পরবর্তী সরকার কেমন হবে সেই আলোচনায় যোগ দিতে কাবুল এসেছেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার৷ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং আফগানিস্তানের রাজনীতিবিদরাও এই আলোচনায় যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন এক তালেবান নেতা৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারে শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়া তালেবান নেতা মোল্লা বারাদার শনিবার কাবুলে এসেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন এ তালেবান নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, মোল্লা বারাদার দলটির কমান্ডার, সাবেক সরকারের নেতৃবৃন্দ, নীতি নির্ধারক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদদদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন৷ তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান সরকারের একটি নতুন মডেল হাজির করবেন৷ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো মোকাবিলা করতে পৃথক দল গঠন করা হবে৷ তিনি বলেন, ‘সংকট সমাধানে সাবেক সরকারের বিশেষজ্ঞদেরও’ যুক্ত করা হবে৷
নতুন এই সরকারের কাঠামো পশ্চিমা সংজ্ঞা অনুসারে গণতান্ত্রিক না হলেও ‘প্রত্যেকের অধিকার রক্ষা’ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
এর আগে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবানরা৷ শান্তি প্রতিষ্ঠা, কারো প্রতি বৈরিতা না রাখাসহ ইসলামী শরীয়া কাঠামোর মধ্যে নারীদের অধিকার প্রদানের কথা বলেছেন তালেবান মুখপাত্র৷
তালেবানের ১০ প্রতিশ্রুতি
কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ১৭ আগস্ট তালেবানে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে৷ তাদের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ দিয়েছেন নতুন অনেক প্রতিশ্রুতি৷ তার কয়েকটি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Rahmat Gul/dpa/AP/picture alliance
কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়
কাবুল দখলে নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে সঙ্গে যেকোন সংঘাত এড়ানোর কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ কারো প্রতি ইসলামিক এমিরেটের শত্রুতা বা বৈরিতা নেই৷ বৈরিতার অবসান হয়েছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ আমরা কোন অভ্যন্তরীন বা বহিরাগত শত্রু চাই না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance
প্রতিশোধ নেয়া হবে না
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভীত সন্ত্রস্ত আফগানরা দেশ ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ওঠেন৷ তালেবান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই, অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে৷ কারো প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না৷’’
ছবি: Stringer/REUTERS
বিদেশিদের নিরাপত্তা থাকবে
কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে৷ সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু করতে দিব না৷ আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে৷’’
ছবি: Marc Tessensohn/Bundeswehr/dpa/picture alliance
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
‘‘আমি আমাদের প্রতিবেশী দেশি, আঞ্চলিক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের বিরুদ্ধে বা কোন দেশের ক্ষতিসাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ ... আমরা আন্তর্জাতিক সীমানা ও যোগাযোগকে স্বীকৃতি দেই৷ আমাদের সেভাবেই বিবেচনা করা উচিত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা নেই,’’ বলেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ৷
ছবি: Jafar Khan/AP Photo/picture alliance
নারীদের ‘অধিকার’ দেয়া হবে
সংবাদ সম্মেলন মুজাহিদ বলেন, ‘‘ইসলামিক এমিরেট শরীয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আমাদের বোন, আমাদের পুরুষরা একই অধিকার ভোগ করবেন৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমাদের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ কাজ করতে পারবেন৷ ...আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না, তবে অবশ্যই সেটি আমাদের কাঠামোর মধ্যে হবে৷’’
ছবি: Kyodo/picture alliance
গণমাধ্যমে নারীরা কাজ করতে পারবে
সংবাদ সম্মলনে প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ জানান, নতুন সরকারের গঠন হলে তাদের ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে৷ তবে দ্রুতই বিষয়টি পরিস্কার করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
‘‘আমরা গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যহত থাকবে৷ তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে৷’’ এমন আশ্বাস দিলেও মুজাহিদ বলেন গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে৷ ‘‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে৷...তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
চোরাচালান, মাদক রোধ
মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দেশের পুরুষ, নারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই কোন ধরনের মাদক আমরা উৎপাদন করব না৷ কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না৷’’ তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেও সহায়তা চান৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/
অর্থনীতি পুনর্গঠন
দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব৷ এজন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে৷ ...অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব৷ এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারব৷’’
ছবি: AP
সরকারে সব পক্ষ থাকবে
সরকারে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মুজাহিদ জানান, ‘‘আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সরকার থাকবে৷ নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা৷ তারা এ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আলোচনা করছেন৷ কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমাদের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ইসলামিক ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা, বাইরে পুরুষদের সঙ্গে কাজ করা নিষিদ্ধের পাশাপাশি মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরতে বাধ্য করেছিল মৌলবাদী সংগঠনটি৷
সরকার গঠনের আলোচনা প্রক্রিয়ার বিষয়ে অবগত এক তালেবান বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, আগামী ৩১ আগস্টের আগে নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে না৷ উল্লেখ্য আফগানিস্তানে অবস্থানরত ন্যাটো বাহিনীর দেশটি ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত৷
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ টুইটে জানিয়েছেন, তিনি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারজাই কাবুলে তালেবানের গভর্নরের সঙ্গে শনিবার বৈঠক করেছেন৷ শহরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি সমস্ত ব্যবস্থা নিবেন বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন৷
কে এই বারাদার?
