‘বাংলাদেশ প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল৷ অথচ তাঁদের নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তা নেই, গুরুত্ব কেবল বক্তৃতায়৷' ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এই মন্তব্যটি এক পাঠকের৷ তবে শুধু তিনি নয়, আরো অনেকেই এ রকম মনে করেন৷
বিজ্ঞাপন
‘‘সরকার যে প্রবাসীদের জন্য কী করে তা বোঝা যায় ঢাকা এয়ারপোর্টে গেলেই৷ আমাদের সাথে ওখানে জানোয়ারের মতো ব্যবহার করা হয়৷'' নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই মন্তব্য করেছেন পাঠক আবির হাসান৷
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘সরকারের কি আর প্রবাসীদের কথা ভাবার দরকার আছে? প্রবাসীরা কি সরকারকে ভোট দেয়? তাছাড়া এখন তো ভোট ছাড়াই সরকার হওয়া যায়৷ তাই তো প্রবাসীরা এত অবহেলিত৷ তবে সরকার যে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্য ডিজিটাল করার ঘোষণা দিয়েছে, এতে প্রবাসীদের অনেকটাই ভুমিকা থাকবে, আর এ কথা সরকারকেই ভাবতে হবে৷'' বংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ কথা ডয়চে ভেলের ফেসবুকে জানিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল৷
তবে মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুদের অভিজ্ঞতা আরো ভয়ংকর৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রবাসীদের সাথে এয়ারপোর্টে খুব খারাপ ব্যবহার করেন কিছু অফিসার৷ এমনকি ব্যাগ কেটে দামি জিনিসপত্র রেখে পরে ব্যাগ টেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দেয়৷''
আবদুল হাসান নাহিদ অনেক দুঃখে খানিকটা ব্যঙ্গো করেই জানিয়েছেন, ‘‘দেশে পা ফেলতেই শুভেচ্ছা হিসেবে বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হয়৷''
যে ১০ জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে গেছেন
বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৪০ জন বাংলাদেশি কর্মসূত্রে বিদেশে গেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
১. কুমিল্লা
সবচেয়ে বেশি গেছে এই জেলা থেকে৷ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে মোট ৬ লক্ষ ১৯ হাজার ১৩৮ জন বিদেশ গেছেন, যেটা রপ্তানি হওয়া মোট জনশক্তির প্রায় ১০.৯৪ শতাংশ৷
আপনি যদি এই ১০ জেলার না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জেলার তথ্য জানতে উপরে ‘+’ চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
11 ছবি1 | 11
অন্যদিকে নিজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও পাঠক আসিফ মেহেদি প্রবাসী অনেকের কাছেই শুনেছেন যে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে নাকি প্রবাসীদের মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না৷
‘‘প্রবাসীরা তাঁদের পরিশ্রমের এত টাকা রেমিটেন্স দেওয়ার পরও যখন শখ করে ঢাকা এয়ারপোর্টে একটা টেলিভিশন কিনতে যান, তখন নাকি ঝামেলার শেষ থাকে না৷'' – এই মন্তব্য ফেসবুকবন্ধু মাহবুবের৷
‘‘নিজের জন্মস্থানে যেতে ভিসা নিতে হচ্ছে৷ তারপর এয়ারপোর্টের ঝামেলা, দেশে নিরাপত্তাহীনতা – সব মিলিয়ে প্রবাসীদের অবস্থা বেশ খারাপ৷'' দুঃখ করে লিখেছেন পাঠক মোহাম্মদ আলম৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু সেলিম হাওলাদারের ধারণা, সরকার চাইলে সবকিছুই করতে পারে৷ কিন্তু সরকার প্রবাসীদের জন্য কেন যে তা করে – সেটাই সেলিমের প্রশ্ন৷ সরকারের কাছে তাঁর আকুল আবেদন – প্রবাসীদের জন্য এ সব সুযোগ করে দেওয়ার, যাতে দেশে-বিদেশে সবাই ভালো থাকতে পারেন৷
ওদিকে রুবেল হাসানের কথায়, ‘‘সরকার দেশ উন্নয়নের ধোয়া তুলছে৷ কিন্তু যাদের দ্বারা এই উন্নয়ন, তারা সরকারের সুনজরে আসে না৷''
হাসানের মতো মোহাম্মদ রহমান, সাইফ আল-হাসান, কিরণ আকন্দেরও কষ্ট কম নয় যে তাঁরা নিজের দেশের সরকারের কাছেই অবহেলিত৷
