বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে, সে বিষয়ে একমত হলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এর ৭৬তম পর্বের অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর৷ এবারের পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল দেশের নির্বাচন কমিশন ও তার স্বাধীনতার মাত্রা৷
এই প্রসঙ্গে সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে৷ নির্বাচন কমিশন বিষয়ে নতুন আইন করা হলেও সরকার যেভাবে চাইবে (নির্বাচন) সেভাবেই হবে৷ তখনও আপনারা দেখবেন যে নির্বাচনে সরকার যাদের চাইছে তারাই জনপ্রতিনিধি হচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটগুলির মধ্যে প্রধানতম সংকট হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের অভাব৷ আমাদের নতুন সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করায় প্রাধান্য দিচ্ছি৷''
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
অনুষ্ঠানে আলোচিত হয় উন্নয়নের সাথে গণতন্ত্রের সাংঘর্ষিক কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা নিয়েও৷ এবিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ৷ একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের অধিকার, মানবিক অধিকার ও বিবেক থাকতে হবে৷ গণতন্ত্রের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা যাবে না৷ মানবিক রাষ্ট্র গড়তে উন্নয়নের সাথে সংসদসহ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে৷ মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে যে আমরা কারা কারা এটা চাই৷ যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা না চাইলে একটি অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচন করা একেবারেই অসম্ভব৷ এমনটা সম্ভব যদি সরকার প্রশাসনের কাজে, নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ না করে৷''
আজকের পর্বে এছাড়াও আলোচিত হয় নুরুল হক নূরের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা, দেশের রাজনীতিতে ভারতসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রশক্তির আনাগোনার মত নানা বিষয়৷