1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সস্তার বিমান এখন আম ভারতীয়ের

৩ এপ্রিল ২০১৮

কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছতে ট্রেনের যা খরচ, সময়ে সময়ে বিমানের খরচ তার চেয়ে কম৷ সস্তার বিমান ভারতে যাতায়াত ব্যবস্থাই বদলে দিয়েছে৷

ভারত
ছবি: Pal Pilla/AFP/Getty Images

‘উড়ে দেশ কা আম নাগরিক' সংক্ষেপে উড়ান৷ ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল এমনই এক নতুন প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সেখানে বলা হয়েছিল, সাধারণ মানুষ হাওয়াই চটি পরেও যাতে বিমানে চড়তে পারেন, তার জন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার৷ ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি চালু হয়েছে৷ সেখানে এক ঘণ্টার কম দূরত্বের পথে বেশ কিছু টিকিট ২৫০০ টাকার নীচে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষ যাতে সে টিকিট কাটতে পারেন এবং বিমানে চড়তে পারেন৷

প্রকল্পটি ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই রসিকতা করেছিলেন৷ ভারত সরকার জানেই না, সে দেশের গরিব মানুষের অবস্থা ঠিক কিরকম? এ কথা সত্য যে, গত দু'দশকে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমেছে৷ তা সত্ত্বেও এখনো দেশের ২১ শতাংশ মানুষ মাসে ১০০০ টাকারও কম রোজগার করেন৷ ফলে তাঁদের জন্য ২৫০০ টাকার টিকিট চাঁদ ধরার মতোই৷

‘উড়ান' প্রকল্প চালু হোক বা না হোক, ভারতীয় বিমানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে৷ একসময় কেবলমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই বিমানে যাতায়াত করতে পারতেন৷ বিমানে চড়া তখন একটা স্টেটাস সিম্বল ছিল৷ গত দু' দশকে সেই ধারণাটাই বদলে গিয়েছে৷ সাধারণ মানুষও এখন বিমানে যাতায়াত করার কথা ভাবতে পারেন৷ এবং তার এক এবং একমাত্র কারণ হলো বিমান পরিষেবার বেসরকারিকরণ৷ গত দু' দশকে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা বাজারে এসেছে৷ ইন্ডিগো, স্পাইস জেট, গো এয়ার, জেট কানেক্টের মতো সংস্থাগুলি কম পয়সার বিমান বা চিপ এয়ার বলে পরিচিত হয়েছে৷ এদের ব্যবসার মূল স্লোগানই হলো ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল'৷ এই সমস্ত সংস্থার বিমানে উঠলে বিনামূল্যের খাবার পাওয়া যায় না৷ সামনের আসন পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়৷ জানলার ধারে বসার জন্যও অতিরিক্ত খরচ করতে হয়৷ কিন্তু অত্যন্ত কম খরচেও টিকিট পাওয়া যায়৷ নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের সাধ্যের মধ্যে৷ একটা উদাহরণ দেওয়া যাক৷ কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার জন্য রাজধানী এক্সপ্রেসের সবচেয়ে কম ভাড়া হলো ২৮০৭ টাকা৷অথচ মাস দুয়েক আগে টিকিট কাটলে সস্তার বিমানের টিকিট পাওয়া যায় ২৫০০ টাকার মধ্যে৷ তবে বিমানের ভাড়া নির্দিষ্ট নয়৷ চাহিদা অনুযায়ী তা বাড়ে এবং কমে৷ খোলা বাজারের নিয়মে ওঠা-নামা করে টিকিটের মূল্য৷ বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে৷ ফলে সকলেরই লক্ষ্য থাকে সবচেয়ে কম টাকায় টিকিট দেওয়ার৷ ফলে অধিকাংশ সময়েই আজকাল দেখা যায়, ট্রেনের এসি থ্রি টিয়ারে রিজার্ভেশনের চেয়ে কম অর্থে বিমানের টিকিট পাওয়া যায়৷

