ফেসবুক ব্যবহার করছি একযুগ ধরে৷ একসময় নেহায়েত সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার এই ওয়েবসাইট এখন হয়ে উঠেছে মহিরুহ৷ বাকস্বাধীনতা চর্চায় যেমন ফেসবুক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আবার এটির মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া খবরের কারণে ঘটছে সহিংসতা, প্রাণহানি৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুক কি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত? এই প্রশ্ন বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা সময়ে উঠেছে৷ এক্ষেত্রে দু'টি বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ প্রথমত, বাকস্বাধীনতা৷ দ্বিতীয়ত, ভুয়া খবর আর গুজব রোধে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ৷
বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে সচেতন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এমন কেউই ফেসবুকের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে কথা বলবেন না৷ কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে এক বড় ভূমিকা রাখছে৷ এখন যেকেউ একটি ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে তার মতামত গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে৷ ফলে, সাধারণ-অসাধারণ সব মানুষের বাকস্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিতে এক শক্তিশালী হাতিয়ার ফেসবুক৷
বাংলাদেশে ফেসবুক: ব্যবহারের ভাল-মন্দ
সব বয়সী মানুষের কাছেই জনপ্রিয় এক সামাজিক মাধ্যম এখন ফেসবুক৷ যা ব্যবহার ছাড়া অনেকে একটি মুহূর্ত ভাবতে পারেন না৷ মাধ্যমটি অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে মানুষের জীবন যাত্রার সাথে৷ যা ভালোর পাশাপাশি অনেক মন্দ প্রবণতারও জন্ম দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
‘দ্য ফেসবুক’ থেকে শুধু ‘ফেসবুক’
২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দ্য ফেসবুক নামের একটি ওয়েবসাইট খোলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্ক জাকারবার্গ ও তার বন্ধুরা৷ শুরুতে এটি ছিল শুধু হাভার্ডের ব্যবহারকারীদের জন্য৷ ২০০৫ সালে নামের শুরুতে থাকা ‘দ্য’ ফেলে দেয় ফেসবুক৷ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৩ বছরে উপরের সব বয়সীদের জন্য৷
ছবি: REUTERS
১০০০ ডলার থেকে বিলিয়ন ডলার
২০০৪ সালে যাত্রা শুরুর সময় দ্য ফেসবুকে জাকারবার্গদের বিনিয়োগ ছিল মাত্র এক হাজার ডলার৷ বর্তমানে সেই কোম্পানির বার্ষিক আয় দাড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারে৷ ২০১৮ সালে তাদের নিট মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ২১১ কোটি ডলার৷ ফোর্বসের তালিকায় সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ফেসবুক আছে শীর্ষ পাঁচে৷
ছবি: AP
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা
বর্তমানে বিশ্বে ফেসবুক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২৫ কোটির বেশি৷ সাম্প্রতিক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে৷ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ২২০ কোটি অ্যাকাউন্ট এ কারণে বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
বাংলাদেশে তিন কোটি
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ফেসবুক ব্যবহারকারী কত তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দেশে তিন কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. A. Thu
যোগাযোগের নতুন মাধ্যম
ফেসবুক এখন সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় এক মাধ্যম৷ যেখানে খুজে পাওয়া যায় পরিচিত মানুষ৷ রাখা যায় তাদের খোঁজ, খবর৷ যোগাযোগের এই গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারে এমনকি দেশের সীমানা৷ আর এভাবে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বন্ধুত্ব৷ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে চেনা অচেনা মানুষ সাহায্যও করছে একে অপরকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Alfiky
তাৎক্ষণিক যোগাযোগ, ফোন কল
ফেসবুক অনেকের কাছে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের এক মাধ্যমও৷ মোবাইল নেটওয়ার্কে বার্তা পাঠানোর বদলে ফেসবুকের মাধ্যমেই যোগাযোগ চলে৷ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এমনকি ফোনে কথা বলার কাজও সারে৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
অনলাইন মার্কেটিং, এফ কমার্স
