পুলিসকে কনটেইনমেন্ট জোন–এর ভেতরে ঢুকে কাজ করতে হচ্ছে৷ যেতে হচ্ছে ঘনবসতি এলাকায়৷ স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি সংক্রামিতদের সংস্পর্শে আসছেন৷ ঝুঁকি বাড়ছে এঁদের৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার ক্রমশ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে৷ সংক্রমণ ছড়িয়েছে রাজ্যের ২৩টি জেলায়৷ তার মধ্যে সবথেকে বেশি আক্রান্ত কলকাতা৷ রাজ্যের মোট ১৯৩৯টি নথিভুক্ত সংক্রমণের মধ্যে শুধু কলকাতাতেই ৯৪৮ জন৷ ১১৩টি করোনা মৃত্যুর মধ্যে ৭৪টি কলকাতায়৷ করোনার পাশাপাশি মারা যাওয়ার অন্য কারণও ছিল ৭২ জনের৷ এই বাড়তি ৭২টি মৃত্যুর মধ্যে ৫২টি ঘটেছে এই শহরেই৷
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, নিরাপত্তা কর্মীরা৷ তাঁদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে৷ কতটা সুরক্ষার বন্দোবস্ত রয়েছে তাঁদের?কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার, হেডকোয়ার্টার্স শুভঙ্কর সিংহ সরকার ডয়চে ভেলে–কে জানালেন, ‘‘যা সেফগার্ড নেওয়ার, সবগুলোই নেওয়া হচ্ছে৷ মাস্ক বলুন, স্যানিটাইজার বলুন, এরিয়া স্যানিটাইজ করা, অফিস স্যানিটাইজ করা, সবই করা হচ্ছে৷ পুলিসরা তো সবসময় ঘরে বসে কাজ করে না, রাস্তাতেই থাকে৷ সবার জন্যে ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷’’
যা সেফগার্ড নেওয়ার, সবই নেওয়া হচ্ছে: কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার
কিন্তু তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রশাসনিক অবস্থান বোঝালেও ভরসা দিল কি?বিশেষত যেখানে ধাপে ধাপে লক ডাউন উঠিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার মুখে শহরে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে!সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় একের পর এক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হচ্ছে৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের যথেষ্ট সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে৷ রাস্তায় নেমে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা আরও বিপন্ন বোধ করছেন৷
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এক্ষেত্রে কী বলছে? নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির অন্যতম সদস্য, চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা বলছেন, ‘‘একমাত্র উপায় ওই পিপিই৷ আর কারও কিছু হলে, যদিও এখন সবাই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাচ্ছে৷ কিন্তু আইসিএমআর থেকে আমরা বলে দিয়েছি, শুধুমাত্র হেল্থ প্রফেশনালদের, ‘প্রোফাইল অ্যাক্সিস’ হিসাবে, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেতে৷’’
ডাক্তার কমা মানে করোনাতে মৃত্যুর হার বেশি হওয়া!: ডা. স্মরজিৎ জানা
কিন্তু যথেষ্ট পিপিই কি পাওয়া যাচ্ছে?শুধু কলকাতা, বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের এই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে৷ ডাঃ জানা–র বক্তব্য, শুধু ভারত নয়, ইউরোপ, আমেরিকাতেও এমন অভিযোগ উঠেছে৷ আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা কতটা খারাপ, এই পরিস্থিতি সেটা দেখিয়ে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘, it has open up, how bad our health delivery system is! অথচ, আজকে তাইওয়ান, চায়না... তাইওয়ান অনেক পরে হলেও প্রায় ১৬ মিলিয়ন মাস্ক অন্য দেশে দিয়েছে৷ তো তারা পারছে, আর আমাদের বড়লোকের দেশ পারছে না— this is unacceptable from the point of view, that they do not really give importance to people's life. শুধু ডাক্তারদের লাইফ না, পিপল্স লাইফ৷ তার কারণ হচ্ছে, ডাক্তার কমা মানে করোনাতে মৃত্যুর হার বেশি হওয়া৷’’
কাজেই, শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন নয়, সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনকে গুরুত্ব না দিলে যা হয়, তাই ঘটছে৷ বহু প্রাণের অপচয় ঘটছে৷ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, এবং ভারতের ক্ষেত্রে বিপদটা আরও বেশি, যেহেতু এখানে করোনা সবে তার ফণা তুলতে শুরু করেছে৷
করোনার কারণে বদলে যাওয়া বিশ্ব
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে লকডাউন উঠে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন শহর। ছবিঘরে দেখুন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের গুরুত্ব মেনে কিভাবে বদলে যাচ্ছে সবকিছু...
