1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকার থেকে ভোটার সবার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সোশাল মিডিয়া

শহীদুল ইসলাম
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন ঘিরে নানা প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ, ডয়চে ভেলেকে জানালেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।

২০২৪ সালের আগস্টের ছবি৷ প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা শহর৷
জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল তা চ্যালেঞ্জে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা কমে যায় এবং সরকার যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারে তখন এদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।ছবি: DW

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান।

ডয়চে ভেলে: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা জনগণের মধ্যে কী ধরনের প্রত্যাশা তৈরি করেছে?

অধ্যাপক কাজী মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান: গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের অধিকার রক্ষা করা যায়নি। যে নির্বাচনেনাগরিকেরা তাদের ইচ্ছে ও পছন্দমতো ভোট দিতে পারে সেই নির্বাচনের অভাব কিন্তু গত সাড়ে ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। সেই জায়গা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন করার ঘোষণা মানুষের মনে শুধু প্রত্যাশাই তৈরি করেনি, একটি স্বপ্ন তৈরি করেছে। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় নতুন করে পৌঁছাবে। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি এই নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও ট্রান্সফরমেশনের জায়গা।

গত সাড়ে ১৬ বছর পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে না পারার পরিবেশের কারণে দেশে কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে যারা ভোটার হয়েছেন তারা ভোট দিতে পারেননি। এদের বয়স কিন্তু এখন ৩৪-৩৫ বছর হয়ে গেছে। এদের নিজের পছন্দের ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা নেই। এই অবস্থায় এই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা ও আগ্রহ তৈরি করেছে সেটি সাধারণ কোনো জরিপে উঠে আসবে না। কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অনেক সময় জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক নিম্নমানের। এটা সামাজিক প্রত্যাশা তৈরি করেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ ও জবাবদিহিমূলক শাসন তৈরির প্রত্যাশা তৈরি করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর সরকার গঠনের যে প্রত্যয় সেই প্রত্যাশা তৈরি করেছে।

কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন পেছাতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছেন কি?

সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সেটিও অসম্পূর্ণ। কারণ এই রোডম্যাপ নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতির কিছু বিষয়কে উপস্থাপন করছে কিন্তু নির্বাচনের যে পূর্ণ প্রস্তুতি এবং নির্বাচনকালীন সময়ের আগে সিরিয়াস প্রস্তুতির বিষয়গুলো সেখানে নেই। ভোটের তারিখ ঘোষণার দরকার ছিল। ভোটের তারিখ ঘোষণা করে প্রয়োজনে সরকার তা পরিবর্তন করতে পারত। তারিখ ঘোষণা করলে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনকেও সেভাবে সামাজিক যে প্রত্যয় দেখানো, নাগরিকদের নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ এবং আয়োজন সমাজের মধ্যে তৈরি করতে পারেনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়েও বিভাজন আছে। সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য, ভোট দেওয়ার জন্য যে জাতি সাড়ে ১৬ বছর অপেক্ষা করছে তাকে যদি আপনি আরও অপেক্ষায় রাখেন সেটি ভালো দেখায় না। এমন হতে পারে ছোট একটি অংশ বা কোনো না কোনো গোষ্ঠী বিভিন্ন কারণে এখনই নির্বাচন চায় না। কিন্তু আপামর  জনসাধারণ নির্বাচন চায় না এটি আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট শুধু নাগরিক অধিকার নয়, উৎসবও। সাড়ে ১৬ বছর ধরে ভোট দিতে না পারার কারণে এটি কিন্তু নাগরিকের পরিচয় প্রকাশের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় যত লম্বা সময় ধরে আপনি তাদের অপেক্ষা করাবেন ততই তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ রয়েছে। বিষয়টি এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতায় কী প্রভাব ফেলতে পারে?

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব সংকট সমাধান করে ফেলার কারও কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। একই সময়ে সব পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষ কেন পৃথিবীর কোনো অংশের মানুষই প্রস্তুত নয়। প্রত্যেকটা পরিবর্তন-সংস্কার সময় ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে হয়। দেশের মানুষ কিন্তু কর্তৃত্ববাদের পতনের আগে কখনোই বলেনি আনুপাতিক নির্বাচন চায়। কর্তৃত্ববাদের পতনের পরেও লম্বা সময় কিন্তু এই আলাপ ছিল না। মাঝে একটু ছিল, এরপর অনেক দিন হারিয়ে গেল, আবার এখন সামনে এসেছে। সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রয়োজনীয় সংস্কার যদি করতে না পারি তাহলে হয়তো কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা আবার ফিরে আসতে পারে। সেই ভয়ের কারণেই কিন্তু মৌলিক জায়গায় সংস্কারের জন্য নির্বাচনের আগে অনেকের দাবি আছে, যাতে জবাবদিহিমূলক শাসন তৈরি হয়।

সবাই এক লাইনে না এলে নির্বাচন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে: মাহবুবুর রহমান

This browser does not support the audio element.