ফেসবুকের মাধ্যমে এখন অনেকে আয় রোজগার করছেন৷ বিভিন্ন ব্যবসায়িক পেইজ খুলে তারা নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, সরাসরি যোগাযোগ করছেন ক্রেতাদের সাথে৷ এই ধরণের ব্যবসা পরিচিত এফ কমার্স নামে৷ ই কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের হিসাবে, দেশে এখন এমন প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেইজ আছে৷ যার মধ্যে ১২ হাজার চালাচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Colourbox/T. Vitsenko
শিক্ষামূলক পেইজ
ফেসবুকে আছে বিভিন্ন শিক্ষামূলক সাইট ও গ্রুপ৷ তেমনই একটি সার্চ ইংলিশ৷ বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই ফেসবুক গ্রুপটিকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছে ফেসবুক বিজনেস৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
তথ্যের উৎস
ফেসবুক এখন অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে তথ্য ও সংবাদের উৎস৷ ব্যবহারকারীরা নিজেরাই প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে অনেক সময় বিভিন্ন খবর বা তথ্য জানাচ্ছেন৷ আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলোর পেইজ থেকেও সবশেষ খবর পাওয়া যায় ফেসবুকে৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/P. Proust
রক্তদান
কারো জরুরি রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকের সহযোগিতা নিতে পারেন৷ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে ২০১৮ সালে ‘ব্লাড ডোনেশনস হাব' তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি৷ এতে আগ্রহী রক্তদাতারা সাইন আপ করতে পারেন৷ আর যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁর আশপাশে রক্তদাতা কে আছেন সেই তথ্য জানাতে পারেন৷
ছবি: Fotolia
প্রতিবাদের মাধ্যম
ফেসবুক অনেকের কাছে মত প্রকাশ আর প্রতিবাদের মাধ্যমও৷ দেশের বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ এতে অনেক সময় তৎপর হয় সরকার বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামলকান্তির অবমাননা,
সিলেটে শিশু রাজন হত্যাসহ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠায়ও ভূমিকা ছিল ফেসবুকের৷
ছবি: Facebook/Mushfiqur Rahim
ব্যক্তিগত সম্প্রচার মাধ্যম
অনেকের কাছে ফেসবুক হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত সম্প্রচার মাধ্যম৷ নিজেদের সৃজনশীল কাজ, লেখালেখি, বক্তৃতা করে কেউ কেউ এমনকি সেলিব্রেটিও বনে গেছে৷ ফেসবুকে তাঁদের লাখো ফলোয়ার বা অনুসারীও আছে৷
ছবি: Facebook/A. Sadiq
নারী অবমাননা
ফেসবুকে অনেক সময় প্রতারণা আর নিপীড়নের শিকার হন নারীরা৷ আইডি হ্যাক করে, অপ্রিতীকর ছবি ছড়িয়ে দিয়ে এমনকি পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে অনেক অপরাধী৷
ছবি: DW
অপরাধ প্রবণতা
ফেসবুক অপরাধ প্রবণতা তৈরি করছে অনেক কিশোর ও তরুণদের মধ্যে৷ ঢাকার উত্তরা এলাকায় এক কিশোর হত্যার ঘটনায় তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে৷ তারা ফেসবুক পেজ খুলে গড়ে তোলো নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ৷আবার ধানমন্ডিতে এক কিশোরকে আরেক কিশোর গ্রুপ মারধর করে তার ভিডিও আপলোড করে দেয় ফেসবুকে৷ তরুণদের একাংশ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, ব্ল্যাকমেল করতে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করছে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Bangla Tribune/Humayun Masud
ভুয়া খবর ও গুজব
চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসের দিকে ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে গুজব ছড়ানো হয়৷ এরপর ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ গত বছর কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও শিক্ষার্থী ধর্ষণের গুজবে সংঘর্ষ বাড়ে৷ ফেসবুকে হরহামেশাই এমন গুজব আর ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা
কারো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখান থেকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট৷ যাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা৷ কক্সবাজারের রামুতে হামলা থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ যার সবশেষটি হয়েছে ভোলাতে৷
ছবি: AFP/Getty Images
রাষ্ট্রীয় দমন, সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন
