ইউক্রেন-রাশিয়া চতুর্থ দফার বৈঠক মাঝপথে স্থগিত। মঙ্গলবার ফের চালু হওয়ার সম্ভাবনা। দ্রুত সংঘর্ষবিরতির দাবি ইউক্রেনের।
বিজ্ঞাপন
সোমবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক লড়াই নিয়ে চতুর্থদফার বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে সেই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। দুই দেশই জানিয়েছে, 'টেকনিক্যাল' কারণে বৈঠক স্থগিত হয়েছে। মঙ্গলবার ফের তা চালু হওয়ার কথা। বৈঠকে ইউক্রেন কয়েকটি স্পষ্ট দাবি করেছে। প্রথমত, সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে বৈঠকে বসতে হবে রাশিয়াকে। দুই, আলোচনা চলাকালীন হামলা চালানো যাবে না। সে কারণে সেনা ফিরিয়ে নিতে হবে রাশিয়াকে। রাশিয়া অবশ্য এখনো পর্যন্ত একটি দাবির সঙ্গেও সম্মত হয়নি।
যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাড়ি জমানো বিদেশিদের কথা
প্রাণ বাঁচাতে লাখো ইউক্রেনীয় যখন দেশ ছাড়ছেন, তখন অনেক বিদেশি যাচ্ছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে৷ ছবিঘরে জানুন তাদের কথা....
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
জেলেনস্কির আহ্বান
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘‘আপনারা ইউক্রেনের পাশে থেকে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন৷’ পরে’ জেলেনস্কি দাবি করেন, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক দেশের মানুষই যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেনে আসছেন৷ এ পর্যন্ত ১৬ হাজার বিদেশি যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ১৬ হাজারের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে পৌঁছেছেন তা তিনি জানাননি৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মাইকেল ফারকল৷ সম্প্রতি রোমে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশিদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারপরই ইটালি থেকে ইউক্রেনে চলে এসেছেন ২৯ বছর বয়সি তরুণ৷ মাইকেল জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে নেবেন না, তার লক্ষ্য যুদ্ধেক্ষেত্রে প্যারামেডিক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার করা৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
কারা আসছেন?
বিদেশ থেকে আসা ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার উপযুক্ত যারা এসেছেন, তাদের বড় একটা অংশই ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধা৷ নিজের দেশের সরকার এখন আর তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে না বলে মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষতা প্রমাণের বড় একটা সুযোগ৷ সে কারণেই নিজের দেশ থেকে ইউক্রেনে ছুটে এসেছেন৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
আনাড়িদের ভিড়
এক সময় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইউক্রেনে আসছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ কোনো কাজে আসবেন না৷ তার মতে, তারা এত অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ যে তাদের শুধু ‘বুলেট কুড়ানোর’ কাজে লাগাতে হবে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
অপ্রস্তুত ইউক্রেন
কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধা জানান, যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম এমনকি অত্যাধুনিক অস্ত্র চালাতে পারেন এম লোক খুঁজতে ‘হ্যাভ গান উইল ট্র্যাভেল’ ধরনের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে৷ বডি আর্মার, নাইট-ভিশন গগলসের মতো জিনিসও কারো কাছে থাকলে দিয়ে যেতে বলছে গ্রুপগুলো৷ এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষকও খোঁজা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
অদক্ষরাও গুরুত্বপূর্ণ
লভিভ শহরে বিদেশ থেকে যুদ্ধে অংশ নিতে আসাদের তালিকা প্রণয়ন করেন রোমান শেপেলাক৷ বিদেশি যোদ্ধাদের গ্রহণ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি যে ইউক্রেন এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি রোমান তা স্বীকার করেন৷ তবে তার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অদক্ষ বিদেশিরা আসছে বলেও হতাশ নন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যে অন্য দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাইছে- এটাই দারুণ ব্যাপার৷ তারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
6 ছবি1 | 6
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে চান। তবে এ বিষয়েও ক্রেমলিন এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। এরইমধ্যে দেশের মার্শাল আইন আরো বাড়ালেন জেলেনস্কি। ২৪ মার্চ পর্যন্ত তা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার এপ্রিল পর্যন্ত তা বাড়ানো হলো।
বেনেট-পুটিন কথা
সোমবার পুটিনের সঙ্গে কথা হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনেটের। এর আগে বেনেটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল জেলেনস্কির। বেনেটকে তিনি জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করলে জেরুসালেমে পুটিনের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসতে পারেন। বেনেট জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে পুটিনকে সে বার্তা তিনি দিয়েছেন। ক্রেমলিনের তরফে জানানো হয়েছে, বেনেটের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের কথা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো হবে। রাশিয়া নিয়ে কোন দেশের কী অবস্থান, তা নিয়েও পুটিনের সঙ্গে বেনেটের আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
২৫ লাখ শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত সংগঠন জানিয়েছে, গত কয়েকসপ্তাহে প্রায় আড়াই মিলিয়ন অর্থাৎ, ২৫ লাখের মতো শরণার্থী ইউক্রেন ছেড়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন। এরমধ্যে বিপুল পরিমাণ নারী ও শিশু আছে। বস্তুত, ইউএনএইচসিআর ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য ৫১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ফান্ড তোলার ঘোষণা দিয়েছিল। সোমবার তারা জানিয়েছে, ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। এখনো ৩১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এই অর্থ দিয়ে ইউক্রেনের ভিতর আটকে থাকা মানুষদের এবং বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের সাহায্য করা হবে।
ইউক্রেনের একাধিক শহরে এখনো হাজার হাজার মানুষ আটকে আছেন। একাধিক সেফ করিডোর দিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সোমবারও সবমিলিয়ে প্রায় চার হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে ইউক্রেন জানিয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, সেফ প্যাসেজেও হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। মারিউপলের মতো শহরে বহু মানুষ এখনো আটকে আছেন বলে জানানো হয়েছে। তাদের কাছে খাবার, জল পর্যন্ত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বস্তুত, সোমবার ফক্স টিভির এক সাংবাদিকও আহত হয়েছেন বলে ইউক্রেন জানিয়েছে। তবে তার আঘাত গুরুতর নয়।