বেসরকারি কমমূল্যের সংস্থাগুলির এই তীব্র প্রতিযোগিতায় খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে পুরনো সংস্থাগুলি এবং সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকেও৷ জেট এয়ারলাইন্সের মতো পুরনো বিমান সংস্থাটি বাজার ধরার জন্য জেট কানেক্ট তৈরি করেছিল৷ এখন জেট এয়ারলাইন্সেও কখনো কখনো সস্তা টিকিট পাওয়া যায়৷ এয়ার ইন্ডিয়াও প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং বিপুল সস্তায় তাদের টিকিট পাওয়া যায় সময় সময়৷ বস্তুত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যাওয়ার জন্য সময় সময় ১২০০ টাকাতেও টিকিট পাওয়া যায়৷ এবং কখনোই টিকিটের দাম ২৫০০ টাকার বেশি ওঠে না৷ বস্তুত, উত্তর-পূর্বে যাতায়াত করা বরাবরই একটা বড় সমস্যা৷ সর্বত্র রেল যোগাযোগ নেই৷ যেখানে আছে, সেখানে পৌঁছতেও বহু সময় লেগে যায়৷ সর্বত্র রাস্তাঘাট খুব উন্নত নয়৷ ফলে উত্তর পূর্বের মানুষ বিমান পথকেই বেছে নিয়েছেন যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে৷ এ কারণে সরকারি বিমান সংস্থাও খুব কম টাকায় সেখানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে৷

প্রশ্ন হলো, সস্তায় বিমানের টিকিট বেচতে গিয়ে সংস্থাগুলি মানের সঙ্গে আপোস করছে না তো! জরুরি প্রশ্ন৷ প্রশ্নটি আবার উঠেছে সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থার বিমান নেপালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ায়৷ এ ক্ষেত্রে একটি জরুরি কথা বলা দরকার৷ ভারতের এভিয়েশন বিভাগ নির্দিষ্ট নিয়মাবলি তৈরি করেছে বিমান সংস্থাগুলির জন্য৷ কোন কোন বিমান ব্যবহার করা যাবে, উড়ানের মানদণ্ড ইত্যাদি সবই সেখানে নির্দিষ্ট করা আছে৷ সেই নিয়মের সামান্য গাফিলতি হলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় বিমান সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে৷ অন্যদিকে অনেকগুলি বেসরকারি বিমান প্রতিযোগিতায় থাকার কারণে কেউই মানের সঙ্গে বিশেষ আপোস করে না৷ করলে দ্রুত বাজার হারানোর ভয় থাকে৷ দ্রুত মুনাফা নয়, বিমান সংস্থাগুলির লক্ষ্য থাকে লম্বা ব্যবসার৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেবল ইন্ডিগোই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দিনে ১৬০টি বিমান চালায়৷ এ ছাড়াও তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আছে৷ সংস্থাগুলির লক্ষ্য হলো কম মুনাফায় বেশি সংখ্যক বিমান চালিয়ে রোজগার৷ এবং গত দু'দশকে এই ব্যবসার মডেল অনুসরণ করে প্রচুর উপার্জনও করেছে সংস্থাগুলি৷ এখনো করছে৷ বস্তুত দিল্লিতে একটি আস্ত টার্মিনালই কেবল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ইন্ডিগো এবং স্পাইস জেটকে৷ দিল্লির তিনটি টার্মিনালের ওই টার্মিনালটিতেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় প্রতিদিন৷ বহু নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন ওই ধরনের বিমানে৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

সমস্যাও আছে৷ কিছুদিন আগে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ দেখা গিয়েছিল এক প্রবীণ ভদ্রলোকের সঙ্গে অন্যায়ভাবে কথা বলছেন দু'জন গ্রাউন্ড ক্রু৷ এরপর তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়৷ মুহূর্তের মধ্যে ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে সরব হন সাধারণ মানুষ এবং সংবাদসংস্থাগুলি৷ ইন্ডিগোও দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিয়ে এবং ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যার সমাধান করে৷ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পরিষেবার উন্নয়ন খুবই জরুরি৷ প্রতিটি সংস্থাই তা বোঝে৷ তবে ভারতীয় নাগরিক বুঝে নিয়েছেন, কম টাকায় দ্রুত যাতায়াত করতে হলে বিনামূল্যের খাবারের মোহ ছাড়তে হবে৷ খিদে পেলে বিমানেও খাবার কিনে খেতে হবে৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সস্তার বিমানের এটাই ধরন৷ দু'দশকে ভারত সেই মনোভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে৷

ভারতে বিমান যাতায়াতে সুবিধা অসুবিধাগুলো কী কী? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