ফেসবুকে মত প্রকাশ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বা সন্ত্রাসীদের নিপীড়নের মধ্যেও পড়তে হয়েছে অনেককে৷ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে এজন্য অনেককে জেলেও যেতে হয়েছে৷ আবার ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভিন্ন মত সহ্য করতে না পেরে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে বুয়েটে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
17 ছবি1 | 17
কিন্তু ফেসবুকের এই ব্যবহার জনগণের উপর অযোচিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, স্বৈরতন্ত্র বা স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করে - এমন সরকারগুলোর পছন্দ নয়৷ ফলে তারা নানাভাবে সরকার সমালোচক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাসহ অনেকের বাকস্বাধীনতা হরণ করতে তাদের ফেসবুক একাউন্টটি বন্ধ করে দিতে তৎপরতা দেখায়৷
হতাশার কথা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে এই চর্চা বাংলাদেশেও দেখা গেছে৷ সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এক্ষেত্রে এক বড় উদাহরণ৷ বাংলাদেশে ‘সরকার সমালোচক' হিসেবে পরিচিত যে কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফেসবুকে সরব, তাদের একজন তিনি৷ ফেসবুকে তাঁর একাউন্টটি অনুসরণ করতো বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷ তিনি গতবছর প্রথমে কয়েক মাসের জন্য তাঁর একাউন্টটি হারান৷ সেসময় একদল হ্যাকার স্বল্প সময়ের জন্য তাঁর একাউন্টটির দখল নিতে ও সেখান থেকে পোস্ট করতেও সক্ষম হয়৷
সে যাত্রায় গোলাম মোর্তোজার একাউন্টটি উদ্ধার সম্ভব হলেও এবছর সেটি পুরোপুরি হারিয়েছেন তিনি৷ অবস্থা এমন যে তাঁর নামে তৈরি করা একটি পাতায় বাংলাদেশ থেকে কাউকে মডারেটরও করা যায় না৷ কেননা কাউকে মডারেটর নিয়োগ করা হলে তাঁর একাউন্ট দ্রুতই নিষিদ্ধ করে দেয় ফেসবুক৷
এটা সত্য যে, কোন দেশের সরকারের পক্ষেই ফেসবুককে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়৷ আবার, একটি ফেসবুক পাতার এডমিন বা মডারেটর কে কে সেটাও সেই ব্যক্তিরা না জানালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়৷ তাহলে, গোলাম মোর্তোজার ফেসবুক পাতার মডারেটর কারা, সেই তথ্য প্রকাশ হচ্ছে কিভাবে? সেই একাউন্টগুলো ফেসবুকে দ্রুত নিষিদ্ধই বা কেন হচ্ছে?
ফেসবুক যখন সহিংসতার উৎস
বাংলাদেশে মাঝেমাঝেই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে৷ কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাধ্যম৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকম কয়েকটি ঘটনার কথা৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুক বার্তার জেরে তাণ্ডব
ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম এবং মহানবীকে নিয়ে কথিত কটূক্তির জের ধরে বাংলাদেশে একাধিকবার সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক ম্যাসেজের জের ধরে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সৃষ্ট তাণ্ডবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন৷ সেই যুবক আগেই থানায় তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়ার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন৷ পুলিশও জানিয়েছে, সেই যুবকের একাউন্টটি হ্যাকড হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24
ফেসবুকে সমালোচনা, পিটিয়ে হত্যা
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ আর তাতেই ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েক সদস্য ২০১৯ সালের সাত অক্টোবর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে৷ আবরার হত্যাকাণ্ডের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট৷ ইতোমধ্যে অবশ্য আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
পদ্মা ‘সেতুর জন্য মাথার’ গুজব
২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে এক গুজব ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদাকে নিয়ে গুজব, নিষিদ্ধ ফেসবুক একাউন্ট
বাংলাদেশের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে একাধিক ভুয়া খবর ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল৷ নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে ফেসবুক সেসব খবরের প্রচার রোধে একাধিক একাউন্ট এবং পাতা নিষিদ্ধ করে৷ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এসব গুজব ছড়াচ্ছিল বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: Bdnews24.com
শিক্ষার্থী ধর্ষণের গুজবে সংঘর্ষ