আপনার দৃষ্টিতে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সরকার, এরপর নির্বাচন কমিশন। গত বছরের ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে দলগুলোর যে ঐক্য ছিল সেই ঐক্যসহ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একই লাইনে না আসা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এরা এক লাইনে এলে নির্বাচন করা যাবে। একই লাইনে না আসলে নির্বাচন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবে তাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া, বিশ্বাস, আস্থা থাকতে হবে।

আপনার দৃষ্টিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা এখন পর্যন্ত কতটা কার্যকর?

প্রধান উপদেষ্টাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ঐক্য আমরা দেখেছি। সংকট হলেই রাজনৈতিক দলগুলো উনার (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে বসেছে এবং বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তার বাসভবন থেকে বের হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন কতটুকু বোঝাপড়ায় গিয়েছে সেটি কিন্তু দৃশ্যমান হয়নি। সরকারের অন্যান্য অনুঘটকের সঙ্গেও গত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর কি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটিও দৃশ্যমান হয়নি। সামনে আরও ছয় মাস সময় আছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে অন্যরা সেভাবে পেরে উঠতে না পারলেও প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসাতে পেরেছেন। এই নিয়ন্ত্রণ যদি ভবিষ্যতেও থাকে তাহলে একটি আশা থাকে। এই আশাটি আরও শক্তিশালী হবে যদি নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে পারে। বারবার বসা দরকার, তাদের অভিযোগ ও পরামর্শগুলো গ্রহণ করে তাদেরকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ধাবিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা না করেন আপনি যতই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেন না কেন কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না। কেবল আইনশৃঙ্খলা ও ভোটের লাইন সুষ্ঠু করাই নির্বাচন নয়। ভোটের আগে প্রচার-প্রচারণা সময়, ভোট গ্রহণের সময় এবং ভোট গণনার সময় যদি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা না থাকে তাহলে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে।

নির্বাচন নিয়ে আস্থা তৈরিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায়িত্ব আছে কি?

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা করে। ক্ষমতায় যাওয়ার যে মানসিকতা সেটি কিন্তু রাজনৈতিক দলের পরিচয় তৈরি করে এবং তাকে অন্যান্য চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর থেকে আলাদা করে। যখন দেখবেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা আছে তখন এদের কাছ থেকে আপনি যে লেভেলে সহযোগিতা পাবেন সেটি হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যে পরিমাণ নিরপেক্ষতা প্রকাশ করতে পারবেন, যেটুকু নিরপেক্ষতা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবেন ততটুকু সহযোগিতা পাবেন। এজন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দলগুলোর কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা না শুধু, বিশ্বাস ও আস্থায় জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এটি যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু থাকবে। যখন সরকার, নির্বাচন কমিশন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট তৈরি হবে, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে।

যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবে, তাদের মধ্যে নির্বাচনের প্রতি আস্থা কিংবা অনিশ্চয়তা-কোন দিকটি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে?

আমি মনে করি নির্বাচনের প্রতি আস্থা ও অনিশ্চয়তা দুটিই আছে। কারণ তারা তো নির্বাচন দেখেনি, এরা একটি অস্বস্তির মধ্যে আছে। তবে সরকারের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এদের কাছে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তখন তাদের আস্থা বেড়ে যাবে এবং অস্বস্তি কমে যাবে।

তরুণ ভোটারদের জন্য এই নির্বাচন কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, এবং তাদের অংশগ্রহণ কীভাবে নির্বাচনের ফলাফল ও প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে?

