই তথ্য প্রকাশ হচ্ছে কিভাবে? সেই একাউন্টগুলো ফেসবুকে দ্রুত নিষিদ্ধই বা কেন হচ্ছে? 

এসব প্রশ্নের উত্তরে নানা কথাই বলা যায়৷ ধারনা করা যায়, নির্দিষ্ট কোন চক্র গোপনীয় এই তথ্য কোনভাবে জানতে পারছে৷ এটা কি ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোন দুর্বলতা, নাকি অন্যকিছু?

সাংবাদিক হিসেবে জল্পনাকল্পনা করা আমার কাজ নয়৷ ভবিষ্যতে এই বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার ইচ্ছা আছে আমার৷ আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশে গোলাম মোর্তোজাই একমাত্র ব্যক্তি নন যার সঙ্গে এমনটা ঘটছে৷ বরং তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে৷ ফলে বিষয়টির সুরাহা হওয়া জরুরী৷

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া খবর কিংবা গুজব ছড়ানো৷ বাংলাদেশে গত কয়েকবছরে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মূল কারণ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া খবর বা গুজব৷ এধরনের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে তাই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরী৷

এক্ষেত্রে জার্মানির উদাহরণ টানতে পারি৷ জার্মান সরকার ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যাতে ভুয়া খবর বা গুজব ছড়িয়ে না পরে সেটা রোধে সম্প্রতি এক আইন করেছে৷ এই আইনে এধরনের পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ সাইটকে জবাবদিহিতার মধ্যে ফেলার এবং বেশ বড় অংকের জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে৷ ফলে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো জার্মান আইন মেনে কন্টেন্ট মডারেশনের জন্য বাড়তি লোকবল নিয়োগ করছে এবং নিরাপত্তা বিষয়ক তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে৷ 

আমার মনে হয়, বাংলাদেশ সরকারও ব্যবহারকারীর পাশাপাশি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকেও দায়বদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে৷ তখন দেখা যাবে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের জন্য কন্টেন্ট মডারেশনে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি বাড়াবে৷ অর্থাৎ বাংলাদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকেই উদ্যোগ নেয়া হবে৷ কারণ, দিনের শেষে ফেসবুক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়৷ গত একযুগ ফেসবুক ব্যবহারের সময় দেখেছি, অনেক ব্যবহারকারীর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি সম্পর্কে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে৷ একটি পাবলিক ফেসবুক পোস্ট যে জগতের যে কারো পক্ষে দেখা সম্ভব সেই বোধটুকুও অনেকের মধ্যে নেই৷ এটা বিপজ্জনক৷ আমার মনে হয়, ফেসবুক কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কী করা যাবে আর কী যাবে না - সেসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরী৷ আর তাতে সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি আরো নিরাপদ হয়ে উঠবে৷

প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ফেসবুক এবং ফেসবুকের মতো আরো অনেক নেটওয়ার্ক সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকবে৷ তবে, সেগুলো ব্যবহারের আগে নিজেকে উপযোগী করে তুলবে হবে৷ এর কোন বিকল্প নেই৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