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ঢাকার জিগাতলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় সেখানে শিক্ষার্থী নিহত এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ পরবর্তীতে অবশ্য প্রাণহানি বা গুজবের কোন সত্যতা মেলেনি৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
রংপুরে দাঙ্গা
ইসলামের মহানবীকে নিয়ে ফেসবুকে এক হিন্দু যুবকের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের দশ নভেম্বরের সেই ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুকে ছবি, তাণ্ডব
এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে উস্কানিমূলক ছবি পোস্ট করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ত্রিশ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তাণ্ডব চালায় একদল বিক্ষুব্ধ মুসলমান৷ সেসময় সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Khukon Singha
ফেসবুকে গুজব, বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে ১৯টি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর করে উত্তেজিত মুসলমানরা৷ উত্তম কুমার নামের এক তরুণ ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন এমন গুজবের ভিত্তিতে সেই হামলা চালানো হয়েছিল৷ তবে, পরবর্তীতে সেই তরুণের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
এসব প্রশ্নের উত্তরে নানা কথাই বলা যায়৷ ধারনা করা যায়, নির্দিষ্ট কোন চক্র গোপনীয় এই তথ্য কোনভাবে জানতে পারছে৷ এটা কি ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোন দুর্বলতা, নাকি অন্যকিছু?
সাংবাদিক হিসেবে জল্পনাকল্পনা করা আমার কাজ নয়৷ ভবিষ্যতে এই বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার ইচ্ছা আছে আমার৷ আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশে গোলাম মোর্তোজাই একমাত্র ব্যক্তি নন যার সঙ্গে এমনটা ঘটছে৷ বরং তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে৷ ফলে বিষয়টির সুরাহা হওয়া জরুরী৷
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া খবর কিংবা গুজব ছড়ানো৷ বাংলাদেশে গত কয়েকবছরে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মূল কারণ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া খবর বা গুজব৷ এধরনের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে তাই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরী৷
এক্ষেত্রে জার্মানির উদাহরণ টানতে পারি৷ জার্মান সরকার ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যাতে ভুয়া খবর বা গুজব ছড়িয়ে না পরে সেটা রোধে সম্প্রতি এক আইন করেছে৷ এই আইনে এধরনের পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ সাইটকে জবাবদিহিতার মধ্যে ফেলার এবং বেশ বড় অংকের জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে৷ ফলে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো জার্মান আইন মেনে কন্টেন্ট মডারেশনের জন্য বাড়তি লোকবল নিয়োগ করছে এবং নিরাপত্তা বিষয়ক তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে৷
আমার মনে হয়, বাংলাদেশ সরকারও ব্যবহারকারীর পাশাপাশি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকেও দায়বদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে৷ তখন দেখা যাবে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের জন্য কন্টেন্ট মডারেশনে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি বাড়াবে৷ অর্থাৎ বাংলাদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকেই উদ্যোগ নেয়া হবে৷ কারণ, দিনের শেষে ফেসবুক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়৷ গত একযুগ ফেসবুক ব্যবহারের সময় দেখেছি, অনেক ব্যবহারকারীর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি সম্পর্কে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে৷ একটি পাবলিক ফেসবুক পোস্ট যে জগতের যে কারো পক্ষে দেখা সম্ভব সেই বোধটুকুও অনেকের মধ্যে নেই৷ এটা বিপজ্জনক৷ আমার মনে হয়, ফেসবুক কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কী করা যাবে আর কী যাবে না - সেসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরী৷ আর তাতে সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি আরো নিরাপদ হয়ে উঠবে৷
প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ফেসবুক এবং ফেসবুকের মতো আরো অনেক নেটওয়ার্ক সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকবে৷ তবে, সেগুলো ব্যবহারের আগে নিজেকে উপযোগী করে তুলবে হবে৷ এর কোন বিকল্প নেই৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