জার্মানির এসপিডি দলের সদস্যরা ইতিবাচক রায় দিলে আগামী ৪ঠা মার্চ সরকার গঠনের পথ সুগম হয়ে যাবে৷ তার আগেই সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় দলের সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেন ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
আর মাত্র এক সপ্তাহের অপেক্ষা৷ তারপর ফয়সালা হয়ে যাবে৷ নির্বাচনের পর দীর্ঘ প্রায় ৫ মাসের অপেক্ষার পর জার্মানিতে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে কিনা, এসপিডি দলের সদস্যদের ভোটের ফলাফল সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবে৷ আরও বিলম্ব এড়াতে সরকার গড়ার প্রস্তুতি শেষ করছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল৷ রবিবারই ম্যার্কেল সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় নিজের দলের মন্ত্রিদের নাম ঘোষণা করেছেন৷
সোমবার দলীয় সম্মেলনে কোয়ালিশন চুক্তি অনুমোদনের কাজ শেষ করতে চান তিনি৷ তবে সহযোগী সিএসইউ দল ও এসিপিডি এখনো তাদের বরাদ্দ মন্ত্রণালয়গুলির জন্য কোনো নাম ঘোষণা করছে না৷ সরকার গঠনের পথে শেষ বাধা দূর হবার পরই তারা মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে৷
কোয়ালিশন চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক ছাড় ও অর্থ মন্ত্রণালয় হারানোর কারণে সিডিইউ দলের মধ্যে ক্ষোভের কথা বিলক্ষণ জানেন ম্যার্কেল৷ তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে সার্বিক সংশয় সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ দলীয় সম্মেলনে সমালোচকদের আক্রমণ প্রতিহত করতে তিনি তাই রবিবারই সম্ভাব্য মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেছেন৷ সেই তালিকায় বেশ কিছু চমক রেখেছেন তিনি৷ আগের তুলনায় আরও বেশি নারী এবং তরুণ মুখ উঠে এসেছে৷ বিশেষ করে ৩৭ বছর বয়সি তরুণ নেতা ও ম্যার্কেলের সমালোচক বলে পরিচিত ইয়েন্স স্পানকে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ দিয়ে অনেককেই অবাক করেছেন৷ মন্ত্রী হিসেবে স্পান আর প্রকাশ্যে ম্যার্কেলের সমালোচনা করতে পারবেন না, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷
সোমবার সিডিইউ দলের ১০০১ জন ডেলিগেট ম্যার্কেলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এদিন দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হবেন আনেগ্রেট কাম্প-কারেনবাউয়ার৷ এই সিদ্ধান্তও ম্যার্কেলের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সমালোচকদের ধারণা, তাঁদের চাপেই ম্যার্কেল শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রীদের পদে এই নামগুলি বেছে নিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে দলের বিভিন্ন শিবিরের ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটছে বলে তাঁদের দাবি৷
বিরোধী দলগুলি অবশ্য ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভার তালিকার সমালোচনা করেছে৷ তাদের মতে, মহাজোট সরকার গঠন হলে গুরুত্বপূর্ণ পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণার বদলে দলে বিক্ষোভ সামলাতে হয়েছে ম্যার্কেলকে৷ সে ক্ষেত্রে সরকারের কাজকর্মেরও পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
গতবছরের ২৬ সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