‘‘বাংলাদেশ সরকার কখনোই প্রবাসীদের প্রতি গুরুত্ব দেয় না৷ সবই আসলে রাজনীতি৷ বিমানবন্দরের লোকজন এমন আচরণ করে যেন আমরা ভিনদেশি৷'' – এই মন্তব্য ডয়চে ভেলের ফেসবুক-বন্ধু আবদুল্লাহর৷
প্রবাসী ভারতীয়দের সুযোগ-সুবিধা
গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ৷ অনেক আইনি জটিলতা সত্ত্বেও তাদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা৷ তালিকায় নতুন কিছু পরিষেবাও যোগ হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
প্রবাসীদের তালিকার শীর্ষে ভারত
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ১.৬ কোটি ভারতীয় বিদেশে বসবাস করেন৷ বিশ্বের অন্য কোনো দেশের এত মানুষ দেশের বাইরে থাকেন না৷ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ডিইএসএ) গোটা বিশ্বে অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে৷
ছবি: Reuters/R. Stevens
আলাদা মন্ত্রণালয়
ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ ওভারসিজ ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স প্রবাসী ভারতীয়দের বিষয়গুলি দেখাশোনা করতো৷ বর্তমানে সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে এসেছে৷ প্রবাসী ভারতীয় দিবস ও সম্মেলন আয়োজন করা ছাড়াও অন্য অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় এই মন্ত্রণালয়৷ ভারতে আর্থিক বিনিয়োগ বাড়াতে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
‘অনাবাসী’ ভারতীয়
মূলত আয়কর আইনের আওতায় বিদেশে বসবাসরত সেই সব ভারতীয় নাগরিকদের ‘অনাবাসী’ বা নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান (এনআরআই) বলা হয়, যারা বছরে কমপক্ষে ১৮২ দিন বিদেশে থাকেন৷ কর ছাড়াও তারা অন্য কিছু ক্ষেত্রেও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন৷
ছবি: AP
ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের পরিচয়পত্র
যে সব ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ‘ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া’ বা ওসিআই সার্টিফিকেট৷ দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না হলেও এমন সার্টিফিকেট থাকলে ভারতীয় নাগরিকদের অনেক অধিকার ভোগ করা যায়৷ তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে অতীত সম্পর্ক থাকলে ওসিআই পাওয়া যায় না৷
ছবি: DW/S. Burman
ওসিআই হলে সুবিধা
ওসিআই থাকলে আজীবন ভারতে যাতায়াত, সেখানে বসবাস ও কাজকর্ম করা, জমি-বাড়ি কেনাবেচার মতো অনেক সুবিধা ভোগ করা যায়৷ তবে কৃষিজমি কেনা যায় না, ভোট দেওয়া বা ভোটে দাঁড়ানোও সম্ভব নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
এনআরআই বা ওসিআই মর্যাদা থাকলে ভারতের ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রেও কর সংক্রান্ত বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করা যায়৷ সরাসরি বিদেশি মুদ্রা জমা দেওয়া ও প্রয়োজনে তুলে নেওয়ার বাড়তি সুবিধাও রয়েছে৷
ছবি: AP
প্রবাসে ভোট দেবার সুযোগ
এনআরই বা অনাবাসী ভারতীয়রা শীঘ্রই বিদেশ থেকেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ ইলেকট্রনিক ভোটিং অথবা ভারতে কোনো মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ইব্রাহিম খলিল বলছেন, ‘‘আসলে প্রবাসী ভাইদের প্রতি সরকারের সম্মান জানানো উচিত৷ তাছাড়া তাদের রক্ত পানি করা টাকা কোথায় যাচ্ছে এবং কাদের পকেটে যাচ্ছে, তা সরকারের নজর রাখা উচিত৷ সরকার তা না করায় উল্টে প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে৷''
আর বাংলাদেশের ব্যাপারে ফরিদ মাহমুদ এতটাই হতাশ যে মনের দুঃখে তিনি বলেই ফেলেছেন, ‘‘এ সব নিয়ে লেখালেখি করে কোনো লাভ নেই৷ কারণ এ সব দেখার কেউ নেই৷''
ফরিদ মাহমুদের সাথে পুরোপুরি একমত পাঠক মনির খান, রাজু, বেলাল উদ্দিনসহ আরো অনেকে৷