সশস্ত্র ব্যক্তিরা আগেও নিখোঁজ সৌরভকে আটকে রাখে
১৮ জুন ২০১৯সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নে অপহৃত সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভ ঢাকার ঢাকার আইইউবির মিডিয়া কম্যুনিকেশনের শিক্ষার্থী। ঢাকার বনানী এলাকার একটি বাসায় থেকে পড়াশুনা করে। পরিবারের সদস্যরা থাকেন চট্টগ্রামে। ঈদে সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসায় যায়। গত ৯ জুন সন্ধ্যায় তাকে চট্টগ্রামের বাসা থেকে মোবাইল ফোনে পাঁচলাইশ এলাকায় ডেকে নিয়ে ‘অপহরণ' করা হয়।
সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘যারা তাকে এবার চট্টগ্রামের বাসা থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়েছে তারাই তাকে গত ১০ রমজান ( ১৬ মে) ঢাকার বনানীর বাসা থেকে সশস্ত্র অবস্থায় র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরদিন সন্ধ্যায় তাকে আবার বসায় ফেরত দিয়ে যায়।'
সৌরভের বাবা বলেন,‘‘তাদের সাথে সৌরভের যোগাযোগ ছিল। তারা তাকে একটি চাকরি দেয়ার কথাও বলেছিলো। আর সেই চাকরির জন্যই তারা আমার ছেলেকে ফোন করে ন্যাশনাল আইডি কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র চট্টগ্রামে তাদের দুইজন লোককে দিতে বলে। ওই দুই জন লোক আমার ছেলের সঙ্গে কিছু কথাও বলবে । তাদের কথা মত ৯ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে পাঁচলাইশের মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের কাছে অ্যাগোরার সামনে যায়। এরপর থেকে আমার ছেলের আর কোনো খোঁজ পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ।''
তাদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে ঢাকায় তারা চোখ মুখ বেধে নিয়ে গিয়েছিল। তার ছিল অস্ত্রধারী।''আর এ নিয়ে র্যাবের বক্তব্য চেষ্টা করেও জানা যায়নি।
কী কারণে তাকে অপহরণ করা হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিস আলম তার ছেলের একটি প্রেমের সম্পর্কের ঘটনার কথা বলে সন্দেহ করেন। রবিবার ঢাকায় সোহেল তাজ যে সংসবাদ সম্মেলন করেন সেখানে সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমানও কথা বলেন। তিনিও ২০১৭ সালে তার ছেলের সঙ্গে এক তরুণীর বিয়ে এবং পরে চলতি বছরের এপ্রিলে বিচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন। ওই তরুণীর বাবা ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। তিনি সৌরভের পরিবারকে হত্যার হুমকিও দেন বলে মায়ের অভিযোগ।
সৌরভ ২০১৭ সালে ‘বেঙ্গলি বিউটি' নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন। ওই চলচ্চিত্রের বিষয়স্তুর মধ্যে কেনো পক্ষের ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তার বাবা বলেন,‘ তিন বন্ধু মিলে ওই সিনেমা বানিয়েছিলো। কেউ সিনেমার কারণে ক্ষুব্ধ বলে আমার জানা নেই।'
এই অপহরণের ঘটনাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ইউনিটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাকে কারা ফোন করে একটি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। সেই গাড়িটি। কারা ফোন করলো, কারা নিয়ে গেল-এইসব বিষয় ধরেই আমরা কাজ করছি। যেহেতু তাকে আমরা এখনো তাকে উদ্ধার করতে পারিনি তাই তদন্তে খুব অগ্রগতি হয়েছে যে কথা এখন বলতে পারছিনা। তবে আমরা আশাবাদী সে উদ্ধার হবে।''
আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সৌরভের বাবা বলেছেন, এর আগে তাকে বিভিন্ন সময় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।''
সৌরভ সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে। সোহেল তাজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘খবরে এসেছে, সৌরভকে যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করা হয়েছে, সেটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তার।'' সোহেল তাজই প্রথম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার ভাগ্নেকে উদ্ধারের আবেদন জানান।
এদিকে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘আমিতো মনে করি সোহেল তাজের ভাগ্নে কোথাও গিয়ে থাকলে ফিরে আসবেন। ওনাকে কেউ হয়তো নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। সবই বের হয়ে আসবে, পুলিশ এটা নিয়ে কাজ করছে।''