ছবি: Reuters/S. Vera
দুই মিটার দূরে থাকুন
সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে এমনিতে এক মিটার দূরে দাঁড়ালেই হয়। কিন্তু আমস্টারডামে কাশম্যান অ্যান্ড ওয়াকফিল্ড নামের এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি অনেক বেশি সতর্ক। তাদের অফিসের কর্মীরা আগামীতে এমন ডেস্কে কাজ করবেন, যার বিপরীতে অন্য সহকর্মীকে বসতে হবে অন্তত দু মিটার দূরে।
ছবি: Reuters/Cushman/Wakefield
ওয়েটারের নতুন রূপ
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামেরই এক রেস্তোরাঁয় চলছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অতিথিদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দূরে রাখার যাবতীয় প্রস্তুতি। রেস্তোরাঁ খুললে এভাবে মাথা, মুখ ঢেকে খাবার পরিবেশন করবেন কর্মীরা।
ছবি: Reuters/E. Plevier
রাস্তা থেকেই সামাজিক দূরত্ব
নেদারল্যান্ডসের আনহেম শহরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা ম্যাকডোনাল্ডসের এই শাখাটিতে ঢুকতে হলে রাস্তা থেকেই বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। হলুদ বৃত্তাকার জায়গায় দাঁড়িয়ে করতে হবে ভেতরে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষা।
ছবি: Reuters/P. van de Wouw
ট্রাম স্টপে কড়াকড়ি
ফ্রান্সের নিস শহরের একটি ট্রাম স্টপে কেউ আর যেখানে-সেখানে দাঁড়াতে পারেন না। পায়ের ছাপ বসানো স্থানে দাঁড়িয়ে ট্রামের অপেক্ষা করতে হয় সবাইকে।
ছবি: Reuters/E. Gaillard
দেখে দাঁড়ান
নিস শহরের ট্রামগুলোর ভেতরেও দাঁড়াতে হয় পায়ের ছাপ দেখে।
ছবি: Reuters/E. Gaillard
রেস্তোরাঁয় কোয়ারান্টিন
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের এক রেস্তোরাঁয় রাখা হচ্ছে এমন 'গ্রিন হাউজ কোয়ারান্টিন'-এর ব্যবস্থা। শুধু দূরে বসে নয়, থাকছে আলাদা আলাদা প্লাস্টিকের ঘরে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও।
ছবি: Reuters/E. Plevier
রেল স্টেশনে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ট্রেনে ওঠার সময় গোলাকৃতির প্লাস্টিকের ভেতরে দাঁড়াতে হয়। নিয়ম না মানলে এগিয়ে আসে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
দেয়াল ঘেরা টেবিল
তাইওয়ানের এক রেস্তোরাঁর টেবিলগুলো এখন প্লাস্টিকের দেয়ালে ঘেরা। সুতরাং খাওয়ার সময় কেউ কাছে চলে এসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবেন তার উপায় নেই।
ছবি: Reuters/J. Silva
সবজির বাজারে পরিবর্তন
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার এই সবজি বাজারেও এখন আর গা ঘেষাঘেষি করে দাঁড়ানোর উপায় নেই।
ছবি: Reuters/A. D. Ulfiana
নতুন নিয়মে হাঁটো
ডেনমার্কের আলবোর্গ শহরে এক পায়ে হাঁটার রাস্তা। কোন পাশে কার কতটুকু জায়গা তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে হলুদ রেখা টেনে।
ছবি: Reuters/H. Bagger
সৌদি আরবের শপিং মল
রিয়াদের এক শপিং মল। বাইরেও দাঁড়াতে হয় পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে।
ছবি: Reuters/Ahmed Yosri
সাইকেলেও সোশাল ডিসট্যান্স
ইতালির মিলান শহরের এক মা তার সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন সাইকেলে। সাইকেলেও বজায় আছে সোশ্যাল ডিসট্যান্স।
ছবি: Reuters/D. Mascolo
টয়লেটে সাবধানতা
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের এক প্রস্রাবাগারে প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব।
ছবি: Reuters/F. Lenoir
'দূর থেকে হাসুন'
ভেতরে গিয়েও কারো খুব কাছে যাওয়ার উপায় নেই। আসনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রেখে বসতেই হবে। ভুলেও যাতে কেউ কারো খুব কাছে চলে না যান, সেই ব্যবস্থা করতে লাগানো হয়েছে বিশেষ স্টিকার। স্টিকারে লেখা, "দূর থেকে হাসুন।"