তরুণদের জন্য এই নির্বাচন একটি মাইলফলক, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জও। কারণ তারা প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে। তারা ভোট দিতে পারবে কি, তারা একটি জবাবদিহিমূলক শাসন তৈরি করতে পারবে কী না, তারা আবারও কর্তৃত্ববাদ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে যাবে কী না, আগের মতো আবার বেকার ও বঞ্চিত থেকে যাবে কি না-এসব কিন্তু তরুণদের জন্য চ্যালেঞ্জ। ১৮ থেকে ৩৫ বয়স বয়সি যারা ভোট দেবেন তারা কিন্তু খুব বেশি অতীত ভেবে কোনো সিদ্ধান্ত নেন না, তারা সিদ্ধান্ত নেন ভবিষ্যৎ ভেবে। সুতরাং জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যারা কথাবার্তায়, কাজকর্মে এদের আস্থা অর্জন করতে পারবে তারাই ভোটে জিতে যাবে, কারণ এদের সংখ্যা ৩০-৩৫ শতাংশ। এই তরুণদের প্রত্যাশাকে মাথায় রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের ইশতেহার দিতে হবে। তবে তরুণেরা কিন্তু ইশতেহারে শুধু বিশ্বাস করবে না, তারা কাজ চায়। তারা বর্তমান বিবেচনা করে ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিকে মূল্যায়ন করে।

বাংলাদেশের অতীত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিলে এবার কী ধরনের পরিবর্তন বা নতুন পরিস্থিতি আমরা দেখতে পারি বলে আপনি ধারণা করছেন?

গত সাড়ে ১৬ বছর ভোট দিতে না পারার কারণে অনেকের ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। এদের বড় অংশই ভোট দিতে যাবে অভিজ্ঞতা নিতে। গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশনসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভোটারকে ভোট না দিতে দেওয়ার যে আচরণের অভিজ্ঞতা তাকে কিন্তু তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই তাড়ানো নিয়েই সে ভোটকেন্দ্রে যাবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো গত ৫৪ বছর যাবৎ নাগরিকদের সেভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুশাসন দিতে পারেনি। ১৯৯১ সালের পর থেকে কিন্তু সচেতন ভোটার তৈরি হয়েছে, সেটি হচ্ছে নারী ভোটার। আগে নারী ভোটারদের অনেকেই কম শিক্ষিত ছিল। এখন কিন্তু নারীদের মধ্যে শিক্ষিতের ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। এরা সচেতনভাবে ভোট দেবেন। আগে অনেক নারী অন্যদের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভোট দিতেন। এখন একজন গৃহিণীও সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে অনেক ভদ্রলোক সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়ে যেতে পারেন, আবার অনেক অভদ্র লোকও এই মাধ্যমে বিকৃত প্রচারের কারণে মূল্যবান হয়ে উঠতে পারেন। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের আগে ফেস করতে হয়নি। তরুণ ভোটাররা সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের কারণে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছেন, তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার সবার জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, সবচেয়ে বড় বন্ধু ও সবচেয়ে বড় শত্রু এই সোশ্যাল মিডিয়া। সামাজিক মাধ্যমই ঠিক করে ফেলবে অথবা নাগরিকদের প্রভাবিত করে ফেলতে পারে।

কেমন ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর?

13:05

This browser does not support the video element.

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু খুব লম্বা সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে না সেজন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্যের ওপর মানুষ কতটা সামাজিক মাধ্যমের আর কতটা গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করবে তা ঠিক করবে। আগে দেখেছি গণমাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে নাগরিকেরা পছন্দ নির্ধারণ করত। এখন কিন্তু গণমাধ্যমের থেকে মানুষকে বেশি প্রভাবিত করবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে তখন এটি মানুষকে প্রার্থী পছন্দের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।

নির্দলীয় সরকারের আমলেও যদি এই নির্বাচন বিতর্কিত হয়, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের পরিণতি হতে পারে?

জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল তা চ্যালেঞ্জে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা কমে যায় এবং সরকার যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারে তখন এদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই ভবিষ্যৎটা রক্ষা করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। রাষ্ট্রের সকল শক্তিকে এই চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। এজন্য বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বর্তমান সরকার ব্যর্থ হবে এটি কল্পনাই করা যায় না। বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশকে ভালোবাসলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সরকার যেহেতু কর্তৃত্ববাদের পতনের ফলে তৈরি হয়েছে সুতরাং তার আনুষ্ঠানিক কাজই হলো মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান কাজটি ছিল ভোটাধিকার। তাই এই সরকারের সকল কাজের মধ্যে সবার আগে এক নম্বর কাজ হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে তাদের সকল কাজেই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