তালেবানের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের একজন মোল্লা আবদুল গনি বারাদার৷ তিনি মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি সরকার ও বাহিনীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন৷ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালানোর পর তালেবানের পতন ঘটলে তিনি আত্মগোপন করেন৷ ২০১০ সালে তাকে করাচি থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী৷ সে সময়শেকল পরিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়েছিল তাকে৷
২০১৮ সালে পাকিস্তান বারাদারকে মুক্তি দেয়৷ এরপর তিনি কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব নেন৷ ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায়৷
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
6 ছবি1 | 6
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তালেবানের আশ্বাস
এক ন্যাটো কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তালেবানের নিয়ন্ত্রণে আসার পর এখন পর্যন্ত তারা ১২ হাজার বিদেশি ও আফগান নাগরিককে কাবুল বিমান বন্দর থেকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন৷ শনিবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জনকে কাবুল থেকে আনতে সক্ষম হয়েছেন৷ সুইজারল্যান্ড এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে উজবেকিস্তানের সঙ্গে একটি চার্টার ফ্লাইট স্থগিত করেছে৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে৷ শত শত মানুষ বিমান বন্দরে প্রবেশ করতে উন্মুখ থাকায় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷
এদিকে আফগানিস্তানের স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটি ছাড়তে যাওয়া ১৫০ জনকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ছিলেন আফগানিস্তানে বসবাসরত শিখ ও ভারতীয় নাগরিক৷ তালেবানের মুখপাত্র আহমাদুল্লাহ ওয়াসেক তা অস্বীকার করে বলেছেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করে বলেছে, বিক্ষোভকারী এবং আগের সরকার ও অ্যামেরিকানদের সঙ্গে কাজ করা নাগরিকদের উপর তালেবানরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ এই বিষয়ে জানতে চাইলে রয়টার্সকে এক তালেবান নেতা বলেন, ‘‘আমরা নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুরতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর কিছু ঘটনা জানতে পেরেছি৷ যদি তালেবানের কোন সদস্য এমন আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা আতঙ্ক, চাপ ও উদ্বেগের বিষয়টি বুঝতে পারছি৷ মানুষ মনে করছে আমরা দায়িত্বশীল হব না, কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়৷’’
তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তালেবানের সঙ্গে কোন আলোচনা করবে না বা তাদেরকে স্বীকৃতিও দেবে না৷ ‘‘আমরা তালেবানের আশ্বাস বাণী শুনেছি, কিন্তু আমরা তাদের কর্মকাণ্ড দিয়েই তাদেরকে বিবেচনা করব,’’ স্পেনের মাদ্রিদে কাবুল থেকে নিয়ে আসা আফগানদের অভ্যর্থনা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শনিবার তিনি এই কথা বলেন৷
ইইউ প্রধান জানান, আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা হিসেবে চলতি বছর যে ছয় কোটি ৭০ লাখ ডলার দেয়া হবে তার পরিমান বৃদ্ধির প্রস্তাব করবেন তিনি৷ তবে এই অর্থ যেন মানবাধিকার, নারীদের অধিকার ও সংখ্যালঘুদের জন্য ব্যয় হয় কঠোরভাবে সেই শর্ত দেয়া থাকবে বলেও জানান ইউরোপীয় কমিশন প্রধান৷
এফএস/আরআর (রয়টার্স, আরআর)
আফগানিস্তান যুদ্ধ: কজন মারা গেলেন, খরচ কত হলো?
প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে৷ এই সময়ে কোন পক্ষের কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, খরচ কত হয়েছে তার খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তথ্যের উৎস
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্টের’ তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এপি৷ ২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আফগানিস্তানের পাশাপাশি ইরাকেও যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই সময়ে অনেক মার্কিন সেনা দুই দেশেই যুদ্ধ করেছেন৷ ফলে এপির দেয়া কিছু তথ্যে দুটি যুদ্ধেরই পরিসংখ্যান আছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধের শুরু
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার এক সপ্তাহ পর ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে মার্কিন বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল৷ প্রায় ২০ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রাণহানি
২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীতে প্রাণহানি
যুদ্ধে মারা যাওয়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪৮ জন৷ এছাড়া মার্কিন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন তিন হাজার ৮৪৬ জন৷ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা ন্যাটো ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ১৪৪ জন ব্যক্তিও মারা গেছেন৷
ছবি: AFP/T. Watkins
আফগান নাগরিকের মৃত্যু
যুদ্ধে আফগানিস্তানের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৬৬ হাজার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৫ জন৷ তালেবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা গেছেন ৫১ হাজার ১৯১ জন৷
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিক
আফগান যুদ্ধে ৪৪৪ জন ত্রাণকর্মী ও ৭২ জন সাংবাদিকও মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters
খরচ
২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
খরচ আরো আছে, থাকবে
যুদ্ধে খরচের জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সুদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৯২৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে৷ ২০৩০ সালে সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে, যা যুদ্ধে খরচের সমপরিমাণ৷ খরচ সেখানেই থামবে না৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সুদের পরিমাণ হতে পারে সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File/Lt. Col.. Leslie Pratt, US Air Force
সেনাদের দেখভালের খরচ
যুদ্ধ শেষ হলেও খরচ শেষ হচ্ছে না, হবে না৷ আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রায় ৪০ লাখ সেনাকে আজীবন দেখভাল করতে হবে৷ এতে প্রায় ১.৬ থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
আফগান যুদ্ধের খরচ নিয়ে কম আগ্রহ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স ডিফেন্স সাবকমিটি’ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তার খরচ নিয়ে ৪২ বার আলোচনা করেছে৷ একই কমিটি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের খরচ নিয়ে আলোচনা করেছে মাত্র পাঁচবার৷ আর সিনেটের ফাইন্যান্স কমিটি আলোচনা করেছে মাত্র একবার৷